লোভ রিপুর করাল গ্রাস এবং তা বাঁচার উপায়
ড. পিয়ার মোহাম্মদ
অতৃপ্ত বাসনাকে তৃপ্ত করার ও অপ্রাপ্ত বস্তুকে প্রাপ্তির প্রবল ইচ্ছার নাম লোভ। সাধারণত অতিরিক্ত লালসা, কামনা ও বাসনাকে লোভ বলা হয়। অতিরিক্ত বড়ো হওয়ার প্রবল আকাক্সক্ষাই লোভের জন্ম দেয়। মানুষ যখন লোভের বশীভূত হয়ে পড়ে তখন তার মানবতাবোধ, বিবেক, বিচক্ষণতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ও সৎ বুদ্ধি লোপ পায়। সে স্বপ্নচারী হয়ে স্বপ্নের সংসারে রাজা হয়ে লোভান্ধ হয়। তখনই সে লোভের নরকে নিক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং সমস্ত বিপদ ও ভয়াল সর্বনাশ তাকে ঘিরে ফেলে। অতিরিক্ত লোভের কারণে মানুষ বিবেকহীন হয়ে মনুষ্যত্ব, ধর্ম, কর্ম সব হারিয়ে ফেলে। তার জীবন অর্থহীন হয়ে উঠে।
লোভ এক অদ্ভুত রিপু। মানুষ মনে হয় শয়নে, স্বপনে জাগরণে লোভ রিপুর বশবর্তী। গভীর ঘুমের মধ্যে সুখ স্বপ্নে কোটি টাকার লটারি পাওয়াটাকে যে সুপ্ত ধনী হবার লোভ বলা যাবে না, এটা বলা মুশকিল। আবার এ লোভের অপুপস্থিতিতে মানুষ যে তার বর্তমান জীবনযাত্রার উন্নতি সাধনে ব্যর্থ হতো এ বিষয়ে খুব কম লোকই আপত্তি করবেন বলে মনে হয়। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে লোভ রিপুর তাড়নায় অসাড় সংসার চক্র ঘোরে নিরবধি। অদম্য, অসংযত কামনায় লোভে পরিণত হয়। সেজন্য সাধারণ মানুষের জাগতিক কর্মকাণ্ডের পিছনে লোভের অবদান সর্বাধিক। প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাহিদা আর অতিরিক্ত প্রয়োজনের দুনিয়া সৃষ্টি করার পিছনে এ লোভ রিপু অগ্রগামী। ষড়রিপুর অন্যতম হচ্ছে লোভ।
বৈধ বা অবৈধ, সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যাচাই না করে যখন কেউ মরিয়া হয়ে উঠে অর্থ বা অন্য কোনো কিছু পাওয়ার জন্য তখন বুঝতে হবে সে লোভের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ অবৈধ বা অন্যায়ভাবে কোনো কিছু হস্তগত করার জন্য পাগল হয়ে উঠাই লোভের দ্বারা আক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানুষ যদি তার কোনো ন্যায্য পাওনা বুঝে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে বা নিজের আয়ত্বে নেয় তবে এভাবে অর্জিত সম্পদ বা সম্পত্তিকে লোভের ফসল ভাবার সুযোগ নেই। বরং এটাই হওয়া উচিৎ। লোভ সম্পর্কে হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “লোভাতুর ও তৃষ্ণার্ত দুই ব্যক্তি যারা কখনোই তৃপ্ত হয় না, ইলম অর্জনে যে নিমগ্ন , তার লোভ কখনো শেষ হয় না, দুনিয়া অর্জনে যে লিপ্ত, সেও কখনো তৃপ্ত হয় না।” (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী হাদিস নং ৯৭৯৮) দুনিয়া অর্জনে লোভ যতটা নিন্দনীয়, আল্লাহ্র সন্তষ্টির জন্য ইলম অর্জনে সে লোভ ঠিক ততটাই প্রশংসনীয়।
লোভ যদি কাউকে কব্জা করতে পারে, তাহলে তার দ্বারা পৃথিবীর জঘন্যতম কাজটি করতে দ্বিধা হয় না। লোভ মানুষকে অন্ধ করে ফেলে। লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ তার মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলে। সমাজে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয় সেগুলোর সিংহভাগের নেপথ্য কারণ লোভ। লোভের বশবর্তী হয়ে ছেলে বাপকে খুন করে আর ভাই ছুরি বসিয়ে দেয় ভাইয়ের গলায়। লোভ মানুষকে প্ররোচিত করে বিশ্বাসঘাতকতা করতে। শুধু অর্থ নয়, বরং আরো অনেক পার্থিব অর্জনের নেশায় মানুষ পাগলপ্রায় হয়ে ওঠে। লোভই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে অপরের সর্বনাশ করতে এবং অপরাধে প্রবৃত্ত হতে। ঘুষ, দুর্নীতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই সবকিছুর মূলে রয়েছে লোভ। লোভ রিপু অসংযমী থাকলে অন্যায়ভাবে অন্য লোকের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করে মানুষ আত্মাকে কলুষিত করে থাকে। তার মধ্যে ধর্ম, অধর্ম এবং পাপ পুণ্যের কোনো বাচ বিচার থাকে না।
লোভ যেহেতু লিপ্সা বা কাম্য বস্তু লাভের প্রবল ইচ্ছা সেহেতু মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যত কাজকর্ম রয়েছে তার প্রতিটির পিছনে নিহিত রয়েছে লোভ। তবে লোভের রকমফের রয়েছে। লোভের পরিণাম হিসেবে আসে পাপ। পৃথিবীতে মানুষ যে লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড করছে তার মূলে রয়েছে অতি লোভ। লোভকে চরিতার্থ করতে মানুষ যে কোনো অসৎ উপায় অবলম্বন করতে পারে। মানুষ যখন লোভের বশবর্তী হয়ে পড়ে তখন তার মানবতা, বিবেক ও সুবুদ্ধি লোপ পায়। এ লোভকে সংবরণ করে জীবন ও জগতের কল্যাণ বিবেচনার মাধ্যমে চলতে পারলে লোভ তাকে সুখ স্বর্গে ভাসিয়ে দেয়। নিয়ন্ত্রিত লোভ পৃথিবীকে সাজিয়ে দিতে পারে অনাবিল আরাম আর কল্যাণময় উন্নতির পুষ্প কাননে। বৈধ বা অবৈধ কোনোভাবেই পার্থিব মালামালের জন্য লোভ করা সমীচীন নয়।
লোভ মানুষের অধঃপতনের মূল কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়। এটি একটি নৈতিক ত্রুটি। লোভ মানুষের জীবন থেকে সুখ কেড়ে নেয়। আল্লাহ্ তায়ালা তাকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন তার শুকরিয়াতো করেই না বরং যা পেয়েছে তার চেয়ে বেশি চায়। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “হে আলী জেনে রাখ! ভয়, কৃপণতা ও লোভ একই প্রকারের, আর তাদের মূলে হলো খারাপ ধারণা পোষণ করা।” হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগপালের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তারা এতটুকু ক্ষতি করতে পারে না একজন ব্যক্তির অর্থ ও যশের মোহ তার দ্বিনের যতটুকু ক্ষতি করতে পারে।” (ই. ফা. বা কর্তৃক অনূদিত তিরমিজি শরীফ ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৩৪) এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “তোমাদেরকে ভুলিয়ে রাখে প্রাচুর্যের লালসা; যে পর্যন্ত না তোমরা কবরে উপনীত হও।” (সুরা তাকাছুর ১০২: আয়াত ১-২)
লোভ মানুষের একটি স্বভাবজাত বিষয় বিধায় তার স্বভাবের অন্যান্য মন্দ বিষয়ের মতো লোভকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। লোভ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এর মন্দ প্রভাবের বশবর্তী হয়ে মানুষকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “কোনো আদম সন্তানের যদি এক পাহাড় ভর্তি স্বর্ণ থাকে, তবে অবশ্যই সে দ্বিতীয় আরেকটি চাইবে। মাটি ছাড়া আর কিছুই তার মুখ ভর্তি করতে পারবে না।” (ই. ফা. বা কর্তৃক অনূদিত, তিরমিজি শরীফ ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬১৬) মানুষকে এ জীবন কাজে লাগিয়েই অর্জন করতে হয় পরকালের পাথেয়। লোভের বশবর্তী হয়ে সারাক্ষণ সম্পদ আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়লে পরকালের সম্পদে ঘাটতি পড়ে। অর্থ সম্পদ, ক্ষমতা, পদমর্যাদা, প্রসিদ্ধি ও সুখ্যাতি লাভের প্রবল লোভ মানব চরিত্র গঠন ও সংশোধনের পথে বিরাট অন্তরায়। এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “আর তোমরা আকাক্সক্ষা করো না এমন কিছুর যাতে আল্লাহ্ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তোমাদের কাউকে কারো উপর।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ৩২)
আল্লাহ্ তায়ালা যেভাবে মানুষের হায়াত-মউত সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, জীবনের শ্বাস প্রশ্বাস যেমন সুনির্ধারিত, ঠিক তেমনি প্রতিটি মানুষের জন্যই তার রিজিকও নির্ধারিত। এর ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই। হযরত রাসুল (সা.)-এর বানী মোবারক থেকে এ বিষয়টি জানা যায় যে, “কারো নির্ধারিত রিজিক দুনিয়াতে পরিপূর্ণরূপে পাওয়ার আগে কিছুতেই কারও মৃত্যু হবে না। তাহলে আর লোভের পিছনে ছোটা কেন? অন্যের সঙ্গে শুধুই সম্মান আর সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা কেন?” আল্লাহ্ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ভয় করে, তিনি তার জন্য মুক্তির উপায় করে দিবেন। তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন যার ধারণাও তার নেই।” (সূরা তালাক ৬৫: আয়াত ২-৩) আর মর্যাদা ও সম্মানের বিষয়ে আল কুরআনে বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি যদি ইজ্জত লাভ করতে চায়, তবে সে জেনে রাখুক, সকল ইজ্জত আল্লাহ্রই জন্য।” (সূরা ফাতির ৩৫: আয়াত ১০)
লোভ খুবই দুর্দমনীয় রিপু। এ পৃথিবী এবং তাঁর মাঝে যা কিছু আছে তার কিছুই আমার নয়। কিছু কিছু জিনিষ শুধুমাত্র ব্যবহার করছি। আমি খালি হাতে চলে যাব। তখন এসব অন্য লোক ব্যবহার করবে। এ কথা গভীরভাবে ভাবতে শিখলে লোভ নিয়ন্ত্রণ হবে। লোভ রিপুকে বশীভুত করতে হলে একান্তভাবে আত্মসংযমী হতে হয়। সংযমী অভ্যাস মানুষের হিতাহিত বোধকে জাগ্রত করে, এর মাধ্যমে লোভ রিপু দমন করা যায়। মনে রাখতে হবে আল্লাহ্ তায়ালা বান্দার প্রকৃত বন্ধু ও অভিভাবক। তিনিই মানুষকে অতি ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। এ কারণে আল্লাহ্ দুনিয়ায় কোনো মানুষকেই রিজিক, আলো, বাতাস কোনো কিছু থেকেই বঞ্চিত করেননি। কাজেই লোভ করার প্রশ্ন থাকতে পারে না।
আরবিতে একটি প্রবাদ আছে- ‘আল-ইনসানু হারিছুন ফিমা মুনিয়া’ অর্থাৎ “নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি মানুষ বেশি লালায়িত থাকে।” লোভ যেহেতু একটি নিষিদ্ধ জিনিষ সেজন্য এর প্রতি মানুষের লালসা বেশি। এটি এমনিতে হয় না। মানুষ শয়তানের ফাঁদে পড়ে এমন আচরণ করে থাকে। শয়তান বিভিন্ন কায়দায় মানুষকে লোভের বশবর্তী করে বিপথে নিয়ে যায়। মানুষকে লোভ লালসায় মোহময় করে তোলার জন্য শয়তান প্রতিদিন ৩৬০ বার তার ভিন্ন ভিন্ন রূপে হাজির হয়। এ যেন শয়তানের প্রানান্ত চেষ্টা বান্দাকে লোভের গোলামি করিয়ে ছাড়বে। মানুষের উচিৎ বিষয়টি উপলদ্ধি করে শয়তানের প্ররোচনা থেকে বিরত থাকা। মানুষকে সৎ চরিত্রবান হতে হলে, মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হলে ও আদর্শ সুশীল সমাজ গড়তে হলে প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মু’মিন ব্যক্তির উচিৎ জীবনের সর্বক্ষেত্রে লোভ লালসা বর্জন করে দুর্নীতিমুক্ত জীবন যাপনে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার অনুশীলন করা।
লোভ সংবরণের জন্য সব সময় বৈধ বৃত্তি অবলম্বণ করতে হয় এবং অবৈধ বৃত্তি ত্যাগ করার দরকার হয়। জ্ঞানের বিষয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি জ্ঞানী বিশেষ করে দিব্য জ্ঞানের অধিকারী মানুষের প্রতি দৃষ্টিপাত করে তাদের অনুসরণ করার চেষ্টা করে লোভের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। পার্থিব বিষয়ে নিঃস্ব এবং দূর্বল লোকের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে নিজের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার মানসিকতা গড়ে উঠে। কর্তৃত্বশীল ব্যক্তিদের মন্দ পরিণতির দিকে দৃষ্টি দেওয়া যারা আখেরাতের হক আদায় না করে আল্লাহ্র রহমত থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অহংকারী জালেমদের উপর আল্লাহ্র অভিসম্পাত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, বিনয়ী ব্যক্তিদের প্রতি আল্লাহ্র পুরস্কারের দিকে খেয়াল করা এবং আল্লাহ্ওয়ালা ব্যক্তিদের পবিত্র জীবন ও দুনিয়াবী মর্যাদা থেকে উদ্বুদ্ধ হওয়া। প্রকৃতপক্ষে রিপু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই মানুষ প্রজ্ঞাবান হয়ে উঠে। তারা বুঝতে পারে সকল কল্যাণ নিহিত আছে আল্লাহ্র আনুগত্যের মধ্যে। মনে রাখতে হবে আশা করা ভালো, কিন্তÍ লোভ করা ভালো নয়।
মহান আল্লাহ্ মানুষকে লোভ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। লোভ থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে প্রাপ্ত নিয়ামতের জন্য বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ্র রঙ্গে নিজকে রাঙ্গিয়ে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে পারলেই লোভ লালসা বিলীন হয়ে যাবে। অন্যের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। লোভ লালসার মূখ্য দাওয়া হলো খালেস ইমান ও তাকওয়া বা খোদাভীতি। যার মাঝে ইমানের আলো থাকবে তার লোভ থেকে বিরত থাকা সহজ হবে। মহান আল্লাহ্ লোভ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ্র ঘোষণা, “তুমি কখনও মনে করো না যে, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্য প্রশংসিত হতে ভালোবাসে- তারা আজাব থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১৮৮)
আধ্যাত্মিক সাধনা ছাড়া লোভের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় না। একমাত্র আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমেই কুপ্রবৃত্তি দমন হয়ে লোভ দমন হয়। লোভ দমনের জন্য যত চর্চা করা হোক না কেন তা মানব জীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে না। সময় সুযোগ হলে মানুষ আবার লোভের বশবর্তী হয়ে পড়ে। কোনো রোগ দমন না করে চাপিয়ে রাখার জন্য ঔষধ খেলে যেমন রোগ দমন হয় না, যে কোনো সময় দেখা দেয়। লোভও মানুষের আত্মার তেমনই একটি রোগ যাকে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া রেহাই পাওয়া যায় না। সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জিত হলে শুদ্ধ আত্মা আর এ ধরনের কাজে আগ্রহ পায় না। সেটাই প্রকৃতপক্ষে লোভ নিয়ন্ত্রণ।
লোভ যেহেতু দেখা যায় না সেহেতু এটা নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ নয়। লোভের বশবর্তী হলে মানুষের মন অশান্ত হয়ে উঠে আর সে অশান্ত মনের আকাক্সক্ষা একটা পূরণ হলে আরেকটির জন্য আকাক্সক্ষা জন্মাতে থাকে। সেজন্য প্রয়োজন সাধনার মাধ্যমে মনকে শান্ত করা। মন শান্ত করাও এক দিনের বিষয় নয়। লোভের করাল গ্রাসে ক্বালবে যে কালিমা জমে তা ধীরে ধীরে দূর করে মনকে শান্ত করতে হয়। সেজন্য ধ্যান সাধনার প্রয়োজন হয়। ধ্যান করতে গেলেও দেখা যাবে মন স্থির হতে চাইবে না, সে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলবে নানান স্মৃতি রোমন্থনে। তাতে বিরক্ত হয়ে ধ্যান ছেড়ে দিলে চলবে না, সাধনা চালিয়ে যেতে হবে। চেষ্টা করতে হবে আর নতুন করে কোনো লোভ যেন মনে বাসা বাঁধতে না পারে। এভাবে সাধনার মাধ্যমে মনের পরিবর্তন হয়ে গেলে আর লোভ রিপু সুবিধা করতে পারবে না। আস্তে আস্তে এটা পরাস্ত হয়ে পড়বে।
লোভ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে যিনি লোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন এমন একজন অলী-আল্লাহ্র সংস্পর্শে গিয়ে লোভ নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হয়। তাঁর শেখানো মতে ধ্যান সাধনার মধ্যেমে লোভ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আমাদের দয়াল মোর্শেদ দ্বিন দুনিয়ার কোহিনুর, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম, আম্বিয়া কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী, আল্লাহ্র দেওয়া পুরস্কার: পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) সারা জীবন মানুষকে লোভ সংবরণের মাধ্যমে শান্তির চরিত্র ধারণ করে মহান আল্লাহ্ ও দয়াল রাসুল (সা.)-এর করুণা পাওয়ার জন্য আশেকে রাসুলদের শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর শিক্ষানুযায়ী আশেকে রাসুলগণ ক্বালবে আল্লাহর জিকির জারি এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে লোভ রিপুর প্রভাবমুক্ত হয়েছেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের আদর্শের ধারক ও বাহক বর্তমানে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর মানুষের মুক্তির জন্য মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে বর্তমানে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মানুষের চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে লোভ বর্জনের শিক্ষা গ্রহণের জন্য সবাইকে তাগিদ দিচ্ছেন। তাঁর মাধ্যমে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর শিক্ষা গ্রহণ করে লোভমুক্ত ও আশেকে রাসুল হওয়ার মাধ্যমে সফল হওয়া সম্ভব। তাঁর নির্দেশিত পথে ধ্যান সাধনা করে অন্তর থেকে লোভ দূরীভুত করা যায়। তিনি বলেন, “লোভসহ সকল রিপু জীবাত্মার চতুর্দিকে ঘিরে থাকে। মোরাকাবার মাধ্যমে এসব রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তা নাহলে মানুষের উপর পশুর প্রাধান্য বিরাজ করে। এভাবে অপরিশোধিত আত্মা নিয়ে দয়াল রাসুল (সা.) ও মহান আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ সম্ভব হয় না।”
দয়াল মেজো হুজুর দেশ ও বিদেশের সব মানুষের জন্য দরজা খোলা রেখেছেন। তাঁর সংস্পর্শে এসে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে নিজের পশুত্বকে বিসর্জন দিয়ে মানব জীবন সফল করা সম্ভব। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন আমরা যেন তাঁর কদম মোবারকে সোপর্দ থেকে লোভসহ সকল রিপু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সফলকাম হতে পারি। আমিন।
[লেখক: ইসলামি গবেষক; সাবেক অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার]