সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর বিশেষত্ব
ড. পিয়ার মোহাম্মদ
সৃষ্টির আদিকাল থেকে মহান আল্লাহ্ নবুয়তের যুগে নবি-রাসুল এবং নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে আউলিয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে তাঁর ধর্ম প্রচার করে আসছেন। নবি-রাসুলগণ আল্লাহ্ পাকের নির্দেশে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ধর্মকে যুগোপযোগী করে প্রচার করেছেন। তাঁদের নামানুসারে ধর্মের নামকরণও হয়েছে। সর্বশেষ নবি ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক তাঁর ধর্মকে ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ নামে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছেন। আল কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দীনাকুম ওয়াআতমামতু ‘আলাইকুম নি‘ইমাতি ওয়া রাদিতু লাকুমুল ইসলামা দীনা।” অর্থাৎ- আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার অনুগ্রহ সম্পন্ন করলাম, আর ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়িদাহ ৫: আয়াত ৩)
হযরত রাসুল (সা.)-এর তিরোধানের পর ইসলামের সুমহান আদর্শকে সজীব, সতেজ ও যুগোপযোগী করার জন্য যুগে যুগে পুনর্জাগরণকারীর আবির্ভাব ঘটেছে। তাঁরা ধর্মে প্রবিষ্ট অপসংস্কৃতি ও কুসংস্কার দূর করে হযরত রাসুল (সা.)-এর অনুমোদনক্রমে মোহাম্মদী ইসলামকে যুগোপযোগী করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিস শরীফে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- “নিশ্চয়ই মহাপরাক্রমশালী সম্ভ্রান্ত আল্লাহ্ তায়ালা প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে উম্মতের জন্যে এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন, যিনি দ্বিন (ধর্ম)-কে সজীব ও সতেজ করে তোলেন” (আবু দাউদ শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৬) এই ধারাবাহিকতায় মোহাম্মদী ইসলামকে যুগোপযোগী করেছেন- বড়ো পির হযরত মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানি (রহ.), গরিবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.), সুলতানুল আরেফিন হযরত বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রহ.), হযরত শায়খ আহমদ মোজাদ্দেদ আলফেসানি (রহ.), ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) এবং সর্বশেষ এসেছেন সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান জন্মগতভাবেই আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ। তিনি আধ্যাত্মিকতা এবং অলৌকিক ঘটনার মধ্য দিয়ে শৈশব ও কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পন করেন। চাকরি জীবনে প্রবেশের পর ১৯৭৪ সালে তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ অলী পিরানে পির, দস্তগির সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর নিকট গিয়ে বায়েত হন। চাকরি ছেড়ে মোর্শেদের একান্ত সহবতে বারো বছর তাসাউফ সাধনা করে আধ্যাত্মিক জগতের উচ্চতর মাকাম হাসিল করেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রহমতের সময় মহান আল্লাহ্ পাকের পক্ষ থেকে মোজাদ্দেদ বা মহান সংস্কারকের দায়িত্ব লাভ করেন; ১৯৮৮ সালের আশুরার দিবসে যুগের ইমামের দায়িত্ব পান। হযরত রাসুল (সা.) তাঁকে ১৯৮৯ সালের ৫ই এপ্রিল, বুধবার রহমতের সময় মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী খেতাবে ভুষিত করেন এবং ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভ করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জাগরণে নিরন্তর কাজ করেছেন। অলী-আল্লাহ্গণ ধর্মের পুনর্জাগরণ করে গেলেও তাঁদের কাজের ধরণ এবং প্রকৃতিতে কিছু পার্থক্য থাকে। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে তেমনি কিছু বিশেষত্ব রয়েছে।
কারবালার যুদ্ধের পর মোহাম্মদী ইসলামকে নিয়ে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের ফলে মোহাম্মদী ইসলাম থেকে মোহাম্মদ (সা.)-এর নাম মোবারক বাদ দিয়ে ধর্মের নামকরণ করা হয় দ্বিন ইসলাম। তখন থেকেই মোহাম্মদী ইসলাম দ্বিন ইসলাম হিসেবে প্রচারিত হয়ে আসছিল। ফলে মোহাম্মদী ইসলামের উপর কালো ছায়া নেমে এসেছিল। এ কালো ছায়া দূর করতে মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জাগরণে বেশ কয়েকবার অলী-আল্লাহ্গণ ধর্মের সংস্কার করেছেন। কিন্তু ধর্মের নাম থেকে যে মোহাম্মদ (সা.)-এর নাম মোবারক হারিয়ে যায়, তা আর উদ্ধার হয়নি। আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হযরত রাসুল (সা.)-এর ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটিয়ে যুগোপযোগী করার পাশাপাশি মোহাম্মদী ইসলাম নামটি পুনরুদ্ধার করেছেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ২১তম বংশধর। তিনি আহলে বাইতের বংশধর হিসেবে বর্তমান যুগে হযরত রাসুল (সা.)-এর নামটি পুনরুদ্ধার করে ধর্মের প্রকৃত নাম মোহাম্মদী ইসলাম হিসেবে প্রচার করে গেছেন।
মোহাম্মদী ইসলাম অনুসরণ করে যারা হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসবেন তাদেরকে হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান প্রথম আশেকে রাসুল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আল্লাহ্ পাক নিজেই আশেকে রাসুল, কাজেই আশেকে রাসুল না হলে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ সম্ভব নয়।” পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন, “হে মাহবুব (সা.)! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ করো তাহলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন। অবশ্যই আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩১) হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি নিজের পিতামাতা, সন্তান সন্ততি ও অন্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি ভালো না বাসবে, সে মু’মিন হতে পারবে না।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭ এবং মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৯) সেজন্য সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) তাঁর শিক্ষার মধ্যে আশেকে রাসুল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। চরিত্র সংশোধন করে আহম্মদি চরিত্র ধারণ করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আশেকে রাসুল হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষ সাধনার মাধ্যমে দয়াল রাসুল (সা.) ও মহান আল্লাহ্ পাকের দিদার লাভ করেই প্রকৃত আশেকে রাসুল হতে পারেন।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হযরত রাসুল (সা.)-এর শান মান সমুজ্জল করার লক্ষ্যে প্রচলিত শিক্ষাকে ভুল প্রমাণ করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন হযরত রাসুল (সা.) গরিব ছিলেন না, তিনি ছিলেন ধনী। তাঁর পবিত্র পরশে মানুষের দরিদ্র্যতা দূর হয়ে যেতো, ফল ফসলে, ধন-সম্পদে অসীম বরকত হতো। অথচ তাঁর সম্পর্কে সারা পৃথিবীতে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিল হযরত রাসুল (সা.) খুবই গরিব ছিলেন, তিনি ঠিকমত আহার জোগাতে পারতেন না, ক্ষুধার তাড়নায় পেটে পাথর বেঁধে রাখতেন, সত্তর তালি দেওয়া জামা পরতেন এবং ইহুদির বাড়িতে কূপ থেকে পানি তুলতেন খুরমার বিনিময়ে। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) প্রথমবারের মতো যুক্তি প্রমাণ দিয়ে মানুষের এসব ধারণা পরিবর্তন করেছেন। আল্লাহ্ যতটুকু জগতের রব, হযরত রাসুল (সা.) ততটুকু জগতের জন্য রহমত। হযরত রাসুল (সা.) ছিলেন জগতের জন্য জ্বলন্ত প্রদীপ এবং কুল কায়েনাতের রহমত। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- “আল্লাহ্ তায়ালা পৃথিবীর যাবতীয় ধনভাণ্ডারের চাবি আমার হাতে দিয়েছেন।” (বোখারী ও মুসলিম শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৫১২) স্বয়ং আল্লাহ্ পাক তাঁর হাবিব সম্পর্কে এরশাদ করেন- “আমি আপনাকে অসহায় অবস্থায় পেলাম, অতঃপর আপনাকে সম্পদশালী করলাম।” (সূরা দোহা ৯৩: আয়াত ৮) তাহলে হযরত রাসুল (সা.) গরিব হন কীভাবে?
সমাজে হযরত রাসুল (সা.)-এর শানে মিলাদ পড়া নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। এক শ্রেণির লোক মিলাদকে হারাম বা বিদআত বলে আখ্যায়িত করত। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) এই বিভ্রান্তি দূর করে মিলাদ পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে মিলাদ পড়া যে অবশ্য কর্তব্য, তা প্রথম প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ স্বয়ং ও তাঁর ফেরেশতারা নবির উপরে দরুদ পাঠ করেন, হে বিশ্বাসীগণ তোমরাও তাঁর উপর দরুদ পড়ো এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো।” (সূরা আল আহযাব ৩৩: আয়াত ৫৬) মিলাদ মাহ্ফিলের মাধ্যমেই হযরত রাসুল (সা.)-এর উপর দরুদ পাঠ করে স্বশ্রদ্ধ সালাম পেশ করা হয়। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেন- “রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালনার্থে হযরত রাসুল (সা.)-এর উপর দরুদ পাঠ করা এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।” তাঁর পরামর্শে মিলাদ মাহ্ফিলের আয়োজন করে অসংখ্য মানুষ হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার পাচ্ছেন। আল্লাহ্র রহমত লাভ করে অভাব, অনটন, বিপদ-আপদ ও বালা-মুছিবত থেকে উদ্ধার পাচ্ছেন। আশেকে রাসুলগণ মিলাদ পড়ে অপরিসীম রহমত ও বরকত হাসিল করতে সক্ষম হচ্ছেন।
সারা দুনিয়ার মানুষ জানত মহান আল্লাহ্ নিরাকার। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে প্রমাণ করেছেন আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁর নুরের রূপ আছে। তিনি স্থুল দেহধারী নন। তাঁর রক্ত মাংসের কোনো দেহ নেই। তাঁর নুরের দেহ রয়েছে, সেই দেহে হাত, পা, চোখ, কান, মুখ সবই আছে। সেই নুরময় সত্তাকে হাত দিয়ে ধরা যায় না বা ছোঁয়া যায় না। পরিশুদ্ধ ক্বালবের পর্দায় আল্লাহ্র নুরের চেহারা মোবারক ভেসে আসে, তাঁর সাথে কথাও বলা যায়। আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আ.)-কে তাঁর নিজের সুরতে সৃষ্টি করেছেন।” (বোখারী ও মুসলিম শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৯৭)। এ থেকে বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ্ পাকের চেহারা মোবারক আছে এবং সেই চেহারা মোবারক মানুষের চেহারার মতো। মহান আল্লাহ্র চেহারা মোবারকের প্রমাণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) আট খণ্ডে প্রায় ১১ হাজার পৃষ্ঠার ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ প্রণয়ন করেছেন। তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, মহান আল্লাহ্ পাক নিরাকার নন, তাঁর নুরের আকার আছে।
পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ধারণা ছিল মহান আল্লাহ্র দিদার লাভ করা যায় না। কেননা, কোনো মহামানবই সরাসরি মহান আল্লাহ্র দিদার লাভ সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলেননি। নবি-রাসুল এবং সুফি সাধকগণ আল্লাহ্র দিদার পেয়েছেন, কিন্তু সমাজের মানুষের কাছে তা প্রকাশ করেননি। হযরত রাসুল (সা.) মি‘রাজে গিয়ে আল্লাহ্ তায়ালার দিদার পেয়েছেন। বেলায়েতের যুগে ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ.)-সহ অসংখ্য অলী-আল্লাহ্ স্বপ্ন ও মোরাকাবার মাধ্যমে আল্লাহ্র দিদার লাভ করেছেন। পিরানে পির দস্তগির সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরি (রহ.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আল্লাহ্কে দেখা যায় কিনা। তিনি জবাবে বলেছিলেন, দেখা যায় এটাও সত্য, দেখা যায় না এটাও সত্য। এতে বুঝা যায় সামাজিক কারণে তিনি সরাসরি বলেননি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাও, সেদিকেই আল্লাহ্র চেহারা মোবারক রয়েছে।” (সূরা আল বাকারা ২: আয়াত ১১৫) আল্লাহ্র রাসুল (সা.) বলেন, ‘আস্সালাতু মি‘রাজুল মু’মিনীন।’ অর্থাৎ- নিশ্চয় নামাজ মু’মিন ব্যক্তির জন্য মি‘রাজ। (তাফসীরে মাজহারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৩) তাহলে আল্লাহ্র দিদার না পাওয়ার কোনো কারণ নাই। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) সমাজের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে আল্লাহ্র দিদার লাভের এ সত্যটি প্রথম সবাইকে সাহসিকতার সাথে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি আল্লাহ্কে দেখেছি এবং দেখাতেও পারি।” তাঁর এ সাহসী ভূমিকা তাঁকে তাসাউফ জগতে সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করেছে।
মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের চেহারা মোবারক ২০০৮ সালে, ১৪২৯ হিজরির শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে দেখা যায়, যা অদ্যাবধি দেখা যাচ্ছে। সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অবধি সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান ছাড়া কোনো মহামানবের চেহারা মোবারক চাঁদে প্রদর্শিত হয়নি। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর বক্তব্য থেকে জানা যায়, মহান আল্লাহ্কে সবাই নিরাকার বলেন, অথচ তিনি কুরআন ও হাদিসের আলোকে প্রমাণ করেছেন আল্লাহ্র আকার আছে। সেজন্য মহান আল্লাহ্ এর পুরস্কার হিসেবে এই বিরল ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিশ্বের অগণিত মানুষ আজও এ মহামানবের চেহারা মোবারকের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি পূর্ণিমার চাঁদে দেখতে পাচ্ছেন।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান বলেছেন অতীতে ভুলের কারণে মোহাম্মদী ইসলামের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি আর হবে না। সেজন্য তিনি ওফাতের পূর্বেই নির্ধারণ করেছেন মোহাম্মদী ইসলামে কোনো পির হবে না। পির হলেই নতুন তরিকার সৃষ্টি হবে এবং মোহাম্মদী ইসলাম হারিয়ে যাবে। সেজন্য তিনি জীবদ্দশায়ই তাঁর চার সন্তানকে মোহাম্মদী ইসলামের ইমাম হিসেবে ঘোষণা করে তাঁর পুনর্জীবিত মোহাম্মদী ইসলামকে এগিয়ে নিতে সবাইকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২০ইং ওফাত লাভ করেন। তিনি তাঁর ওফাতের আগের দিন ২৭শে ডিসেম্বর ২০২০ সঠিকভাবে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার জন্য এক অছিয়তনামার মাধ্যমে মেজো সাহেবজাদা ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরকে দায়িত্ব প্রদান করেন। অন্য তিন পুত্র এবং দুই কন্যাকে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনায় মেজো হুজুরকে সহযোগিতা করার নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন, “আমার পরেই মোহাম্মদী ইসলাম শেষ নয়, তোমরা মোহাম্মদী ইসলামকে সামনে এগিয়ে নিবে।” এভাবেই তিনি মোহাম্মদী ইসলামের ভবিষ্যত এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করে গেছেন। সেই মোতাবেক মোহাম্মদী ইসলাম এগিয়ে চলেছে।
মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান ধর্মের পুনর্জীবনের পাশাপাশি সাহসসিকতার সাথে ধর্মের সঠিক নাম পুনরুদ্ধার, রাসুল প্রেমীদের আশেকে রাসুল ঘোষণা, রাসুল (সা.)-এর শান মান প্রতিষ্ঠা, মিলাদ পাঠকে অবশ্য করণীয় ঘোষণা, মহান আল্লাহ্র আকার ঘোষণা এবং আল্লাহ্কে যে দেখা যায় তাও প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাইতো তিনি হয়েছেন পূর্ণিমার চাঁদে ভাস্বর।
আসুন, আমরা মোহাম্মদী ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলি এবং মুক্তির পথ খুঁজে পেতে চেষ্টা করি। সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে প্রকৃত মুসলমান হওয়ার চেষ্টা করি। মুক্তি অর্জন করে মানব জীবন সফল করি। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।
[লেখক: সাবেক অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার]