Cancel Preloader

সূফী সম্রাট: বিশ্বমানবতার শ্রদ্ধাভাজন মহামানব


ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম

মানুষ বেঁচে থাকে তার আপন কর্মের মাঝে। একজন সাধারণ মানুষ যদি কিছু ভালো কর্ম করে মারা যায়, আমরা তার সেই ভালো কর্মের মাঝে তাকে খুঁজে পাই। আল্লাহর মহান বন্ধুগণের সারাটি জীবন তাদের চলন, বলন, কথা, কাজ সমাজের প্রতিটি মানুষকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। ফুলের সৌরভে ভ্রমর যেমন ছুটে আসে, ঠিক তেমনি আল্লাহর মহান বন্ধুদের অমীয় বাণী, শিক্ষা পদ্ধতি, সংস্কার, জনহিতকর কার্যাবলি এই সকল কিছুতে আকৃষ্ট হয়ে ছুটে আসে সাধারণ মানুষ। একজন সাধারণ মানুষের এই সকল চাওয়া, পাওয়া ছাড়াও আরেকটি প্রধান উদ্দেশ্য থাকে। যারা মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে তাঁদের সাক্ষাত কামনা করে, সেই সকল মানুষ ছুটে যান আল্লাহর প্রেরিত মহামানবদের কাছে। তাঁদের সহবত লাভ করে, তাঁদের প্রণীত শিক্ষা অনুসরণ ও ওয়াজিফা আমল করে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভ করতে সক্ষম হন। যারা পৃথিবীর এই শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি অর্জন করল, তাঁরা কি কখনও সেই মহামানবকে ভুলতে পারে? “কুল্লু নাফছিন যায়েকাতুল মাওত।” অর্থাৎ- “প্রত্যেক নফসকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১৮৫) এটাই বিধির বিধান। এক মহামানব আসবে, নির্দিষ্ট সময় শেষে তিনি আবার চলে যাবেন। আবার আরেকজন মহামানব আসবেন এটাই নিয়ম। একজন সাধারণ মানুষ যদি কর্মের মাঝে বেঁেচ থাকতে পারে, তাহলে আমরা কি বলতে পারি আল্লাহর বন্ধুরা ওফাত লাভ করেন?


এই প্রসঙ্গে হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “আল্লাহর অলীগণ মৃত্যুবরণ করেন না, বরং তাঁরা একঘর থেকে অন্যঘরে স্থানান্তরিত হন মাত্র।” (তাফসীরে কাবীর ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৮১) অলী-আল্লাহ্গণ কখনো মরে না, তাঁরা বেঁচে থাকেন তাদের অলৌকিকত্ব বা ঐশ্বরিক ক্ষমতা, মানব মুক্তির নানা ধরনের কর্মের মাঝে। সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যাবধি পথহারা পথভোলা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে হেদায়েতের আলোকবর্তিকা ও মানবমুক্তির সওগাত নিয়ে যুগে যুগে মহান রাব্বুল আলামিন এই ধুলির ধরায় অসংখ্য মহামানব প্রেরণ করেছেন। যার ধারা আজো প্রবাহমান। নবুয়তের যুগে সেই সব মহামানব নবি-রাসুল হিসাবে পরিচিত ছিলেন। নবুয়ত যুগের পরিসমাপ্তির পর বর্তমান জামানায় তাঁরা অলী-আল্লাহ্ নামে সুপরিচিত।
আমরা আখেরি নবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত। এর পূর্বে অনেক নবি-রাসুল এই জগতে আগমন করেছেন। আমরা তাদের উম্মত না হওয়া সত্ত্বেও ঐ সকল নবি রাসুলের শিক্ষা, কর্ম এবং তাঁদের জীবন চরিতকে শ্রদ্ধা করি। তাঁদেরকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা একজন মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। কারণ আল্লাহর প্রেরিত সকল নবি-রাসুলের প্রতি এবং তাদের কিতাবের উপর আমাদের ইমান আনতে হবে। পৃথিবীর সকল মহামানব এক সুঁতোয় গাঁথা। তাঁদের কথা কর্ম, লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও শিক্ষা পদ্ধতি একই। যুগপরিক্রমায় শুধুমাত্র ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে এবং তাঁদের শিক্ষাপদ্ধতি যুগোপযোগী হয়েছে। সকল মহামানবের প্রধান শিক্ষা ও উদ্দেশ্য হলো সমাজের মানুষকে আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রাসুলকে পাওয়ার এবং হৃদয়ে ধারণ করার শিক্ষা দেওয়া। আল্লাহর সেই সকল মহান বন্ধুদের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে একজন মানুষ যখন মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছতে সক্ষম হন, তখন তারা কি কখনো আল্লাহর বন্ধুকে ভুলতে পারে? তাঁরা আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন, ছিলেন এবং থাকবেন।


সকল নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.)-কে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ জগতের মহিমা হিসাবে স্মরণ করে। আপন পুত্র আল্লাহর নামে কোরবানি করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তারই অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা প্রতি বছর ঈদুল আজহায় আল্লাহর নামে পশু কোরবানি দিয়ে থাকি। ইহুদি, নাসারা, বর্বর আরবজাতি-সহ সকল শ্রেণির মানুষের নিকট বিশ্বস্ততার মূর্ত প্রতীক হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করেন। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হিসাবে হযরত মোহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর নিকট সর্বজনীন গ্রহণীয় ও বরণীয় মহামানব।
হিজরতের রাতে হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু মরণ জেনেও হযরত রাসুল (সা.)-এর বিছানায় শুয়ে, জীবনের চাইতেও রাসুলকে বেশি ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কারবালার প্রান্তরে এজিদ বাহিনীর নিকট বশ্যতা স্বীকার না করে ইমাম হোসাইন (রা.) রাসুলের আদর্শের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা কি মুসলিম জাতি ভুলতে পারে? কারবালার ঘটনাকে স্মরণীয় করে রেখে আল্লাhor রহমত ও বরকত লাভের জন্য আমরা প্রতি বছর ১০ই মহররম পবিত্র আশুরা পালন করি।
সুদক্ষ শাসক হিসেবে হযরত ওমর ফারুক (রা.) আমাদের মাঝে স্বীকৃত। হযরত উসমান (রা.)-কে স্মরণ করি মহাগ্রন্থ আল কোরআন সংকলনকারী হিসেবে। হিজরতের রাতে হযরত আবু বকর (রা.) গুহার মধ্যে হযরত রাসুল (সা.)-এর বিশ্রামকালে বিষাক্তসাপে দংশন করার পরেও, জীবনবাজি রেখে রাসুলকে বিশ্রাম করতে দিয়েছিলেন। রাসুলকে জীবনের চাইতে বেশি ভালোবাসার যে নির্দশন রেখে গেছেন তা কখনো ভুলার মতো নয়। দয়াল রাসুলের হাদিস সংগ্রহ করে মুসলিম জাতির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন ইমাম বুখারী (রহ.), ইমাম তিরমিযি (রহ.), ইমাম মুসলিম (রহ.)।


হযরত শাহজালাল (রহ.) জায়নামাজ বিছিয়ে সুরমা নদী পার হয়ে সিলেটে এলে তাঁর নির্দেশে সৈয়দ নাসিরউদ্দিন সিপাহসালার আজান দেন। রাজা গৌড় গোবিন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আজও সাধারণ মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন হযরত শাহজালাল (রহ.)। বড়ো পির হযরত আব্দুল কাদের জিলানি (রহ.) সিধেল চোরকে এক মুহূর্তে কুতুব বানিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। খাজা গরিবে নেওয়াজ (রহ.) আনা সাগরের পানি একটি ঘটির মধ্যে পূর্ণ করে তৎকালীন রাজা পৃথ্বীরাজকে জানান দিলেন অলী-আল্লাহ্দের শক্তি কত বেশি? তিনি সারাটি জীবন গরিব, দুঃখী অসহায় মানুষের সাহায্য সহযোগিতা করে ‘গরিবে নেওয়াজ’ (গরীবের বন্ধু) নামে মানুষের মনে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন।
ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) আপন মোর্শেদের দরবার শরীফ যমুনা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করেছেন মোর্শেদ প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে। আজও সেখানে স্বমহিমায় এনায়েতপুর দরবার শরীফ এবং খাজা ইউনুছ আলী মেডিকেল কলেজ বিদ্যমান। যেখানে অসহায় অবহেলিত মানুষ চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে।
যুগ পরিক্রমায় বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসাবে, নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক হয়ে হেদায়েতের আলোকবর্তিকা নিয়ে পথভোলা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধানে দিতে ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করে, ধর্মকে যুগোপযোগী করে সজীব ও সতেজ করতে আলহাজ হযরত সৈয়দ আবদুর রশিদ সরকার (রহ.)-এর ঔরশে, হযরত সৈয়দা জোবেদা খাতুন (রহ.)-এর গর্ভে আগমন করেন হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)। তিনি ১৯৪৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর, ২৭শে অগ্রহায়ণ ১৩৫৬ বঙ্গাব্দে বুধবার সকাল ১০টায় ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামে সৈয়দ বংশের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর হতে ওফাত পূর্ববর্তী পর্যন্ত তিনি মাটি, মানুষ, দেশ, জাতি, সমাজকে ভালোবেসেছেন।


দেশ প্রেম ইমানের অঙ্গ। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান দেশকে স্বাধীন করার জন্য দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে, পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল একদল যুবক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন আলেম হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব লাভ করেন। জাতির শ্রেষ্ঠ এই সূর্য সন্তানকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
প্রভাতের সূর্য বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) একজন জন্মগত অলী-আল্লাহ্। চলনে বলনে, কথায়, কাজে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) ২৮শে ডিসেম্বর ২০২০ সালে সোমবার ওফাত লাভ করেন। তাঁর কর্মময় জীবনে তিনি শিক্ষা আদর্শ, সংস্কার সমাজ সেবা, মানব সেবা, দেশ গঠন, জাতি গঠনের যে ভূমিকা রেখে গেছেন, তা কখনও ভুলার মতো নয়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তিনি একজন জগত বিখ্যাত অলী-আল্লাহ্ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তিনি মানুষের মাঝে বেঁচে আছেন, তাঁর ধর্মীয় সংস্কারের মধ্যে মানুষের চরিত্র গঠনে একজন শান্তিদাতা হিসেবে। জাতির দুর্যোগে আপামর জনসাধারণের কথা চিন্তা করে, গরিব মানুষের কথা ভেবে মহান রাব্বুল আলামিনের সাথে যোগাযোগ করে রক্ষা করেছেন দেশকে এবং দেশের সম্পদকে। তিনি যে র্কীতি রেখে গেছেন, সোনার বাংলায় সোনার মানুষ তথা আলোকিত মানুষ গঠনে যে ভূমিকা রেখেছেন, তা কখনো ভুলার নয়। ‘র্কীতিমানের মৃত্যু নেই’ এই প্রবাদের বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই সূফী সম্রাটের ধর্মীয় দর্শন, সংস্কার, শিক্ষা পদ্ধতি, আদর্শের মধ্যে। তিনি যা কিছু আমাদের দিয়েছেন, তা কখনো ভুলার মতো নয়।
আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-কে মানবজাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখবে তাঁর কতিপয় মৌলিক শিক্ষা, সংস্কার এবং অবদানসমূহের মাঝে। আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানের মাধ্যমে সেগুলো উপস্থাপনের চেষ্টা করছি।


সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লার প্রধান ৪টি শিক্ষা হলো (১) আত্মশুদ্ধি (২) দিলজিন্দা (৩) নামাজে হুজুরি ও (৪) আশেকে রাসুল হওয়া। প্রথম তিনটি শিক্ষা হযরত ইব্রাহিম (আ.) থেকে শুরু করে সকল নবি-রাসুল এবং অলী-আল্লাহ্গণ এই শিক্ষা দিয়েছিলেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাও আরো একটি সংযোজন করলেন- আশেকে রাসুল হওয়া।
১। আত্মশুদ্ধি:
