সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অনবদ্য অবদান
মানবজাতির নিকট হযরত রাসুল (সা.)-এর স্বরূপ প্রকাশ
ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা:
হযরত রাসুল (সা.) মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ উপহার দিয়ে গেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, তাঁর ওফাতের ৫০ বছর পর কারবালার নির্মম ঘটনা সংঘটিত হয়। কারবালার প্রান্তরে এজিদ বিন মোয়াবিয়া হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)-কে সপরিবারে নির্মমভাবে শহিদ করে মোহাম্মদী ইসলাম বিলুপ্তির মাধ্যমে উমাইয়া শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
এরপর উমাইয়ারা ৮৯ বছর (৬৬১-৭৫০ খ্রি.) এবং আব্বাসিয়রা ৫০৮ বছর (৭৫০-১২৫৮খ্রি.) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে মোহাম্মদী ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শকে ভুলণ্ঠিত করে দ্বিন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে। এই দ্বিন ইসলাম এলমে তাসাউফ বিবর্জিত ইসলাম, যা হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান মর্যাদাকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।
আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় এই যে, বেলায়েতের যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ অলী-আল্লাহ্ মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ সংবলিত মোহাম্মদী ইসলামকে পুনরায় জগতের বুকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া তিনি সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত রাসুল (সা.)-এর স্বরূপ মানবজাতির নিকট তুলে ধরেছেন। জগতশ্রেষ্ঠ এই মহামানব পবিত্র কুরআন ও হাদিসের অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, হযরত রাসুল (সা.)-ই সৃষ্টিজগতের মূল, তাঁকে ভালোবাসার নামই ইমান, তাঁকে যে যতটুকু ভালোবাসে, সে ততটুকু ইমানদার। শুধু তাই নয়, হযরত রাসুল (সা.) সম্পর্কে প্রচলিত বিভিন্ন অপপ্রচার যে অমূলক ও ভিত্তিহীন, সেই বিষয়গুলোও সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ইতিহাসের অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছেন।
হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি গভীর অনুরাগের কথা বলতে গিয়ে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার গভীর আকর্ষণ আমি শৈশব হতেই উপলব্ধি করতাম। তাই তাঁকে পাওয়ার জন্য মনের মাঝে ব্যাকুলতাও ছিল প্রবল। এ কারণেই আমি সাধারণ শিক্ষা ছেড়ে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করি এবং পরবর্তীতে আমার মুর্শিদ পীরানে পীর, দস্তগীর, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর সাহচর্যে গিয়ে দীর্ঘ এক যুগ সাধনা করি। অতঃপর আল্লাহ্ তায়ালার অপার দয়ায় হযরত রাসুল (সা.)-এর পরিচয় পরিপূর্ণভাবে লাভ করা সম্ভব হয়েছে। তখন আমার কাছে হযরত রাসুল (সা.) সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারণা যে বহুলাংশে ত্রুটিপূর্ণ, তা স্পষ্ট হয়ে উঠে। আমি সমাজের মানুষের সেসব ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য উদ্যোগী হয়ে ‘বিশ্বনবির স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট: রাসূল (সঃ) সত্যিই কি গরীব ছিলেন?’ গ্রন্থখানা রচনা করলাম।”
(বিশ্বনবির স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট: রাসূল (সঃ) সত্যিই কি গরীব ছিলেন?, মুসান্নিফের কথা, পৃষ্ঠা ৫)
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান হযরত রাসুল (সা.) সম্পর্কে যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলো:
‘হযরত রাসুল (সা.) প্রবর্তিত ইসলাম দ্বিন ইসলাম নয়, মোহাম্মদী ইসলাম ক্ষমতালিপ্সু উমাইয়ারা ৮৯ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ থেকে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম বাদ দিয়ে বিশ্বময় দ্বিন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে। এরপর আব্বাসীয়রা ক্ষমতায় এসে একই ধারা অব্যাহত রাখে। ফলে বিশ্বব্যাপী মোহাম্মদী ইসলামের পরিবর্তে দ্বিন ইসলামই প্রচার ও প্রসার লাভ করে। এই দ্বিন ইসলাম মূলত এজিদি ইসলাম, যা ভোগের, প্রতারণা, নিষ্ঠুরতা, জুলুম বা অত্যাচারের, লেবাসের, মিথ্যা, অশান্তি, হানাহানি ও মৌখিক স্বীকৃতির। এক কথায় ধর্মের মুখোশ পরে এবং ইসলামের দোহাই দিয়ে সমাজে ত্রাস ও অশান্তি সৃষ্টি করাই এজিদি ইসলাম।’
আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান এজিদি ইসলামের মুখোশ উন্মোচন করে মোহাম্মদী ইসলামের প্রকৃত স্বরূপকে জগদ্বাসীর নিকট তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, “হযরত রাসুল (সা.) প্রবর্তিত ইসলাম দ্বিন ইসলাম নয়, মোহাম্মদী ইসলাম।” হযরত রাসুল (সা.)-এর ইসলাম যে মোহাম্মদী ইসলাম হবে, এই বিষয়ে তিনি যৌক্তিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।
এই প্রসঙ্গে মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “সকল নবি-রাসুল ইসলাম প্রচার করেছেন, কিন্তু রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ (সা.) নবি ও রাসুলগণের প্রচারিত সেই ইসলামকে পূর্ণতা দান করেন। যেহেতু আমরা পূর্ববর্তী কোনো নবির ধর্ম অনুসরণ না করে বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দেওয়া ইসলামি বিধান অনুসরণ করি, সুতরাং আমাদের এই ধর্মের নাম ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ নামকরণ করা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত।”
বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ এই ইমাম আরও বলেন, “ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন মাজহাব ও তরিকাগুলো তাঁদের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর নামানুসারে ‘হানাফি মাজহাব’; ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর নামানুসারে ‘শাফেয়ি মাজহাব’; ইমাম মালেক (রহ.)-এর নামানুসারে ‘মালেকি মাজহাব’; ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর নামানুসারে ‘হাম্বলি মাজহাব’। অনুরূপভাবে গাউসে পাক হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর নামানুসারে ‘কাদেরিয়া তরিকা’; গরিবে নেওয়াজ হযরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর নামানুসারে ‘চিশতিয়া তরিকা’; হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রহ.)-এর নামানুসারে ‘নকশবন্দিয়া তরিকা’; হযরত শায়খ আহমদ মোজাদ্দেদ আলফেসানি (রহ.)-এর নামানুসারে ‘মোজাদ্দেদিয়া তরিকা’; ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর নামানুসারে ‘সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকা’।
অনুরূপভাবে যারা পবিত্র কুরআনের তাফসীর লিখেছেন, তাঁদের স্বনামে তাফসীর গ্রন্থগুলোর নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে তাবারি, তাফসীরে ইবনে কাছির, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে কাবির ইত্যাদি। অন্যদিকে যারা হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিস সংগ্রহ করে সংকলন করেছেন, তাঁদের স্বনামে হাদিস গ্রন্থসমূহের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরিমিজি শরীফ ইত্যাদি। আর হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানবমুক্তির জন্য এলমে শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত সংবলিত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব ‘আল কুরআন’ প্রাপ্ত হয়েছেন এবং সেই অনুযায়ী মানুষকে পরিচালিত করেছেন, তাই তাঁর নামানুসারেই তাঁর প্রবর্তিত ইসলামকে ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ বলা অপরিহার্য।”
হযরত রাসুল (সা.) গরিব ছিলেন না, তিনি ছিলেন আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী
হযরত রাসুল (সা.) সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ধারণা ছিল, তিনি গরিব ছিলেন; ক্ষুধা নিবারণের জন্য তিনি পেটে পাথর বেঁধে রাখতেন; ইহুদির বাগানে দুটি খেজুরের বিনিময়ে কুয়া থেকে পানি উত্তোলন করতেন; তিনি ৭০ তালিওয়ালা জামা পরিধান করতেন।
আল্লাহর রাসুল (সা.) সম্পর্কে এরূপ ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ইতিহাসের দালিল দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছেন হযরত রাসুল (সা.) আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ছিলেন। এই সম্পর্কে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন, নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো-
- পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.) সম্পর্কে বলেন, ‘‘আমি আপনাকে জগৎসমূহের প্রতি কেবল রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি।’’ (সূরা আল আম্বিয়া-২১: আয়াত ১০৭) আল্লাহ্ যাঁকে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন, তিনি গরিব হন কীভাবে?
