সূফী সম্রাটের অনুসরণে মু’মিন হওয়ার গুণাবলি বিকশিত হয়
আশেকে রাসুল এস এ সুলতান
মু’মিন হতে হলে মানুষকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হয়। এজন্য চরিত্রের মাঝে পূর্ণ গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে হয়। মূলে চরিত্রই ধর্ম। কেননা, চরিত্রবান না হলে ধর্ম পালন করে কোনো লাভ নেই। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, “যার চরিত্র নাই, তার কোনো ধর্ম নাই।” তিনি আরও বলেন “একজন চরিত্রবান ব্যক্তি কারও কষ্টের কারণ হয় না। রাসুলে খোদা হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জবান ও হাত থেকে অপর মানুষ নিরাপদ থাকে।” (মেশকাত শরীফ)
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মানুষকে উত্তম চরিত্র ধারণ করার শিক্ষা দান করে থাকেন। তাঁর অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে আত্নশুদ্ধি লাভ করা। আত্মাশুদ্ধি লাভ করার উপায় হলো আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “পরিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে যে আল্লাহর নিকট আসবে, সেদিন কেবল সে-ই উপকৃত হবে।” ( সুরা শু’আরা ২৬: আয়াত ৮৯)
রিপুর তাড়নামুক্ত পরিশুদ্ধ আত্নার সাহায্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে হয়। আবার রিপুর তাড়নাযুক্ত অশুদ্ধ আত্মা মানুষকে পাপের প্রতি আকৃষ্ট করে মহান আল্লাহ্ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আত্মা পরিশুদ্ধ করা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ। জাগতিক কোনো বিদ্যা বা উপাদান দ্বারা আত্মা পরিশুদ্ধ করা যায় না। মোর্শেদের হৃদয় হতে ফায়েজ হাসিল করে কঠিন সাধনা করে রিপুর শক্তিকে পরাস্ত করত মানুষ জিতেন্দ্রিয় হতে পারে। মোর্শেদের হৃদয় হতে যে যত বেশি ফায়েজ হাসিল করতে সক্ষম হয়, তার আত্মা তত বেশি পরিশুদ্ধ হতে সক্ষম হয়। এজন্য মুরিদকে অত্যধিক আত্মিক যোগ্যতা সম্পন্ন মোর্শেদের গোলামি করে তাঁর দয়া লাভ করতে হয়। ফলশ্রুতিতে মানুষ উত্তম চরিত্র লাভ করে মু’মিনে কামেল হতে সক্ষম হয়। এজন্য পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো, তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য অসিলা অন্বেষণ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পারো।” ( সূরা আল মায়িদাহ ৫: আয়াত ৩৫)
মানুষের মাঝে নফস তথা জীবাত্মা এবং রূহ তথা পরমাত্মা, এ দুপ্রকার আত্মা বিদ্যমান। রিপু যখন কুপথে ধাবিত হয় তখন জীবাত্মা শক্তিশালী হয়। তখন পরমাত্মা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মানুষের জীবাত্মা ও পরমাত্মা সর্বদা পরস্পর সংঘাতে লিপ্ত। শ্রেষ্ঠ জিহাদ বলতে রাসুলে খোদা (সা.) মানবাত্মাকে শক্তিশালী করে ,জীবাত্মার উপর প্রাধান্য বিস্তার করাকে বুঝিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “যেভাবে তোমরা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে থাকো, সেভাবে নিজের প্রবৃত্তির অর্থাৎ ষড়রিপুর সাথে যুদ্ধ করো।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৩)
যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মুরিদের ক্বালবে ইমানের নুর প্রবেশ করিয়ে দেন। ফলে একজন পাপী মানুষের আত্মার মাঝে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির জারি হয়। এ অবস্থায় সে যখন গভীর বিশ্বাসের সাথে তরিকার আমল করে মোর্শেদের গোলামি করে মোর্শেদের নেক নজর লাভ করে দয়া অর্জন করতে সক্ষম হয় দয়াল মোর্শেদ বাবাজান তাঁর মহা পবিত্র সিনা মোবারক হতে এত্তেহাদি তাওয়াজ্জোহর মাধ্যমে মুরিদের হৃদয়ে পাপ কালিমা দূর করে দেন। ফলে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। তখন সে মু’মিন হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে এবং তার মধ্যে বিভিন্ন প্রকার গুণাবলি প্রকাশ পায়, যা আল্লাহর সিফাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে অনেক আয়াত নাজিল হয়েছে, যা আমাদের মহান মোর্শেদ সুফী সম্রাট দয়াল বাবাজান তাঁর প্রণীত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “যারা ধৈর্যশীল ও সৎকর্মপরায়ণ তাদেরই জন্য রয়েছে (আল্লাহর) ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।” ( সুরা হুদ ১১: আয়াত ১১)
তাফসীরে মাজহারীর ৪র্থ খণ্ডের ৩৭৮ পৃষ্ঠায় হযরত সুহাইব (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে , আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “মহান আল্লাহর বাণী- ‘যারা ধৈর্যশীল ও সৎকর্মপরায়ণ তাদেরই জন্য রয়েছে (আল্লাহর) ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।’ ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ। মহান আল্লাহ্ মু’মিনের জন্য যা কিছু ফয়সালা করেন তাই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন যখন সুখ শান্তি লাভ করে এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, তা তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। আর যদি সে দুঃখকষ্টে পতিত হয় এবং ধৈর্য ধারণ করে, তাও তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। মু’মিন ব্যতীত আর কারো জন্য এ ব্যবস্থা প্রযোজ্য নয়।”
মহান আল্লাহ্ স্বীয় অনুগ্রহে মানুষকে রহমত দান করেন, বিভিন্ন প্রকার নিয়ামত দ্বারা তার জীবনকে সমৃদ্ধ করেন; আবার তিনিই মানুষের কল্যাণের জন্য তা ছিনিয়ে নেন। তখন দুঃখ-দৈন্যতা মানুষকে ঘিরে ফেলে। মানব জীবনে এই ভাঙ্গা গড়ার কাজ তিনিই করেন। প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ্ যা কিছু ঘটান সবই মানুষের কল্যাণের জন্য; যে মানুষ দুনিয়ার হাজারো নিয়ামত পেয়ে আল্লাহ্কে ভুলে আনন্দ স্ফূর্তিতে ডুবে আছে, এ যে ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল, তা মহান আল্লাহ্ তা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বারবার বান্দার বিবেকের দুয়ারে কষাঘাত করেন, মোহ নিদ্রা ভাঙ্গাতে চান, অনন্ত জীবনে হাত ছানি দেন, প্রকৃত কল্যাণের পথে আহ্বান করেন। আর এ পথ পরিক্রমায় বান্দা যখন দুঃখ-দৈন্যতায় আক্রান্ত হয়ে ধৈর্যধারণ করে, মহান প্রভু তাকে যে অবস্থায় রেখেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকে, মহৎ কাজ ও সৎকাজ অব্যাহত রাখে এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকে- মহান রাব্বুল আলামিন এরূপ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, আর তিনি বান্দার কাছ থেকে এরূপই প্রত্যাশা করেন।
যারা সচ্চরিত্র মু’মিন পুরুষ ও নারী তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর ক্ষমা ও সম্মানজনক রিজিক। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “দুশ্চরিত্র নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্য, দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্র নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য। আর চরিত্রবান পুরুষ ও নারীদের সম্বন্ধে লোকেরা যা বলে, তা থেকে তারা পবিত্র। তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।” (সূরা আন নুর ২৪: আয়াত ২৬)
