সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)
সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)। তিনি মহান আল্লাহ্র সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাঁকে সৃষ্টি করা না হলে আল্লাহ্ তায়ালা এ বিশ্বজাহানের কিছু সৃষ্টি করতেন না। তাঁকে সমগ্র বিশ্বের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিবের সুমহান মর্যাদা ও মাহাত্ম্য তুলে ধরে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। যে আয়াতগুলোর মাধ্যমে রাব্বুল আলামিন ও রাহমাতুল্লিল আলামিনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্কের বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ যে আয়াতগুলোর মাধ্যমে তাঁর প্রতি আনুগত্য ও তাঁর হাবিব হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন, এ সংখ্যার সম্পাদকীয়তে পবিত্র কুরআনের সেই আয়াতগুলোর মধ্য থেকে কতিপয় আয়াত উপস্থাপন করা হলো-
“আর যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, সেতো মহাসাফল্য লাভ করবে।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ৭১) “কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করলে, সে তো প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।”(সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ৩৬) “আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ্র এবং তাঁর রাসুলের অনুগত থাকবে ও নেক কাজ করবে, তাকে আমি দুবার পুরস্কার দেবো, আর তার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি এক সম্মানজনক জীবিকা।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ৩১) “ওহে যারা ইমান এনেছো! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের এবং তোমরা যখন তাঁর কথা শুনছো, তখন তা থেকে বিমুখ হয়ো না।” (সূরা আনফাল ৮: আয়াত ২০) “ওহে যারা ইমান এনেছো! তোমরা সাড়া দেবে আল্লাহ্ ও রাসুলের আহ্বানে, যখন রাসুল তোমাদের এমন কাজের প্রতি আহ্বান করেন, যা তোমাদের মাঝে জীবনসঞ্চার করে।” (সূরা আনফাল ৮: আয়াত ২৪) “আর তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহ্র এবং রাসুলের, যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়।”(সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১৩২) “তারা কি এ কথা জানেনি যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেথায় সে অনন্তকাল থাকবে এটা বিষম লাঞ্ছনা।”(সূরা তওবা ৯: আয়াত ৬৩) “যারা বিরোধিতা করে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের, তারা লাঞ্ছিত হবে, যেমন লাঞ্ছিত হয়েছিল তাদের পূর্ববর্তীরা।” (সূরা মুজাদালা ৫৮: আয়াত ৫) “যে ব্যক্তি রাসুলের আনুগত্য করে, সে তো আল্লাহ্রই আনুগত্য করল।”(সূরা নিসা ৪: আয়াত ৮০) “আর যে ব্যক্তি আনুগত্য করবে আল্লাহ্ ও রাসুলের এরূপ ব্যক্তিরা সে ব্যক্তিদের সঙ্গী হবেন, যাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন, তারা হলেন- নবি, সিদ্দিক, শহিদ এবং সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিবর্গ। আর কতইনা উত্তম সঙ্গী এরা।”(সূরা নিসা ৪: আয়াত ৬৯) “আর কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করলে তিনি তাকে বেহেশতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটা হলো বিরাট সাফল্য।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ১৩) “আর যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের নাফরমানি করবে এবং তার নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে দোজখে দাখিল করবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।”(সূরা নিসা ৪: আয়াত ১৪) “হে মু’মিনগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহ্র, আনুগত্য করো রাসুলের এবং তাঁদের, যাঁরা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহ্র সাথে যোগাযোগ করে) ফয়সালা দিতে পারেন।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ৫৯) “ওহে যারা ইমান এনেছো! তোমরা আল্লাহ্র আদেশ মেনে চলো এবং রাসুলের অনুসরণ করো, আর নিজের কর্মসমূহ বিনষ্ট করো না।”(সূরা মুহাম্মদ ৪৭: আয়াত ৩৩) “তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহ্র এবং আনুগত্য করো রাসুলের, যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমার রাসুলের দায়িত্ব কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।”(সূরা তাগাবুন ৬৪: আয়াত ১২)
পবিত্র কুরআনের উল্লিখিত আয়াতগুলোর প্রত্যেকটিতে মহান আল্লাহ্র প্রিয় বন্ধু হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করার গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে এবং আনুগত্য প্রদর্শনকারীদের প্রতি মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে মহাপুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যারা দয়াল রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য প্রকাশ করবে না এবং বিরোধিতা করবে, তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ্র কঠোরতা প্রকাশ পেয়েছে।
পরিশেষে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত উপস্থাপনপূর্বক সম্পাদকীয় লেখাটি শেষ করব। মহান আল্লাহ্ বলেন, “হে মাহবুব (সা.)! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন। অবশ্যই আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল ও দয়াময়।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩১) মহান আল্লাহ্ তাঁর এই বাণী মোবারকের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ্কে ভালোবাসার পূর্ব শর্ত হলো আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠ বন্ধু হযরত রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ করা। তাহলে আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে দুটি পুরস্কার পাওয়া যাবে। একটি হলো ওই বান্দাকে আল্লাহ্ ভালোবাসবেন এবং দ্বিতীয়টি হলো বান্দার পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। মহান আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় হাবিব দোজাহানের বাদশা হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি আনুগত্য ও ভালোবাসার মাধ্যমে আমাদের সকলকে মু’মিন হওয়ার তৌফিক এনায়েত করুন। আমিন।