অন্যত্র আল্লাহ্ যাকাত প্রদানের নির্দেশ করে এরশাদ করেন, ‘‘নামাজ কায়েম করো ও যাকাত দাও।” (সূরা বাকারাহ-২: আয়াত ১১০) হযরত রাসুল (সা.) তাঁর বিপুল সম্পদ হতে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক প্রতিবছর প্রচুর অর্থ যাকাত দিতেন। গরিবের জন্য যাকাত প্রদান করা ফরজ নয়। আল্লাহ্ তায়ালা নিজেই তাঁর হাবিব সম্পর্কে এরশাদ করেন, “আমি আপনাকে অসহায় অবস্থায় পেলাম, অতঃপর আপনাকে সম্পদশালী করলাম।” (সূরা আদ দোহা-৯৩: আয়াত ৮) সম্পদশালী অর্থ কি দরিদ্র্যতা?
সুতরাং পবিত্র কুরআনের আলোকে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, হযরত রাসুল (সা.) আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ছিলেন।
- হযরত রাসুল (সা.)-এর দাদা হযরত আবদুল মোত্তালিব (আ.) ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা এবং ক্বাবা শরীফের হেফাজতকারী। শাসনকর্তার নাতি কি গরিব হতে পারে? হযরত রাসুল (সা.)-এর পিতা হযরত আবদুল্লাহ্ (আ.) ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীর পুত্র কি গরিব হতে পারে? হযরত রাসুল (সা.)-এর মাতা হযরত আমেনা (আ.) ছিলেন মদীনার বনু জহুরা গোত্রের খ্যাতনামা ও সম্মানিত ব্যক্তি হযরত আবদুল ওয়াহবের কন্যা। সুতরাং পিতা ও মাতা উভয় দিক থেকে হযরত রাসুল (সা.) ধনী ছিলেন।
- হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্ম হয় তাঁর দাদা হযরত আবদুল মোত্তালিব (আ.)-এর শাহি প্রাসাদে, যা ছিল দোতলা বিশিষ্ট ভবন। যে রাসুল (সা.)-এর জন্ম শাহি প্রাসাদে, তিনি কি গরিব হতে পারেন? এছাড়া হযরত রাসুল (সা.)-এর পূর্ব পুরুষগণের সবারই বসতবাড়ি বিল্ডিংয়ের ছিল। উল্লেখ্য যে, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মের ৭ম দিবসে তাঁর দাদা হযরত আবদুল মোত্তালিব (আ.) মহা ধুমধামের সাথে বহু পশু জবেহ করে আকিকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। শিশু জন্মের পর, মক্কার অভিজাত সম্প্রদায় তাদের শিশুদেরকে দুধ মাতার নিকট প্রেরণ করতেন। শিশু হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কেও তাঁর দুধ মাতা হযরত হালিমা (রা.)-এর নিকট উচ্চ পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনাগুলো কি প্রমাণ করে হযরত রাসুল (সা.) গরিব ছিলেন?
- হযরত রাসুল (সা.) তাঁর সম্মানিত পিতা ও চাচাদের মতো নিজেও ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। তাঁর ব্যবসায়িক দক্ষতা ও সুনামের বিষয়টি জানতে পেরে আরবের সেরা ধণাঢ্য রমণী হযরত খাদিজা (রা.) আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার করে নেন। পরবর্তীতে তিনি নিজে প্রস্তাব দিয়ে হযরত রাসুল (সা.)-কে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাঁর সকল সম্পত্তি হযরত রাসুল (সা.)-এর নিকট উৎসর্গ করেন। সুতরাং পিতার দিক থেকে প্রাপ্ত সম্পদ, নিজের উপার্জিত সম্পদ ও স্ত্রীর নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পদ সব মিলিয়ে হযরত রাসুল (সা.) আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ছিলেন।
- আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর মদীনাবাসী হযরত রাসুল (সা.)-কে রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্ব অর্পণ করেন। দেশের রাষ্ট্র প্রধান কি গরিব হতে পারে? ইহুদির বাগানে কি কাজ করতে পারে? ৭০ তালিওয়ালা জামা কি পরিধান করতে পারে? মূলত এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। হযরত রাসুল (সা.) কাফেরদের আক্রমণ প্রতিরোধ ও মদীনা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ৮৫টি যুদ্ধ ও অভিযান করতে বাধ্য হন। যুদ্ধ ও অভিযানের বিপুল ব্যয় তিনি নিজে নির্বাহ করতেন। যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত গনিমতের মালের এক পঞ্চমাংশ হযরত রাসুল (সা.) পেতেন। তাঁর সাহচর্যে আহলে সুফ্ফাসহ দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ জন অবস্থান করতেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) প্রতিদিন তাঁদের জন্য খাবারের সুব্যবস্থা করতেন।
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত রাসুল (সা.)-এর গোলাম ছিল ৩৬ জন, দাসী ছিল ২২ জন এবং খাদেম ছিল ১৯ জন। সুতরাং এই বিষয়গুলো কি প্রমাণ করে হযরত রাসুল (সা.) গরিব ছিলেন?