নিজের নফস ও জীবাত্মাকে পরিশুদ্ধ করাকে আত্মশুদ্ধি বলে। আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “নিশ্চয় সাফল্য লাভ করে সে, যে আত্মশুদ্ধি লাভ করে এবং স্বীয় প্রতিপালকের নামে জ্বিকির করে ও নামাজ কায়েম করে। (সূরা আ‘লা ৮৭: আয়াত ১৪-১৫)
মহাগ্রস্থ আল কুরআনের এই শিক্ষা সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর প্রধান শিক্ষা। যে সকল মানুষ তার সহবতে যেতেন, তিনি তাদেরকে সর্বপ্রথম আত্মশুদ্ধি করার শিক্ষা দিতেন। কীভাবে একজন মানুষ তার ষড়রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেকে মু’মিন বান্দাতে পরিণত করা যায়, তাই শিক্ষা দিতেন। এই প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লা বলেন- “সমাজ ব্যক্তিকে শুদ্ধ করতে পারে না। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ব্যক্তিশুদ্ধ হয়। আর ব্যক্তি শুদ্ধির মাধ্যমে সমাজ শুদ্ধ করা যায়।”
মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ, কাজ-কর্ম, আত্মার প্রভাবে হয়ে থাকে। সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও শান্তিময় জীবন যাপনের জন্য আত্মশুদ্ধি প্রয়োজন। যাবতীয় পাপ, পঙ্কিলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকে আল্লাহ্র প্রেমে বিলীন রাখা পরিশুদ্ধ আত্মার কাজ। মহামানবদের শিক্ষা পদ্ধতি তাঁদের দেখানো পথ মত অনুসরণ করে চলতে পারলে আত্মশুদ্ধি লাভ করা যায়। ষড়রিপুকে দমন করে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যম হলো মোরাকাবা। যে মোরাকাবা আমাদের দয়াল রাসুল (সা.) দীর্ঘ ১৫ বছর হেরা পর্বতের গুহায় করেছিলেন। হযরত মোহাম্মদ (সা.) নবুয়ত প্রাপ্ত হন ৪০ বছর বয়সে। আর নামাজ ফরজ করা হয় ৫২ বছর বয়সে। তাহলে দীর্ঘ ১২ বছর তিনি মানুষকে কী শিক্ষা দিয়েছেন? সুফী সাধকদের মতে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, তিনি তখন বর্বর আরব জাতিকে মোরাকাবার শিক্ষা দিয়েছিলেন। যার মাধ্যমে তিনি একজন মানুষের অন্তঃকরণকে পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সকল প্রকার দেবদেবীর পুজা ত্যাগ করে অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, পাপাচার ব্যভিচার ত্যাগ করে একজন মানুষ আদর্শ চরিত্রে গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। মোরাকাবাবার গুরুত্ব সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেনÑ “একঘণ্টা মোরাকাবা করা ষাট বছর নফল ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।”
বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর এই শিক্ষা সূফী সম্রাটের দরবারে বিরাজমান। কোনো মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তবে এই শিক্ষা নেই। সূফী সম্রাটের দরবার শরীফে অসংখ্য পাপী ও খারাপ স্বভাবের লোক তাঁর সহবতে এসে, তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করে একজন শান্তিপ্রিয় আদর্শ মানুষে পরিণত হয়েছেন। যারা অন্যায়, অত্যাচার, পাপাচারে লিপ্ত ছিল তারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তা পরিহার করতে সক্ষম হয়েছে। আত্মা পরিশুদ্ধের তাগিদ দিয়ে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এরশাদ হয়েছেÑ “অবশ্যই সফলকাম হয়েছে সে ব্যক্তি, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে, আর ব্যর্থ হয়েছে সে ব্যক্তি, যে নিজেকে পাপাচারে কলুষিত করেছে।” (সূরা শামস ৯১: আয়াত ৯-১০)
একমাত্র নবি-রাসুল ও কামেল অলী-আল্লাহ্র দরবারে আত্মশুদ্ধির শিক্ষা বিদ্যমান। সূফী সম্রাটের দরবারে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর মোরাকাবা করা দৈনিক আমলের মধ্যে চলমান আছে। সূফী সম্রাটের ভক্ত আশেকানরা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী করেছে এবং মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। তারা কী কখনো সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাকে ভুলতে পারে? তাদের হৃদয় থেকে কী সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাকে মুছে ফেলতে পারবে? তাঁরা আমৃত্য শ্রদ্ধাবনত হৃদয়ে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাকে স্মরণ রাখবে। সূফী সম্রাটের প্রধান শিক্ষা আত্মশুদ্ধির উপর তাঁর জীবদ্দশায় মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর কেব্লার সার্বিক তত্ত্বাবধানে আশেকে রাসুল ড. সাইফুল ইসলাম পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।


২। দিলজিন্দা:
দিলজিন্দা করা সূফী সম্রাটের অন্যতম শিক্ষা। দিলজিন্দার গুরুত্ব সম্পর্কে হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “জেনে রেখো, নিশ্চয় মানবদেহের মধ্যে একটি মাংসের টুকরো আছে, সেটি যখন ঠিক (পবিত্র) হয়ে যায়, তখন গোটা শরীরই পবিত্র হয়ে যায়। আর সেটি যখন খারাপ হয়ে যায় গোটা শররীই তখন অপবিত্র হয়ে যায়। জেনে রেখো, সেই মাংসের টুকরোটি হলো ক্বালব (হৃদয়)।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩)
প্রত্যেক মানুষের ক্বালব বা হৃদয় রয়েছে। যাকে দিল বলে। আমরা সবাই বিশুদ্ধ ক্বালব নিয়ে জন্মগ্রহণ করি। মানুষ নানারকম পাপপঙ্কিলতা, অন্যায়, অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হলে দিল বা অন্তর কলুষিত হয়ে যায়। কলুষিত অন্তঃকরণকে বিশুদ্ধ করার একমাত্র মাধ্যম হলো ক্বালবের মাঝে আল্লাহ্ নামের জিকির জারি করা। ক্বালবে জিকিরের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “যাদের ক্বালব আল্লাহ্র জ্বিকির থেকে বিরত রয়েছে তারা প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট।” (সূরা যুমার ৩৯: আয়াত ২২) অন্যত্র এরশাদ হয়েছে “তোমরা যখন নামাজ সম্পন্ন করো, দণ্ডায়মান, বসা ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহ্র জ্বিকির করো।” (সূরা আন নিসা ৪: আয়াত ১০৩)
ক্বালবের মাঝে মহান আল্লাহ্র জ্বিকির জারি একা একা সাধনা করে অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ্র মহান বন্ধু নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণের নির্দেশিত পথ, মত ও শিক্ষা আমল করার মাধ্যমে ক্বালবে জ্বিকির জারি করা সম্ভব হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত শাহ দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর কাছে যখন একজন সাধারণ মানুষ আসতো, তিনি তাদেরকে তওবা পড়িয়ে শাহাদত অঙ্গুলির মাধ্যমে মানুষের ক্বালবে স্পর্শ করে আল্লাহ্ নামের জ্বিকিরের বীজ বপন করে দিতেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের শিক্ষা অনুযায়ী নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ওয়াজিফা আমল করলে একজন মানুষের অন্তর (দিল) বিশুদ্ধ হয়ে ঐ দিলে আল্লাহ্ নামের জ্বিকির সর্বদা চালু হয়ে থাকে। আমাদের কলুষিত ক্বালবকে পরিষ্কার করা প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “প্রত্যেকটি জিনিস পরিষ্কার করার একটি রেত আছে। আর ক্বালব পরিষ্কার করার রেত হলো আল্লাহ্ আল্লাহ জ্বিকির।” (বায়হাকী শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ১৯৯) সূফী সম্রাটের এই শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে একজন মাানুষ ক্বালবে জ্বিকির জারি করতে সক্ষম হয়। অপরিশুদ্ধ ক্বালবের ময়লাসমূহ দূর করে মানুষের অন্তঃকরণে হেদায়েতের নুর প্রজ্বলিত হয়। আত্মা বিশুদ্ধ হয়। দিলজিন্দা হয়। একজন মানুষ আদর্শ চরিত্র গঠন করতে সক্ষম হয়। যাবতীয় পাপ, খারাপ কাজ, অন্যায় অবিচার থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হয়। এই সকল মানুষের দ্বারা কখনো অসামাজিক উচ্ছৃংখল খারাপ কাজ করা সম্ভব নয়। শান্তিময় সমাজ গঠনে তারা অবদান রাখে।
সূফী সম্রাটের এই শিক্ষা গ্রহণ করে যে সকল মানুষ দিলজিন্দা করেছে, প্রভুর নামের জ্বিকির জারি করে আল্লাহ্র রাসুলের চরিত্র অর্জন করেছে, তারা কি কখনো সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাকে ভুলতে পারবে? তারা সদাসর্বদা সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাকে হৃদয়ে ধারণ করে রাখবে। সূফী সম্রাটের দিলজিন্দার শিক্ষার উপর তাঁর জীবদ্দশায়, মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর কেব্লার সার্বিক তত্ত্বাবধানে আশেকে রাসুল ড. আরিফুর রহমান পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।


৩। নামাজে হুজুরি:
দুনিয়ার সমস্ত চিন্তা ভাবনা ভুলে একমনে আল্লাহ্কে হাজির নাজির জেনে নামাজ আদায় করাকে নামাজে হুজুরি বলে। দুনিয়ার সমস্ত চিন্তা ভাবনার কথা ভুলে একগ্রতার সাথে সালাত আদায় করা সূফী সম্রাটের অন্যতম শিক্ষা। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “নামাজ কায়েম করুন, নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ্র স্মরণই শ্রেষ্ঠতর।” (সূরা আনকাবুত ২৯: আয়াত ৪৫) এই আয়াত হতে আমরা জানতে পারি নামাজ আমাদেরকে অন্যায়, অপরাধ পাপ যাবতীয় খারাপ কাজ হতে বিরত রাখার কথা। কিন্তু আমরা যে নামাজ আদায় করি সে নামাজ কি আমাদেরকে যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে? আমাদের সমাজের বেশিরভাগ নামাজির দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা নামাজ পড়ে আবার পাপকাজও করে, নামাজ পড়ে আবার মানুষকে ঠকায়, নামাজ পড়ে মিথ্যা কথা বলে, নামাজ পড়ে সুদ খায়, নামাজ পড়ে ব্যভিচার করে, নামাজ পড়ে গীবত করে। তাহলে বুঝা যায়, ঐ সকল নামাজি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে পারে না। যে নামাজ পড়লে যাবতীয় অন্যায় অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকা সম্ভব সেই নামাজের শিক্ষা আমাদের সমাজে নেই। আমরা যদি সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে পারি, তাহলে নামাজ হতো আমাদের জন্য মি‘রাজ। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “নিশ্চয় নামাজ মু’মিন ব্যক্তির জন্য মি‘রাজ।” (তাফসীরে মাজহারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৩) অর্থাৎ নামাজের মাধ্যমে একজন মু’মিন ব্যক্তি আল্লাহ্র সাথে মি‘রাজ লাভ করতে সক্ষম হন। যারা নামাজে অমনোযোগী হয়, একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করে না, তাদের প্রসঙ্গে বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেন- “হুজুরি দিল বিহনে নামাজ কবুল হয় না।” (যাদুত তাকওয়া ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২২২)
নামাজে দাঁড়িয়ে মহান রাব্বুল আলামিন ছাড়া অন্য কোনো চিন্তাভাবনা ও কল্পনা মনে আসলে আল্লাহ্ অসন্তষ্ট হন। যারা এই রকম নামাজ পড়ে তাদের প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “দুর্ভোগ ঐ সকল নামাজির জন্য যারা নিজেদের নামাজ সম্বন্ধে উদাসীন। ” (সূরা আল মাউন ১০৭: আয়াত ৪ ও ৫) নামাজে অমনোযোগী হয়ে পড়া প্রসঙ্গে হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “কোনো ব্যক্তি যখন নামাজ আদায়ে দণ্ডায়মান হয়, তখন মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ্ তাঁর ঐ বান্দার দিকে নিজের চেহারা মোবারক ফেরান। সে অন্যমনস্ক হলে আল্লাহ্ বলেন- “হে আদম সন্তান! তুমি কার দিকে তাকাচ্ছ? আমার চেয়ে উত্তম কারো দিকে কি? তুমি আমার প্রতি মনোযোগী হও। সে যদি দ্বিতীয়বারও অন্যমনস্ক হয়, তবে পুনরায় আল্লাহ্ তায়ালা একথা বলেন। যদি তৃতীয়বারও তাকায় তখন আল্লাহ্ তায়ালা তার দিক থেকে স্বীয় চেহারা মোবারক ফিরিয়ে নেন।” (মুসনাদে বাজ্জারের সূত্রে তাফসীরে মাজহারী ১০ম খণ্ড পৃষ্ঠা ১৮৫) আমরা সবাই চাই আমাদের নামাজ আল্লাহ্র দরবারে কবুল হোক। একদিলে নামাজ আদায় করি। কিন্তু আমরা একমনে নামাজ আদায় করতে না পারার কারণ হলো, আমরা যখন নামাজে দাঁড়াই তখন শয়তান আমাদের ক্বালবের মাঝে থেকে কুপরামর্শ দেয়, যাতে আমরা সঠিকভাবে ইবাদত বন্দেগি না করতে পারি। আমরা যদি ক্বালব হতে শয়তান বিতাড়িত করতে পারি, তাহলে ইবাদত করে আল্লাহ্র দিদার লাভ করতে সক্ষম হবো।
মানুষের ক্বালবের মাঝে শয়তানকে তাড়ানোর একমাত্র মাধ্যম হলো ক্বালবে জ্বিকির তথা আত্মার মুখে জ্বিকির জারি করা। এই প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে সাকীক (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে- হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “প্রত্যেক মানুষের ক্বালবে দুটি করে কক্ষ রয়েছে। এর একটিতে ফেরেশতার অবস্থান, অন্যটিতে শয়তানের। ক্বালব আল্লাহ্র জ্বিকিরে নিমগ্ন থাকলে শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়। আর সে যখন আল্লাহ্র জ্বিকির থেকে বিরত হয়, তখন শয়তান তার ক্বালবের ভিতরে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।” (তাফসীরে মাজহারী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৮)
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লার সান্নিধ্য লাভ করে হাজার হাজার মানুষ একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করে মহান রাব্বুল আলামিনের দিদার লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। যে সকল মানুষ হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করে নামাজে মি‘রাজ লাভ হয়েছে, তারা কি কখনো আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাকে ভুলতে পারে? তারা সদা সর্বদা সুফী সম্রাট হুজুর কেব্লাকে হৃদয়ে স্মরণ করবে। আল্লাহ্র বন্ধুর শিক্ষা সব সময় পালন করবে। সূফী সম্রাটের এই নামাজে হুজুরির শিক্ষা তাঁর জীবদ্দশায়, মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী মহামানব, ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর কেব্লার সার্বিক দিক নির্দেশনায় আশেকে রাসুল ড. মোবারক হোসেন পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।


৪। আশেকে রাসুল হওয়া
আশেকে রাসুল দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। আশেক অর্থ প্রেমিক এবং এখানে রাসুল মানে হযরত রাসুল (সা.)-কে বুঝায়। অর্থাৎ যিনি হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসেন, তাকে আশেকে রাসুল বলে। রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার নাম ইমান। যে রাসুল (সা.)-কে যতটুকু ভালোবাসেন, তার ইমানের গভীরতা ততটুকু। হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-“[হে মাহ্বুব (সা.)!] আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও, তবে তোমরা আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। অবশ্যই আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়াময়।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩১)
মহান রাব্বুল আলামিনকে ভালোবাসার মাধ্যম হলো হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসা। আর রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসতে পারলে আর যাবতীয় পাপসমূহ থেকে ক্ষমা পাবো। এজন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লা তাঁর শিক্ষার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছেন আশেকে রাসুল হওয়া। হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসা শিক্ষার জন্য তিনি মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার মধ্যে একজন আশেকে রাসুলকে দৈনিক কমপক্ষে ৭২২ বার রাসুল (সা.)-এর উপর দরূদ পাঠ করার বিধান রেখেছেন। সূফী সম্রাটের ভক্ত আশেকান, সকাল-সন্ধ্যায়, বিপদে-আপদে, বিবাহ, জন্মদিনে এবং আনন্দের সংবাদে দয়াল রাসুলের শানে পবিত্র মিলাদ শরীফ পাঠ করেন। হযরত রাসুল (সা.)-কে কেমন ভালোবাসতে হবে এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, “যে ব্যক্তি নিজের পিতামাতা, সন্তানসন্ততি ও অন্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি ভালো না বাসবে, সে মু’মিন হতে পারবে না।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭ এবং মুসিলম শরীফ ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ৪৯)
যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোনো কিছুই সৃজিত হতো না। যাঁর অসিলায় তামাম মাখলুকের সৃষ্টি, সেই মহামানবকে আমাদের জীবনে সবচাইতে বেশি ভালোবাসতে হবে। তবে আমরা ইমানদার তথা, মু’মিন হবো। জগতের মাঝে দেওয়ানবাগ শরীফ এমন এক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেখানে হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার শিক্ষা দেওয়া হয়। সূফী সম্রাট হুজর কেব্লা দয়াল রাসুল (সা.)-কে জীবনের চাইতে বেশি ভালোবাসতেন।
আমরা নফসের খায়েশে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে নানারকম পাপকাজে লিপ্ত হয়ে আজাব গজবে নিপতিত হই। নানারকম অভাব অনটন, দুঃখ, কষ্ট, রোগ শোকে আক্রান্ত হই। এই সকল কাজ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র মাধ্যম হলো মিলাদ পাঠ করা। এই প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লা বলেন- “ঘরে ঘরে মিলাদ দিন, দয়াল রাসুলের শাফায়েত নিন।” এরই ধারাবাহিকতা মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর কেব্লা ঘরোয়া মিলাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছেন।
বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের প্রায় দেড় হাজার বছর পর মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লা আশেকে রাসুল হওয়ার ডাক দিয়েছেন। এই মহামানবের শিক্ষা গ্রহণ করে লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল আখেরি জামানায় স্বপ্নে, মোরাকাবায় ও মিলাদে হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভ করেছেন। যে সকল মানুষ রাসুলকে ভালোবেসে আশেকে রাসুল হয়েছেন, তারা রাসুল (সা.)-এর দিদার পেয়েছেন, তারা কি কখনো সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাকে ভুলতে পারবে?
বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পরবর্তী সময় সূফী সম্রাট হুজর কেব্লার মতো এতো বড়ো অলী-আল্লাহ্ জগতে কম এসেছেন। একজন মুসলমান হিসেবে হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসা, তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাকে এবং তাঁর শিক্ষাকে আজীবন হৃদয়ে ধারণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
[লেখক: ইসলামি গবেষক]

সম্পর্কিত পোস্ট