হযরত মনসুর বিন আম্মার বসরী (রহ.)-এর দোয়ায় এক মদ্যপ ও কওমের সকলের ক্ষমা লাভ
তওবা নামক কিতাবে বর্ণিত আছে- বাগদাদ নগরীর এক ধনী যুবক সর্বদা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মদের আসরে পড়ে থাকত। একদা সে তার গোলামকে চারটি দিরহাম দিয়ে বাজারে প্রেরণ করে কিছু ফল কিনে আনার জন্য। গোলাম বাজারে গিয়ে দেখল, হযরত মনসুর বিন আম্মার বসরী (রহ.)-এর নিকট এক ফকির কিছু সাহায্য প্রার্থনা করছে। হযরতের নিকট তখন কোনো টাকাকড়ি ছিল না। তিনি বাজারের লোকদেরকে ডেকে ডেকে বলছিলেন, যে এ ফকিরকে চারটি দিরহাম দেবে, আমি তাকে চারটি দোয়া করব। কিন্তু সকলেই পাশ কেটে চলে যাচ্ছিল। ঐ গোলাম আল্লাহ্র অলীর দয়া লাভের আশায় তার মনিবের দেওয়া চার দিরহাম ফকিরকে দিয়ে দিল। এবার আল্লাহ্র অলী গোলামকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন বলো, তুমি কী কী দোয়া চাও? গোলাম বিনীতভাবে আরজ করল- ১। আমার মনিব যেন আমাকে আজাদ করে দেন, ২। আল্লাহ্ যেন আমার ও আমার মনিবের তওবা কবুল করেন, ৩। আমার মনিব যেন আমাকে তার দেওয়া অর্থ দান করার অপরাধ ক্ষমা করেন এবং ৪। আমি দোয়া চাই, আল্লাহ্ যেন আমাকে, আপনাকে, আমার মনিবকে আর এই কওমকে মাফ করন।
হযরত মনসুর বিন আম্মার বসরী (রহ.) গোলামের প্রার্থনা অনুযায়ী তার জন্য দোয়া করে তাকে বিদায় দিলেন। এদিকে আল্লাহ্র অলীর দোয়া আল্লাহ্ তায়ালা কবুল করে নিয়েছেন। অতঃপর গোলাম খালি হাতে ফিরে গেলে মনিব তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। গোলাম উত্তরে সকল ঘটনা খুলে বলল। মনিব বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আল্লাহ্র বন্ধুকে দিয়ে কী কী দোয়া করিয়েছ? গোলাম উত্তরে বলল- প্রথম দোয়া ছিল, আপনি যেন আমাকে আজাদ করে দেন। দ্বিতীয় দোয়া ছিল, আল্লাহ্ যেন আমার ও আপনার তওবা কবুল করেন। শুনে মনিব কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, তুমি তো উত্তম দোয়াই করিয়েছ। যাও, তোমাকে আমি আজাদ করে দিলাম। তারপর আর কী কী দোয়া করিয়েছ? গোলাম বলল, তৃতীয় দোয়া ছিল, আপনার দেওয়া অর্থ যে আমি আপনার অনুমতি ব্যতীত দান করেছি, আপনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন। আর চতুর্থ দোয়া ছিল, আল্লাহ্ যেন আমাকে, আপনাকে, ঐ বুজুর্গকে এবং এ কওমকে মাফ করেন। এ কথা শুনেই মনিব গোলামকে ক্ষমা করেন এবং নিজের সারা জীবনের পাপ হতে তওবা করেন। আর চতুর্থটি সম্বন্ধে বলেন, সবাইকে মাফ করা তো আল্লাহর এখতিয়ারে রয়েছে। রাতে মনির স্বপ্নে দেখেন, মহান আল্লাহ বলছেন- তুমি যখন তোমার এখতিয়ারভুক্ত তিনটি কাজ করেছ, আমি আল্লাহও আমার এখতিয়ারভুক্ত কাজটি পুরণ করলাম। আমি তোমাদের সকলকে মাফ করে দিরাম।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, মনিবের মৃত্যুর পর গোলাম তার মনিবকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করে যে, আল্লাহ আপনার সাথে কেমন আচরণ করেছেন? মনিব উত্তর দিলেন- ভাই! আল্লাহর বন্ধুর দোয়ায় আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিয়েছেন।
তথ্যসূত্র: আশেক এলাহী বুলন্দশহরী মোহাজের মাদানী কর্তৃক লিখিত ‘তওবা’ নামক কিতাবের ২৪৫ পৃষ্ঠা এবং তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৭-৯৮ হতে সংকলিত