সূফী সম্রাটের শিক্ষাই মোহাম্মদী ইসলাম
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
আজ গোটা বিশ্বব্যাপী দ্বীন ইসলাম প্রচারিত হচ্ছে। আরবি ‘দ্বীন’ অর্থ- ধর্ম এবং ‘ইসলাম’ অর্থ- শান্তি। এক কথায় ‘দ্বীন ইসলাম’ অর্থ হলো- শান্তির ধর্ম। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এ বিশ্বজাহানে মানব জাতিকে সত্যের পথ প্রদর্শনের জন্য ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন আর প্রত্যেক নবিই সত্যের বাণী প্রচার করেছেন। তাঁরা এক আল্লাহ্র একত্ববাদ যেমন প্রচার করেছেন, তেমনি মানুষকে আত্মশুদ্ধির শিক্ষাও দিয়েছেন। মূলত সকল নবি-রাসুলের ধর্মেই ছিল শান্তির বারতা। মানুষের প্রতি পারস্পরিক ভালোবাসা, মানব সেবা এবং সততার সাথে জীবন পরিচালনা করার নির্দেশনা সকল নবিই স্বজাতিকে দিয়েছেন। সে দিক বিচার করলে দেখা যায়, সকল নবি-রাসুলই মানুষকে শান্তির চরিত্র গঠনের শিক্ষা দিয়েছেন। তাহলে দেখা যায়, সকল নবি-রাসুলের ধর্মের মূলনীতিই হচ্ছে- এক আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে আত্মসমর্পণ করে জীবনে যে শান্তি নেমে আসে, মূলত সেটাই ইসলাম।
ইসলাম সম্পর্কে অত্যন্ত সুস্পষ্ট, যুক্তিসংগত ও সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন আল্লাহ্র মহান বন্ধু, যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান। তিনি বলেন- সকল নবি-রাসুলের প্রচারিত ধর্মই ইসলাম। কেননা তাঁদের সকলের ধর্মের মূলনীতি ছিল এক আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে জীবন পরিচালনা করা। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ইসলামের বর্ণনা দিতে গিয়ে সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন- প্রত্যেক নবির ধর্মই ইসলাম। কেননা সকল নবিই এক আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য স্বজাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং সকল নবি-রাসুলের ধর্মই ইসলাম। তবে প্রত্যেক নবির ধর্মের সাথে তাঁর নাম সংযুক্ত হয়ে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে। যেমন হযরত মুসা (আ.) প্রচারিত ধর্মের নাম মুসায়ী ইসলাম, ঈসা (আ.) প্রচারিত ধর্মের নাম ঈসায়ী ইসলাম। অনুরূপভাবে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর প্রচারিত ধর্মের নাম ইব্রাহীমি ইসলাম। তাহলে আমাদের প্রিয়নবি, মহান আল্লাহ্র সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রচারিত ধর্মের নাম মোহাম্মদী ইসলাম হওয়াটাই অধিক যুক্তিসংগত। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান তাই যথার্থই বলেছেন- হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিস সংকলন করেছেন ইমাম বোখারী (রহ.)। তাই তাঁর সংকলিত হাদিসের নাম হয়েছে বোখারী শরীফ। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) শরিয়তের যে বিধান প্রণয়ন করেছেন, তা তাঁর নামানুসারে হয়েছে হানাফী মাজহাব। অনুরূপভাবে হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) তরিকতের যে বিধান চালু করেছেন, তা তাঁর স্বনামে কাদেরিয়া তরিকা নামে বিশ্বের বুকে আজো প্রচারিত হয়ে আসছে। তাহলে যে ধর্ম আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রচার করছেন, তার নাম মোহাম্মদী ইসলাম না হওয়ার কি কারণ থাকতে পারে? কিন্তু তা আজ দ্বীন ইসলাম হিসেবে প্রচার হয়ে আসছে। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান তাই যথার্থই বলেছেন- হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রচারিত ইসলাম ধর্মে তাঁর নাম সংযুক্ত হয়ে মোহাম্মদী ইসলাম হওয়ার কথা ছিল। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান আরো বলেন- সকল নবির প্রচারিত ধর্মের সাথে নবির নাম সংযুক্ত ছিল কিন্তু মোহাম্মদী ইসলাম থেকে মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম বাদ দিয়ে দ্বীন ইসলাম করেছে কারা? সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ঐতিহাসিক তথ্য দিয়ে বর্ণনা করেছেন- খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলের পর ৮৯ বছর ছিল উমাইয়াদের শাসনকাল। উমাইয়া শাসক আমির মুয়াবিয়ার পর তার পুত্র এজিদ ক্ষমতায় আসে। অথচ আমির মুয়াবিয়ার সাথে রাসুল (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হাসান (রা.)-এর সাথে চুক্তি হয়েছিল যে, হযরত ইমাম হাসান (রা.) খলিফার পদ ছেড়ে দেবেন, তদস্থলে আমির মুয়াবিয়া খলিফা হবেন। কিন্তু তার পরে তার পুত্র নয়, খলিফা হবেন হযরত রাসুল (সা.)-এর অপর দৌহিত্র এবং শেরে খোদা হযরত আলী (রা.)-এর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। কিন্তু আমির মুয়াবিয়া সেই ওয়াদা রক্ষা না করে নিজ পুত্র- কুখ্যাত এজিদকে তার পরবর্তী খলিফা নির্বাচিত করেন। এজিদ ছিল মদ্যপায়ী, লম্পট ও দুরাচারী। যে খলিফার মসনদে বসেই হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-কে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। শুধু পরিকল্পনাই নয়, কুখ্যাত এজিদের নির্দেশে ইবনে যিয়াদ হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইবনে যিয়াদের নেতৃত্বে এজিদন্থী ২২ হাজার সৈন্যের মোকাবিলায় হযরত রাসুল (সা.)-এর আহলে বাইতের সদস্য ও অনুসারী মাত্র ৮২ জন নিরস্ত্র মানুষ কারবালা প্রান্তরে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৯ জন মহিলা এবং অসুস্থ হযরত জয়নাল আবেদীনসহ মাত্র ১০ জন ব্যতীত বাকী ৭২ জনের সকলেই শহীদ হন। তাঁদের শাহাদতের মধ্য দিয়েই মূলত হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ মোহাম্মদী ইসলাম জগত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। উমাইয়াদের ৮৯ বছর শাসনামলে একমাত্র হযরত ওমর বিন আব্দুল আজীজই রাসুলের আদর্শের অনুসারী ছিলেন। তিনি রাসুল (সা.)-এর হাদিস সংগ্রহের জন্য মদীনার গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখনই কুচক্রী মহল, যারা রাসুল (সা.)-এর হাদিস জাল করার কাজে নিয়োজিত ছিল, তারা হযরত ওমর বিন আবদুল আজীজকে হত্যা করে ফেলে। এর পরবর্তী উমাইয়া শাসকসহ আব্বাসী শাসনামলের ৫০৮ বছরে যত শাসক এসেছেন, তাদের সময়েও এই জাল হাদিস প্রচার হওয়ায় রাসুল (সা.)-এর সময়কার বহু বিধি বিধান পরিবর্তন হয়ে যায়। এর ফলে মোহাম্মদী ইসলামও জগত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। মহান আল্লাহ্র অপার দয়ায় রাসুল (সা.)-এর দেড় হাজার বছর পরে জগতের বুকে আগমন করেছেন, মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান। তিনি বিশ্বের বুক থেকে হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামকে আবার জগতের বুকে পুনর্জীবিত করেছেন। যে মোহাম্মদী ইসলামের নাম জগত থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে, সূফী সম্রাট সেই মোহাম্মদী ইসলাম পুনরায় জগতের বুকে জাগ্রত করেছেন। আজ মোহাম্মদী ইসলাম শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের শতাধিক দেশে প্রচারিত হচ্ছে। কেননা, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানের ভক্ত অনুসারীগণ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই বিরাজমান রয়েছে। তারা বাংলাদেশে অবস্থানরত মহান মোর্শেদের সাথে যোগযোগ রেখে এবং তাঁর নির্দেশে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের কাজ করছেন। এক্ষেত্রে সূফী সম্রাটের সাহেবজাদাগণের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাঁরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত সূফী সম্রাটের ভক্ত আশেকে রাসুলদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে মোর্শেদের বাণী ও নির্দেশনা তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে থাকেন।
এছাড়া মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের জন্য সুফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান তাঁর দরবার শরীফ থেকে ‘সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ’, ‘উইকলি দি ম্যাসেজ’ এবং ‘মাসিক আত্মার বাণী’ পত্রিকা প্রকাশ করে থাকেন। যে পত্রিকায় সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান প্রদত্ত প্রতি শুক্রবারের বাণী মোবারক প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এছাড়া সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান প্রণীত বেশ কয়েকটি মুল্যবান গ্রন্থ রয়েছে, যা অধ্যয়ন করলে মোহাম্মদী ইসলাম সম্পর্কে যেমন গভীর জ্ঞান অর্জন করা যায়, সেই সাথে মুসলমানদের জীবন পরিচালনা করার বিধি বিধান সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্যাবলী জানা যায়।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান প্রণীত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ এমন একখানা মহামূল্যবান গ্রন্থ, যা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাফসির গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত। এই ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়নাবাগী’কে মোহাম্মদী ইসলামের সংবিধান বলা যেতে পারে। এই তাফসিরের মাধ্যমে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান আল্লাহ্র বাণী পবিত্র কুরআন ও রাসুল (সা.)-এর সহিহ্ হাদিস দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, আল্লাহ্ নিরাকার নন, তিনি আকার। তবে মহান আল্লাহ্ মানুষের মত রক্ত মাংসের দেহধারী নন, তিনি নুরের। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের জাত পাক এবং ৯৯টি সিফাত বা গুণাবলী নিয়ে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ৮ খণ্ডের এক মহামূল্যবান তাফসির শরিফ। ১১,৩৭৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত এ তাফসির শরিফে তিনি আল্লাহ্র আকার যেমন প্রমাণ করেছেন, তেমনি আল্লাহ্র প্রিয় হাবীব হযরত রাসুল (সা.) যে গরিব ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাদশাহ’র বাদশাহ, পবিত্র কুরআন ও হাদিস দিয়ে তাও প্রমাণ করেছেন। সূফী সম্রাট বলেন- হযরত রাসুল (সা.) শ্রেষ্ঠ ধনী ছিলেন। তাঁর দাদা ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা, রাসুল (সা.) নিজে ছিলেন মদীনার শাসনকর্তা এবং রাসুল (সা.)-এর পিতা ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী।
একজন শাসনকর্তার পৌত্র (নাতি), একজন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীর পুত্র এবং যিনি স্বয়ং মদীনার শাসনকর্তা, তিনি কী করে গরীব হন? একথা বলার পিছনে রযেছে বিধর্মীদের গভীর ষড়যন্ত্র এবং স্বধর্মীদের অজ্ঞতা। সূফী সম্রাট প্রমাণ করেছেন যে, হযরত রাসুল (সা.) বিদায় হজে ১০০টি উট কোরবানি করেছেন। প্রতিটি উটের বর্তমান বাজার মূল্য ১০ লক্ষ টাকা হলে ১০০টি উটের মুল্য ১০ কোটি টাকা। যে রাসুল (সা.) ১০০টি উট কোরবানি করেছেন, তিনি গরিব হন কিভাবে? আসলে এটা রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে একটা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। সূফী সম্রাট দেওয়ানাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান একদিকে আল্লাহ্র আকার যেমন প্রমাণ করেছেন, অপরদিকে রাসুল (সা.) যে ধনী ছিলেন, তাও অকাট্যভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে মুসলমানদের হাজার বছরের ভ্রান্তি দূর হয়েছে। এদু’টি সূফী সম্রাট হুজুর ক্লোজানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংস্কার। এ সম্পর্কে তিনি তাফসির শরিফে বিস্তারিত লিখেছেন। এছাড়াও তিনি নবি-রাসুলদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তাফসির শরিফে বর্ণনা করেছেন। এক কথায় বলতে হয়, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে যে ভুল প্রবিষ্ট হয়েছে, তা সংস্কার সাধন করে হযরত রাসুল (সা.)-এর রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ প্রচার করছেন এবং মানুষকে শিক্ষা দিচ্ছেন। সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সূফী সম্রাটের শিক্ষাই হচ্ছে মোহাম্মদী ইসলাম।
3 Comments
আমিন
মোহাম্মদী ইসলাম সম্পর্কে সুন্দর আলোচনা
Amin