সম্পাদকীয়
আত্মশুদ্ধির মাস রমজান। এমাসে পরিশুদ্ধভাবে রোজা পালনের মাধ্যমে রোজাদার ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি লাভ করত মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হয়। তখন সে বান্দা প্রভুর পক্ষ থেকে অফুরন্ত রহমত ও বরকত লাভ করে। রোজা ফারসি শব্দ, আরবি ভাষায় একে সওম বলে, সিয়াম হলো এর বহুবচন। ইসলামিক পরিভাষায় আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশ পালনার্থে নিয়তের সঙ্গে সুবহে সাদেক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। কোনো কোনো ইসলামিক দার্শনিকের মতে- ‘রমজ’ ধাতু থেকে রমজান শব্দের উৎপত্তি। ‘রমজ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে- জ্বালিয়ে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া। আগুন যেমন স্বর্ণের খাদ জ্বালিয়ে খাঁটি সোনাকে আলাদা করে ফেলে, রোজা তদ্রূপ রোজাদার ব্যক্তির নফসের সাথে জড়িত কু-রিপুগুলোকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কুরিপুর তাড়না থেকে মুক্ত করে।
বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ঢাল স্বরূপ।” অর্থাৎ যুদ্ধ ক্ষেত্রে একজন সৈনিক তার ঢাল ব্যবহার করে যেমন শত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করে, একজন রোজাদারও তেমনি রোজা দ্বারা তার নফসকে কুরিপুর তাড়না হতে মুক্ত রেখে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার উপায় খুঁজে পায়। পরিশুদ্ধ নফস সর্বদাই আল্লাহর নৈকট্য লাভে আগ্রহী। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সক্ষম মুসলিম নর-নারীর জন্য রোজা পালন করা ফরজ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, “হে মুমেনগণ! তোমাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় রোজাকে তোমাদের জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্যরূপে নির্ধারণ করে দেওয়া হলো, যেন তোমরা সংযমশীল হতে পার।” (সূরা বাকারাহ ২ : আয়াত ১৮৩) ‘সংযম অর্থ- দমন, আয়ত্তে আনা। অর্থাৎ রমজানের রোজা পালনে মানুষ তার নফসের কু-রিপুগুলোকে দমন করত আয়ত্তে আনতে পারে। আর তা যখন করতে পারে, তখন সে ব্যক্তি আত্মশুদ্ধি লাভে সক্ষম হয়। সুতরাং রোজা পালনের মাধ্যমে মুমিনগণ আত্মিক বিশোধন লাভ করে পরিশুদ্ধ হতে পারেন। রোজাকে দেহের যাকাতও বলা হয়। ইসলামে যাকাত দেওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তদ্রূপ অসহায় মানুষকে অর্থ দান, খাদ্য দান অথবা যেকোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করার মাহাত্ম্য অনেক।
আল্লাহর প্রিয় নবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) প্রতিদিন তাঁর লঙ্গরখানায় সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ লোককে খাওয়াতেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর উত্তরসূরী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানও প্রতিদিন তাঁর দরবার শরীফে কয়েকশত লোকের খাদ্যের ব্যবস্থা করে থাকেন। এতটুকুই শেষ নয়, যখনই দেশে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসে, আর মানুষ অর্থ ও খাদ্যাভাবে দারুন কষ্ট পায়, আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান তখন আর নীরবে বসে থাকতে পারেন না। তিনি অসহায় মানুষকে খাদ্য ও অর্থসহ নানান ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। তিনি নিজে যেমন সারা বাংলাদেশে তাঁর অসহায় গরিব ভক্তদেরকে ত্রাণ সাহায্য দিয়ে থাকেন; অপরদিকে দেশের অন্যান্য গরিবদেরকেও তিনি মুক্ত হস্তে ত্রাণ সাহায্য দান করে থাকেন।
হাদিস শরীফে আছে- ‘‘আল খালকু আয়ালুল্লাহ।” অর্থাৎ সকল সৃষ্টিই আল্লাহর পরিবার। তাই আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আল্লাহর সৃষ্টি মানুষের প্রতি অতীব দরদী হিসেবে, তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে নিজে উপস্থিত হয়েছেন এবং স্বহস্তে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ১৯৮৮ সাল এবং ১৯৯৮ সালের দুটি বন্যার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তখন সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান সারা বাংলাদেশে ত্রাণ সামগ্রী নিজের পক্ষ থেকে যেমন বিতরণ করেছেন, অপরদিকে তাঁর ধনশালী ভক্তদেরকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মহান মোর্শেদের নির্দেশ পেয়ে সূফী সম্রাটের ধনশালী ভক্তবৃন্দ নগদ অর্থ ও বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান নিজে ট্রলারে তাঁর সাহেবজাদাগণকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজ হাতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। সেসময়ে মানুষের মুখে মুখে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের প্রশংসা শুনা গেছে। তারা বলেছেন- দেওয়ানবাগী হুজুর একজন মহান অলী-আল্লাহ্ হয়েও নিজে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন।
সাম্প্রতিককালে করোনা ভাইরাস নামক যে মারাত্মক ব্যাধি বিশ্বের ২১২টি দেশের মানুষকে চরম আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য করেছে, গোটা বিশ্বের রাজা, বাদশাহ ও প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। সেই করুন ও ভয়াবহ মুহূর্তে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আপনারা নামাজের পরে মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফা পালন করে পরিবারের লোকজন নিয়ে সকাল-বিকাল দুবার হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরূদ, সালাম ও মিলাদ শরীফ পাঠ করবেন। সেই সাথে এই চরম বিপদের জন্য আল্লাহর কাছে একটা মানত করে রাখবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত পাবেন। কেননা, যেখানে রহমত থাকে, সেখানে গজব আসতে পারে না। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের এই নির্দেশনা যারাই মেনে চলবে, ইনশাল্লাহ্ তারাই আল্লাহর রহমত লাভ করবেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আশেকে রাসুলদের তরিকার বিধান যেমন মেনে চলতে বলেছেন, সেই সাথে তিনি বিত্তশালী ভক্তদেরকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোরও নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান নিজ তহবিল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রী সর্বস্তরের অসহায় বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য বরাদ্দ করেছেন। তাঁর নির্দেশে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সাহেবজাদাগণ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপক ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন। ফলে বিপদগ্রস্ত মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
বর্তমান এই কঠিন মহামারির মধ্যেও মুসলমানগণ পবিত্র রমজানের রোজা পালন করছে। পবিত্র রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যাকে ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয়েছে। এ রাতটি ১ হাজার মাস অর্থাৎ- ৮৩ বছর ৪ মাসের চেয়েও উত্তম। তাই এ রাতে মুসলমানগণ ইবাদত বন্দেগি করে থাকেন। একমাস সিয়াম সাধনার পরে মুসলমানদের সামনে খুশির বারতা নিয়ে আসে ঈদুল ফিতর। যারা একটি মাস উপবাস থেকে রোজা পালন করে মূলত ঈদের খুশি তাদের জন্যই। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশের ধনী দরিদ্র সকলেই সাধ্যানুযায়ী ঈদ উৎসব পালন করে থাকেন। এ বছর আমাদের জন্য ঈদের আনন্দ হবে করোনা ভাইরাস নামক মহামারির কারণে যে সকল মানুষ অনাহারী ও ক্ষুধার্ত, তাদের সাহায্য করা। মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে যেন এই মহামারি থেকে রক্ষা করেন, সেটাই হবে আমাদের জন্য ঈদের আনন্দ।