সম্পাদকীয়
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, লক্ষ কোটি শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান রাব্বুল আলামিনের নুরের কদম মোবারকে, যাঁর অপার দয়ার বরকতে মোহাম্মদী ইসলামের মাসিক মুখপত্র ‘আত্মার বাণী’ সময়ের অগ্রযাত্রায় ৪১ বছর পূর্ণ করে ৪২তম বছরে পদার্পণ করেছে। কদমবুসি ও শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি আমার মহান মোর্শেদ মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের পরশময় নুরানি কদম মোবারকে, জগৎশ্রেষ্ঠ এই মহামানবের উদ্যোগে আজ থেকে ৪১ বছর পূর্বে তাসাউফ জগতের অত্যুজ্জ্বল এই সাময়িকীটি প্রকাশিত হয়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর স্বীয় মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর জীবদ্দশায় হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ বিশ্বময় প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে সময়োপযোগী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিজে উদ্যোগী হয়ে ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটি প্রকাশ করেন, যা ছিল যুগপোযোগী এক পদক্ষেপ।
আমার মহান মোর্শেদ ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আমাকে ‘আত্মার বাণী’ পত্রিকার সম্পাদকের গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেন। তখন আমার কৌতূহলী মন ‘আত্মার বাণী’ প্রকাশের ইতিবৃত্ত জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় আমার মনের আকাঙ্খার বিষয়টি দয়াল বাবাজান রূহানিতে বুঝতে পারেন। একদিন দয়াল বাবাজান হুজরা শরীফে মোহাম্মদী ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। সেসময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। আলোচনার এক পর্যায় বাবাজান বিভিন্ন ঘটনা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ‘আত্মার বাণী’ প্রকাশের স্বর্ণালি ইতিহাস উপস্থিত আশেকে রাসুলদেরকে অবহিত করেন। দয়াল বাবাজানের নিকট থেকে জানতে পারলাম যে, তিনি ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফ থেকে ঢাকায় আসেন। অতঃপর বড়ো ভাইয়ের মেয়ের বিয়েতে যোগদান করে রাতে সদরঘাট সিমসন রোডে অবস্থিত দরবার শরীফের কেন্দ্রীয় প্রচার দপ্তরে চলে আসেন। রাতে হঠাৎ দয়াল বাবাজান পরিকল্পনা গ্রহণ করেন হযরত রাসুল (সা.)-এর চিরশান্তির ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করবেন। এই লক্ষ্যে পরদিন তিনি ঢাকার বিশিষ্ট জাকেরদেরকে নিয়ে সভার আহ্বান করেন। সভায় তিনি মাসিক পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্তের বিষয়টি উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। জাকের ভাইয়েরা সকলেই আনন্দের সাথে তা সমর্থন করেন। অতঃপর দয়াল বাবাজান সাময়িকীটির নামকরণের জন্য কয়েকটি নাম ঠিক করে এক জাকের ভাইকে দিয়ে চন্দ্রপাড়ায় ইমাম হুজুরের নিকট পাঠালেন। ইমাম হুজুর দয়াল বাবাজানের প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে ‘আত্মার বাণী’ নামটি পছন্দ করেন। মাত্র ১৮ দিন পর ‘আত্মার বাণী’র ১ম সংখ্যাটি ছেপে দয়াল বাবাজান চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে নিয়ে যান। ইমাম হুজুর ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটি হাতে নিয়ে অত্যন্ত খুশি হন এবং সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত ‘আত্মার বাণী’র ১ম সংখ্যাটি আমার সংরক্ষণে আছে। আমি যেদিন ১ম সংখ্যাটি দেখলাম, আমি বিস্মিত হয়ে পড়ি। কেননা সেসময় বাংলাদেশের মুদ্রণ শিল্প ততটা উন্নত ছিল না। বর্তমান যুগের মতো কম্পিউটার, অফসেট মেশিন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে পত্রিকা ছাপা হতো না। সেসময় লেটার প্রেসে ছাপা হতো, যা ছিল অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অথচ দয়াল বাবাজান মাত্র ১৮ দিনে মাসিক ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটি প্রকাশ করেন। ৩২ পৃষ্ঠা সংবলিত মাসিক পত্রিকাটির প্রচ্ছদে হযরত দয়াল রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারকের ছবি দেওয়া হয়, ফলে হাতে নেওয়ার সাথে সাথে আশেকে রাসুলদেরকে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। ২য় পৃষ্ঠায় পত্রিকাটির সফলতা কামনা করে ইমাম হুজুরের শুভেচ্ছা বাণী মোবারক রয়েছে। এছাড়া ২য় পৃষ্ঠাতে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর বাণী মোবারক এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিস ও আওলিয়ায়ে কেরামের বাণী মোবারক উপস্থাপন করা হয়। সাময়িকীটিতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে ১০টি প্রবন্ধ ও ৬টি কবিতা সন্নিবেশিত করা হয়। প্রবন্ধগুলোতে বর্ণিত পবিত্র কুরআনের বাণী আরবিতে দেওয়া হয়েছে এবং সাথে বাংলায় অনুবাদ রয়েছে। সাময়িকীটিতে সেই সময়ের বাংলা বানানরীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়। এত অল্প সময়ে এমন নির্ভুল ও পরিমার্জিত একটি পত্রিকা প্রকাশ করা মোটেও সহজসাধ্য বিষয় ছিল না। মূলত দয়াল বাবাজানের প্রচেষ্টার ফলে বিশ্ববাসী তাসাউফসমৃদ্ধ একটি যুগান্তকারী পত্রিকা পাঠের সুযোগ লাভ করেছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর কলমকে এজিদি ইসলামের বিরুদ্ধে ‘যোদ্ধা’ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর বিদগ্ধ লেখনীর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে প্রবিষ্ট ভুলগুলো তুলে ধরেছেন এবং পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে ভুলগুলো সংশোধন করে মোহাম্মদী ইসলামকে পুনর্জীবিত করেছেন। তাঁর এই সুমহান প্রচেষ্টার বাস্তবায়নে মাসিক ‘আত্মার বাণী’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আত্মার বাণী পত্রিকাটি মহান আল্লাহর রহমত ও বরকতে ভরপুর নেয়ামতপূর্ণ এক পত্রিকা। এর যে কোনো একটি কোণার চুবানো পানি পান করে আল্লাহর দয়ায় অসংখ্য মানুষ কঠিন কঠিন রোগ থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছে এবং বর্তমানেও করছে। মূলত এটি সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অন্যতম অলৌকিক কারামত।
৪২তম বছরে পদার্পণে ‘আত্মার বাণী সাময়িকীর সকল স্টাফ, লেখক, গ্রাহক, পাঠক বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ।
প্রিয় পাঠক! আগামী ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৪ হিজরি, ৯ই অক্টোবর, ২০২২ইং দোজাহানের বাদশাহ্ হযরত রাসুল (সা.)-এর ১৪৯৭তম (হিজরি সাল অনুযায়ী) শুভ জন্মদিন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিনকে ‘সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। উল্লেখ্য যে, ১২ই রবিউল আউয়াল হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর শুভ জন্মদিন এবং ১লা রবিউল আউয়াল তাঁর ওফাত দিবস হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে ১২ই রবিউল আউয়াল দিনটি ফাতেহায়ে দোয়াজ দাহম ও সিরাতুন্নবি (সা.) হিসেবে সরকারিভাবে পালিত হতো। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর গুরুত্ব তুলে ধরে একে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তাঁর প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকার ১২ই রবিউল আউয়াল ফাতেহায়ে দোয়াজ দাহম ও সিরাতুন্নবি (সা.)-এর পরিবর্তে দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) হিসেবে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন এবং দিনটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। দেওয়ানবাগ শরীফের পক্ষ থেকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষ্যে আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই বছরও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর অনুষ্ঠান উদযাপন করা হবে।
পরিশেষে মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা- তিনি যেন দয়া করে আমাদেরকে সুযোগ করে দেন, আমরা যেন তাঁর শ্রেষ্ঠ বন্ধু হযরত রাসুল (সা.)-এর ১৪৯৭তম শুভ জন্মদিন যথাযথ মর্যাদার সাথে পালনের মাধ্যমে অবারিত রহমত ও বরকত লাভ করতে পারি। আমিন।