- মদীনায় হিজরতের পর হযরত রাসুল (সা.) মোহাম্মদী ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহদের নিকট চিঠিসহ বিভিন্ন উপঢৌকন প্রেরণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহরাও আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে উপঢৌকন প্রেরণ করতেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর পরিধানের একটি জামা মোবারকের মূল্য ছিল ২৭টি উটের মূল্যের সমান। এছাড়া তাঁর ব্যবহৃত তরবারি মোবারক, সিন্দুক মোবারক, পেয়ালা মোবারক সবই ছিল স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত, এই সকল সামগ্রী আজও তুরস্কের তুপকাপি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। হযরত রাসুল (সা.)-এর ব্যবহৃত পাদুকা মোবারকের ডিজাইন ও নির্মাণ শৈলী ছিল রাজকীয়, যা তুপকাপি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। উল্লেখ্য যে, হযরত রাসুল (সা.) বিদায় হজের সময় ১০০টি উট কোরবানি করেন, বাংলাদেশী টাকায় ১০০টি উটের বর্তমান মূল্য ১২ কোটি টাকা। একজন গরিব লোকের পক্ষে কি ১২ কোটি টাকা ব্যয় করে কোরবানি দেওয়া সম্ভব?
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান উল্লিখিত বিষয়গুলো উপস্থাপন করে প্রমাণ করেছেন যে, হযরত রাসুল (সা.) নিঃসন্দেহে আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ছিলেন।
হযরত রাসুল (সা.)-এর পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
সারা পৃথিবীর মুসলমানগণ হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতাকে বলেন হযরত মরিয়ম (আ.), হযরত মুসা (আ.)-এর প্রতিপালনকারী ফেরাউনের স্ত্রীকে বলেন হযরত আছিয়া (আ.), হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর স্ত্রীকে বলেন হযরত হাজেরা (আ.)। এই বিষয়টি উপস্থাপন করে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “সমস্ত নবি-রাসুলের সর্দার রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর পিতা-মাতার নাম জিজ্ঞেস করলে বলা হয়- আবদুল্লাহ্ ও আমেনা। তাঁদের নামের সাথে ‘হযরত’ এবং ‘আলাইহিস্সালাম’ শব্দ ব্যবহার করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা, কিংবা তাঁদের জন্য দোয়া করার রেওয়াজ মুসলিম সমাজে প্রচলিত নেই।”
তাই তিনি পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে বলেছেন যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর সম্মানিত পিতা ও মাতার প্রতি অবজ্ঞাসূচক আচরণ চরম বেয়াদবি। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব, তেমনি তাঁদের প্রতি দোয়া করার মধ্যেও অবারিত রহমত ও বরকত নিহিত রয়েছে। বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর পিতা ও মাতা মুমেন ছিলেন এবং তাঁদের প্রতি আল্লাহর অপরিসীম রহমত ছিল, বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে তা সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
তাঁদের জীবদ্দশায় হযরত রাসুল (সা.)-এর মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারিত হয়নি। তাই তাঁরা হযরত রাসুল (সা.)-এর নিকট থেকে কালেমা পাঠের সুযোগ পাননি। তাঁরা তৎকালীন জামানায় প্রচলিত মুসলিম জাতির আদি পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দ্বিনে হানিফের অনুসারী ছিলেন। সুতরাং তাঁরা মুসলমান ছিলেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “কোনো ব্যক্তির পিতা-মাতার জন্য যদি কেউ দোয়া করে, তাহলে ঐ ব্যক্তি দোয়াকারি প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন এবং তাকে খুশি করার জন্য পেরেশান হয়ে ওঠেন। আমরা যদি হযরত রাসুল (সা.)-এর পিতা-মাতার জন্য দোয়া করি, তবে কি তিনি খুশি হয়ে আমাদের মুক্তির জন্য শাফায়েত করবেন না? তাই তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা, দোয়া করা আমাদের জন্য অপরিহার্য এবং অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ।”
সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ, দয়াল রাসুল (সা.)-এর জন্ম ঈদ
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, হযরত রাসুল (সা.)-এর জন্ম ঈদ, সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ। তাই ১২ রবিউল আউয়াল হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) যথাযথ মর্যাদা ও আনন্দের সাথে উদযাপন করা উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য অপরিহার্য। এই ঈদ উদযাপন করলে হযরত রাসুল (সা.) আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে।
এই প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘‘একদা আমি হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে হযরত আমের আনসারী (রা.)-এর বাড়িতে গিয়ে দেখতে পেলাম, হযরত আমের (রা.) তার ছেলে-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনকে একত্রিত করে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শুভ জন্মদিনের বিবরণ শোনাচ্ছেন। অতঃপর তিনি বলছিলেন- আজ সেই পবিত্র জন্মদিন। তার এ কাজ দেখে হযরত রাসুল (সা.) (অত্যন্ত আনন্দবোধ করলেন,এবং) বললেন- ‘হে আমের! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা তোমার জন্য তাঁর রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন,এবং ফেরেশেতারা তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন’।’’ (ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ.)-এর সাবলীল হুদা ফি মাওলিদিল মুস্ততা )
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “সামাজিকভাবে দেখা যায়, খ্রিষ্টানরা তাদের নবি হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মদিন মহা ধুমধামের সাথে পালন করে থাকে। অনুরূপভাবে অন্য সকল ধর্মাবলম্বীরাও নিজ নিজ ধর্মের প্রবর্তকদের জন্মদিন সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে পালন করে থাকে। কিন্তু আমাদের নবি হযরত রাসুল (সা.) নবি-রাসুলগণের ইমাম বা নেতা হওয়া সত্ত্বেও আমরা তাঁর শুভ জন্মদিন পালন করি না।”
তাই বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বাংলাদেশের সর্বত্র পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) মহা ধুমধামের সাথে উদ্যাপনের নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য যে, ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন এবং ১ রবিউল আউয়াল তাঁর ওফাৎ দিবস হওয়া সত্ত্বেও, ইতঃপূর্বে বাংলাদেশে ১২ রবিউল আউয়াল দিনটি ফাতেহায়ে দোয়াজ-দহম ও সিরাতুন্নবি (সা.) হিসেবে সরকারিভাবে পালিত হতো। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে একে ‘সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তাঁর প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকার ১২ রবিউল আউয়াল ফাতেহায়ে দোয়াজ-দহম ও সিরাতুন্নবি (সা.)-এর পরিবর্তে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উপলক্ষ্যে দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষণা করে।
মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ প্রচলন
আমাদের সমাজে একশ্রেণির হুজুর অপপ্রচার করে যে, মিলাদ পাঠ করা বেদআত। কিন্তু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান প্রমাণ করে দিয়েছেন মিলাদ হযরত রাসুল (সা.)-এর যুগেও ছিল। ইসলামে মিলাদের গুরুত্ব অপরিসীম। মিলাদের ফজিলত এতো বেশি যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশাতেও সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের বাড়িতে ধুমধামের সাথে মিলাদের অনুষ্ঠান পালন করতেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘একদা তিনি তাঁর ঘরে লোকদেরকে একত্রিত করে রাসুলুল্লাহ্ (সা.)-এর জন্মদিনের বর্ণনা করছিলেন, যা শুনে উপস্থিত সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে রাসুল (সা.)-এর প্রশংসা করছিলেন (অর্থাৎ- প্রশংসাসূচক আলোচনা করে দরূদ ও সালাম পেশ করছিলেন)। এমন সময় হযরত রাসুল (সা.) সেখানে উপস্থিত হলেন এবং খুশি হয়ে তাদের উদ্দেশে বললেন- ‘তোমাদেরকে শাফায়াত করা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে’।’’ (দুররুল মুনাজ্জাম)
হযরত সুহাইলি (রা.) কর্তৃক হযরত আব্বাস (রা.) থেকে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- “তিনি বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত আজাবের মধ্যে আছে। তার অবস্থা সম্পর্কে আবু লাহাব জানায়, তোমাদের ছেড়ে আসার পর থেকে আমি শান্তির মুখ দেখিনি, তবে প্রতি সোমবার আমার আজাব লাঘব করা হয়। হযরত আব্বাস (রা.) বলেন, তার ই আজাব লাঘবের কারণ হলো: হযরত রাসুল (সা.)-এর জন্মদিন ছিল সোমবার। তাঁর জন্মের সুসংবাদ নিয়ে আসা দাসী সুয়াইবাবকে সে খুশি হয়ে মুক্তি দিয়েছিল।” (ফতহুল বারী, ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৮)
এই প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের সংবাদে খুশি হওয়ায় একজন কাফের হয়েও যদি আবু লাহাবের আজাব লাঘব হতে পারে, তাহলে সেই রাসুল (সা.)-এর উম্মত হয়ে আমরা যদি তাঁর শুভ জন্মদিন মহাধুমধাম ও আনন্দের সাথে মিলাদ পাঠের মাধ্যমে উদযাপন করি, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরাও সৌভাগ্য লাভ করে উপকৃত হতে পারবো।”
মিলাদ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ ফরমান, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ স্বয়ং ও তাঁর ফেরেশতারা নবির উপরে দরূদ পাঠ করেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও তাঁর উপরে দরূদ পড় এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো।” (সূরা আহযাব- ৩৩: আয়াত ৫৬) পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি উপস্থাপন করে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “জগতে এমন কোনো কর্ম নেই, যা আল্লাহ্ সর্বদা করেন। অথচ তিনি স্বয়ং তাঁর ফেরেশতাদের নিয়ে তাঁর প্রিয় হাবিবের উপর দরূদ পড়েন এবং মানুষের উদ্দেশে বলেছেন, হে বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরাও আমার হাবিবের উপর দরূদ পড় ও শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো। আল্লাহ্ নিজে নামাজ পড়েন না, রোজা পালন করেন না, হজ করেন না, যাকাত দেন না, অথচ এই বিষয়গুলো মুসলমানদের উপরে ফরজ করেছেন। আল্লাহ্ বলেছেন যে, আমি রাসুলের উপর দরূদ পড়ি, আমার ফেরেশতারা দরূদ পড়ে, হে বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরাও তাঁর উপর দরূদ পড় এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো। দরূদ ও সালাম পেশ করা হয় মিলাদের মাধ্যমে।
হযরত রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা লাভের আশায় যদি কোনো ব্যক্তি মিলাদ পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ্ অবশ্যই ঐ বান্দার উপরে খুশি হবেন এবং তাকে ৫টি পুরস্কার দান করবেন। (১) মিলাদ পাঠকারীর সংসারের অভাব অনটন দূর হবে, (২) বালা-মুছিবত দূর হবে, (৩) সংসারের অশান্তি দূর হবে, (৪) আয়-রোজগারে বরকত হবে এবং (৫) হযরত রাসুল (সা.)-এর শাফায়াত লাভ হবে।” সুতরাং এই থেকে বুঝা যায় যে, মিলাদ অত্যন্ত রহমত, বরকত ও ফজিলতপূর্ণ কাজ।
হযরত রাসুল (সা.) গায়েব জানতেন
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান প্রমাণ করে দিয়েছেন হযরত রাসুল (সা.) গায়েব জানতেন। যেহেতু তিনি হায়াতুন্নবি, সেহেতু তিনি সময় ও স্থানের উর্ধ্বে। সৃষ্টির সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন না বা থাকবেন না। সুতরাং গায়েব বলতে তাঁর কাছে কোনো কিছু নেই, সৃষ্টির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমস্ত ঘটনাবলি তাঁর কাছে হাজির এবং তিনি সেগুলোর প্রত্যক্ষ সাক্ষী।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “হে রাসুল! আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা ও সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি।” (সূরা আহযাব-৩৩ : আয়াত ৪৫) এই আয়াতটি উপস্থাপন করে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “আল্লাহ্ তায়ালা হযরত রাসুল (সা.)-কে যেহেতু সমস্ত ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং হাশরের দিনে শেষ বিচারের সময় তিনি স্বীয় উম্মতসহ সমস্ত নবি ও তাঁদের উম্মতদের সাক্ষীদাতা ও শনাক্তকারী থাকবেন, তাহলে তিনি কি কোনো ঘটনা অবহিত না হয়ে পারেন? না দেখে কি সাক্ষী দেওয়া যায়?
হযরত রাসুল (সা.) সর্বকালে সর্বযুগে সর্বত্র বিরাজমান ছিলেন এর প্রমাণ পাওয়া যায় পবিত্র কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন আয়াত থেকে। যেমন- মহান আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় হাবিব হযরত রাসুল (সা.)-কে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘আপনি কি দেখেননি, আমি কীভাবে আদ ও সামুদ জাতিকে ধ্বংস করেছি।’ ‘আপনি কি দেখেননি, আমি কীভাবে ফেরাউনকে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে মেরেছি।’ ‘আপনি কি দেখেননি, আমি কীভাবে আবরাহা বাদশাহর হস্তিগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছি?’
অথচ উল্লিখিত সব ঘটনা হযরত রাসুল (সা.) মক্কায় জন্মগ্রহণ করার বহু আগে সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা ‘আপনি কি দেখেননি’ বলে বুঝাতে চেয়েছেন যে, হযরত রাসুল (সা.)-ও মহান আল্লাহর সাথে এসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন।” মূলত হযরত রাসুল (সা.)-এর নিকট গায়েব বলতে কিছুই ছিল না, বরং সমস্ত জ্ঞানই তাঁর কাছে উন্মুক্ত ছিল।
মিলাদে কিয়াম করা অত্যাবশ্যক
মিলাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলতময় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। মিলাদের মাধ্যমে দরূদ পড়ে এবং কিয়াম বা দাঁড়িয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা অত্যাবশ্যক। কিন্তু আমাদের সমাজে এক শ্রেণির মানুষ মিলাদে বসে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর প্রতি সালাম পেশ করে থাকে, যা চরম বেয়াদবি। হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, হযরত রাসুল (সা.) কোনো মজলিসে তশরিফ গ্রহণ করলে সাহাবায়ে কেরাম তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন। এমনকি নবি নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রা.) যখন হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসতেন, তখন তিনি বসা থেকে দাঁড়িয়ে নিজ কন্যাকে সম্মান প্রদর্শন করতেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “আমরা যদি মিলাদে কিয়াম করে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা না জানাই, তবে কীভাবে আমাদের ভাগ্য উন্নয়ন হবে? কারো সামনে যদি রাহমাতুল্লিল আলামিন দয়া করে তশরিফ নেন, তিনি কি বসা থাকতে পারেন? যে মাশুকের জন্য আশেক পাগল দেওয়ানা, সেই রাসুল (সা.)-কে পেলে তিনি কীভাবে বসে থাকবেন। এছাড়া মহান আল্লাহ্ নিজেই তো হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি দরূদ পাঠ ও শ্রদ্ধার সাথে সালাম জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং শ্রদ্ধার সাথে সালাম জানাতে হলে তো দাঁড়াতেই হবে।
স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক যখন শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করেন, তখন সকল ছাত্র দাঁড়িয়ে তাঁকে সালাম জানিয়ে থাকে। এছাড়া কোনো সম্মানিত ব্যক্তি কোথাও আগমন করলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্যান্যদের দাঁড়িয়ে যাওয়া হলো সামাজিক শিষ্টাচার। হযরত রাসুল (সা.) মানুষকে সর্বোত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন। তাই মিলাদে দাঁড়িয়ে ‘ইয়া ইমাম’ বলে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে সালাম জানানো আশেকে রাসুলদের জন্য অত্যাবশ্যক।
মহান আল্লাহ্ সবাইকে পরম ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে কিয়াম করে মিলাদ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর অবারিত ফায়েজ, বরকত ও রহমত লাভের তাওফিক দান করুন।”
মিলাদে হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভ
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শিক্ষা অনুযায়ী মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ পাঠ করলে হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভ সম্ভব। এই প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদের বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হামদ ও সানা পাঠের পর মিলাদ শুরু করলে প্রথম পর্বে আশেকে রাসুলগণ দরূদ শরীফ পাঠ করেন ও হযরত রাসুল (সা.)-এর সুউচ্চ মর্যাদার বিষয়গুলো কাসিদার মাধ্যমে আলোকপাত করেন। দ্বিতীয় পর্বে তারা হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেমে উদ্বেলিত হয়ে কাকুতি-মিনতি করে আবেগ জড়িত অবস্থায় তাঁর দিদার ও সাহচর্য কামনা করে- ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ্, ইয়া হাবিবাল্লাহ্’ বলে অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকেন। এমতাবস্থায় আশেকগণের হৃদয়ের ধন হযরত রাসুল (সা.) স্বীয় নুরময় সত্তা নিয়ে তাদের সম্মুখে আবির্ভূত হন। এরপর তৃতীয় পর্বে আশেকগণ অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার পেয়ে তাঁর প্রতি পরম শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মনের গভীর প্রেমাকর্ষণে কিয়াম করেন অর্থাৎ দাঁড়িয়ে যান এবং ‘ইয়া ইমাম’ বলে সালাম জানিয়ে থাকেন।
উল্লেখ্য যে, হযরত রাসুল (সা.) দয়া করে আশেকদের মিলাদে তশরিফ নেন, এর অগণিত প্রমাণ মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী আশেকে রাসুলদের মাঝে প্রতিনিয়ত পরিলক্ষিত হচ্ছে।”
মিলাদে হযরত রাসুল (সা.)-কে ‘ইয়া ইমাম’ সম্বোধন করা
‘ইমাম’ আরবি শব্দ, এর বাংলা অর্থ হচ্ছে নেতা, সর্দার, পরিচালক বা অগ্রগামী। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মিলাদ শরীফে হযরত রাসুল (সা.)-কে ‘ইয়া ইমাম’ বলে সম্বোধন করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কেননা প্রত্যেক নবি ও রাসুল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমাম।
আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু হযরত রাসুল (সা.) হলেন আল্লাহর মনোনীত সকল, নবি-রাসুল ও ইমামদের ইমাম। এই প্রসঙ্গে হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নবি (সা.) এরশাদ করেন, ‘আমি রাসুলগণের ইমাম, এটা আমার অহংকার নয়, আমিই হলাম নবি আগমনের সমাপ্তকারি এতে আমার কোনো অহংকার নেই এবং সর্বপ্রথম আমিই হবো শাফায়েত কারি এবং আমার শাফায়াত কবুল করা হবে; এতে আমার কোনো অহংকার নেই’।” (দারেমি শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৫১৪)
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, ‘‘নবুয়তের দ্বাদশ সালে মানবতার মুক্তির দিশারি রাহমাতুল্লিল আলামিন ২৭ রজব মেরাজের রজনিতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদুল আকসার উদ্দেশে সায়ের বা পরিভ্রমণ শুরু করেন। সেখানে আগে থেকেই সকল নবি-রাসুল তাঁকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভাগমনের সাথে সাথে তাঁরা সবাই পরম শ্রদ্ধার সাথে ‘আস্সালামু আলাইকা ইয়া আউয়্যালিনা ওয়াল আখিরিনি’ বলে তাঁকে সালাম পেশ করেন। সেসময় প্রত্যেক নবি-রাসুল আনন্দচিত্তে বলছিলেন- ‘মারহাবা ইয়া রাসুলাল্লাহ্’, ‘মারহাবা ইয়া হাবিবাল্লাহ্’। অতঃপর মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত রাসুল (সা.)-এর ইমামতিতে সকল নবি-রাসুল দুই রাকাত সালাতুল ইসরা অর্থাৎ ভ্রমণের নামাজ আদায় করেন। এই নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহর রাসুল (সা.) সকল নবি-রাসুলের ‘ইমাম’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ‘ইমামুল মুরসালিন’ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন।
সুতরাং নবিজির শান, মান ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদে হযরত রাসুল (সা.)-কে ‘ইয়া ইমাম’ বলে সম্বোধন করা অত্যাবশ্যক।”
পরিশেষে বলা যায় যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান হলেন হযরত রাসুল (সা.)-এর সিরাজাম মুনিরার ধারক ও বাহক।
জগতশ্রেষ্ঠ এই মহামানব তাঁর সুদীর্ঘ জীবনের সাধনালব্ধ জ্ঞানের আলোকে দোজাহানের বাদশাহ হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রকৃত পরিচয় জগদ্বাসীর নিকট তুলে ধরেছেন। ফলে উম্মতে মোহাম্মদী হযরত রাসুল (সা.)-এর সঠিক পরিচয় লাভ করত মোহাম্মদী ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ নিজের হৃদয়ে ধারণ করে আলোকিত মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছেন।
[লেখক: পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ; সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি]
তথ্য সূত্র:
১। আল কুরআন
২। আল হাদিস
৩। বিশ্বনবীর স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট: রাসূল (সঃ) সত্যিই কি গরীব ছিলেন?, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান
৪। এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মদী ইসলাম, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান