Cancel Preloader

যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
(পর্ব-৩২)

কলকাতা সম্মেলনের বক্তব্যে কুতুবের প্রতিবাদ
আমাদের এই উপমহাদেশের অসংখ্য অলী-আল্লাহর রওজা শরীফ রয়েছে। কারণ তাঁরা ইসলাম প্রচারের জন্য এখানকার বিভিন্ন এলাকায় খানকাহ প্রতিষ্ঠা করে মানুষকে মোরাকাবা মোশাহেদার মাধ্যমে উত্তম চরিত্রাদর্শ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আজও সেই মহামানব অলী-আল্লাহগণের রওজা শরীফে লক্ষ লক্ষ মানুষ জিয়ারত করতে যায় এবং মানতের অসিলায় বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি লাভ করে থাকে।


আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। বিশাল ভূখণ্ড এবং ২৫টি রাজ্য নিয়ে এই দেশটি গঠিত। এদেশের বিভিন্ন এলাকায় বহু অলী-আল্লাহর মাজার ও রওজা শরীফ রয়েছে। তাঁদের মধ্যে হযরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর নাম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ভারতের আজমিরে তাঁর রওজা শরীফ রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন দেশ বিদেশের অগণিত মানুষ জিয়ারত করে থাকেন। অপরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হযরত শাহ সূফী ওয়াজেদ আলী (রহ.) ও হযরত শাহ্ সূফী ফতেহ আলী (রহ.)-এর রওজা শরীফ রয়েছে। মহান আল্লাহর অপার দয়ায় হযরত রাসুল (সা.)-এর উত্তরসূরি হিসেবে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান এই বাংলাদেশে আগমন করেছেন। তিনি ছিলেন একদিকে যুগের মহান ইমাম এবং অপরদিকে মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবদানকারী। তাই আজ শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বহু মানুষ সূফী সম্রাটের দরবারে ছুটে আসেন এবং আত্মশুদ্ধি অর্জনের শিক্ষা লাভ করে থাকেন। বিশেষ করে ভারতের কলকাতায় সূফী সম্রাটের বহু সংখ্যক ভক্ত মুরিদান রয়েছেন। সেকারণেই ১৯৯২ সাল থেকে ভারতের কলকাতার খিদিরপুরে শুরু হয় বিশ্ব সূফী সম্মেলন। এ সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী আলহাজ কলিমুদ্দীন শামস, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান, প্রফেসর ড. ওসমান গণী এবং কলকাতা হাইকোর্টের অনেক সিনিয়র অ্যাডভোকেটসহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত থাকতেন। এ অনুষ্ঠানে খোদায়ি প্রশাসনের অনেক অলী-আল্লাহও ছদ্দবেশে উপস্থিত থাকতেন।


১৯৯৭ সালের ঘটনা। কলকাতার অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমরা বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিদল যথাসময়ে খিদিরপুরে পৌঁছি। অনুষ্ঠানে পদাধিকার বলে সভাপতিত্ব করতেন- আশেকে রাসুল পরিষদ, ইন্ডিয়ান ব্রাঞ্চ কাউন্সিলের সভাপতি মহোদয়। সেই মোতাবেক আলহাজ ডা. আবদুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতির আসনে বসা ছিলেন। তিনি আমার সাথে আলাপ করে বক্তাদের নাম ঘোষণা করতেন। এক পর্যায়ে কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতির নাম ঘোষণা করা হলে, তিনি বক্তৃতা দিতে মাইকের সামনে এসে দাঁড়ালেন। খিদিরপুরের অনুষ্ঠান মঞ্চে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান (রহ.)-এর নাম মোবারকের পূর্বে যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব লেখা ছিল। তাই উক্ত বিচারপতি জনাব আবদুর রহমান বক্তব্য দিতে গিয়ে ঐ লেখার বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত শুরু করে বললেন- ব্যানারে দেওয়ানবাগী হুজুরকে যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমার মনে একটি প্রশ্ন জেগেছে যে, আমরা জানি হযরত মোহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ (সা.) হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। এছাড়া অন্য কারো নামে শ্রেষ্ঠ মহামানব লেখা সঠিক হবে কিনা? একথা বলা মাত্রই সামনে দেখতে পেলাম, ছদ্দবেশী একজন লোক মঞ্চের দিকে দৌঁড়িয়ে আসছেন, আর চিৎকার করে বলছেন- ‘গলদ বাত বোল রাহা হ্যায়, গলদ বাত বোল রাহা হ্যায়’ অর্থাৎ- ভুল কথা বলছেন। ঐ ছদ্দবেশী লোকটিকে মঞ্চের দিকে দৌড়িয়ে আসতে দেখে আমি আমাদের কর্মীদের ঐ ব্যক্তিকে থামানোর জন্য ইশারা দিলে, কয়েকজন কর্মী তাকে সামনে আসতে বাধা দেয়। তিনি থেমে গেলে কর্মীরা তাঁকে বসতে দেয়। ঐ বক্তার বক্তব্য শেষ হলে আমাদের বাংলাদেশের সাবেক ধর্ম মন্ত্রী জনাব নাজিমউদ্দীন আল আজাদ বক্তৃতা করতে দাঁড়ান। শুরুতেই তিনি সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানকে যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব বলে সম্বোধন করলে, ঐ ছদ্দবেশী লোকটি বসা থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেন- ‘সহী বাত বোল রাহা হ্যায়’, ‘সহী বাত বোল রাহা হ্যায়’, অর্থাৎ- সঠিক কথা বলছেন। কলকাতার খিদিরপুরের সেদিনকার সম্মেলনের কথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে- ছদ্দবেশী কুতুবের সেই খুশির চিৎকার- ‘সহী বাত বোল রাহা হ্যায়’। আসলে ছদ্দবেশী ঐ লোকটি ছিলেন একজন কুতুব। তাই অলীদের বাদশাহ্ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান যে যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব, ঐ কুতুব ভারতের কলকাতার সম্মেলনে তার বাস্তবতা প্রমাণ করেছেন। আরো আনন্দের বিষয় ছিল যে, সম্মেলনের শেষভাগে সূফী সম্রাটের আদর্শ অনুসারী নতুন মানুষদেরকে ক্বালবি জ্বিকিরের সবক দেওয়া হয়ে থাকে। সেই মোতাবেক আমাদের দরবার শরীফের আলেমগণ যখন লোকদের ক্বালব দেখাতে আরম্ভ করেন- এ সময় ঐ কুতুব লোকদের হাত ধরে সামনে এনে বলতে লাগলেন- সীনা দেখাও, সীনা দেখাও। কলকাতা সম্মেলনে কুতুবের ভূমিকা দেখে বুঝতে পেরেছি যে, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান যেহেতু বিশ্বের সকল অলী কুতুবদের বাদশাহ্, সুতরাং তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা বিশ্বের অলী কুতুবগণেরই দেওয়ার দায়িত্ব। আর বাস্তবে সেটাই লক্ষ্য করা গেল।

কলকাতায় জনৈক আলেমের প্রতি কুতুবের ক্ষোভ
দেশ পরিচালনার জন্য যেমন সরকার থাকে, সরকারি প্রশাসন থাকে এবং তাদের মাধ্যমে একটি দেশ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, অনুরূপভাবে খোদায়ী প্রশাসন পরিচালনার জন্যও আল্লাহর অলীগণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কুতুব হলেন- দেশ রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন আধ্যাত্মিক সৈনিক, যাঁর উপরে কোনো শহর, বন্দর ও নগরে খোদায়ী প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব থাকে। সাধারণ মানুষ তাঁদের পরিচয় জানতে পারলে সময়ে অসময়ে বিরক্ত করবে, ফলে তাদের আসল কাজ ব্যাহত হবে। সেই কারণেই তাঁরা নীরব নির্জনে এবং ছদ্মবেশে থাকেন। তাঁরা কোনো বিশেষ কারণ ব্যতীত মানুষের প্রতি রাগ বা অসন্তোষ প্রকাশ করেন না। কারণ তাঁরা হলেন আল্লাহর বন্ধু। আল্লাহর ইচ্ছাতেই তাঁরা পরিচালিত হন।


১৯৯৬ সালের ঘটনা। আমরা ভারতের কলকাতায় আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে সদ্য সমাপ্ত করলাম। অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ও হিন্দি এই ৪ (চার) ভাষায় প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকায় সম্মেলনের খবর ফলাও করে ছাপা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কলকাতার দূরদর্শন টেলিভিশন চ্যানেলে আমাদের ছবিসহ খবর প্রকাশ করেছে এবং অল ইন্ডিয়া রেডিও সম্মেলনের খবর প্রচার করেছে। আমরা সম্মেলন কেন্দ্রের সন্নিকটে একটি ভবনের ৩ তলায় থাকতাম। প্রতিবছর সম্মেলনের পরের দিন আমরা উপমহাদেশের অন্যতম ২ জন শ্রেষ্ঠ অলী-আল্লাহ্ হযরত ওয়াজেদ আলী (রহ.) ও হযরত ফতেহ আলী (রহ.)-এর রওজা শরীফ জিয়ারত করতে যেতাম। সেই মোতাবেক আমরা জিয়ারতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। আমাদের সাথে হাফেজ সফিকুল ইসলাম নামে জনৈক আলেম ছিলেন। বাংলাদেশের ঢাকার জনাব আফজালুর রহমান খান, জনাব আবদুল বাতেন মোল্লা, রংপুরের জনাব শহিদুল ইসলাম এবং কলকাতার জনাব মো. শরীফ তার সঙ্গে ছিলেন। তারা খিদিরপুরের গ্রান্ড আজাদ ময়দানের বিপরীত দিকে রাস্তার পার্শ্বে দাঁড়ানো ছিলেন। এসময় আমি এবং চাঁদপুরের জনাব আবদুল কাদের পাটোয়ারী ভবন থেকে নেমে রাস্তাপাড় হওয়ার মুহূর্তেই দেখতে পেলাম, ছদ্দবেশী বেশ লম্বা একজন বয়স্ক মানুষ, পাকা দাঁড়ি, খালি গায়ে একখানা সংক্ষিপ্ত কাপড় পরা। অত্যন্ত ক্রদ্ধ অবস্থায় হাফেজ সফিকের সামনে এগিয়ে এসে মুখের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন-‘ডারহি তোর দেঙ্গে’ অর্থাৎ- তোমার দাড়ি ছিড়ে ফেলবো। একথা বলতে বলতে তিনি কয়েকবার হাফেজ সফিকের দাড়ি ছিড়তে চাইলেন। তখন কলকাতার শরীফ ভাই লোকটিকে ‘এই পাগল, যাও যাও’ বলে হাতের ইশারা করলেন। তখনও ঐ লোকটি বারবার সফিকের দিকে তাকাচ্ছিলেন। রাগে যেন তাঁর চোখ ফেটে যাচ্ছে। এ অবস্থা দেখে আবদুল কাদের পাটোয়ারী ভাই এবং আমি রাস্তা পাড় হয়ে ওপাড়ে যেতে না যেতেই ঐ ছদ্দবেশী লোকটি কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলেন। ঐ ঘটনা এ পর্যন্তই শেষ হয়ে গেল। আমরা যথারীতি আমাদের কাজ সমাপ্ত করে নির্দিষ্ট তারিখেই ঢাকার বাবে রহমতে এসে পৌঁছালাম। সূফী সম্রাট দয়াল বাবা কেবলাজান দোতলায় তাঁর হুজরা শরীফে ছিলেন। আমি এবং রংপুরের শহিদুল ভাই দয়াল বাবাজানের সাথে দেখা করতে যাওয়া মাত্রই বাবাজান আমার কাছে জিজ্ঞেস করলেন- কলকাতায় কি কোনো গণ্ডগোল হয়েছে? বাবাজানের এ প্রশ্ন শুনে আমি যেন অবাক হয়ে গেলাম। কারণ কলকাতায় সম্মেলন সফল হলো, কোথাও কোনো গণ্ডগোল হয়নি, অথচ বাবাজান জিজ্ঞেস করলেন গণ্ডগোলের কথা। বাবাজানের কথা শুনে আমি নীরব হয়ে গেলাম। এসময় শহিদুল ভাই বললেন- বাবাজান! এক ছদ্দবেশী পাগল হাফেজ সফিকের দাঁড়ি ছিড়তে চেয়েছিল। একথা শুনে আমার সব ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমি তখন সেদিনকার সকল ঘটনা বাবাজানকে অবহিত করি। আমার কথা শুনে দয়াল বাবাজান বললেন- সে তো বেয়াদবি করেছে। তাই ছদ্দবেশী লোকটি তার উপরে ক্ষিপ্ত হয়েছে। ঐ লোকটি একজন কুতুব। সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানের কথা শুনে বুঝতে পারলাম ঐ ছদ্দবেশী লোকটি আসলে পাগল নন, একজন কুতুব ছিলেন। অবশ্য পরবর্তী সময়ে হাফেজ সফিকের বেয়াদবির কারণ আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। সে দরবার শরীফ ছেড়ে দিয়ে বিদেশে চলে গেছে।

কলকাতার শহর কুতুবের সম্মেলন এলাকা পরিদর্শন
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টি এ বিশ্বজাহান পরিচালনার জন্য অসংখ্য অলী-আল্লাহ্ রয়েছেন। অলী-আল্লাহ্ তিন শ্রেণির যথা- (১) হাদি শ্রেণির অলী-আল্লাহ্, (২) মাজ্জুব শ্রেণি এবং (৩) দেশ রক্ষক অলী-আল্লাহ্। হাদি শ্রেণির অলী-আল্লাহ্ চার শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা (১) অলী-আল্লাহ্, (২) অলীয়ে কামেল এবং (৩) অলীয়ে মোকাম্মেল এবং (৪) মোজাদ্দেদে জামান।
আর দেশ রক্ষক অলী-আল্লাহর মধ্যে ৪০টি র‌্যাংক বা পদবী রয়েছে। এই সকল দেশ রক্ষক অলী-আল্লাহর যিনি প্রধান থাকেন তাঁকে কুতুবুল আকতাব বলা হয়। তাঁর অধীনে কুতুব, গাউস, আখিয়ার, আওতাব ও আবদাল এ রকম ৪০টি র‌্যাংকের অলী-আল্লাহ্ থাকেন। প্রতিটি শহর, বন্দর ও নগর রক্ষার জন্য একজন কুতুব থাকেন। এই সকল কুতুবদের প্রধানকে কুতুবুল আকতাব বলে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন শহর, বন্দর ও নগরের দায়িত্বে এক একজন কুতুব নিয়োজিত থাকেন। সারাটা বিশ্ব জুড়ে কুতুবগণ আল্লাহর হুকুমে দেশ রক্ষার কাজে সাহায্য করেন। পূর্বে ঢাকার শহর কুতুব যিনি ছিলেন, তিনি ইমাম হুজুরের দরবারে যেতেন। সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুরের সাথে তিনি শহর রক্ষার বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। জয়দেবপুরের কুতুব ও কক্সবাজারের কুতুবকে আমি সূফী সম্রাট হুজুরের দরবারে আসতে দেখেছি। তাছাড়া কলকাতার শহর কুতুবও যিনি মহিলা ছিলেন, তিনি অলৌকিকভাবে সূফী সম্রাটের বাসায় এসে দয়াল মায়ের সাথে দেখা করে গেছেন। উল্লেখ্য যে, হাদি শ্রেণির অলী-আল্লাহ্ কোনো মহিলা থাকেন না, কিন্তু দেশ রক্ষক অলী-আল্লাহগণের মধ্যে মহিলা অলী-আল্লাহ্ থাকেন।
ভারতের কলকাতার খিদিরপুর এলাকার গ্রান্ড আজাদ ময়দানে বিশ্ব সূফী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতো। ২০০১ সালের ঘটনা। সেই বছর কলকাতায় বিশ্ব সূফী সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। আমরা দয়াল বাবাজানের নির্দেশে কলকাতায় গমন করি। কিন্তু ঐ বছর সম্মেলন করা একটু কঠিন হয়ে পড়লো। কারণ কলকাতার খিদিরপুর গ্রান্ড আজাদ ময়দানের যে স্থানে আমাদের সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছিল, ঠিক সেই একই স্থানে গোটা পশ্চিম বাংলার মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএম) বার্ষিক সভা আহ্বান করা হয়। দেখা গেল একই তারিখে, একই সময়ে এবং একই স্থানে বিপরীত মুখী দু’টি সংগঠনের অনুষ্ঠান। এটা সত্যিই কল্পনা করা যায় না। এমন একটা কঠিন অবস্থায় কলকাতার জাকের ভাইয়েরা সম্মেলন নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কেননা, কমিউনিস্ট পার্টির কমরেডরা ধর্মকর্ম মানে না। অথচ আমাদের অনুষ্ঠানটি ছিল সম্পূর্ণ ধর্মীয়।


সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের নির্দেশক্রমে আমি কলকাতার খিদিরপুরে সম্মেলনের আগের দিন পৌঁছে যাই। কলকাতার জনাব মো. শরীফ ভাইয়ের বাসায়, অ্যাডভোকেট জনাব আফজাল হোসেন, সাবেক পুলিশ বাহিনীর সদস্য জনাব মো. সেলিম এবং আমার সাথে বাংলাদেশের প্রফেসর ড. ফিরোজ ইকবাল ফারুকীসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। আমরা বসে পরবর্তী দিনে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। এমন সময় কলকাতার শহর কুতুব সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তাঁকে দেখেই জনাব সেলিম ভাই, যিনি সাদা দাঁড়ি বিশিষ্ট লোক ছিলেন। তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বলতে লাগলেন মা আসুন! উপস্থিত সকলেই তাঁকে সম্মান দেখালেন এবং বসতে দিলেন। তিনি আসন গ্রহণ করলেন। এ সময় কলকাতার সম্মেলনের আয়োজকরা শহর কুতুবের কাছে সম্মেলন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য দয়া কামনা করে বললেন, মা! আগামী দিন আমাদের বিশ্ব সূফী সম্মেলন, কীভাবে আমরা এ অনুষ্ঠান উদ্যাপন করবো এ ব্যাপারে আপনি দয়া করে আমাদেরকে পরামর্শ দিন। একথা শুনে কলকাতার শহর কুতুব বললেন, তোরা কোনো চিন্তা করিস না। দয়াল বাবাজান ও দয়াল মা রয়েছেন, তাঁরাই সবকিছু দেখবেন। আমিতো এসে গেলাম, এখন তোরা তোদের কাজ কর। একথা বলেই ঐ কুতুব চলে গেলেন। আল্লাহর কি অপার দয়া, এরপর থেকেই সম্মেলনের বাধা কেটে যায়। জনাব শরীফ ভাই আমাকে নিয়ে সম্মেলন স্থানে গেলেন এবং বললেন, মান্নান ভাই! চলুন কমরেডদের অফিসে যাই। নিকটেই সিপিএম-এর অফিস ছিল, আমরা দু’জন সেখানে গেলাম। দেখি একজন কমরেড নেতা বসা রয়েছেন। তিনি আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়ে বসতে বললেন। অতঃপর আমার সাথে আলাপ করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। আমি ঐ কমরেড নেতাকে বললাম দাদা! আগামীকাল আপনাদের বার্ষিক সভা এবং আমাদের সূফী সম্মেলন একই স্থানে, একই সময়। এখন কীভাবে করলে ভালো হবে আপনি পরামর্শ দিন। আমার কথার জবাবে কমরেড নেতা বললেন- দাদা! আপনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, আপনারা আমাদের অতিথি, আপনাদের অনুষ্ঠানটি যথাসময়ে গ্র্যাণ্ড আজাদ ময়দানে হবে। আর আমরা বিকালে ভিতরের দিকে আমাদের সভা করবো। আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। ঠিক হলোও তাই। দয়াল বাবাজানের বিশেষ দয়ায় সেবছর কলকাতার সূফী সম্মেলনটি অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল।
[লেখক: সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা]

সম্পর্কিত পোস্ট