সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগীর আধ্যাত্মিক শিক্ষায় মানব জীবন ধন্য
শিক্ষা জ্ঞান লাভের একটি প্রক্রিয়া এবং ব্যক্তির সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের আচরণের কাক্সিক্ষত পরিবর্তন ঘটে। সেজন্য শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলির পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ প্রদান করতে হয়। যিনি এই কাজগুলো করেন তিনিই শিক্ষক। বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কেউ বিজ্ঞানের শিক্ষক, কেউ প্রযুক্তির শিক্ষক, আবার কেউবা ভাষার শিক্ষক। সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) একজন আধ্যাত্মিক শিক্ষক। তিনি কীভাবে নিজেকে শুদ্ধ করে সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ এবং হযরত রাসুল (সা.)-কে পাওয়া যায়, সেই শিক্ষা দিয়েছেন।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) সৃষ্টির মুল উদ্দেশ্য ও বান্দা হিসেবে প্রভুর প্রতি মানুষের কী করণীয়, তা শিক্ষা দিয়েছেন। রাব্বুল আলামিন ও রাহমাতুল্লিল আলামিনের প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছেন। আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ্কে পেয়ে তাঁর উপর পূর্ণ আত্মসমর্পণ করার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শে আদর্শবান করে গড়ে তুলে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। তাঁর শিক্ষা মানুষকে মু’মিন হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেছেন শুধু কিতাব পড়ে ধর্ম চর্চা হয় না। যদি তাই হতো তবে ধর্ম শিক্ষার জন্য আল্লাহ্ প্রথমেই তাঁর বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে একজন নবি বা রাসুল পাঠিয়ে এ অধ্যায় সমাপ্ত করতেন। নবুয়তের যুগে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবি-রাসুল প্রেরণ করার প্রয়োজন পড়ত না। মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সব সময় দক্ষ শিক্ষক দরকার বলেই যুগের পর যুগ মহান আল্লাহ্ তাঁর বন্ধুদেরকে পথ প্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন। বেলায়েতের যুগের জন্য সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) সেই ধরনের একজন উচ্চমার্গের আধ্যাত্মিক শিক্ষক ছিলেন। তিনি এত্তেহাদি তাওয়াজ্জোহর মাধ্যমে মানুষের পশু প্রবৃত্তিকে দমন করে তাকে সুপথগামী করে তুলতে সক্ষম ছিলেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেন- ইসলামের মৌলিক শিক্ষা হলো চরিত্র সংশোধন। সেই লক্ষ্যে তিনি মুলত আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা, নামাজে হুজুরি এবং আশেকে রাসুল হওয়া-এই চারটি মৌলিক শিক্ষা দিয়েছেন। আত্মা শুদ্ধ না হলে নিয়ত শুদ্ধ হয় না, আর নিয়ত শুদ্ধ না হলে কোনো আমলই শুদ্ধ হয় না। মানুষের দেহের ভিতরে এক টুকরা মাংস আছে সেই মাংসের টুকরা যখন পবিত্র হয় তখন সমস্ত দেহই পবিত্র হয়। এ মাংস পিণ্ড হলো ক্বালব। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) সেকারণে ক্বালবে আল্লাহর জিকির জারি করার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনের সবক দিয়েছেন। আত্মার মুখে জিকির জারি হলে মানুষের দিল জিন্দা হয়। ইমান নিয়ে কবরে যাওয়ার পূর্বশর্ত হলো দিলে জিকির জারি করা। দিলে জিকির জারি হলে আর শয়তান কুমন্ত্রণা দিতে পারে না। মন সর্বদা আল্লাহ্ তায়ালার ধ্যানে থাকা ও তাঁর প্রেম এবং মহব্বতে ডুবে থাকা ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হয় না, কবুলও হয় না। সেজন্য হুজুরি দিলে নামাজ আদায়ের শিক্ষা দিয়ে নামাজ শুদ্ধ করে নামাজের ফজিলত পাওয়ার পথ দেখিয়েছেন।
একজন মু’মিনের প্রতিটি কাজ হওয়া উচিত মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য। সেখানে ধর্মান্ধতা বা কুসংস্কারের কোনো জায়গা নেই। সেজন্য তিনি তাঁর অনুসারীদের সামনে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর পরিচয় তুলে ধরেছেন। তারপর তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করার জন্য সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (স.)-এর সন্ধান লাভ করতে হয়। সেই সাধনার সূচনা করেন তিনি মুরিদের ক্বালবে শাহাদত অঙ্গুলির স্পর্শ দিয়ে। কোনো মানুষ তাঁর পবিত্র শিক্ষা গ্রহণের জন্য আগমন করলে প্রথমেই তাকে তাওবা পড়িয়ে আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রথম সোপান লতিফায়ে ক্বালবের সবক দান করতেন এবং আত্মার মুখে জিকির জারি করে দিতেন। অতঃপর নিয়মিতভাবে ইসলামি আহকামসমূহ পালনসহ কিছু নফল ইবাদতের আদেশ দিতেন। এভাবে লতিফায়ে ক্বালবের শিক্ষা শেষ হলে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সবকগুলো দিতেন। এভাবেই একজন মানুষ আধ্যাত্মিকতার স্তর পেরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। তিনি আধ্যাত্মিক শিক্ষার পাশাপাশি শরিয়তের বিধিবিধান পালনের শিক্ষাও দিতেন। এলমে শরিয়ত, এলমে তরিকত, এলমে হাকিকত ও এলমে মারেফত চর্চা করা আবশ্যক বলে জানান।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার দূর করে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রকৃত শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ইসলাম থেকে হারিয়ে যাওয়া ধর্মের প্রাণ এলমে তাসাউফকে ধর্ম পালনে পুনর্র্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন পরকালের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য বা বেহেশত পাওয়ার আশায় কিংবা কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধর্ম পালন নয়, বরং আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে পাওয়ার জন্যই ধর্ম পালন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ পাক ফরমান-“ওয়া ফী আনফুসিকুম, আফালা তুবসিরুন।” অর্থাৎ-“আমি তোমাদের (ক্বালবের সপ্তম স্তর) নাফসির মোকামে বিরাজ করি। তবুও কি তোমরা দেখ না।” কাজেই বুঝা যাচ্ছে সঠিকভাবে সাধনা করলে প্রভুর পরিচয় লাভ করা সম্ভব। সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান মানুষকে সেই মহান আল্লাহ্কে নিজের মধ্যে খুঁজে তাঁর কদমে নিজেকে সোপর্দ করার শিক্ষা দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ্কে খুঁজে পেতে নিয়মিত মোরাকাবা করার জন্য বলেছেন। মোরাকাবা বা ধ্যানের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা ঘোষণা করেন “নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিন-রাতের আবর্তনে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। তারা দাঁড়িয়ে, বসে বা শায়িত অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করে; তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য নিয়ে চিন্তা করে (ধ্যানে মগ্ন হয়) এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব নিরর্থক সৃষ্টি করনি।” (সুরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১৯০-১৯১) মুক্তির পথ অনুসন্ধানের জন্য গভীর মনোনিবেশ ও আত্মনিমগ্নতার নির্দেশ আল্লাহ্ আল কুরআনে একাধিক জায়গায় দিয়েছেন। এমনকি আল্লাহ্ বলেছেন, “অতএব যখনই তুমি অবসর পাবে, তখনই কঠোর ইবাদতে রত হও। আর তোমার রবের প্রতি আকৃষ্ট হও।” (সুরা ইনশিরাহ ৯৪: আয়াত ৭-৮) মোরাকাবাই আধ্যাত্মিক সাধনার মুল মন্ত্র। এর মাধ্যমেই যেমন সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাওয়া যায় তেমনি ফায়েজ অর্জন করে নিজের ভিতরের দোষ ত্রুটি দূর করে হযরত রাসুল (সা.) ও মহান আল্লাহর কাছে সোপর্দ হওয়া যায়।
মোরাকাবা সম্পর্কে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে উল্লেখ আছে, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “এক ঘন্টা মোরাকাবা করা ষাট বছরের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।” (তাফসীরে দুররে মানছুর, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১০) মোরাকাবা আধ্যাত্মিক শিক্ষার এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে অস্থির ক্বাল্ব বা মনকে স্থির ও প্রশান্ত করানোর পর মনকে দিয়ে বড়ো কিছু করানোর প্রস্তুতি নেওয়া যায়। মোরাকাবা মনকে নফ্স বা প্রবৃত্তির শৃঙ্খলমুক্ত হতে সাহায্য করে এবং তাকওয়াবান হতে সহায়তা করে। এসব আলোচনা থেকে বুঝা যায় মোরাকাবা বা আধ্যাত্মিক সাধনা হচ্ছে স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সাক্ষাৎ লাভের মোক্ষম উপায়। মুক্তি লাভের সেটাই একমাত্র উসিলা। মোরাকাবা করা আধ্যাত্মিক শিক্ষার এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শিক্ষা মোতাবেক মানুষ নিয়মিত মোরাকাবা করে হযরত রাসুল (সা.) ও মহান আল্লাহর সন্ধান পেয়ে জীবন ধন্য করেছেন। তিনি সবাইকে আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। এলমে শরিয়ত, এলমে তরিকত, এলমে হাকিকত ও এলমে মারেফত-এ চারটি বিদ্যা অর্জন করেই নায়েবে রাসুল হতে হয় বলে সবাইকে অবহিত করেছেন। মানুষ জন্মগতভাবে আল্লাহর মহাশক্তির ধারণক্ষম। সেই মানুষ যখন আল্লাহর বন্ধুগণের সংস্পর্শে এসে নিজের মধ্যে সুপ্ত আল্লাহর চরিত্রকে বিকশিত করে আপন হৃদয়কে আলোকিত করতে পারে তখনই সে আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হয়েছেন। সামাজিক জীবন যাপনের পাশাপাশিই তারা এ শিক্ষা অনুসরণ করেছেন। এ শিক্ষা চর্চার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃত মু’মিনে পরিণত হয়েছেন। মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভ করা ছাড়াও অন্তর দৃষ্টির মাধ্যমে সৃষ্টিজগতের নানাবিধ রহস্য এবং ভেদ জানা সম্ভব হয়েছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি অথচ আল্লাহর সাথে মানুষের যোগাযোগ হবে না এমনতো হতে পারে না।” সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান এ শিক্ষা পৃথিবীর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে দিয়েছেন। তিনি ধর্মকে বিজ্ঞান সম্মতভাবে উপস্থাপন করে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের প্রকৃত পরিচয় জগদ্বাসীর নিকট তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন ফেরকা সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন ও এর সঠিক সমাধান তাঁর শিক্ষায় রয়েছে। তাঁর শিক্ষা পেয়ে মানুষের ভিতরের সুপ্ত আল্লাহ্কে পেয়েছেন। তাঁকে উপলদ্ধি করে বা দেখে মানুষের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এসেছে। অশান্তির চরিত্র ছেড়ে মানুষ শান্তির দূতে পরিণত হয়েছেন। এটিই মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর সহবতে এসে পথহারা মানুষ সোনার মানুষে পরিণত হয়েছেন। যার জীবনে তাঁর সহবত মিলেছে মহান আল্লাহর রহমত তার উপর নাজিল হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য প্রত্যাশা করেন, কিন্তু সঠিক শিক্ষক না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়ে উঠে না। নবুয়তের যুগে নবি-রাসুলগণ ছিলেন এ পথের শিক্ষক। বেলায়েতের যুগে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান দেশ বিদেশের আশেকে রাসুলদের সেই শিক্ষা দিয়ে ধন্য করেছেন। মানুষ যখন তাঁর শেখানো মতে আমল শুরু করেছে তারপর থেকেই রুহানি জগতে শুরু হয়েছে উন্নয়নের জোয়ার। অন্ধকার ক্বালব ধীরে ধীরে আলোকিত হয়েছে। নিজের ভিতরে মানুষ অনেক কিছু আবিষ্কার করেছেন। তাঁদের দেহ ও মনে বয়ে গেছে আনন্দের ফল্গুধারা। এ প্রক্রিয়া চলেছে জীবন ভর।
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের শিক্ষায় তাঁর অনুসারীরা আশেকে রাসুল হয়েছেন। আশেকে রাসুলগণ তাঁর নির্দেশিত আমলের মাধ্যমে ফায়েজ অর্জন করে রিপু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চরিত্রবান হয়ে উঠেছেন। আত্মিক উন্নতির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে আল্লাহর অস্তিত্ব অনুধাবন করেছেন। মানুষ সমস্ত খারাপ কাজ ছেড়ে, হয়ে উঠেছেন আদর্শ মানুষ। তাঁর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ে সৃষ্টি হয়েছে ত্যাগ, প্রেম ও সহানুভূতি। এ ধরনের শুদ্ধ চরিত্র গঠন করতে পেরে আলোকিত মানুষরূপে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সান্নিধ্যে এসে মানুষ প্রকৃত আশরাফুল মাখলুকাতের গুণাবলি অর্জন করতে সচেষ্ট হয়েছেন। এটিই ধর্মের উদ্দেশ্য।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর এত্তেহাদি তাওয়াজ্জোহ্ দ্বারা পশু প্রবৃত্তিকে দমন করে মানুষকে সুপথগামী করেছেন। তিনি তাঁর প্রজ্বলিত নুর মুরিদের ক্বালবে প্রবেশ করিয়ে আত্মার নানাবিধ পাপকর্মের ময়লা দূরীভুত করে আত্মার উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। তিনি মানুষের ভিতরে বিদ্যমান খারাবি স্বভাবের স্থায়ী পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তাঁর শিক্ষামতে ধর্ম পালন করে আশেকে রাসুলগণ সফলকাম হয়েছেন। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগীর নির্দেশিত শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অসংখ্য আলোকিত মানুষ তৈরি হয়েছে। এসব আলোকিত মানুষ এখন বিশ্বব্যাপী মোহাম্মদী ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছেন।
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগীর শিক্ষায় দিলের অন্ধত্ব দুর করে দয়াল রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও চরিত্র তথা মোহাম্মদী ইসলাম চর্চার মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার শিক্ষা তিনি দিয়েছেন। মোহাম্মদী ইসলাম প্রকৃতপক্ষে হযরত রাসুল (সা.) প্রচারিত ধর্ম। সেকারণেই সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর শিক্ষা পেয়ে মানুষ এ ধর্মে যে শান্তি বিরাজমান তা অন্তরে অনুভব করেন। প্রতিটি মানুষ তাঁর সংস্পর্শে এসে ধর্মের প্রকৃত স্বাদ উপলদ্ধি করেছেন। তিনি জগতের অসংখ্য পথহারা মানুষকে মোহাম্মদী ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা দিয়েছেন। এতে তাঁর মুরিদ সন্তানেরা খুঁজে পেয়েছেন শান্তির পৃথিবী। এটিই মানুষের মধ্যে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন। যা সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানের শিক্ষার মাধ্যমে পাওয়া গেছে।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন- মৃত্যুর সময় ইমানি পরীক্ষায় আমাদের আবশ্যিকভাবে প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হবে। তবে সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আল্লাহর তরফ থেকে ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে। তথাপিও সেই পরীক্ষার জানা প্রশ্নের জবাব বেশিরভাগ মানুষই দিতে পারবে না। যে তিনটি প্রশ্ন করা হবে তা হলো- “মার রাব্বুকা, ওয়া মা দিনুকা, ওয়া মান নাবিয়্যুকা, আউ মান হাজার রাজুল” অর্থাৎ তোমার প্রভু কে? তোমার ধর্ম কি? তোমার নবি কে? অথবা নবিকে হাজির করে জিজ্ঞেস করা হবে উনি কে? সেজন্য তিনি মানুষকে হযরত রাসুল (সা.) ও মহান আল্লাহর পরিচয় লাভ ও শান্তির চরিত্র অর্জনের শিক্ষা দিয়েছেন। যাতে করে মানুষ ঐ প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে পারেন। এ বিদ্যা শিক্ষার জন্য হযরত রাসুল (সা.) ১৫ বছর হেরা গুহায় কাটিয়েছেন এবং পরে সাহাবিদের শিখিয়েছেন। বেলায়েতের যুগে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সাহচর্যে এসে এ শিক্ষা গ্রহণ করে তাঁর অনুসারীদের মাঝে সুপ্ত আল্লাহ্ প্রীতি জাগ্রত হয়েছে। তাদের মানব জনম সার্থক হয়েছে।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেন, আল্লাহ নুরের। তিনি নিরাকার নন। নুরের আল্লাহ্কে দেখতে অন্তরের নুরের চোখ খুলতে হবে। নুরের বাণী শুনতে হলে অন্তরের নুরের কানকে জাগ্রত করতে হবে। তাঁর শিক্ষা প্রক্রিয়ায় নিয়মিত আমলের মাধ্যমে অন্তরের নুরের চোখ, কান ও মুখসহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ খোলা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। তিনি তাঁর শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেম ধারণ করে রাহমাতুল্লিল আলামিনের অবারিত রহমত লাভ করে শান্তিতে জীবন যাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে গড়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি ধর্ম থেকে মুছে যাওয়া ধর্মের প্রাণ এলমে তাসাউফকে আবারও পুনর্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) আমাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রক্ষিত আমানতকে রক্ষা করে কীভাবে রুহকে নফসের অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় তাও শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমিত্বকে বিসর্জন দিয়ে কীভাবে আল্লাহর আনুগত্য করা যায়, তার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি চেয়েছেন মানুষকে হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শে আদর্শবান করে গড়ে তুলতে। তিনি একজন বাস্তববাদী মানুষ এবং ধর্মকে বাস্তবতার আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করে তা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। বেলায়েতের যুগের জন্য সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) একজন উচ্চমার্গের আধ্যাত্মিক শিক্ষক ছিলেন।
আল্লাহর সাথে বান্দার সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে যাঁর একান্ত সম্পর্ক তার সান্নিধ্যে যাওয়া দরকার। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) ছিলেন এমনই একজন তাসাউফ শিক্ষক। তিনি মানুষকে আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-এর সাহায্য পাওয়ার পথ দেখিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আয়াতসমুহের বাস্তবতা এবং হাদিসের আলোকে জীবন গড়ার শিক্ষাই সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর সর্বক্ষেত্রে দিয়েছেন। তাঁর শিক্ষায় মানুষ সম্পূর্ণরূপে কাক্সিক্ষতভাবে পরিবর্তিত হয়েছেন।
ইবাদত মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখার কথা, কিন্তু সমাজে দেখা যায় ইবাদত করে আবার অন্যায়ও করে। সূফী সম্রাট হুজুরের আধ্যাত্মিক শিক্ষা মোতাবেক আমল করলে খারাপ কাজ করা যায় না। তিনি দেহ ও মন সব সময় পবিত্র রাখতে তাগিদ দিয়েছেন। কেননা অন্তরের পবিত্রতার উপর আল্লাহর জ্যোতি প্রতিবিম্ব হয়। মোর্শেদের প্রতি গভীর ভক্তি, বিশ্বাস ও প্রেম সৃষ্টি হলেই মোর্শেদের কাছ থেকে মুরিদ প্রেমের প্রবাহ পেয়ে থাকে, যাকে বলা হয় ফায়েজ। এ ফায়েজ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার একমাত্র শক্তি। এ ফায়েজের মাধ্যমেই পরিচালিত হয় সব কিছু। মহান আল্লাহর প্রেম ফায়েজের মাধ্যমে সৃষ্টির উপর ওয়ারিদ হয়ে থাকে। সৃষ্টির প্রতি মহান আল্লাহর গভীর প্রেমের কারণেই এ প্রবাহ অব্যাহত থাকে। মানুষ যখন সাধনার মাধ্যমে নবি ও রাসুল প্রেমে মগ্ন হয়, তখন আল্লাহ্ ও রাসুলের ফায়েজ সে বেশি বেশি পেতে থাকে। সে আল্লাহ্ ও রাসুলের গুণে গুণান্বিত হয়ে সফলকাম হয়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সংস্পর্শে এসে মানুষ সেভাবেই আদর্শ মানুষে পরিণত হয়েছেন।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেন, ধর্ম বলতে এমন একটি স্বর্গীয় সুন্দরতম আদর্শ বা চরিত্রকে বুঝায়, যা পালনের মাধ্যমে শান্তি লাভ হয়। ইমানের ভিত্তিতে মহান আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক ও ভালোবাসা তৈরি হয়। মহান আল্লাহর যার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়, তার চাওয়া পাওয়া অগ্রাধিকার পায়। তার আর চিন্তার কোনো কারণ থাকে না। আল্লাহ্কে ভালোবাসার সুফল সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, “জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই। আর তারা দুঃখিতও হবে না।” (সুরা ইউনুস ১০: আয়াত ৬২) এ আয়াত থেকে পরিষ্কার যে মহান আল্লাহ্ যেমন মানুষকে ভালোবাসেন, তিনিও তেমনি মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে চান। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সেভাবেই মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর শিক্ষায় মানুষের মধ্যে সুপ্ত ধর্মীয় আকাক্সক্ষার বিকাশ ঘটেছে এবং ক্রমান্বয়ে আমলের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিতরূপে পরিবর্তিত হয়ে জীবন ধন্য হয়েছে।
মহান আল্লাহ্ আমাদের সেই সৌভাগ্য দান করুন, আমরা যেন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানর শিক্ষা মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহর নির্দেশাবলি অনুধাবন করার মাধ্যমে সাধনা করতে পারি এবং সাধনার মাধ্যমে মনের সকল কালিমা দূর করে প্রকৃত ইমানদার হতে পারি। হযরত রাসুল (সা.) ও মহান আল্লাহর দিদার লাভ করতে পারি। আমরা যেন দয়াল মোর্শেদের উসিলায় সাধনার সর্বোচ্চ মোকামে পৌঁছাতে পারি। ধন্য হোক আমাদের সবার জীবন। আমিন।
লেখক: ড. পিয়ার মোহাম্মদ
ইসলামি গবেষক; সাবেক অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার