রোজার হাকিকত ও তা পালনের উত্তম পদ্ধতি
মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান
মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ মাহ্বুব, কুল-কায়েনাতের রহমত বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে প্রেরণ করে বিশ্ববাসীর শান্তি ও মুক্তি লাভের জন্য পরিপূর্ণ ধর্ম মোহাম্মদী ইসলাম উপহার দিয়েছেন। মোহাম্মদী ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। যথা : ১। আল্লাহ্ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই আর মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল, ২। সালাত বা নামাজ কায়েম করা, ৩। যাকাত প্রদান করা, ৪। রমজান মাসে রোজা রাখা ও ৫। বাইতুল্লায় হজ করা।
মোহাম্মদী ইসলামে রোজার গুরুত্ব এতই অপরিসীম যে, এটি মূল স্তম্ভের অন্যতম। রোজা ফার্সি শব্দ, আরবি ভাষায় একে সাওম বলে। সাওম একবচন, বহুবচনে সিয়াম। সাওম শব্দের আভিধানিক অর্থ- বিরত থাকা, পানাহার পরিহার, উপবাস ইত্যাদি। রোজার পারিভাষিক সংজ্ঞা হলো- সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত হয়ে অন্তরে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকাকে রোজা বলে। রোজা রাখার বিধান সর্বযুগে ছিল। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সর্বশেষ নবি ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সকল নবি-রাসুলের যুগেই রোজার বিধান ছিল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন- “হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা মোত্তাকি হতে পার। রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তবে তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা সফরে থাকলে সে অন্য সময়ে রোজার সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর রোজা যাদের জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক, তারা এর পরিবর্তে ফিদ্য়া দেবে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করে। কেউ স্বতঃস্ফুর্তভাবে সংকাজ করলে তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। যদি তোমরা রোজা রাখ, তবে তা হবে তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে। রমজান মাস, এ মাসেই কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়েত, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোজা রাখে। তবে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা সফরে থাকলে সে অন্য সময়ে রোজার সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ্ চান তোমাদের জন্য সহজ করতে, তিনি এমন কিছু চান না যা তোমাদের জন্য কষ্টকর। যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার দরুন আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করো এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।” (সূরা আল বাকারাহ ২ : আয়াত ১৮৩ থেকে ১৮৫)
রোজার বিধান প্রবর্তনের নেপথ্যে আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের এক গুপ্ত রহস্য বিদ্যমান রয়েছে। সুফিদের বর্ণনায় সেই গুপ্ত রহস্যের বর্ণনা এরূপ- “সৃষ্টির আদিতে মহান আল্লাহ্ স্বীয় সত্তা থেকে নফ্সকে আলাদা করে প্রশ্ন করলেন- আমি কে? আর তুমি কে? নফ্স উত্তর দিল, তুমি তুমি আর আমি আমি। এ জবাব শুনে আল্লাহ্ তায়ালা অসন্তুষ্ট হয়ে নফ্সকে সত্তর হাজার বছর আগুনের মধ্যে দগ্ধীভূত করে পুনরায় প্রশ্ন করলেন- আমি কে? আর তুমি কে? নফ্স এবারও জবাব দিলো তুমি তুমি, আর আমি আমি। এতে মহান আল্লাহ্ নফ্সকে শায়েস্তা করার জন্য সত্তর হাজার বছর বরফ চাপা দিয়ে রাখলেন। অতঃপর নফ্সকে পুনরায় প্রশ্ন করলেন- তুমি কে? আর আমি কে? এবারও নফ্স পূর্বের ন্যায় উত্তর দিলো, তুমি তুমি, আর আমি আমি। এবার আল্লাহ্ দারুনভাবে অসন্তুষ্ট হয়ে নফ্সকে সত্তর হাজার বছর অনাহারে রাখলেন। ফলে দীর্ঘকাল অনাহারে থেকে নফ্স দুর্বল হয়ে পড়ল। এবার আল্লাহ্ তায়ালা তাকে পূর্বের ন্যায় একই প্রশ্ন করলে নফ্স আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করে বিনীতভাবে জবাব দিলো- তুমি আমার প্রভু এবং আমি তোমার অনুগত দাস।” যেহেতু উপবাসের ফলে নফ্সের স্বেচ্ছাচারিতা দূর হয়ে আল্লাহ্তে আত্মসমর্পণের অবস্থার সৃষ্টি হয়, সেহেতু নফ্সের এসলাহ তথা সংশোধনের জন্য প্রত্যেক নবির উম্মতের উপর আল্লাহ্ তায়ালা রোজা ফরজ করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানগুলোকে শৃঙ্খলিত করা হয়।” (বোখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৫)
প্রকৃতপক্ষে রজমান মাসে মানুষের নফ্সের কুরিপুসমূহকে রোজার বিধানে বন্দী রাখা হয়। এর ফলে নফ্স শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়। এজন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “রোজা ঢাল স্বরূপ। যখন তোমাদের কেউ রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে। চিৎকার করে চেঁচিয়ে কথা না বলে। যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় কিংবা তার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে উদ্যত হয়, তবে সে যেন বলে- আমি রোজাদার।” (বোখারী শরীফ, হাদিস নং ১৯০৪)
এভাবে একজন রোজাদার ব্যক্তি দৈনন্দিন জীবনের পথ চলতে গিয় নফ্সের কুরিপুসমূহকে আল্লাহর বিধানে বন্দি রেখে সংযমী হয়ে চলার তালিকা গ্রহণ করে, এর ফলে রমজান পরবর্তী এগারোটি মাস সে মোতাবেক চলা তার জন্য সহজ হয়ে যায়। মূলে সংযমশীলতার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাকওয়া অর্জনের নিমিত্তেই রোজা আমাদের মাঝে ঘুরে ঘুরে আসে। এজন্য মুসলিম শরীফের কিতাবুত তাহারাত অধ্যায়ে হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, এক জুম‘আ থেকে অন্য জুম‘আ, এক রমজান থেকে অন্য রমজান পর্যন্ত মাঝখানের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদি কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে ।
রোজার হাকিকত
কেবলমাত্র রোজা নয়, প্রতিটি ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য মহান প্রভু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর দিদার লাভ করা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন- “হে রাসুল (সা.)! আপনি বলুন- নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমার জীবন ও মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।” (সূরা আল আনআম ৬ : আয়াত ১৬২)
প্রকৃতপক্ষে রিপুতাড়িত হয়ে আল্লাহর সাথে বান্দার যে দূরত্ব রচিত হয়, সিয়াম সাধনা হচ্ছে সে দূরত্বকে ঘুঁচিয়ে আল্লাহর সাথে যোগাযোগের কৌশল শিক্ষা করার এক মহান সুযোগ। এমনিভাবে রোজার মূল উদ্দেশ্যই মহান আল্লাহ্কে পাওয়া।
আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ্ বলেন- “আদম সন্তানের প্রতিটি ইবাদতই তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা ব্যতীত। নিশ্চয় রোজা আমার জন্য। তাই রোজার প্রতিদান আমি নিজেই। আর রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে, যা তাকে খুশি করে। যথা : ১। যখন সে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং ২। যখন সে তার প্রতিপালকের দিদার লাভ করে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে।” (বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা ২৫৫)
হাকিকতে সিয়াম সাধনায় উপনীত হতে হলে রোজার শ্রেণিবিন্যাস জানা আবশ্যক। রোজা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা :
১। সাধারণ শ্রেণির রোজা- সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধুমাত্র পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকাকে সাধারণ শ্রেণির রোজা বলা হয়। এজন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “যে (রোজাদার) ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কর্ম বর্জন করতে পারেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৫; ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত বোখারী শরীফ ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪২ ও ২৪৩)
২। মধ্যম শ্রেণির রোজা- পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকাকে মধ্যম শ্রেণির রোজা বলা হয়। এজন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে ও পুরস্কার লাভের নিয়তে রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্বের গোনাসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (বোখারী ও মুসলিমের সূত্রে তাফসীরে মাজহারী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২৪)
৩। উচ্চ শ্রেণির রোজা- পানাহার ও কামাচার পরিত্যাগ করত যাবতীয় পাপের কল্পনা থেকে মনকে পবিত্র রেখে সর্বক্ষণ আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন থাকাকে উচ্চ শ্রেণির রোজা বলা হয়। উচ্চ শ্রেণির রোজার দ্বারাই একজন মুসলমান আল্লাহ্ওয়ালা হতে পারে। এ রোজার বিনিময়ে সে আল্লাহ্কে লাভ করতে পারে এবং হাদিসে কুদসির এ বাণী মোবারকের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারে যে, মহান আল্লাহ্ বলেন- “রোজা আমার জন্য, তাই রোজার প্রতিদান আমি নিজেই।”
প্রকৃতপক্ষে রোজা পালনের মাধ্যমে যারা নিজের জীব-প্রবৃত্তিকে পরিশুদ্ধ করে হৃদয়ে আল্লাহ্কে সমাসীন করতে সক্ষম হয়েছেন, তারাই হাকিকতে রোজা পালনের মাধ্যমে সফলকাম হয়েছেন।
এজন্য উত্তম চরিত্র গঠনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য রমজানই প্রকৃষ্ট সময়। রোজা মানুুষের আমিত্বকে দূর করে আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দেয়। রোজার মাধ্যমে আল্লাহ্কে পাওয়ার অর্থ হলো নিজের মাঝে আল্লাহর চরিত্র বিকশিত হওয়া। তাই অন্তরের পাপ কালিমা বিদূরিত করে হৃদয় মাঝে বিরাজমান আল্লাহর সুপ্ত নুর বিকশিত করার লক্ষ্যে মুর্শেদের দেখানো পথে শুদ্ধভাবে রোজা পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।
এক্ষেত্রে আফসোস ও পরিতাপের বিষয় এই যে, আমরা যদি আমাদের প্রত্যেকের জীবন প্রবাহের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে দেখতে পাবো আমাদের জীবনে বছর ঘুরে ঘুরে মাহে রমজান আসছে, কিন্তু আমাদের নৈতিক চরিত্রে অর্থবহ পরিবর্তন যেমন আসছে না, তেমনি নিজেকে আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান করার মহান নেয়ামতও হাসিল হচ্ছে না। আমাদের চারিত্রিক সংযম কোনো রকম রমজানে অব্যাহত থাকলেও রমজান পরবর্তীতে চরিত্রে লুকিয়ে থাকা দোষ-ত্রুটি পুনরায় প্রকাশ পেতে থাকে।
ইবাদতের মূল লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ার প্রধান কারণ আল্লাহর মনোনীত মহামানবকে ছেড়ে দিয়ে ধর্মীয় বই-পুস্তক পড়ে নিজে নিজে ধর্ম করার প্রবণতা। ইসলামের সর্বযুগের ইতিহাস তালাশ করলে দেখা যাবে, সাহাবায়ে কেরাম যখনই আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সহবতে যেতেন, তখন বিনা ইবাদতে কেবল সহবতের বরকতে তাদের নফ্সের কুপ্রবৃত্তি নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ত, তারা দুনিয়ার লোভ-লালসা ভুলে গিয়ে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের প্রেমে দেওয়ানা হয়ে যেতেন। অতঃপর এ সহবতের বরকতে তাদের নফ্সের কুপ্রবৃত্তি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তো, তারা দুনিয়ার লোভ-লালসা ভুলে গিয়ে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের প্রেমে দেওয়ানা হয়ে যেত। অতঃপর এই সহবতের সাথে যখন ইবাদতযুক্ত হতো, তখন ইবাদতের উপকারিতা অকল্পনীয়ভাবে বহুগুণ বেড়ে যেত। নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে হযরত রাসুল (সা.)-এর সিরাজুম মুনিরা তথা প্রজ্বলিত প্রদীপের ধারক ও বাহক আওলিয়ায়ে কেরামের সহবত লাভ করলে বর্তমানেও রাসুলের ধর্মের রহমত, বরকত, নেয়ামত ও ফায়েজ লাভ করা যায়। আর এ পথে নিরবিচ্ছিন্ন সাধনার মাধ্যমে মঞ্জিলে মকসুদে উপনীত হওয়া যায়। উপমাস্বরূপ বলা যায়, যেমন-মাটি থেকে ইট তৈরি করার এক বিশেষ প্রক্রিয়া আছে। মাটিকে পানি মিশ্রিত করে কাদা বা লেইতে রূপান্তরিত করে ছাঁচে ঢেলে নির্দিষ্ট আকৃতি দেওয়া হয়। এ কাঁচা ইট রৌদ্রে শুকিয়ে তারপর ভাটায় এক নাগাড়ে দীর্ঘ দিন পোড়ানো হয়। ফলে আগুনের দীর্ঘ সংস্পর্শে থেকে মাটির স্বাভাবিক গুণাগুণ পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন এক চরিত্র অর্জিত হয়। আগুনে না পোড়ানো পর্যন্ত ইটের আকৃতি পেলেও মাটির পূর্ব গুণাগুণ থেকেই যায়। সেজন্য পানির সংস্পর্শে গেলে কাঁচা ইট গলে পুনরায় মাটির সাথে মিশে যায়। কিন্তু আগুনে পোড়ানো পাকা ইট শত চেষ্টা করলেও মাটির সাথে মিশিয়ে একাকার করা যাবে না। ঠিক তদ্রূপ আল্লাহ্ প্রেরিত মহামানবের পরামর্শ অনুযায়ী শুদ্ধভাবে ধর্ম পালন মানুষের চরিত্রকে একটি বিশেষ ছাঁচে ঢেলে উত্তম আকৃতি বিশিষ্ট করে ধীরে ধীরে স্থায়িত্ব ও পূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়। অতঃপর পূর্ণতা লাভকারী ব্যক্তি শত প্ররোচনা, প্রলোভন, ভয়-ভীতি সত্ত্বেও নিজের উত্তম চরিত্র বিসর্জন দিয়ে অন্যের সাথে আপোষ করে না কিংবা পাপাচারে জড়িয়ে পড়ে না।
এমনিভাবে সঠিক নিয়মে রোজা পালন করে মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছতে হলে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.) প্রদত্ত রোজার হুকুম-আহকাম যেমন যথাযথভাবে পালন করা জরুরি, তেমিন যথাযসময়ে সাহরি ও ইফতার গ্রহণ করাও জরুরি।
সাহরির বিধান
অভিধানে সাহরির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- রমজান মাসে উপবাসব্রত পালনের উদ্দেশ্যে সূর্যোদয়ের পূর্বে গ্রহীত আহার্য। ইসলামি পরিভাষায় সাহরি বলতে রোজা রাখার নিয়তে রমজান মাসে ভোর রাতের খাবারকে সাহরি বলা হয়। সাহরি হচ্ছে বরকতের খাদ্য। আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজে সাহরি গ্রহণ করতেন এবং উম্মতে মোহাম্মদীকে সাহরি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। রোজা রাখার নিয়তে সাহরি গ্রহণের গুরুত্ব এতো বেশি যে, মহান আল্লাহ্ও বিষয়টি ওহির বাণী আল কুরআনে বলে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন- “তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা পরিষ্কার দেখা যায়।” (সূরা আল বাকারাহ ২ : আয়াত ১৮৭) সাহরি বিলম্বে গ্রহণ করা মুস্তাহাব। হযরত হুযায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- “আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সাথে এমন সময় সাহরি খেয়েছি যে, তখন দিন হয়ে গিয়েছিল, তবে সূর্য উদিত হওয়া বাকি ছিল।” (তাফসীরে ইবনে কাছির ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২০) অন্য হাদিসে হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন- “বিলালের আযান এবং পূর্ব আকাশের এরূপ শুভ্র আলো যথক্ষণ না তা পূর্ব দিগন্তে প্রসারিত হয়, যেন তোমাদেরকে সাহরি খাওয়া থেকে বিরত না রাখে।” (আবু দাউদ শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২০)
প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে মানবজাতির উপর কোনো কঠিন বিধি-বিধান চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং আল্লাহ্ চান আমাদের জন্য সহজ করতে। তিনি এমন কিছু চান না, যা তাঁর বান্দাদের জন্য কষ্টকর। কিন্তু সাহরি গ্রহণের ব্যাপারে আমাদের সমাজের প্রচলিত রীতিনীতিতে দেখা যায়, সূর্যোদয়ের দেড়-দুই ঘন্টা পূর্ব হতেই পানাহার পরিত্যাগ করার নিয়ম আমরা বানিয়ে নিয়েছি, যার ফলে রোজা পালনের সময়কাল অযথা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে অনেকের জন্য রোজা পালন করা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অথচ পবিত্র কুরআন ও হাদিসে সাহরি গ্রহণের শেষ সীমা সুস্পষ্টভাবে যেমন বলে দেওয়া হয়েছে, তেমনি বিলম্বে সাহরি গ্রহণ করা মুস্তাহাব বা উত্তম।
ইফতারের বিধান
ইফতার শব্দের আভিধানিক অর্থ রোজা ভঙ্গ করা। শরিয়তের পরিভাষায় রোজাদার ব্যক্তি সূর্যাস্তের পর যা কিছু খেয়ে অথবা পান করে রোজা ভঙ্গ করে, তাকে ইফতার বলা হয়। সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে সাথে সাথে ইফতার করা উত্তম। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন- “মানুষ কল্যাণের সাথে থাকবে ততকাল, যতকাল তারা শীঘ্র শীঘ্র ইফতার করবে।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৩) অন্য হাদিসে হযরত রাসুল (সা.) আরো বলেন- “দ্বীন জয়ী থাকবে ততদিন, যতদিন লোকেরা শীঘ্র শীঘ্র ইফতার করবে। কেননা ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা ইফতার করে দেরিতে।” (আবু দাউদ শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২১)
এমনিভাবে আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন- “আমার বান্দাদের মধ্যে আমার নিকট অধিকতর প্রিয় সেই ব্যক্তি, যে শীঘ্র শীঘ্র ইফতার করে।” (তিরমিজী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫০)
তবে সূর্যাস্তের পর পরই ইফতার করার জন্য হযরত রাসুল (সা.) মুসলমানদের তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও আমাদের সমাজে সূর্যাস্তের পর ১৪ থেকে ১৮ মিনিট পর্যন্ত বিলম্ব করে ইফতার করার রেওয়াজ চালু ছিল। ইফতার গ্রহণের ক্ষেত্রে এরূপ অহেতুক বিলম্ব আমাদের রোজা পালনকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছিল এবং আমরা হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশ অমান্য করে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের পর্যায়ভুক্ত হচ্ছিলাম। ১৯৯৩ সালের পূর্ব পর্যন্ত ইফতার গ্রহণের ব্যাপারে আমরা অযথা এ বিলম্বটি করে আসছিলাম, যা ছিল সুস্পষ্ট ভুল এবং হাদিস পরিপন্থি। যেহেতু পরম করুনাময় রাব্বুল ইজ্জতের পক্ষ থেকে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর আমার উপর জামানার মোজাদ্দেদ বা মহান সংস্কারকের দায়িত্ব অর্পিত হয়, সেহেতু ইসলাম ধর্মে মিশে যাওয়া কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস দূর করে ধর্ম পালনের সঠিক পথনির্দেশনা দিতে আমাকে কাজ শুরু করতে হয়। এ কাজের ধারাবাহিকতায় আমি লক্ষ্য করি আমাদের দেশে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ কর্তৃক প্রকাশিত সাহরি ও ইফতারের সময়সূচিতে সূর্যাস্তের ১৪ থেকে ১৮ মিনিট পর ইফতারের সময় নির্ধারণ করা রয়েছে। অতঃপর আমি হাদিস অবমাননাকর এ সময়সূচি পরিবর্তনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব উত্থাপন করি। এ ঘটনাটি ১৯৯৩ সালের। আমি ১৯৯৩ সালে ফেব্রুয়ারি-মার্চে উদ্যাপিত পবিত্র রমজানের রোজার সাহরি ও ইফতার সময়সূচি পবিত্র কুরআন ও হাদিস সম্মতভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্ধারণ করি এবং সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর তা পৌঁছে দেই। মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় ১৯৯৩ সালের ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন ধর্মমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তা গৃহীত হয়। এর ফলে সূর্যাস্তের সময়ের সাথে ৩ মিনিট যোগ করে ইফতারের সময় নির্ধারণ করা হয়। পবিত্র কুরআন ও হাদিস সম্মত সাহরি ও ইফতার এ সময়সূচি রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত ও বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে ১৯৯৩ সাল থেকে আজ ২০২০ সালের এপ্রিল মে-তে উদ্যাপিত চলমান এ রোজা পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ যথাসময়ে ইফতার গ্রহণের সুযোগ লাভ করেছেন। আসলে এটি একান্তই মহান রাব্বুল আলামিনের মহান ইচ্ছা ও দয়া যে, তিনি তাঁর কোনো বান্দাকে দিয়ে ধর্মের সংস্কার করাবেন! লাখো সালাম! হে দয়াময় খোদা।
রোজা পালনের উত্তম পদ্ধতি
পূর্বেই আলোচনা করছি- রোজা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। সাধারণ শ্রেণির রোজা, মধ্যম শ্রেণির রোজা ও উচ্চ শ্রেণির রোজা। যারা সাধারণ শ্রেণির রোজা রাখছেন, তাদের কর্তব্য মধ্যম শ্রেণির রোজা রাখার চেষ্টা করা। আর যারা মধ্যম শ্রেণির রোজা রাখছেন, তাদের কর্তব্য উচ্চ শ্রেণির রোজা রাখার জন্য চেষ্টা করা।
সাধারণ মানুষ যে রোজা পালন করে, বিভিন্ন ত্রুটির কারণে তা আল্লাহর দরবারে কবুল না হওয়ায় তারা রমজানের ফজিলত থেকে বঞ্চিত থাকে। তাই মুসলমান জাতি যাতে রমজানের রোজা পালন করে আল্লাহর দরবারে তা কবুল করাতে পারে, সেজন্য ইফতারির পূর্ব মুহূর্তে মিলাদ শরীফ পাঠ করা উত্তম। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- “আর যদি তারা নিজেদের উপর জুলুম করার পর আপনার কাছে আসত, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসুল (সা.)ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তবে নিশ্চয় তারা আল্লাহ্কে তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু পেত।” (সূরা আন নিসা ৪ : আয়াত ৬৪)
মিলাদ শরীফ হলো আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে স্মরণ করার সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। এর মাধ্যমে কুল কায়েনাতের রহমত হযরত রাসুল (সা.)-এর রহমত যেমন হাসিল করা যায়, তেমনি মিলাদের বরকতে ইবাদতের ভুল ত্রুটি ক্ষমা হয় এবং ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল করানো সহজ হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ্ তায়ালা তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং তার মর্যাদার দশটি স্তর বৃদ্ধি করা হয়।” (নাসায়ী শরীফের সূত্রে তাফসীরে মাজহারী ৭ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭৮)
এমনিভাবে এ মিলাদের গুরুত্ব এতবেশী যে, মহান আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উপরে দরূদ পড়েন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতারা নবির উপরে দরূদ পাঠ করেন, হে মু’মিনগণ! তোমরাও তার উপরে দরূদ পড় এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো।” (সূরা আল আহযাব ৩৩ : আয়াত ৫৬)
সুতরাং আমরাও যদি সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের কিছু সময় পূর্বে পরিবারের সকলকে নিয়ে একত্রে মিলাদ শরীফ পাঠ করি, হযরত রাসুল (সা.)-এর অসিলা ধরে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার মানসে আজিজির সাথে দরূদ, সালাম, মিলাদ পড়ি, তবে নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ্ আমাদের রোজা কবুল করে নেবেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল করা হয়েছে। যথা : ১। রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করা পর্যন্ত, ২। ন্যায়পরায়ণ ইসলাম বা যুগের ইমামের দোয়া, ৩। মজলুম ব্যক্তির দোয়া।” (তিরমিজি শরীফ ও মুসনাদে আহমদ)
এমনিভাবে শেষ রাতে রহমতের সময় যদি আমরা আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করে মিলাদ পাঠ করি, অতঃপর সাহরি খেয়ে রোজা রাখি, তাহলে মিলাদের বরকতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে পুরস্কার প্রদান করবেন। আর সে পুরস্কার রমজানের রোজা কবুলের মাধ্যমেই তিনি বান্দাকে দান করে থাকেন। অপরদিকে ইফতার করার মাধ্যমে রোজার সমাপ্তি ঘটে। আমরা দিবস শেষে কখন সূর্য অস্ত যাবে, সেজন্য অপেক্ষা করতে থাকি। এ সময় যদি আমরা মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ মাহবুব হযরত রাসুল (সা.)-কে স্মরণ করি অর্থাৎ- ইফতারের পূর্বে যদি আমরা হযরত রাসুল (সা.)-এর উপর দরূদ পড়ি এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করি, অতঃপর ইফতার করি তবে মহান আল্লাহ্ দয়া করে রোজা কবুল করবেন এবং রোজা কবুলিয়াতের ফায়েজ রোজাদার ব্যক্তির অন্তরে ওয়ারেদ হতে থাকে। তখনই ঐ রোজাদার ব্যক্তি হাদিস শরীফের এ বাণীর বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় যে, ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়।
এখানে একটি বিষয় স্মরণ রাখা কর্তব্য, আর তা হলো- মহান আল্লাহ হলেন মহাবিশ্বের মহান মালিক ও প্রতিপালক। এ মহান প্রভু নিজেই যে রোজার প্রতিদান, সে রোজা আমাদেরকে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে পালন করতে হবে। অথচ আমরা আত্মপর্যালোচনা করলে দেখতে পাবো, আমাদের রোজা নানাবিধ কারণে ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে হযরত রাসুল (সা.) হলেন উম্মতের সুপারিশকারী। এ সুপারিশ কেবল মৃত্যুর পরে নয়, এ দুনিয়ার হায়াতে জিন্দেগিতেও হযরত রাসুল (সা.)-কে মিলাদের মাধ্যমে স্মরণ করলে এবং ইয়া রাসুলাল্লাহ্! ইয়া হাবিবাল্লাহ! বলে প্রেমময় করুণ সুরে ডাকলে, এখনও আশেকের প্রাণ দয়াল রাসুল (সা.), তাঁর ঐ উম্মতের সাথে সাক্ষাৎ দানের জন্য অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে অন্তরচক্ষুস্মান আশেকে রাসুলগণ মিলাদে হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার পেয়ে থাকেন।
এমনিভাবে সাহরি ও ইফতারের পূর্বে মোহাম্মদী ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী মিলাদ শরীফ পাঠ করলে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর কৃপা ও দয়া লাভ হয়। এর ফলে রোজাদার ব্যক্তি সহজেই মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছতে সক্ষম হয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে করণীয়
সম্মানিত আশেকে রাসুল জাকেরবৃন্দ! আপনাদের জন্য যখন এই লেখা তৈরী করছি, তখন ১১ মে ২০২০, সোমবার ১৭ রমজান ১৪৪১ হিজরি। করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে লকডাউন চলছে। আপনারা দেশ-বিদেশের যে যেখানে আছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, নিয়মিত মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফা শরীফ আমল করবেন। রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারের পূর্বে মিলাদ শরীফে পাঠ করবেন। আর করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকতে ইতিপূর্বে আমি মানত করে রাখতে বলেছিলাম, সুতরাং মানত করে রাখবেন। মনে রাখবেন, আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া আমাদের আর কোনো আশ্রয় নেই। অতএব ক্বালবে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির খেয়াল করুন এবং আপন মোর্শেদের অসিলা ধরে আজিজির সাথে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকতে সচেষ্ট হোন। মহান আল্লাহ্ আপনাদের সহায় হোন। আমিন।
[লেখক : বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি প্রতিষ্ঠান দেওয়ানবাগ শরীফের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী]