হযরত রাসুল (সা.)-এর ১৪৯৮তম শুভ জন্মদিন
সম্পাদকীয় অক্টোবর-২০২৩
মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর ১৪৯৮তম (হিজরি সাল অনুযায়ী) শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি; ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ইং, বৃহস্পতিবার দেওয়ানবাগ শরীফের পক্ষ থেকে আমার আহববানে অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় ‘আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে শতাধিক দেশের লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল অনলাইন প্লাটফরমে সম্মেলনে যুক্ত হন। সকাল ৯টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হযরত তরিকুল ইসলাম তারিফ। হযরত এমরান হোসাইন মাজহারী এবং প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম, ইসলামিক চিন্তাবিদ ও গবেষকবৃন্দ হযরত রাসুল (সা.)-এর গৌরবদীপ্ত জীবনী মোবারক এবং পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা করেন।
‘মহান আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি নুরে মোহাম্মদী’-এই বিষয়টির উপর আলোচনা করেন হযরত এমরান হোসাইন মাজহারী। ‘পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ উপস্থাপনপূর্বক আলোচনা করেন হযরত আমিরুল ইসলাম। হযরত মুফতি রফিকুল ইসলাম ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) বাস্তবায়নে বাবা দেওয়ানবাগীর অবদান এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি দুরুদ ও সালাম পাঠের গুরুত্ব’ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। অলৌকিক মো‘জেজা ও কারামত নিয়ে আলোচনা করেন হযরত লুৎফুর রহমান ফরিদপুরী। এরপর হযরত রাসুল (সা.)-এর শৈশব, যৌবন ও ওহি লাভের পটভ‚মি’ নিয়ে আলোচনা করেন হযরত ফখরুদ্দিন রাজি। হযরত রাসুল (সা.)-এর মক্কা জীবনে ইসলাম প্রচারের অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন হযরত তরিকুল ইসলাম তারিফ। ড. মুহাম্মদ নাছিরউদ্দীন সোহেল হযরত রাসুল (সা.)-এর হিজরত এবং পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর ‘মোহাম্মদী ইসলাম পুনর্জাগরণে বাবা দেওয়ানবাগীর অবদান এবং বর্তমানে সারা বিশ্বে কীভাবে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারিত হচ্ছে’ এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান। হযরত সাব্বির আহমেদ ওসমানীর আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘দোজাহানের বাদশা হযরত রাসুল (সা.) এবং তাঁর প্রধান শিক্ষা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ব্যক্তিশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা’। এরপর প্রকৃত আশেকে রাসুল হওয়ার জন্য মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারীর নির্দেশ মতো আমল করার গুরুত্ব বিষয়ক শিরোনামে বক্তব্য প্রদান করেন ড. পেয়ার মোহাম্মদ। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে দেওয়ানবাগীর দল শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দ যথাক্রমে শেখ আব্দুল মতিন, ফেরদৌস আলম আদনান, ওয়ালী উল্লাহ অলি ও মাসুদ রানা হামদ, নাতে রাসুল, শানে মোর্শেদ ও শানে কুদরত পরিবেশন করেন। মিলাদ শরীফ পরিচালনা করেন হযরত বোরহান উদ্দিন জিহাদী, হযরত নূর মোহাম্মদ ও হযরত সোলায়মান ভৈরবী। জোহরের নামাজের পর আমার বক্তব্য ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
আমার মহান মোর্শেদ মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-কে ‘সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ ঘোষণা করেন। এই বছর আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্ম দিনটি সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ হিসেবে মহাধুমধামের সাথে উদ্যাপনের জন্য আশেকে রাসুল ভাই ও বোনদের প্রতি আমি বিশেষ আহবান করি। আমার আহŸানে সাড়া দিয়ে দেশ ও বিদেশের আশেকে রাসুলগণ রবিউল আউয়াল মাসব্যাপী নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তারা হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিনের অনাবিল আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বুভুক্ষ, দুঃস্থ, এতিম, পথচারীসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে উন্নতমানের নানারকম খাবার বিতরণ করেন। এই খাবারের মধ্যে ছিল বিরানি, তেহারি, পোলাও, গরু ও মুরগির মাংসের রেজালা, দুধ, সেমাই, চিনি, রকমারি পিঠা এবং নানা রকমের মিষ্টি ও কেক ইত্যাদি। এছাড়া আশেকে রাসুলগণ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালে অসুস্থ মানুষের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার লক্ষ্যে তাদের মাঝে খাবার সামগ্রী বিতরণ করেন। শুধু তাই নয়, এলাকায় এলাকায় গরু কেটে বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে মাংস বিতরণ করা হয়। আশেকে রাসুলগণ তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্যের উপর বিশেষ মূল্য ছাড় দেন এবং বাড়িতে বাড়িতে আলোকসজ্জা ও পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা উপহারস্বরূপ প্রদান করেন। দেওয়ানবাগীর দল ওলামা মিশন বাংলাদেশের সদস্যবৃন্দ রবিউল আউয়াল মাসব্যাপী মিলাদ মাহ্ফিলে অংশগ্রহণ করে হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেন। এছাড়া সেমিনার, ওয়েবিনার, র্যালি-সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) মহাধুমধামের সাথে উদযাপিত হয়। এই বছর শিশু, কিশোর ও আশেকে রাসুল বোনদের ঈদ উদ্যাপন ছিল প্রশংসনীয়। আমি সকল আশেকে রাসুল ভাই-বোনকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আনন্দের সাথে উদ্যাপনের জন্য আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উদ্যাপনের জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১৩টি সিদ্ধান্ত গৃহীত ও বাস্তবায়ন করা হয়। তাই বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এই বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় ভাবাদর্শ বজায় রেখে মহা ধুমধাম জাঁকজমকের সাথে হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন উদ্যাপিত হয়।