শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাটের চেহারা মোবারক
হযরত এম. আমিরুল ইসলাম: একমাস রমজানের রোজা রাখার পর পুরস্কারের বা আনন্দের ঈদ তথা শাওয়ালের চাঁদ প্রতিবছর ঘুরে আসে, যা সকল মুসলমানের আনন্দের দিন। তাঁর সাথে আরেকটি খুশি মহান আল্লাহ্ দান করেছেন মোর্শেদ প্রেমিকদেরকে। তা হচ্ছে শাওয়ালের পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের নুরানিময় চেহারা মোবারকের প্রতিচ্ছবি চাঁদে দেখান। যা দেখে আশেকে রাসুল মুক্তিকামী মানুষ দুই রাকাত সালাতুশ শোকরের নামাজ আদায় ও মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফ পাঠ করে মহান আল্লাহ্র দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে পূর্ণিমার চাঁদে কোনো মহামানবের চেহারা মোবারক দেখা এক বিরল ঘটনা। মহান আল্লাহ্ দয়া করে পূর্ণিমার চাঁদে দয়াল মোর্শেদ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর নুরানিময় চেহারা মোবারক দেখার সৌভাগ্য দান করেছেন। এ কারণে আশেকে রাসুলগণ আবেগে আপ্লুত হয়ে দরবার শরীফে এসে মোর্শেদ কেব্লাজানের কদম মোবারকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানকে চাঁদের মাঝে দেখা পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মহান আল্লাহ্ দয়া করে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানকে ঈদের চাঁদতুল্য করে মায়ের কোলে প্রেরণ করেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ১৯৪৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর শুভ জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর শ্রদ্ধেয় মাতা সূফী সম্রাট হুজুরের জন্মের আগের রাতে স্বপ্নে দেখেন যে, আকাশে ঈদের চাঁদ উদিত হয়েছে। তিনি চাঁদ দেখার জন্য ঘর থেকে বের হলেন। আকাশের চাঁদের দিকে তাকালেন, তারপর দেখেন আকাশের চাঁদ তাঁর কোলে নেমে আসে। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান পরদিন বুধবার সকল ১০টায় জন্মগ্রহণ করেন। ঈদের চাঁদতুল্য হয়ে তিনি জগতে এসেছেন আর পূর্ণিমার চাঁদে মহান আল্লাহ্ যখন সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানকে দেখান তখন তাঁর বয়স ৫৯ বছর। এই দীর্ঘ ৫৯ বছরে মহান আল্লাহ্ দয়া করে এই মহামানবকে অনেক মর্যাদা দান করেছেন।
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উপস্থাপন করা হলো-
১। ইমাম শাহ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর ৭ বছর বয়সে তাঁকে স্বপ্নযোগে নৌকায় তুলে নিয়ে হযরত ইমাম মাহদি (আ.) কর্তৃক ইসলাম ধর্মের কান্ডারীর দায়িত্ব দেন।
২। ইমাম শাহ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর ৮ বছর বয়সে স্বপ্নযোগে তাঁর হাতে হযরত ইমাম মাহদি (আ.) কর্তৃক আমানত হিসেবে পবিত্র কুরআন শরীফ প্রদান।
৩। ১৯৪৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর ভোর রাতে স্বপ্নযোগে ঈদের চাঁদরূপে অন্ধকার দূর করার জন্য তাঁর স্নেহময়ী মায়ের কোলে আগমন।
৪। ১৯৬২ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে ভাষণদানকালে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন “এমন একটা সময় আসবে যখন সারা পৃথিবীতে আমার কণ্ঠস্বর প্রচারিত হবে।”
৫। ১৯৭১ সালের ২০শে নভেম্বর ভারতের হেজামারায় ঈদুল ফিতরের নামাজের খুৎবায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করে বলেছিলেন, “আল্লাহ্র কসম! আগামী বকরা ঈদের আগে দেশ স্বাধীন হবে। আমি আপনাদের নিয়ে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করবো।”
৬। ১৯৭৪ সালের ৬ই জানুয়ারি তরিকতের সবক গ্রহণ এবং ৩রা ফেব্রæয়ারি ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর কাছ থেকে খেলাফত লাভ।
৭। ১৯৭৪ সালে আর্মির রিলিজিয়াস টিচার থাকা অবস্থায় হযরত শাহ্ এনায়েতপুরী (রহ.) কর্তৃক তাঁর তরিকার খেলাফত প্রদান।
৮। ১৯৭৫ সালে ইমাম শাহ চন্দ্রপুরী (রহ.) কর্তৃক ইসলাম ধর্মের সংস্কার করে কিতাব লেখার নির্দেশ প্রদান।
৯। ১৯৭৬ সালে হযরত রাসুল (সা.) কর্তৃক স্বপ্নের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের সংস্কারকের নির্দেশ লাভ।
১০। ১৯৭৮ সালে স্বপ্নের মাধ্যমে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের কাছে তাঁর দাদা আলহাজ হযরত সৈয়দ আব্দুর রফিক (রহ.)-কে সাথে নিয়ে আদিপিতা হযরত আদম (আ.) ক্বালব দেখিয়ে নেন।
১১। ১৯৮৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর জামানার মোজাদ্দেদের দায়িত্ব লাভ।
১২। ১৯৮৪ সালে হযরত রাসুল (সা.)-সহ পাক পাঞ্জাতন যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে চন্দ্রপাড়া থেকে ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
১৩। ১৯৮৮ সালের ২৪শে আগস্ট (আশুরার দিনে) যুগের ইমামের দায়িত্ব লাভ।
১৪। ১৯৮৯ সালের ৫ই এপ্রিল হযরত রাসুল (সা.) কর্তৃক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী খেতাব লাভ।
১৫। ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে হযরত রাসুল (সা.)-সহ পাক পাঞ্জাতন যুদ্ধের সাজে সুসজ্জিত হয়ে সূফী সম্রাটের সাথে মিশে একাকার হয়ে যান।
১৬। ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভ।
১৭। ১৯৯৭ সালের ১৫ই জানুয়ারি হযরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক তাঁর ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব লাভ।
১৮। ২০০৮ সালের ১০ই অক্টোবর (শাওয়াল মাসের পূর্ণিমায়) আল্লাহ্র দেওয়া পুরস্কার হিসেবে পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীকে জগদ্বাসী দেখতে পান।
মহান আল্লাহ্ সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানকে পূর্ণিমার চাঁদে দেখানোর পূর্বে ১৭টি সুমহান মর্যাদা দান করেন। কেন তাঁকে চাঁদের মাঝে দেখানো হলো- এর কারণ হলো দুনিয়ার সকল মানুষ জানতো আল্লাহ্ নিরাকার। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বলেন- আমি তো আমার মহান মালিক আল্লাহ্কে সুন্দর আকৃতিতে দেখেছি। তিনি নিরাকার নন। তাঁর নুরের রূপ আছে। সর্বপ্রথম সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান মহান আল্লাহ্র আকার আছে, তা পবিত্র কুরআন ও মারফু হাদিস দিয়ে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ রচনা করেন। প্রথম খণ্ড আল্লাহ্র জাত-পাকের পরিচয় আর ৭ খণ্ড আল্লাহ্র গুণবাচক নামের পরিচয় প্রকাশ করেন। এজন্য মহান আল্লাহ্ খুশি হয়ে পূর্ণিমার চাঁদে তাঁকে দেখান। এ প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বলেন, “আমি মালিকের নিকট জানতে চাই আমাকে কেন চাঁদে দেখানো হচ্ছে? তখন মহান রাববুল আলামিন দয়া করে বলেন, “আমি জগতের সকলের সৃষ্টিকর্তা ও তাদের রিজিকদাতা। অথচ মানুষ আমাকে নিরাকার বলে। এটা আমার জন্য কষ্টের। আপনি জীবন বাজি লাগিয়ে আমার আকার প্রমাণ করেছেন। আমি কি আপনাকে পুরস্কৃত করবো না?”
এ বছর শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীকে দেখার ১৬তম বাৎসরিক অনুষ্ঠান ছিল। গত ২৩শে এপ্রিল, মঙ্গলবার বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত হয় বাৎসরিক অনুষ্ঠানটি। মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর এ রজনির গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে আলোচনা করে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করেন।
মহান আল্লাহ্ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানের কর্মের কারণেই পুরস্কার স্বরূপ পূর্ণিমার চাঁদে তাঁর চেহারা মোবারক দেখান। তাই শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীকে দেখা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের ও পুণ্যময় কাজ। শাওয়াল মাসের বাৎসরিক পূর্ণিমার অনুষ্ঠান ও প্রতিমাসের পূর্ণিমার চাঁদে ‘আল্লাহ্র দেওয়া পুরস্কার: পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি’ দেখার শুকরিয়াতান ‘সালাতুশ শুকরের ২ রাকাত নামাজ ও মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফ পাঠ করে, এই রজনির পরিপূর্ণ ফায়েজ, রহমত ও বরকত হাসিল করার তৌফিক মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে দান করুন। আমিন।
[লেখক: সদস্য, আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্র, পেশ ইমাম, বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফ।]