সম্পাদকীয়
অবারিত রহমত ও বরকত লাভের স্নিগ্ধ বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’। এই সম্মেলন দেশ ও বিদেশের লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুলদের অধ্যাত্ম প্রেমের এক মহা মিলনমেলা। দীর্ঘ একটি বছরের প্রতীক্ষার প্রহর শেষে আমার মহান মোর্শেদ মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর ৭৪তম শুভ জন্মদিন স্মরণে আগামী ২৩শে ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত বাবে বরকত, দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত হবে এই সম্মেলন। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আশেকে রাসুলগণের আবেগ ও অনুভূতি আমার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তাদের উৎসাহ উদ্দীপনা অনেক বেশি। ২০২৩ সালের ১৭ই নভেম্বর, শুক্রবার সাপ্তাহিক আশেকে রাসুল (সা.) মাহ্ফিলে আমি বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন-এর তারিখ ঘোষণা করি, সেদিন থেকে দেশ ও বিদেশের আশেকে রাসুলেরা বিশ্বময় সম্মেলনের প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেন এবং অদ্যাবধি সেগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনকে ঘিরে তাদের স্বতঃস্ফূর্ততা প্রমাণ করে তারা সত্যিকার রাসুল প্রেমিক।
বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের সাথে দোজাহানের বাদশাহ হযরত রাসুল (সা.) জড়িত রয়েছেন। এছাড়া আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা এই সম্মেলন গোটা বিশ্বের আশেকে রাসুলদের সম্মেলন এবং এই সম্মেলনের প্রবর্তক হলেন বাবা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান। আজ থেকে ২৭ বছর পূর্বে ১৯৯৭ সালের ১৮ই ডিসেম্বর, শুক্রবার সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বিশ্ব ভুবনের ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন আহ্বান করেন। তিনি দীর্ঘ ২৪ বছর ২১টি বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের মাধ্যমে দয়াময় রাব্বুল আলামিন এবং রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর মাহাত্ম্য উপস্থাপন করেন। তাঁর অমিয় বাণী মোবারকের মাধ্যমে জগদ্বাসীর জানার সুযোগ হয়েছে যে, হযরত রাসুল (সা.) প্রবর্তিত ইসলাম মোহাম্মদী ইসলাম; হযরত রাসুল (সা.) গরিব ছিলেন না; তিনি ছিলেন আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী; হযরত রাসুল (সা.)-এর পিতা ও মাতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব; দয়াল রাসুল (সা.) গায়েব জানতেন; হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন ১২ই রবিউল আউয়াল এবং তাঁর ওফাৎ ১লা রবিউল আউয়াল। এছাড়া সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান আগত দেশ ও বিদেশের আশেকে রাসুলদের উদ্দেশে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে বক্তব্য প্রদান করে প্রমাণ করেছেন যে, আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-এর শানে মিলাদ পাঠ করা বিদাআত নয়, বরং ফরজ; মিলাদের মাধ্যমে দরুদ পড়া এবং কিয়াম বা দাঁড়িয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা অত্যাবশ্যক; মিলাদে দয়াল রাসুল (সা.)-কে ‘ইয়া ইমাম’ বলে সম্বোধন করা অপরিহার্য। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের এরকম যৌক্তিক উপস্থাপনার ফলে দেশ ও বিদেশের ওলামায়ে কেরাম, ইসলামি স্কলার, গবেষক-সহ সর্বশ্রেণির মানুষের নিকট উল্লিখিত বিষয়গুলো গ্রহণযোগ্যতা প্রায় এবং সমাদৃত হয়।
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের ওফাতের পর বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন অনুষ্ঠানটির উদ্যাপনের ধারাবাহিকতা আমি বজায় রেখেছি। তবে বাবা দেওয়ানবাগী তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর মোর্শেদ ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর শুভ জন্মদিন স্মরণে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের আয়োজন করতেন। আমি বাবা দেওয়ানবাগীর শুভ জন্মদিন স্মরণে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের অনুষ্ঠান করছি। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাসহ বহির্বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে আশেকে রাসুলগণ অংশগ্রহণ করেন। এই বছরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আশেকে রাসুলেরা সম্মেলনে আসবেন। ইতোমধ্যে অনেক দেশ থেকে আশেকে রাসুলগণ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসেছেন। সম্মেলনকে সাফল্যমণ্ডিত করার লক্ষ্যে বিগত ১ মাস যাবৎ দেশের বিভিন্ন এলাকার আশেকে রাসুলগণ বাবে বরকত, দেওয়ানবাগ শরীফে নিয়মিত গোলামি করে যাচ্ছেন। গোলামিতে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা তিনি যেন দয়া করে আশেকে রাসুলগণের গোলামি কবুল করে নেন। আশেকে রাসুলদেরকে আদব, ভক্তি ও মহব্বতের সাথে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে হবে। একজন সত্যিকার আশেকে রাসুলের মাঝে হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ প্রকাশ পায়। সম্মেলনে আগত সর্বস্তরের মানুষ যেন গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন আশেকে রাসুলগণের হৃদয়ে দয়াল রাসুল (সা.) বিদ্যমান রয়েছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আশেকে রাসুলগণের চারিত্রিক মাধুর্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্মেলনে আগত বহু মুক্তিকামী মানুষ মোহাম্মদী ইসলামের সুমহান শিক্ষা গ্রহণ করবে।
পরিশেষে, দয়াময় রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা তিনি যেন দয়া করে আমাদেরকে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে তাঁর ইচ্ছামতো উদ্যাপন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।