Cancel Preloader

সম্পাদকীয়

মহাকালের মহাবিস্ময় ‘আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার: পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি’-এর ১ যুগ পূর্তি হলো। এই জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে জানাই লাখো কোটি শুকরিয়া। আরবি ১৪২৯ হিজরির ৮ শাওয়াল, (২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর, ১৪১৫ বঙ্গাব্দের ২৫ আশ্বিন) শুক্রবার দিবাগত রাতে পূর্ণিমার চাঁদে বিশ্বের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ঘটনার জন্ম হয়। অর্থাৎ ঐ দিন রাতে পূর্ণিমার চাঁদে আমাদের মহান মোর্শেদ, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক পূর্ণিমার চাঁদে প্রকাশ পায়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ বিশ্ববাসী পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর নুরানিময় চেহারা মোবারক অবলোকন করে ধন্য হচ্ছেন।

এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করলে পবিত্র কুরআনের ২টি আয়াত এবং এর ব্যাখ্যা সংবলিত ৩০টি হাদিস খুঁজে পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, “হে রাসুল (সা.)! আপনি (মানবজাতিকে) বলে দিন, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য; যিনি অতি শীঘ্রই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শন (চেহারা মোবারক) দেখাবেন। তখন তোমরা তাঁকে চিনতে পারবে।” (সূরা আন নামল ২৭: আয়াত ৯৩)

অন্যত্র মহান আল্লাহ্ বলেন, “আমি (আল্লাহ্) তাদের শীঘ্রই আমার নিদর্শন চেহারা মোবারক দেখাব ঊর্ধ্বলোকে (আকাশের চাঁদে) এবং তাদের নিজের মাঝেও (ক্বালবের ৭ম স্তর নাফসির মোকামে)। ফলে তাদের নিকট সুস্পষ্ট হবে যে, নিশ্চয় এটিই (তিনি যে আল্লাহ্) সত্য। আর সর্ব বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আপনার প্রতিপালকই যথেষ্ট নয় কি? (সূরা হা-মীম আস সাজদাহ্ ৪১ : আয়াত ৫৩)

মহান আল্লাহ্ এই ২টি আয়াতে পূর্ণিমার চাঁদে তাঁর দিদার প্রদানের যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এর ব্যাখ্যা সংবলিত ২টি হাদিস নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
আহলে বাইতের সদস্য আমিরুল মুমিনিন শেরে খোদা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ফরমান, “ইমাম মাহ্দি (আ.) আমার আহলে বাইত হতে আগমন করবেন। আল্লাহ্ তায়ালা এক রাতেই (পূর্ণিমার চাঁদের ভিতর) তাঁর সত্যতা প্রমাণ করে দেবেন।” (মুসনাদে আহমদ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৪)

হযরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে- আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, “অতি শীঘ্রই তোমরা তোমাদের প্রতিপালক (আল্লহর চেহারা মোবারক)-কে স্বচক্ষে দেখতে পাবে।” (বোখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮১)

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে উল্লিখিত ২টি আয়াতে এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিস বিশ্লেষণ করলে প্রশ্ন জাগে যে, মহান আল্লাহ্ যেখানে ঘোষণা করেছেন অতি শীঘ্র তাঁর চেহারা মোবারক দেখাবেন এবং তাঁকে মানুষ চিনতে পারবে; অথচ চাঁদের মাঝে মানুষ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের চেহারা মোবারক দেখেন কেন? মূলত পূর্ণিমার চাঁদে সমগ্র বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ যার জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক দেখছেন, তিনি সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ক্বালবে অবস্থানকারী মহান রাব্বুল আলামিনের নুরময় সত্তা। যে নুরময় সত্তা হযরত রাসুল (সা.)-এর পবিত্র ক্বালবে অবস্থান করেছিলেন। এই নুরময় সত্তাই নবুয়তের যুগে সকল নবি ও রাসুলের ক্বালবে অবস্থান করে মুক্তিকামী মানুষকে মুমিনে পরিণত করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বেলায়েতের যুগে সেই নুরময় সত্তা যুগের শ্রেষ্ঠ ইমাম সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ক্বালবে অবস্থান করে মানুষকে মহান আল্লাহ্‌র সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন এবং মুমিনে কামেলে পরিণত করছেন।

সৃষ্টির আদিতে মহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে আদম (আ.)-এর মাধ্যমেই তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন। এজন্য সকল ফেরেশতা হযরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ্কে সিজদা করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, “আল্লাহ্ ফেরেশতাদের বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমি মাটি দিয়ে মানুষ [আদম (আ.)-কে] সৃষ্টি করব। অতঃপর তাঁকে মানবাকৃতি দান করে তাঁর ভিতর আমার রূহ হতে রূহ ফুঁকে দিলে (আদমের ক্বালব আরশুল্লায় পরিণত হবে) তখন তোমরা তাঁকে সিজদা করবে।” (সূরা সোয়াদ ৩৮ : আয়াত ৭১ ও ৭২)

অনুরূপভাবে হযরত ইউসুফ (আ.) মহান আল্লাহ্কে হৃদয়ে ধারণকারী আরশুল্লাহ্ হওয়ার কারণে পিতা হযরত ইয়াকুব (আ.) ও মাতা-সহ এগারো ভাই সবাই তাঁকে সিজদা করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, “হযরত ইউসুফ (আ.) এবং তাঁর পিতা-মাতাকে উচ্চাসনে বসালেন। অতঃপর তারা (পিতা-মাতা ও এগারো ভাই) সবাই তাঁর সামনে সিজদায় লুটে পড়ে।” (সূরা ইউসুফ ১২ : আয়াত ১০০)
এছাড়া হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “মুমিন ব্যক্তির হৃদয় আল্লাহর আরশ।” এজন্য মুমিন ব্যক্তির মর্যাদা কাবাঘরের চেয়েও বেশি। ইবনে মাজাহ শরীফের হাদিসে হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “মুমিন ব্যক্তি কাবাঘরের চেয়েও অধিক সম্মানিত।”

সুতরাং পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফে বর্ণনা অনুযায়ী একথা দিবালোকরে ন্যায় পরিষ্কার যে, মুমিন ব্যক্তির হৃদয় আল্লাহর আরশ। তাহলে যিনি মুমিন, তাঁর হৃদয়ে আল্লাহ্ অবস্থান করেন। বর্তমান যুগে মহান রাব্বুল আলামিনের নুরময় সত্তা সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের হৃদয়ে ধারণ করে আছেন বিধায় পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ পূর্ণিমার চাঁদে মহান আল্লাহ্কে তাঁরই রূপে দেখতে পাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চন্দ্রপৃষ্ঠে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক শুধুমাত্র তাঁর ভক্তবৃন্দই দেখছেন তা নয়, বরং গোটা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর নুরানিময় চেহারা মোবারক দেখতে পান। শুধু তাই নয়, মহাকালের এই মহাবিস্ময় অবলোকন করে তাঁরা বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে এসে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সুমহান শিক্ষা আদর্শ গ্রহণ করে আশেকে রাসুল হওয়ার গৌরব অর্জন করছেন।

এছাড়া বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা-সহ বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশের কোটি কোটি মানুষ পূর্ণিমার চাঁদে মহান আল্লাহ্কে দেখছেন। চাঁদে যেরূপে তাঁরা মহান আল্লাহ্কে দেখছেন, সেই রূপটির সাথে সূফী সম্রাটের হুবহু মিল রয়েছে। সমগ্র বিশ্বজুড়ে লক্ষ কোটি আশেকে রাসুলেরা আল্লাহর রূপের সাথে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের রূপের মিল দেখে বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে এসে জগৎশ্রেষ্ঠ এই মহামানবকে সংবর্ধনাও দিয়েছেন। ‘আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার : পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি’ উপলক্ষ্যে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর হতে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৪ মাস ব্যাপী বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলতে থাকে। এই মহতী অনুষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা-সহ প্রায় শতাধিক দেশের আশেকে রাসুলগণ অংশগ্রহণ করে প্রাণপ্রিয় মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে সংবর্ধনা দেন এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। এছাড়া প্রতিমাসের পূর্ণিমায় আশেকে রাসুলগণ ২ রাকাত সালাতুস শুকর আদায় করে থাকেন।

মূলত চাঁদের স্নিগ্ধ আলো যেমন রাতের অন্ধকার দূর করে মানুষকে পথ দেখায়, তেমনিভাবে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সান্নিধ্যে এসে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল মানুষ হৃদয়ের অন্ধকার দূর করে আলোকিত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন।

বর্তমান যুগের মানুষের জন্য পরম সৌভাগ্য যে, আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে মহান রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মাধ্যম্যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তিনি তাঁর চেহারা মোবারক দেখাবেন, এর দেড় হাজার বছর পর বর্তমান যুগের মানুষ বাবা দেওয়ানবাগীর রূপে মহান আল্লাহ্ বিশ্ববাসীকে তাঁর দিদার দিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়ন করলেন। এইজন্য মহান রাব্বুল আলামিনের নুরের কদম মোবারকে জানাই ভক্তিপূর্ণ সিজদা। পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি-এর ১ যুগ পূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলাদেস-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আশেকে রাসুলগণ শোকরানা নামাজ, মিলাদ শরীফ-সহ বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় এই দিবসটি পালন করেছেন।
পরিশেষে- আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের কদম পাকে নিবেদন- পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর চেহারা মোবারক জীবন্ত প্রতিচ্ছবির জ্যোতির্ময় আলো দ্বারা যেন আমরা আমাদেরকে ক্বালকে আলোকিত করতে পারি। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট