হজ না করেও হজ কবুল
প্রখ্যাত সুফি সাধক সুলতানিয়া-মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) ফরমান- ‘‘আলী ইবনে মোয়াফেক নামে দামেস্কের অধিবাসী এক দরিদ্র মুচি দীর্ঘ ৩০ বছর তার কষ্টার্জিত অর্থ থেকে সঞ্চয় করেছিলেন হজ করার জন্য। তিনি যখন হজে যাবেন, তার আগের দিন তার স্ত্রী বলল, আমি মাংস খাবো। তিনি বললেন, আমার কাছে বাড়তি টাকা নেই মাংস কেনার মতো। হজের টাকা থেকে যদি মাংস কিনি, তবে আমার হজে যাওয়া হবে না। তখন তিনি স্ত্রীর আবদার রাখতে গিয়ে পাশের বাড়িতে গেলেন একটু মাংস আনার জন্য। তিনি তার প্রতিবেশীকে বললেন, আপনার বাড়ি থেকে মাংস রান্নার ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের একটু মাংস দিন। আমার স্ত্রী মাংস খেতে চাচ্ছে; বাজার থেকে যদি মাংস কিনে আনি তবে আমার হজে যাওয়ার টাকা কম হয়ে যাবে। তখন ঐ বাড়িওয়ালা বলল, ভাই! এ মাংস আমাদের জন্য হালাল কিন্তু আপনাদের জন্য হারাম। কারণ সাত দিন যাবৎ আমরা অনাহারে আছি। অবশেষে অনাহারক্লিষ্ট ছেলে-মেয়েদের কান্নাকাটি সহ্য করতে না পেরে নদীর পানিতে ভেসে যাওয়া একটা মরা গাধা তুলে এনে মাংস রান্না করে খাচ্ছি। কাজেই এটা আমাদের মতো অনন্যোপায় ব্যক্তিদের জন্য হালাল, কিন্তু আপনাদের জন্য হালাল নয়। এ কথা শুনে হজে যেতে প্রস্তুত ব্যক্তি (মুচি) স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। ভাবলেন, হায়রে! আমি কেমন মুসলমান! আল্লাহর বান্দাদের এমনিভাবে অভুক্ত রেখে হজে গিয়ে আমার কী লাভ হবে? অতঃপর আলী ইবনে মোয়াফেক হজে না গিয়ে তার সঞ্চিত সমস্ত টাকা ঐ পরিবারের লোকদের দিয়ে দিলেন। ফলে আলী ইবনে মোহাফেকের হজে যাওয়া হলো না।
সেই বছর হজ সম্পন্ন হওয়ার পর আরবের বিখ্যাত বুজুর্গ, আল্লাহর অলী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) খানায়ে কাবায় ঘুমিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি স্বপ্নে দেখেন- উর্ধ্বলোক থেকে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করে তাঁর সম্মুখে দাঁড়িয়ে একজন অন্যজনকে জিজ্ঞেস করল, এবার কত লোক হজ করতে এসেছে? অপর ফেরেশতা বলল-‘ছয় লক্ষ’। প্রশ্নকারী ফেরেশতা আবার জিজ্ঞেস করল- এরমধ্যে কত জনের হজ কবুল হয়েছে? অপর ফেরেশতা বলল- ‘এবার কারো হজ কবুল হয়নি। তবে একজন মাত্র ব্যক্তির হজ কবুল হয়েছে। দামেস্ক শহরের আলী ইবনে মোয়াফেক, যদিও সে হজ করতে আসেনি। আর আলী ইবনে মোয়াফেকের অসিলায় মহান আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের হজের সওয়াব দিয়েছেন, যারা হালাল অর্থ দিয়ে নেক নিয়তে হজ করেছে।’
এই স্বপ্ন দেখে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.)-এর ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিনি আলী ইবনে মোয়াফেকের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। তিনি দামেস্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি আলী মুচির দ্বারস্থ হলেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.) জিজ্ঞেস করলেন- আলী! আপনি এমন কি কর্ম করেছেন, যে কর্মে খুশি হয়ে হজে না যাওয়া সত্ত্বেও মহান রাব্বুল আলামিন আপনার হজ কবুল করেছেন? এ মহা আনন্দের সংবাদ শুনে আলী ইবনে মোয়াফেকের জজবা হয়ে যায়। তিনি আল্লাহর এশকে বেহুঁশ হয়ে গড়াগড়ি খেতে থাকেন। হুঁশ ফিরে আসলে আলী ইবনে মোয়াফেক আল্লাহর বন্ধু হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.)-কে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। অতঃপর আল্লাহর অলী আবদুল্লাহ্ ইবনে মুবারক (রহ.) আলীকে আরো জানান যে, হে আলী! হজের জন্য ত্রিশ বছরে জমানো টাকা সাত দিনের অনাহারীকে দান করায় মহান আল্লাহ আপনার হজ এমনভাবে কবুল করেছেন যে, তিনি আপনার পক্ষে হজ করার জন্য একজন ফেরেশতাকে নিয়োগ করেছিলেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক হজ সুসম্পন্ন করেছে।
(তথ্য সূত্র: তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৩; সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার -১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৩ এবং তাযকেরাতুল আওলিয়া-১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৬৮)