সূফী সম্রাটের সাহচর্যে সকল ধর্মাবলম্বীর অলৌকিক সাহায্য লাভ
ইমাম ড. সৈয়দ এ. এফ. এম. মঞ্জুর-এ-খোদা
মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানকে মহান রাব্বুল আলামিন বেলায়েতের যুগের ‘শ্রেষ্ঠ ইমাম’ হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তাঁর সহবতে এসে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ আত্মশুদ্ধির শিক্ষা লাভ করে নিজেকে আদর্শ চরিত্রবান করতে সক্ষম হচ্ছে। ষড়রিপুর বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে আলোকিত মানুষ হয়ে ইমান নিয়ে কবরে যাওয়ার জন্য প্রতিটি মানুষকেই যুগের ইমামের সান্যিধ্যে যাওয়া অত্যাবশ্যক।
যুগের ইমাম প্রসঙ্গে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান, “যে ব্যক্তি তার জামানার ইমামকে চিনতে পারে না এবং এ অবস্থায় যদি মৃত্যু ঘটে, তবে তার মৃত্যু অন্ধকারে নিমজ্জিত ও নিপতিত হবে।” (মুসনাদে ইমাম সাদেক, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৯ ও ৫৩৩) এই প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) আরো এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি (যুগের) ইমামের আনুগত্য না করে মৃত্যুবরণ করেছে, সে জাহেলি অবস্থা তথা ধর্মহীন বেইমান হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।” (মুসনাদে আহমদ ১৩নং খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৮)
আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ১৯৮৩ সালে ১৬ ডিসেম্বর মোজাদ্দেদের দায়িত্ব লাভ করেন; ১৯৮৮ সালের ১০ মহররম আশুরার দিবসে যুগের ইমামের দায়িত্ব লাভ করেন; ১৯৮৯ সালের ৫ এপ্রিল মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী খেতাবে ভুষিত হন ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভ করেন এবং সর্বশেষ ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার: পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি প্রকাশ পায়। মূলত আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভ এবং পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক প্রকাশের পর থেকে এই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সকল ধর্মের মানুষের জন্য পথপ্রদর্শকরূপে এই ধুলির ধরায় প্রেরিত হয়েছেন। উল্লেখ্য যে, চাঁদ সারা বিশ্বের জন্য একটি এবং ঐ চাঁদ সকল ধর্মের মানুষকে সমভাবে আলো দিয়ে থাকে। চাঁদের সিড়বগ্ধ আলো যেমন রাতের অন্ধকার দূর করে মানুষকে পথ দেখায়, তেমনিভাবে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সান্যিধ্যে এসে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ হৃদয়ের অন্ধকার দূর করে আলোকিত মানুষরূপে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের পরামর্শ গ্রহণ করে সকল ধর্মের মানুষ আপদ-বিপদ, বালা-মুসিবত থেকে অলৌকিক দয়া ও সাহায্য লাভ করছেন।
আকাইদের কিতাবে বর্ণিত আছে, “নবিগণের মু’জিজা যেমন সত্য,অলী-আল্লাহ্গণের কারামত সত্য।” এছাড়া এই প্রসঙ্গে তাফসীরে মাজহারিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “আহলে সুনড়বাত ওয়াল জামাআতের আকিদা হচ্ছে-‘আওলিয়া কেরামের কারামত তাঁদের নবিদের মু’জিজার ন্যায় হয়ে থাকে’।” (তাফসীরে মাজহারী, ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৭)
যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন জগৎশ্রেষ্ঠ মহামানব। তাঁর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ গ্রহণ করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ‘আশেকে রাসুল’ হয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করছেন। তাঁর শাহাদত অঙ্গুলি মোবারকের স্পর্শের সাথে সাথে মানুষের মুর্দা দিলে ‘আল্লাহ্’ জ্বিকির জারি হয়ে যায়। তাঁর সান্যিধ্যে এসে বোবার মুখে কথা ফুটেছে এবং অন্ধ তার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেয়েছে। আকস্মিক বিপদে পড়ে মুরিদ সন্তান যখন ‘বাবা’ ‘বাবা’ বলে চিৎকার করে উঠে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তৎক্ষণাৎ রূহানিতে উপস্থিত হয়ে ভক্তকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার হাজার হাজার ঘটনা রয়েছে। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা যখন কোনো দম্পতির পিতা ও মাতা হওয়ার স্বপ্ন সফল করতে পারেনি, তখন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অপার দয়ায় দরবারে মানত করে হাজার হাজার নিঃসন্তান দম্পতির পিতা-মাতা হওয়ার স্বপ্ন সফল হয়েছে। মোরাকাবারত অবস্থায় কপালে কাফের লেখা দেখে যখন কোনো আশেক তকদির পরিবর্তনের আশায় পাগলের মতো সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের নিকট ছুটে এসেছেন, সূফী সম্রাটের অপার দয়ায় কপালের কাফের লেখা মুছে গিয়ে ‘মুমিন’ লেখা ওঠে তকদির পরিবর্তন হয়েছে।
আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত বহু আশেক আর্থিক স্বচ্ছলতার আশায় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের নিকট রোনাজারি করলে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের দয়ার বদৌলতে মুরিদের অভাব অনটন দূর হয়। পিতার অবাধ্য সন্তান যখন অসৎ সঙ্গে মিশে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, সেসময় পিতা মাদকাসক্ত সন্তানকে সূফী সম্রাটের সান্নিধ্যে আনার পর সেই সন্তান সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে উত্তম চরিত্রাদর্শ নিজ হৃদয়ে ধারণ করার অনুপম ঘটনাও ঘটেছে। শুধু কি তাই, মৃত জীবিত হওয়ার ঘটনা এবং রাষ্ট্রপতির নিকট থেকে ফাঁসির আসামির প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার পরও সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অপার দয়ায় ফাঁসির আসামি খালাস হওয়ার বিরল ঘটনাও ঘটেছে। এমনিভাবে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সান্যিধ্যে এসে সকল ধর্মের মানুষের মাঝে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অলৌকিক কারামত সংঘটিত হচ্ছে। পাঠকদের উদ্দেশে তন্মধ্য থেকে একটি অলৌকিক কারামত নিমেড়ব উপস্থাপন করা হলো-
অলৌকিক কারামতটি বর্ণনা করেন সনাতন ধর্মের অনুসারী পলাশ চন্দ্র শীল, তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব থানার অধিবাসী। তিনি বলেন, “আমার মামা শ্রী বিকাশ চন্দ্র শীল ২০০৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ সুখেই অতিবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু তাদের কোল জুড়ে কোনো সন্তান না আসাতে স্বামী ও স্ত্রীর মনে শূন্যতা অনুভব হচ্ছিল। উপায়ন্তর না দেখে তারা চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। ডাক্তার তাদের উভয়কে বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষা দেন। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক তারা উভয়েই ভালো একটি ডায়োগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করান। অতঃপর আমার মামা ও মামি টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারকে দেখালেন। ডাক্তার বললেন যে, আমার মামির শারীরিক কিছু সমস্যা রয়েছে, তিনি ‘মা’ হতে পারবেন না। পরবর্তীতে তারা বাংলাদেশের স্বনামধন্য আরো কিছু বিশেষজ্ঞ গাইনোলজিস্ট-এর নিকট যান। রিপোর্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রত্যেক ডাক্তারই একই কথা বলেন যে, আমার মামি কখনোই ‘মা’ হতে পারবেন না। এরপর আমার মামা ও মামি হতাশ হয়ে পড়েন। তাদের হতাশা দেখে আত্মীয়স্বজন তাদেরকে কবিরাজের নিকট যাওয়ার পরামর্শ দিলেন।
বিভিন্ন কবিরাজের পরামর্শ মোতাবেক তারা নানান ধরনের কবিরাজি ঔষধ গ্রহণ করেন। কিন্তু তাদের মনের আশা পূরণ হলো না। আমার মামা ও মামি উভয়েই সন্তান হওয়ার আশা একেবারেই ছেড়ে দিলেন।
২০০৮ সালে আমি ও আমার নানা শ্রী জীবন চন্দ্র শীল (মামার পিতা) রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে একটি কাজে আসি। সেসময় ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের আরামবাগস্থ বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। দেওয়ানবাগ শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান মাইকে বক্তব্য রাখছিলেন। হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান বাবে রহমতের ভিতরে এবং রাস্তায় বসে বাবা দেওয়ানবাগী হুজুরের বক্তব্য মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলেন। আমরাও রাস্তায় দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগসহকারে বাবা দেওয়ানবাগী হুজুরের বক্তব্য শুনছিলাম। বাবা দেওয়ানবাগীর বক্তব্য শুনে আমাদের উভয়ের মনে বিশ্বাস জন্মালো যে, তিনি আল্লাহর মহান বন্ধু। বক্তব্য শেষে আখেরি মুনাজাতের পর উপস্থিত ভক্তবৃন্দ বাবা দেওয়ানবাগীর সাথে সাক্ষাতের জন্য অত্যন্ত শৃঙ্খলার সাথে লাইন ধরে বাবে রহমতের ভিতরে প্রবেশ করছিলেন। আমি এবং আমার নানা উভয়েই বাবা দেওয়ানবাগীর সাথে সাক্ষাতের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আমরা দোতলায় হুজরা শরীফে বাবা দেওয়ানবাগীর সাক্ষাত পেলাম। স্রষ্টার কি অপার মহিমা! আমাদেরকে দেখেই বাবা দেওয়ানবাগী জানতে চাইলেন, আমরা কিছু বলব কিনা?
তখন আমার নানা শ্রী জীবন চন্দ্র শীল তার ছেলে বিকাশ চন্দ্র শীলের সন্তান না হওয়ার বিষয়টি বাবা দেওয়ানবাগীকে অবহিত করলেন। বাবা দেওয়ানবাগী দয়া করে বললেন, ‘মানত করে মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন।’ আমার নানা তৎক্ষণাৎ মনে মনে ঈশ্বরকে স্মরণ করে বললেন, ‘হে ঈশ্বর! তুমি যদি দয়া করে তোমার অলী বন্ধু বাবা দেওয়ানবাগীর কৃপায় আমার একটি নাতি বা নাতনি দান করো, তাহলে তোমার বন্ধু বাবা দেওয়ানবাগীর চরণে মোমবাতি ও আগরবাতি প্রদান করব।’ মহান আল্লাহর অপার দয়ায় বাবা দেওয়ানবাগীকে বিশ্বাস করে শুধুমাত্র মোমবাতি ও আগরবাতি মানত করার ৫ মাস পর আমার মামি কনসিভ করেন। অতঃপর ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে আমার মামা ও মামির কোল জুড়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত সন্তান জন্মগ্রহণ করে। পরবর্তীতে আমরা মানতের পুত্র সন্তানটিকে সাথে নিয়ে দেওয়ানবাগ শরীফে এসে বাবা দেওয়ানবাগীর নিকট মোববাতি ও আগরবাতি প্রদান করে মানত আদায় করি। বর্তমানে আমার মামাতো ভাইয়ের বয়স ১১ বছর।”
পলাশ চন্দ্রের বর্ণিত উল্লিখিত অলৌকিক কারামতটি থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে বিশ্বাস করে যে কোনো ধর্মের মানুষ তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করলে আপদ-বিপদ, বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পান এবং মহান আল্লাহর অলৌকিক দয়া ও সাহায্য লাভ করেন।
উল্লেখ্য যে, পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, “যারা ইমান এনেছে এবং যারা ইহুদি হয়েছে আর খ্রিষ্টান ও সাবেইন- তাদের মধ্য থেকে যারা ইমান এনেছে আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের প্রতি এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট। আর তাদের কোনো ভয় নাই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’’ (সূরা আল বাকারাহ-২: আয়াত ৬২)
অন্যত্র আল্লাহ্ ফরমান- “যারা (ইসলামে বিশ্বাস স্থাপন করে) ইমানদার হয়েছে, আর যারা ইহুদি হয়েছে, সাবেইন ও খ্রিষ্টানগণের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস করে এবং সৎকাজ করে তার কোনো ভয় নেই এবং সে দুঃখিতও হবে না।”(সূরা আল মায়িদা-৫: আয়াত ৬৯)
মহান রাব্বুল আলামিনের বাণী মোবারক থেকে বুঝা যায় মানুষ যদি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখে, পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং সৎকাজ করে, তাহলে সে তার প্রতিপালকের নিকট থেকে প্রতিদান পাবে।
পরিশেষে, মহান প্রভুর নিকট প্রার্থনা তিনি যেন দয়া করে আমাদের সকলকে তাঁর প্রিয় বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ইচ্ছায় নিজেদেরকে পরিচালিত করার তৌফিক দান করেন।
[লেখক: পরিচালক, দেওয়ানবাগ শরীফ; সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ]