Cancel Preloader

যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন


অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
(পর্ব-২৭)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
বিশ্বের বহু দেশে বাংলা ভাষায় মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফ পাঠ
‘মিলাদ’ আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো জন্মবৃত্তান্ত। ইসলামি পরিভাষায় বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনাকেই মিলাদ বলা হয়ে থাকে। মিলাদের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ ফরমান- “নিশ্চয় আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতারা নবির উপরে দরূদ পাঠ করেন, হে মু’মিনগণ! তোমরাও তাঁর উপর দরূদ পড়ো এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ৫৬)


মহান আল্লাহর এ পবিত্র বাণী থেকে বুঝা যায় যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর উপর শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করা অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের মহান বন্ধু যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান তাই মিলাদ ও কিয়ামকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। আর সেকারণেই তিনি তাঁর মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষায় মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফ চালু করেন। সূফী সম্রাট লক্ষ্য করেছেন যে, বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ হযরত রাসুল (সা.)-কে অত্যন্ত ভালোবাসেন। আর সেকারণে তারা হযরত রাসুল (সা.)-এর শানে মিলাদ পাঠ করেন এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম জানানোর জন্য কিয়াম করে থাকেন। তাই মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান বাংলা ভাষায় মিলাদ চালু করেন। আজ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এবং খানকাহ শরীফেও আশেকে রাসুলগণ প্রতিনিয়ত এই মিলাদ শরীফ পাঠ করে থাকেন। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর শতাধিক দেশে সূফী সম্রাটের অনুসারীগণ বাংলা ভাষাতেই এই মিলাদ পাঠ করে থাকেন। এমনকি অন্যান্য ভাষার আশেকে রাসুলগণও সূফী সম্রাট প্রদত্ত মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফ বাংলাতে পাঠ করে থাকেন। আর এটিই হলো সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের অন্যতম সংস্কার।


সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ও দয়াল মা (রহ.)-এর নামে গোল্ড মেডেল প্রবর্তন
আমাদের এই বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পদক বা পুরস্কার দেওয়ার রেওয়াজ চালু রয়েছে। যেমন স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গোল্ড মেডেল বা স্বর্ণ পদক দেওয়ার রেওয়াজ চালু ছিল না। কিন্তু আল্লাহর অপার দয়ায় বাংলাদেশে এই প্রথম দি পিপল্স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এ ‘সূফী সম্রাট সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা এবং সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)’ নামে একটি গোল্ড মেডেল প্রবর্তন করা হয়েছে, যা ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে যে ছাত্র অনার্স ও মাস্টার্সে সর্বোচ্চ সিজিপিএ নম্বর লাভ করবেন, তাকে এই গোল্ড মেডেল দেওয়া হবে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে ৩৬টি সরকারি এবং ১০৮টি বেসরকারি (প্রাইভেট) বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতঃপূর্বে আর কোনো গোল্ড মেডেল প্রবর্তন করা হয়নি। সুতরাং সেদিক থেকে বলা যায় যে, এই গোল্ড মেডেল এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটা মাইলফলক। আনন্দের বিষয় এই যে, বিশ্বের সকল অলীগণের বাদশাহ্ ছিলেন সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) এবং সকল কুতুবগণের প্রধান হলেন হযরত সৈয়াদা হামিদা বেগম (রহ.)। তাঁদের নামে এই গোল্ড মেডেল চালু করে, পিপল্স ইউনিভার্সিটি কর্র্তৃপক্ষ বিশ্বের সকল অলী-আল্লাহর প্রতি এক বিরল সম্মান দেখিয়েছেন, যা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের কোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে সূফী সম্রাট ও কুতুবুল আকতাবের নামে সর্বপ্রথম গোল্ড মেডেল প্রবর্তন হওয়ার পরে, এই পথ ধরে ভবিষ্যতে আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে গোল্ড মেডেল প্রবর্তন হবে। কিন্তু সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) এবং তাঁর সহধর্মিণী কুতুবুল আকতাব সৈয়দা হামিদা বেগম দয়াল মা (রহ:)-এর নাম বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইতিহাসে বিশেষ স্থান করে নিবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।


উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান ও হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর নামে প্রবর্তিত গোল্ড মেডেল ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ভিসি, শিক্ষকবৃন্দ, ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ এবং ছাত্রছাত্রী ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।

দয়াল মায়ের দেওয়া উপহার
আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের সহধর্মিণী কুতুবুল আকতাব দুররে মাকনুন খাতুনে জান্নাত হযরত হামিদা বেগম দয়াল মা (রহ.), তাঁর মহান পিতা ছিলেন পিরানে পির দস্তগির সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদীয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) এবং মহিয়সী মাতা ছমিরুননেছা খানম, অর্থাৎ হযরত বড় মা (রহ.)-এর কন্যা ছিলেন। তিনি ছিলেন সমকালীন যুগের বিশ্বের সকল কুতুবদের প্রধান। যাকে কুতুবুল আকতাব বলা হয়। ব্যক্তিগত জীবনে হযরত দয়াল মা (রহ.) অত্যন্ত পর্দানশীন ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র মহিলা জাকেরদের সাথেই দেখা করতেন। কোনো পুরুষ জাকের কোনোদিনই তাঁকে দেখতে পায়নি। আমি দীর্ঘ বছর ধরে দরবার শরীফে খেদমত করলেও কোনোদিন দয়াল মাকে দেখিনি। তাছাড়া হযরত দয়াল মা ছিলেন অত্যন্ত অমায়িক ও মানবদরদী। কোনো মহিলা জাকের যদি কোনো সমস্যায় পড়তেন, তখন হযরত দয়াল মা (রহ.) তার বিপদ দূর না হওয়া পর্যন্ত সকল রকমের সাহায্য সহযোগিতা করতেন। এমনকি নিজে টাকা দিয়ে পর্যন্ত সাহায্য করতেন। হযরত দয়াল মা (রহ.) নবিনন্দিনী, খাতুনে জান্নাত হযরত মা ফাতেমা (রা.)-এর জীবনী গ্রন্থ রচনা করেছেন। যার নাম ‘আদর্শ রমণী হযরত ফাতেমা (রা.)’। তিনি একদিন দরবার শরীফের দোতলায় ইন্টারকম সেটে টেলিফোন করে খাদেম আশেকে রাসুল জাহাঙ্গীর ভাইকে আমাকে ডেকে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। ভাগ্যক্রমে আমিও দরবার শরীফের দোতলায় এসে উপস্থিত হলাম। তখন জাহাঙ্গীর ভাই আমাকে ডেকে দয়াল মায়ের সাথে কথা বলতে দিলেন। হযরত দয়াল মা (রহ.) আমাকে ডেকে বললেন- আমি মা ফাতেমার যে জীবনী বইটি লিখেছি, তা ছিল আগের ধারণা ও বিশ্বাস অনুযায়ী লেখা। আপনার বাবাজান এখন যে সংস্কার করে দয়াল রাসুল (সা.) ধনী ছিলেন বলে প্রমাণ করেছেন, তা আমি আমার বইয়ে সংযোজন করে আপনার বাবার সংস্কারের বিষয়টি পূর্ণ তুলে ধরে সংশোধন করেছি। দয়াল মা একথা বলায় আমি তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছিলাম- মা! আপনি চিন্তা করবেন না, আমি আপনার বইখানা সম্পূর্ণ প্রুফ দেখে দেবো। অতঃপর আমি দয়াল মায়ের গ্রন্থখানা নতুনভাবে দেখে দিলাম এবং তা পুনঃমুদ্রণ করা হলো। এই নতুন সংশোধিত পুস্তকখানা দেখে দয়াল মা দারূণভাবে খুশি হলেন। পরবর্তীতে তিনি পুনরায় ফোন করে দয়াল মা আমাকে বললেন- মান্নান মিয়া! আপনি আমার বইখানা দেখে দিয়েছেন, তাতে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। তাই আমি ইচ্ছা করেছি আপনাকে একটা ঘড়ি উপহার দেবো। দয়াল মায়ের পবিত্র জবানীতে একথা শুনে আমি বলালম- মা! আমার কাজে আপনি খুশি হয়েছেন, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমাকে ঘড়ি দিতে হবে না। আপনার নেক দৃষ্টি ও দয়া পেলেই আমি ধন্য হবো। একথা বলে আমি পুনরায় দয়াল মায়ের কাছে দয়া চাই। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আমি রাতে বাসায় চলে যাওয়ার পরেই দেখতে পেলাম দয়াল মা, দেলোয়ার হোসেন নামক একটা ছেলেকে দিয়ে আমার কাছে তিন হাজার টাকা পাঠালেন। ছেলেটি বলল- দয়াল মা আপনাকে ঘড়ি কেনার জন্য টাকা দিয়েছেন। যা হোক, আমি টাকা রেখে দিলাম। আর ঘড়ি কেনা হয়নি। মনে মনে ভাবলাম সুযোগ মতো দরবার শরীফের অনুষ্ঠানে এই তিন হাজার টাকা দয়াল বাবাজানকে নজর দিয়ে দেবো। আল্লাহর কী ইচ্ছা তিনিই ভাল জানেন- এ ঘটনার কিছুদিন পরে ২০০৯ সালের, ১৪ সেপ্টেম্বর দয়াল মা আমাদেরকে এতিম করে দারুল বাকায় চলে গেলেন। দয়াল মাকে হারিয়ে আমরা অত্যন্ত শোকাহত হয়ে পড়লাম। এভাবে আরো কিছুদিন কেটে গেল। অতঃপর একদিন আমি দয়াল বাবাজানকে ঘড়ি কেনার জন্য মায়ের দেওয়া টাকার কথা বললাম। আমি দয়াল বাবাজানকে জানালাম যে, দয়াল মা আমাকে ঘড়ি কেনার যে তিন হাজার টাকা দিয়েছেন, তা আমার কাছে রয়েছে। ঘড়ি কেনা হয়নি। আমি সেই টাকা বাবাজানকে নজর হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একথা শুনে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান আমাকে বললেন- আপনার মায়ের দেওয়া এই টাকা ফেরৎ দেওয়ার দরকার নেই। অলী-আল্লাহ্দের দেওয়া জিনিস রহমত ও বরকতপূর্ণ। আপনি এই টাকা দিয়ে একটি ঘড়ি কিনে আপনার দয়াল মায়ের স্মৃতি হিসেবে রেখে দেন। মাঝে মাঝে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে এটি পড়বেন। দয়াল বাবাজানের কথা শুনে আমি ঘড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিলাম। কয়েকদিন পর ঘড়ির দোকানে গিয়ে একটি ঘড়ি ক্রয় করে সযত্নে রেখে দেই। দয়াল বাবাজানের নির্দেশ মোতাবেক মাঝে মাঝে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে ঘড়িটি ব্যবহার করি। আজো সেই ঘড়িটি দয়াল দরদী মায়ের স্মৃতি বহন করছে।  
[লেখক: সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা]

সম্পর্কিত পোস্ট