সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী: কোরবানির প্রচলিত ভ্রান্ত রীতির সংস্কারক
মুহাম্মদ জহিরুল আলম
দয়াময় আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করার মাধ্যম কোরবানি। আরবি ‘কুরবুন’ শব্দ থেকে ‘কোরবানি’ শব্দের উৎপত্তি- যার আভিধানিক অর্থ হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। কোরবানির মূল শিক্ষাই হলো নিজের ভিতরের পশু প্রবৃত্তিকে বিসর্জন দেওয়া। পশু প্রবৃত্তিকে বিসর্জন দিয়ে নফসের সাথে যুদ্ধ করে বিজয়ী হতে পারলেই মানুষ হয়ে উঠেন আশরাফুল মাখলুকাত বা আল্লাহর প্রতিনিধি। মানুষ যে কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে মূলত এটাই তার জন্য কোরবানি। পৃথিবীব্যাপী মুসলমানগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পবিত্র জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট তারিখসমূহে হালাল পশু কোরবানি করে থাকে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিধান।
নিজের জীবাত্মার পশু প্রবৃত্তিকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করে, স্বেচ্ছাচারিতাকে পরিত্যাগ করে দয়াময় আল্লাহর ইচ্ছার উপর আত্মসমর্পণই হাকিকতে কোরবানি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন- “আর আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর মাংস এবং না এগুলোর রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের খোদাভীতি বা তাকওয়া।” (সূরা হাজ্ব ২২: আয়াত ৩৭)।
কোরবানি হলো সুন্নতে ইব্রাহীম। মহান আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীম (আ.)-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করে বিশ্বস্ততার প্রমাণ দেওয়ার জন্য। হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাঁর প্রণাধিক প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে আল্লাহর নামে কোরবানি করেন এবং পুত্র কোরবানি হতে রাজি হয়ে বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়েছিলেন। এ অসাধারণ ত্যাগের পুরষ্কার হিসেবে দয়াময় আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীম (আ.)-কে ‘খলিলুল্লাহ্’ ও হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে ‘যবীহুল্লাহ্’ উপাধি প্রদান করেছেন। এখান থেকেই শুরু হয়েছে কোরবানি, যা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব। যুগ যুগ ধরে আমরা এ পবিত্র ধর্মীয় বিধান পালন করে আসছি। এখানে ধর্ম পালনের পাশাপাশি প্রেমের নিদর্শনও রয়েছে।
হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে ১০০ দুম্বা, ১০০ উট ও ১০০ গরু কোরবানি করার পরও তাঁর কোরবানি কবুল হয়নি। আল্লাহ্ চাচ্ছেন তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী হযরত ইসমাইল (আ.) পিতার মুখে প্রভুর নির্দেশ শোনামাত্র রাজি হয়ে যান। হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী পুত্রের স্নেহ-মমতা পরিত্যেগ করে হযরত ইসমাইল (আ.)-কে পবিত্র মক্কার নির্জন মরুপ্রান্তর মিনা উপত্যকায় নিয়ে যান। পুত্রের কথানুযায়ী পুত্রের হাত-পা এবং নিজের চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে নেন। পিতা পুত্রকে কোরবানি দেন। চোখ খুলে হযরত ইব্রাহীম (আ.) দেখলেন কালো রংয়ের বিরাট শিং বিশিষ্ট একটি দুম্বা কোরবানি হয়েছে, আর ছেলে পাশেই দাঁড়ানো। দয়াময় আল্লাহ্ কোরবানি কবুল করেছেন। এ ছিল আত্মসমর্পণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। পিতা-পুত্র উভয়েই আত্মসমর্পণের অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর বন্ধু খেতাবে ভূষিত হলেন এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হলেন। ত্যাগের সেই মহান স্মৃতি বহন করে, আমরা মুসলিম জাতি কোরবানি দেই।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন- “হে রাসূল (সা.)! আপনি বলুন- নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ- জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।” (সূরা আল আন‘আম ৬: আয়াত ১৬২) মহান আল্লাহ্ দয়া করে আমাদের কোরবানির মতো একটি ফজিলতপূর্ণ বিধান পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। দয়াল রাসুল (সা.) নিজেই উম্মতে মোহাম্মদীকে কোরবানি করার শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) কোরবানির পশু যবেহ করার সময় বলতেন- “হে আল্লাহ্! (এই পশু) তোমার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এবং তোমারই উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত। তুমি এটি কবুল করো, মোহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে এবং তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে। আল্লাহ্ তোমার নামে কোরবানি করছি এবং আল্লাহ্ই মহান। অতঃপর রাসুল (সা.) যবেহ করতেন।” (আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমী শরিফের সূত্রে মেশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা ১২৮)। কিন্তু আমাদের সমাজের কোরবানির প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, কোরবানিদাতা ব্যক্তিগণ বলেন, আমি নিজ নামে অথবা পিতা বা মাতার নামে কোরবানি করেছি, এমনিভাবে অনেকে বলেন, সাত নামে কোরবানি করেছি। কোরবানির সময় হুজুররা বলেন, কার কার নামে কোরবানি দিবেন, কয়জনের নামে দিবেন, লিখে দেন। অথচ এভাবে বলা মারাত্মক ভুল। ফলে আমরা পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বিধান হতে দূরে সড়ে পড়েছি। কোরবানির প্রচলিত এ ভ্রান্ত রীতির সংশোধন করে মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, “কোরবানি বান্দার নামে নয়, বরং বান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর নামে কোরবানি দিতে হয়।” কারণ একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নামে কোরবানি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট ঘোষণা দেন, “নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস এবং সেই পশুর মাংস, যেটির উপর যবেহের সময় আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারিত হয়েছে।” (সূরা আল বাকারাহ ২ : আয়াত ১৭৩) তাই সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী বলেন, “আল্লাহর নামের সাথে নিজেদের নাম সংযুক্ত করে পশু কোরবানি করা, আর পৌত্তলিকদের দ্বারা তাদের দেবদেবীর নামে পশুবলির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।” সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী বিষয়টির সুন্দর সমাধান দিয়ে বলেন, “যে কয়জন মিলে একটি গরু বা মহিষ কোরবানি করা হয়, তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি করে, কোরবানি কবুল করানোর জন্য আল্লাহর কাছে অনুনয় বিনয় করে কোরবানি দাতাদের মনে মনে বলা উচিত- কেবল আল্লাহ্র নামে পশু যবেহ করা হচ্ছে।” তাঁর আহ্বানে আপামর মুসলমানগণ পবিত্র কুরআন ও হাদিসের শিক্ষানুসারে আল্লাহ্র নামে কোরবানি দিয়ে নিজেদেরকে শিরক করা থেকে বিরত রাখার সুযোগ পেয়েছেন।
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী বলেন- “কোরবানি করার মূল উদ্দেশ্য হলো নিজের ভিতরের পশুত্ব তথা নফসের কুপ্রবৃত্তিকে বিসর্জন দেওয়া এবং আল্লাহর ইচ্ছায় বাকি জীবনযাপনে সচেষ্ট হওয়া।” কোরবানির মাধ্যমে প্রভুর নৈকট্য লাভ হয়, তাই এ কোরবানি কেবলমাত্র প্রভুর নামেই উৎসর্গকৃত হতে হবে। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা আমাদের মাঝে না থাকা ও তাসাউফের গূঢ় রহস্য না জানার কারণে আমারা ধর্ম পালন করেও তার প্রকৃত স্বাদ লাভ করছি না। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ১৪০০ বছরে হারিয়ে যাওয়া দয়াল রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা, আদর্শ ও চরিত্র তথা মোহাম্মদী ইসলামকে পুনরায় জগতের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সজাতির অজ্ঞতা ও বিজাতির চক্রান্তে পবিত্র ইসলাম ধর্মে আঘাতের পর আঘাত এসেছে। এমনই এক ষড়যন্ত্র আমরা লক্ষ্য করি ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে। “হযরত ইব্রাহীম (আ.) স্বপ্নপূরণের জন্য তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে নয়, বরং ইসহাক (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন” মর্মে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১ আগষ্ট হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন বিশ্ব শান্তি পরিষদের সভাপতি দেব নারায়ণ মহেশ্বর। যার মূল লক্ষ্য হলো কোরবানির সত্য ইতিহাস বিকৃত করে মুসলিম উম্মাহ্র এ চিরায়ত ইবাদতকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।
আকস্মিকভাবে এই রিট আবেদন দাখিলের খবরে আদালত আঙ্গিনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। রিট পিটিশনের পর, বিভিন্ন সূত্র ও মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায় যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা হতে এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিস ভিত্তিক জবাব দেওয়া এবং আশানুরূপ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যাপারটি দৃশ্যমান হয়নি। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান পবিত্র কুরআন ও হাদিসের পবিত্র বাণী এবং পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যাবলী এডভোকেট সৈয়দ মোকাদ্দাস আলীর মাধ্যমে সরবরাহ করেন।
যুগের ইমাম সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের কারণে ঐ চক্রান্তের অবসান ঘটে। সূফী সম্রাট ধর্মের অসংখ্য সংস্কার করেছেন, যা দেশ-বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। অনেক সংস্কার রাষ্ট্রীয়ভাবেও গৃহীত হয়েছে। চক্রান্তকারীর রিটের জবাবে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেন, হযরত ইসহাক (আ.)-কে নয়, হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহীম (আ.) কোরবানি করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “হযরত ইব্রাহীম (আ.) বললেন- হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি সুপুত্র দান করুন। অতঃপর আমি তাঁকে একটি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। তারপর সে যখন তাঁর পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহীম (আ.) বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি; এখন তুমি বলো, তোমার মতামত কী? পুত্র বলল, হে আমার আব্বাজান! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন, সেটি পূর্ণ করুন। ইনশাআল্লাহ্, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। অতঃপর যখন তাঁরা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং পিতা পুত্রকে কাত করে শায়িত করলেন, তখন আমি তাঁকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম! আপনি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালেন। আমি এরূপেই খাঁটি বান্দাদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।” (সূরা আস সাফফাত ৩৭ : আয়াত ১০০ থেকে ১০৫)
হযরত ইসহাক (আ.)-এর জন্মের শুভ সংবাদ প্রসঙ্গে দয়াময় আল্লাহ্ আরও বলেন- “আর আমি তাঁকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের; তিনি নেককারদের মধ্যে অন্যতম নবি।” (সূরা আস সাফফাত ৩৭ : আয়াত ১১২) এমনিভাবে আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “আমি দু’যবেহকৃত পিতার সন্তান। একজন হযরত ইসমাঈল (আ.) এবং অপরজন হলেন- হযরত আবদুল্লাহ্ (আ.)।” (তাফসিরে কাবীর ৯ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৬০৮) পবিত্র কুরআন ও হাদিসের এ অকাট্য বাণী মোবারকই মুসলিম বিশ্বের চিরায়ত ধর্মবিশ্বাস, মুসলিম জাতির আদি পিতা হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ্ (আ.) স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ্ (আ.)-কে আল্লাহর নির্দেশে কোরবানি করেন। অতপর মহিমান্বিত আল্লাহ্ পিতা-পুত্রের কোরবানি কবুল করে হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা যবেহ করে দেন।
হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ্র দরবারে প্রার্থনা করার পর, ৮৬ বছর বয়সে প্রাপ্ত সন্তান হযরত ইসমাঈল (আ.), কোরবানির ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছিল পবিত্র মক্কার মিনা উপত্যকায়। ঐ আদর্শ অনুসরণে হজের অনুষ্ঠানে আগত লক্ষ লক্ষ হাজিদেরকে প্রতি বছর মিনা প্রান্তরেই কোরবানি করতে হয়। মক্কা হলো বিবি হাজেরা (আ.)-এর পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর আবাসভূমি। হযরত ইসহাক (আ.)-এর জন্ম হয় হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ১০০ বছর বয়সে। আর বিবি সারার পুত্র হযরত ইসহাক (আ.) বসবাস করতেন মক্কা হতে হাজার মাইল দূরে জেরুজালেমের হেবরন শহরে। কাজেই হযরত ইসহাক (আ.) মক্কায় এসে কোরবানি হয়েছেন বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। হযরত ইসমাঈল (আ.) আল্লাহর পথে কোরবানি হয়েছিলেন বলেই তাঁর বংশধররা আজও কোরবানির বিধান মেনে চলেন। অথচ হযরত ইসহাক (আ.)-এর বংশধর ইহুদি-খ্রিষ্টানরা কখনো কোরবানি করেন না।
অতঃপর ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই আগষ্ট জনাকীর্ণ আদালতে মাননীয় বিচারপতি মোঃ আবদুল ওহাব মিঞা ও মাননীয় বিচারপতি কাজী রেজাউল হক এক ঐতিহাসিক রায়ে “হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি করেছিলেন” উল্লেখ করে দেব নারায়ণের রিট পিটিশনটি খারিজ করে দেন। এমনকি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন রিট দায়ের ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অপরাধে, আদালত দেব নারায়ণকে সাজাও প্রদান করেন। (কালের কন্ঠ, ৬ আগষ্ট, ২০১০ খ্রি.)
ধর্মীয় বিধানের পবিত্রতা রক্ষায় যুগের ইমাম সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান সর্বদাই অন্তরিক। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও বিজ্ঞ আদালতের সুচিন্তিত রায়ে মুসলিম জাতির চিরন্তন ধর্মীয় রীতি কোরবানির বিধানটি রক্ষা পায়।
যুগে যুগে চক্রান্তকারীরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইসলাম ধর্মে মনগড়া মতো প্রতিষ্ঠিত করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তাই মনগড়া ধর্ম পালন করে আমরা ইসলামের প্রকৃত শান্তি বাস্তব জীবনে উপলব্ধি করতে পারছি না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, “তিনি ‘রহমান’ (আল্লাহ্), তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাঁকে জিজ্ঞেস করো।” (সূরা ফোরকান ২৫ : আয়াত ৫৯)
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মহামানব। এ মহামানব শিক্ষা দেন, ইসলাম ধর্মের প্রতিটি কার্যাবলী মানেই মহামানবদের অনুসরণ। কাজেই মহামানবদের ছেড়ে দিয়ে কেবল ধর্মের বিধান পালন করে মনজিলে মকসুদে পৌঁছানো কোনো দিনই সম্ভব হবে না। মূলত মহামানবগণের সংস্পর্শে গিয়ে তাঁদের শিক্ষা, আদর্শ ও চরিত্র হৃদয়ে ধারণ করতে পারলে ধর্মের প্রকৃত শান্তি বাস্তব জীবনে উপলব্ধি করা সম্ভব।
[লেখক: প্রাবন্ধিক ও পিএইচ.ডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]