সম্পাদকীয়
ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। মানব ইতিহাসে যতগুলো দিন চিরভাস্বর হয়ে আছে, সেগুলোর মধ্যে পবিত্র আশুরা অন্যতম। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু বড়ো বড়ো ঘটনা এ তারিখে সংঘটিত হয়েছে বলেই বছরের অন্যান্য দিনের চেয়ে এদিনটি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও মর্যাদাশীল। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে আল্লাহ তায়ালা আশুরার দিনে এমন কতগুলো ঘটনা সংঘটিত করেছেন, যা এ দিনকে বছরের অন্যান্য দিন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করেছে।
আশুরার দিনে মহান আল্লাহ পবিত্র আরশে সমাসীন হয়েছেন বিধায় পবিত্র আশুরা অধিক সম্মানিত ও গৌরবান্বিত। মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম (আ.)-কে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে এ দিনেই নির্বাচন করেছেন। হযরত নূহ (আ.)-এর সময় মহাপ্রলয়কালীন তাঁর কিসতি আশুরার দিনে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমে যায়। হযরত ইব্রাহীম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে এদিনেই উদ্ধার পেয়েছিলেন এবং তিনি নিজের পুত্রকে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে খলিলুল্লাহ উপাধি লাভ করেছিলেন।
আশুরার দিনে আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ.)-এর গুনাহ মাফ করেছিলেন। হযরত ইউনুস (আ.) মাছের উদর থেকে মুক্তি লাভ করেন এই দিনে। হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম হয় আশুরার দিনে এবং তাঁকে আল্লাহ আসমানে তুলে নিয়েছিলেন এই দিনে। আশুরার দিনে ফেরাউন লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়। হযরত আইয়ুব (আ.) দীর্ঘ আঠারো বছর কুষ্ঠরোগে ভোগার পর আশুরার দিনে আরোগ্য লাভ করেন। এ পৃথিবীর অস্তিত্ব লাভের সাথে আশুরার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কেননা এদিনে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন আসমান, জমিন, লওহ ও কলম। পৃথিবী প্রলয়ের সঙ্গেও রয়েছে এদিনের সম্পর্ক। কেননা কেয়ামত আশুরার দিবসে কায়েম হবে। অতএব আশুরার তাৎপর্য বর্ণনাতীত। অন্য যে কারণে আশুরার দিনটি বিশ্ব মুসলিমের কাছে অত্যন্ত স্মরণীয় এবং হৃদয় বিদারক, তাহলো ইসলামের সুমহান আদর্শ তথা মোহাম্মদী ইসলামকে জগতে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য কারবালার মরুপ্রান্তরে এদিনেই নবি দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) দুরাচার এজিদ বাহিনীর হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন। আর তখন থেকেই শুরু হয় মোহাম্মদী ইসলামের বিলুপ্তি কাল। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার প্রায় চৌদ্দশ’ বছর পর মোহাম্মদী ইসলামকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হজুর কেবলাজান ১৯৮৫ সালে দেওয়ানবাগ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন।
অসংখ্য শোক-আনন্দ গাঁথা ঐতিহাসিক আশুরার দিনটি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের নিকট সমধিক সম্মানিত। হযরত রাসূল (সা.)-এর পূর্ববর্তী নবি-রাসুলগণের উম্মতরাও এদিনকে শ্রদ্ধার সাথে পালন করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হযরত রাসুল (সা.)-এরশাদ করেছেন, ‘মহররম মাসে যদি কোনো ব্যক্তি রোজা রাখে, তবে সে প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে ত্রিশ রোজার পূণ্য লাভ করবে। কোনো ব্যক্তি যদি আশুরার দশটি রোজা পালন করে, তবে তাকে দশ হাজার শহিদের মর্যাদা দান করা হয়।’ আশুরার দিনে হযরত রাসুল (সা.) নিজেও রোজা রাখতেন। আশুরার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য উপলব্ধি করে রাসুল প্রেমিকগণ ধর্মীয় আবেগ অনুভূতির সাথে সশ্রদ্ধ এ দিনটি পালন করে আসছেন। অলী-আল্লাহগণের জীবনীতেও আশুরার গুরুত্ব সম্পর্কিত প্রমাণ রয়েছে।
মুসলমানদের মধ্যে একটি সম্প্রদায় বলে থাকে যে, আশুরা শিয়াদের অনুষ্ঠান। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, আশুরা শুধু শিয়াদের অনুষ্ঠান নয়, এটা মুসলিম জাতির একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। কেননা, এদিনে আল্লাহ আরশে সমাসীন হয়েছেন। সূফী সম্রাটের এ বাণী মোবারক থেকে বুঝা যায় যে, আশুরা শুধু শিয়া সম্প্রদায়ের পালনীয় দিবস নয়। বরং এই দিনটি সমগ্র মুসলিম জাতি তথা মানব জাতির জন্য তাৎপর্যমণ্ডিত ও মুক্তি লাভের দিন। আল্লাহ পাক দয়া করে এই দিনের অসিলায় পাপী-তাপীদের মুক্তির পথ উন্মুক্ত করে দেন। কাজেই পবিত্র আশুরার দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করে আমরা যেন নিজেদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারি, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে আগামী ১০ মহররম অনলাইন প্ল্যাট ফর্মের মাধ্যমে দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত হবে আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন। অনুষ্ঠানটি সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বাদ যোহর মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের বাণী মোবারক প্রদান শেষে আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। সম্মেলনটি দেশে বিদেশের লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুলগণ অনলাইন প্ল্যাট ফর্মের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে দিবসটির ফায়েজ বরকত ও রহমত হাসিল করতে পারবেন।