মহান আল্লাহ্ আরও এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি তাজকিয়ায়ে নফস তথা নিজের নফসের কু-প্রবৃত্তিকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে পেরেছে, সে সাফল্য লাভ করেছে। আর যে ব্যক্তি পাপাচারে কলুষিত হয়েছে, সে ব্যর্থ হয়েছে।” ( সুরা আস সামস ৯১: আয়াত ৯-১০)
তাফসীরে মিজান-এর ১৫নং খণ্ডের ১০৮ পৃষ্ঠায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) এবং হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণনা হয়েছে, আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “যখন কোনো ব্যক্তির ক্বালব বা অন্তর পবিত্র হয়, তখন তার সমস্ত দেহ পবিত্র হয়ে যায়। আবার যখন ব্যক্তির ক্বালব বা অন্তর অপবিত্র থাকে, তখন তার সমস্ত দেহ অপবিত্র থাকে।”
প্রকৃতপক্ষে মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা উত্তম, যার চরিত্র যত বেশি সুন্দর বা উত্তম। এ জন্য আল্লাহ্ প্রাপ্তির পথে সাধারণত প্রতিটি আশেকে রাসুল মু’মিনকে সর্বাবস্থায় নফসের কুপ্রবৃত্তি, ষড়রিপুর ধোঁকা তথা সকল প্রকার পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে পথ চলতে হয়। যারা মোর্শেদের সাহায্য নিয়ে নফসের সকল প্রকার কামনা বাসনা উপেক্ষা করে রূহের আলো দ্বারা নফসকে আলোকিত করতে পারে, তারাই বিজয়ী ও সফলকাম। কেননা মোর্শেদ বিহনে একাকী সারাজীবন সাধনা করলেও মানুষ নিজেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে পারে না। এরূপ আশেকে রাসুল মু’মিনকে আল্লাহ্ যেমন ক্ষমা করে দেন, তেমনি দুনিয়া ও আখিরাতে তাদেরকে সম্মানজনক রিজিক প্রদান করেন।
যারা সুফী সম্রাট দয়াল বাবাজানের একনিষ্ঠ মুরিদ এবং প্রকৃত আশেকে রাসুল হতে পেরেছেন, তারা মহান আল্লাহ্, দয়াল রাসুল (সা.) ও মহান মোর্শেদের প্রতি একান্ত আনুগত্যশীল হয়ে মু’মিনে কামেল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম। তারা নিজেদের নফসের প্রভুত্ব অস্বীকার করে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও ইচ্ছা-অনিচ্ছার সামনে আত্মসমর্পণ করেছে এবং সেই অনুযায়ী পথ চলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা আনুগত্যশীল, অহংকার করে না, সত্যবাদী, কথা ও কর্মে সত্যনিষ্ঠ, ধৈর্যশীল, বিপদে আপদে ও সাধনা-রিয়াজতে হাসিমুখে কষ্ট সহ্য করে। তারা বিনয়ী পুরুষ ও নারী, তাদের অন্তর ও কণ্ঠস্বর বিনয়াবনত, তাদের আচরণে কেউ কষ্ট পায় না, তারা দানশীল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে, সিয়াম সাধনা করে, একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করে, মোর্শেদের নির্দেশিত পথে চলে, ধ্যান সাধনা করে, নফসের কুখায়েশ চরিতার্থ করে না, অবৈধ যৌনাচার করে না, নিজেদের সম্ভ্রম হিফাজত করে, নফসের ইসলাহের জন্য মোর্শেদের দরবারে গোলামি করে, আল্লাহকে ভয় করে, অন্তরে বেশি পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ রাখে এবং মোর্শেদের সাহায্য নিয়ে ক্বালবের মুখে জিকির জারি করে তা অব্যাহত রাখে।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে আমাদের মহান মোর্শেদ সুফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের একনিষ্ঠ মুরিদ হয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রকৃত আশেক ও মহান আল্লাহর খাঁটি মু’মিন বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
তথ্যসুত্র:
১। তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (চতুর্থ খণ্ড), সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান।
২। মুক্তি কোন পথে? সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান।
৩। সুফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার (প্রথম খণ্ড), সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান।