যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
পর্ব-৪
[বিশ্ব জগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক মহান আল্লাহ্ নিরাকার নন। তিনি আকার, তবে মহান আল্লাহ্ মানুষের মতো রক্ত মাংসের দেহধারী নন, তিনি নুরের। এই মহাসত্যটি পবিত্র কুরআন ও হাদিসের অকাট্য দলিল দিয়ে যিনি প্রমাণ করেছেন, তিনি হলেন মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। এটিই তাঁর শতাধিক সংস্কারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কার। তিনি তাঁর মহান মোর্শেদের দরবারে সাধনারত থাকা অবস্থায় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর জীবনে সংঘটিত হওয়া বহুল ঘটনাপঞ্জির মধ্য থেকে আমার দেখা, শোনা এবং জানা ঘটনাগুলো থেকে নিম্নের ঘটনা উপস্থাপন করা হলো]।
মুন্সীগঞ্জের মাহ্ফিলে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল
মহান আল্লাহর নির্দেশে সৃষ্টিজগত পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে আল্লাহ্র বন্ধুগণকে আল্লাহ্ তায়ালা এতই সম্মানিত ও মর্যাদাশীল করেছেন যে, তাঁরা ইচ্ছা করলে যে কোনো সৃষ্টির প্রতি কোনো নির্দেশ দিলে, তারা তা মেনে নিতে বাধ্য হয়। নবি-রাসুলগণের জামানায় যেমন তাঁদের কথা সকল সৃষ্টি মেনে চলেছে, তেমনি বর্তমান এই বেলায়েত বা বন্ধুত্বের যুগেও অলী-আল্লাহ্গণের কথা আল্লাহর সৃষ্টি মাখলুকাত শুনে থাকে। তদ্রুপ প্রকৃতিও তাদের নির্দেশ পালনে বদ্ধপরিকর থাকে। এর বহু নিদর্শন পবিত্র কুরআন, হাদিস ও আওলিয়ায়ে কেরামের জীবনী থেকে জানা যায়।
আল্লাহ্র মহান বন্ধু, যুগের ইমাম, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের জীবনে অসংখ্য অলৌকিক কারামত সংঘটিত হয়েছে। প্রকৃতিও যে আল্লাহর বন্ধুর কথা শোনে, তারই বাস্তব উদাহরণ নিম্নলিখিত ঘটনাটি।
১৯৮০ সালের কথা, সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান তখন তাঁর মোর্শেদের দরবার ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়ায় থাকতেন। স্বীয় মোর্শেদের পরিচয় তুলে ধরার জন্য দেশের প্রায় সর্বত্রই তিনি ওয়াজ মাহ্ফিল করছেন। সেই বছর গ্রীষ্মকালে ঢাকার অদূরে, বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মাহ্ফিলে যান। চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফের তৎকালীন ম্যানেজার মরহুম বদরুজ্জামান সাহেবও ঐ মাহ্ফিলে সূফী সম্রাটের সফরসঙ্গী ছিলেন। কেননা, অনুষ্ঠানটি তার এলাকাতেই ছিল। উক্ত মাহ্ফিলে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে লোক এসে গোটা মাহ্ফিলের বিশাল প্যান্ডেল ভরে গেল। উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বাংলাদেশের যেখানেই ওয়াজ মাহ্ফিল করতে যেতেন, সেখানেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যেত। তাঁর নাম ও পরিচয় শুনলে দেশের ধনী-গরিবসহ সর্বস্তরের মানুষ যেন বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত ছুটে আসতেন, এই মহামানবের জবান মোবারক থেকে নিঃসৃত বাণী শোনার জন্য। বিকাল থেকে শ্রীনগরের ঐ ওয়াজ মাহ্ফিলে আলেম ওলামাগণ ওয়াজ নসিহত করতে লাগলেন। রাত প্রায় ৮টার দিকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান মঞ্চে তশরিফ গ্রহণ করলেন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উপস্থিত জনতা স্লোগান দিতে থাকে। অতঃপর প্রধান অতিথি সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ওয়াজ করতে শুরু করেন। কিছু সময় ওয়াজ করার পরে তিনি লক্ষ্য করলেন যে, মানুষ উঠে যাচ্ছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান যেখানেই ওয়াজ মাহ্ফিলে যেতেন, সেখানে দলে দলে মানুষ এসে উপস্থিত হতো। ওয়াজ চলাকালীন অবস্থায় মানুষ উঠে যাওয়াতো দূরের কথা, বরং যতদূর মাইকের আওয়াজ যেত, ততদূর থেকে লোকজন মাহ্ফিলে ছুটে আসতো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান একবার রংপুরের মাহীগঞ্জে ওয়াজ করতে গেলেন। যেখানে মাহ্ফিলের প্যান্ডেল তৈরি করা হলো- তার কিছুটা দূরেই যাত্রাগানের বিরাট আয়োজন করা হয়েছিল। মানুষ দলে দলে যাত্রাগানে উপস্থিত হলো। এরই মধ্যে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ওয়াজ মাহ্ফিলে উপস্থিত হলেন এবং ওয়াজ শুরু করলেন। তাঁর মধুমাখা ওয়াজ শুনে চারদিক থেকে মানুষ পাখির ঝাঁকের ন্যায় ছুটে আসতে থাকে। আল্লাহর কী মহিমা, যারা যাত্রাগাণ শুনতে প্যান্ডেলে ঢুকেছিল, তারাও সূফী সম্রাটের ফায়েজপূর্ণ ওয়াজ শুনে যাত্রা প্যান্ডেল ছেড়ে পাগলের মতো ওয়াজ মাহ্ফিলে উপস্থিত হতে লাগলো। তাদের হাতে ও পকেটে তখনো যাত্রাগানের টিকেট মওজুদ ছিল। সূফী সম্রাটের বরকতপূর্ণ ওয়াজ শুনে ও মুনাজাতে অংশগ্রহণ করে তারা আত্মহারা হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, সেদিন যাত্রাগানের প্যান্ডেল একেবারেই খালি হয়ে গেল। অপরদিকে সূফী সম্রাটের মাহ্ফিল ছিল লোকে লোকারণ্য। এমন আযব ঘটনা ইতিঃপূর্বে আর কেউ দেখেছে বলে জানা নেই। এদিকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের মাহ্ফিলে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ওয়াজ করছেন, অথচ দেখা গেল লোক উঠে যাচ্ছে, যা সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের মাহ্ফিলে কখনো ঘটেনি। এটা দেখে তিনি কিছুটা অবাক হলেন। তিনি লোকদের কাছে জিজ্ঞেস করলেন- কী ব্যাপার! আপনারা মাহ্ফিল থেকে উঠে যাচ্ছেন কেন? লোকজন জবাব দিল- হুজুর! প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমরা বসে থাকতে পারছি না, তাই উঠে যাচ্ছি। একথা শুনে আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান লোকদেরকে ধমক দিয়ে বললেন- বসেন আপনারা! আমি ওয়াজ করতে এসেছি, অন্য কোনো কাজে নয়। বৃষ্টি হবে কেন? তিনি যখন শ্রোতাদেরকে একথা বলে জোরে ধমক দিলেন- আল্লাহ্র কী মহিমা! সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল। লোকজন বসে অনেক রাত পর্যন্ত আল্লাহর এই মহান অলী সূফী সম্রাটের মূল্যবান ওয়াজ শুনলো। মোনাজাতের সময় তারা দারূণভাবে কান্নাকাটি করল। এমনকী অনেকে জজবার কারণে মাটিতে গড়াগড়ি পর্যন্ত খেয়েছে। মাহ্ফিল শেষে বহু লোক তরিকা গ্রহণ করে সূফী সম্রাটের ভক্তে পরিণত হয়।
সূফী সম্রাটকে হত্যার উদ্দেশ্যে সূর্যবান নিক্ষেপ
মহান আল্লাহ্ এই জগতে ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে মানুষের কাছে এক আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছেন। কিন্তু আল্লাহ্র একত্ববাদের পরিচয় দিতে গিয়ে নবি-রাসুলদেরকে অত্যাচারী ও খোদাদ্রোহীদের কবলে পতিত হতে হয়েছে। এমনকি বহু নবিকে অত্যাচারী কাফেরেরা হত্যা পর্যন্ত করেছে। আবার অনেককে নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করেছে। কোনো কোনো রাসুলকে বিষ প্রয়োগও করেছে। কাউকে জাদু টোনা করেছে। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মোহাম্মদ (সা.), যিনি আল্লাহ্র সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু এবং সকল নবি-রাসুলদের ইমাম ছিলেন, সেই সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবকে পর্যন্ত এক ইহুদি নারী নিজের চুলে গিট দিয়ে জাদু করেছিল। হযরত রাসুল (সা.) তাতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। মহান আল্লাহ্ তাঁর বন্ধুর এই অবস্থা দেখে তাঁকে পবিত্র কুরআনের সুরা ফালাক পাঠ করতে নির্দেশ দিলেন। হযরত রাসুল (সা.) যখন এই সুরা পাঠ করলেন সঙ্গে সঙ্গে অলৌকিকভাবে ঐ নারীর চুলের গিট খুলে গেল। আল্লাহ্র বন্ধু হযরত রাসুল (সা.) সুস্থ হয়ে গেলেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের প্রায় দেড় হাজার বছর পরে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসুরি, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের উপরেও জাদু, টোনা ও বাণ নিক্ষেপ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল একটিই, তাঁকে হত্যা করা। প্রবাদ আছে, রাখে আল্লাহ্ মারে কে? সূফী সম্রাটের জীবনেও তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে। ১৯৮৩ সালের ঘটনা। আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর মহান মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর নির্দেশক্রমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ওয়াজ মাহ্ফিল করে মানুষকে তরিকার সবক দিতেন। সেই কারণেই ঢাকার কমলাপুরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান ওয়াজ মাহ্ফিলে যোগদান করেন। কমলাপুর এলাকায় শাহজাহান নামে একজন জাদুকর ছিল। সে জাদুর দ্বারা বাণ টোনা নিক্ষেপ করে মানুষকে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করত না। কাজেও দেখা গেল তাই। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান যখন কমলাপুরে (রেলস্টেশনের নিকটে) মাহ্ফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত হলেন, এমন সময় ঐ জাদুকর সূফী সম্রাটকে হত্যা করার কুমতলব নিয়ে তাঁর উপর মারাত্মক বিপদজনক ‘সূর্যবাণ’ নিক্ষেপ করে। সূর্যবাণ এমনই মারাত্মক ছিল যে, কারো উপর এই বাণ নিক্ষেপ করলে, তার মৃত্যু অনিবার্য ছিল। কিন্তু আল্লাহর কী অপার দয়া, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান যথারীতি মাহ্ফিলে ওয়াজ করে চলেছেন। এই মারাত্মক বাণে তাঁর সামান্যতম ক্ষতি হয়নি। ওয়াজ শেষে বহু মানুষ তরিকা গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, ঐ জাদুকর এই ভেবে সূর্যবাণ নিক্ষেপ করেছিল যে, সূফী সম্রাট হুজুর অন্যান্য আলেমদের মতই একজন সাধারণ মানুষ। তিনি যদি অলী-আল্লাহ্ হন, তাহলে এই মারাত্মক সূর্যবানে তাঁর কোনো ক্ষতি হবে না। আর যদি কোনো সাধারণ আলেম হন, তাহলে তিনি রক্ষা পাবেন না। সূফী সম্রাট সত্যিকার অলী-আল্লাহ্ কিনা, সেটা পরীক্ষা করার জন্যই জাদুকর ঐ মারাত্মক বিপদজনক সূর্যবাণটি নিক্ষেপ করেছিল। কিন্তু এর পরেও আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় রইলেন। তাঁর বিন্দুমাত্রও কোনো ক্ষতি ঐ জাদুকর করতে পারেনি। এতে ঐ জাদুকরের আর বুঝতে বাকী রইলো না যে, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান সাধারণ কোনো মানুষ নন, তিনি মহান আল্লাহর প্রিয় বন্ধু এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর সুযোগ্য উত্তরসুরি একজন মোকাম্মেল অলী-আল্লাহ্।
এই ঘটনার পরে ঐ জাদুকর নিজের ভুল বুঝতে পেরে একদিন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের দরবারে এসে ক্ষমা চেয়ে তরিকা গ্রহণ করে। আল্লাহর কী বিচার, এর বেশ কিছুদিন পরে ঐ জাদুকরকে পুরনো ঢাকার কিছু সংখ্যক দুর্বৃত্ত আটক করে এবং হত্যা করার চেষ্টা চালায়। এই চরম বিপদের সময় জাদুকর আল্লাহর অলীর কথা স্মরণ করলে মহান আল্লাহ্ তাকে সূফী সম্রাটের অসিলায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন। ঐ কঠিন অবস্থায় সেখানে সূফী সম্রাটের মুরিদ সন্তান কমলাপুরের জনাব জালাল উদ্দীন মিস্ত্রী আকস্মিকভাবে উপস্থিত হন। তিনি ঐ জাদুকরকে তাদের হাতে আটক দেখে বলতে থাকেন, আরে এ ব্যক্তিতো দেওয়ানবাগী হুজুরের মুরিদ। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের নাম শুনে ঐ দুর্বৃত্তদের মনে ভয়ের সঞ্চার হলো। মুহূর্তের মধ্যেই তাদের ভিতরে কেমন এক পরিবর্তন এসে যায়। তারা বলতে লাগলো- আমরাতো নানাবিধ পাপকর্ম করে থাকি। কিন্তু সূফী সম্রাটের মতো এক মহান অলী-আল্লাহর একজন ভক্তের ক্ষতি করলে আল্লাহ্ আমাদের ছাড়বে না। আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। একথা বলেই তারা ঐ যাদুকর ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়। আহত অবস্থায় ঐ জাদুকর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের দরবারে এসে তাঁর কদম মোবারক জড়িয়ে ধরে কান্না বিজরিত কণ্ঠে তাঁকে সব ঘটনা জানায়। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান তার এই বিপদ দূর করে দেওয়ার জন্য সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। এই ঘটনা বলার সময় আমি সূফী সম্রাটের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন মনে মনে ভাবলাম, হায়রে! যে ব্যক্তি আল্লাহর অলী সূফী সম্রাটকে হত্যা করার জন্য মারাত্মক সূর্যবাণ নিক্ষেপ করেছিল, পরবর্তীতে সূফী সম্রাটের অসিলায়ই সে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেল। আর এভাবেই আল্লাহ্ তাঁর বন্ধুগণের ইজ্জতের খাতিরে পাপী ও অপরাধী ব্যক্তিদের রক্ষা করে থাকেন।
আসলে অলী-আল্লাহ্গণ মানুষের ক্ষতির জন্য নয়, মানুষের বিপদ-আপদ দূর করে কল্যাণ দান করার জন্যই জগতে আগমন করে থাকেন। তাঁরা নিজেদের সুখ শান্তির কথা ভাবেন না। বরং মানুষ কী করে বিভিন্ন বালা মুসিবত থেকে রক্ষা পেয়ে আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি প্রেম হাসিল করে, ইহকালে শান্তি এবং পরকালে মুক্তি লাভ করতে পারবে, সেই ব্যবস্থা করে থাকেন। আল্লাহর মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানও অত্যন্ত মানবদরদী। তাই তাঁর সান্নিধ্যে এসে বহু বিপদগ্রস্ত মানুষ নানান বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাঁর শিক্ষানুযায়ী তরিকার আমল করলে মানুষ মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর দীদার লাভ করতেও সক্ষম হয়।
পবিত্র হজ সম্পর্কিত রহস্যপূর্ণ তথ্য প্রদান
ইসলামের পাঁচটি মূলনীতির মধ্যে হজ অন্যতম। ধনীদের জন্য এই হজ ফরজ করা হয়েছে। বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.) জীবনে মাত্র একবার হজ করেছেন। তখন আরাফাতের মাঠে লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এই হজের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৮৩ সালের কথা। আমি চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে গমন করি। মাত্র কয়েকদিন আগে হজ শেষ হয়েছে। প্রতিবছর হজ করার জন্য ২০ লক্ষাধিক লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মক্কায় গমন করে থাকেন। বাংলাদেশ থেকেও লক্ষাধিক মানুষ প্রতিবছর হজব্রত পালন করেন। এতো বিপুল সংখ্যক লোক হজ করলেও খুব কম সংখ্যক লোকের হজ কবুল হয়ে থাকে। আবার হজ করতে যাবার ইচ্ছা পোষণ করে শেষ পর্যন্ত যেতে না পারা সত্ত্বেও ইয়ামেনের আবদুল্লাহ্ ইবনে মুয়াফিক নামক জনৈক মুচির হজ কবুল হওয়ার ঘটনাও ইতিহাসে প্রমাণ রয়েছে। উল্লেখ্য যে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মুয়াফিক হজে যাওয়ার জন্য যে টাকা জমিয়ে ছিলেন, তা অভুক্ত ও অসহায় প্রতিবেশিকে দান করে দেওয়ার কারণে তিনি হজে যেতে পারেননি, অথচ মহান আল্লাহ্ হজে না যাওয়া সত্ত্বেও তার হজ কবুল করেছেন। আসলে হজই শুধু নয়, সকল ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে নেক ও খালেছ নিয়ত। কেননা, নিয়ত শুব্ধ না হলে কোনো ইবাদতই আল্লাহ্র দরবারে কবুল হয় না। হজের কয়েক দিন পরে আমি চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর সহবতে গমন করি। এক পর্যায়ে চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফের জামে মসজিদের পাশে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আগমন করলেন। তিনি আমাকে দেখেই ডাক দিলেন এবং বললেন- মান্নান সাহেব! এই বছর যে হজের অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে, আল্লাহ্ তা দয়া করে আমাকে দেখিয়েছেন। কতজন লোকের হজ কবুল হয়েছে, আর তারা কোন কোন দেশের অধিবাসী, আল্লাহ্ দয়া করে তাও আমাকে অবহিত করেছেন। এক পর্যায়ে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বললেন- আমি হজের পরে রাতে রহমতের সময় মোরাকাবা অবস্থায় হাজীদের “লাব্বায়েক আল্লাহুমা লাব্বায়েক” ধ্বনি শুনতে পাই। হাজীরা কিভাবে কাবা শরিফ তাওয়াফ করেছেন তাও দেখতে পেয়েছি। হজ কবুলের জন্য কীভাবে সুপারিশ পেশ করা হয়, হাজীদের হজের খতিয়ান কীভাবে অলী-আল্লাহ্দের বাদশাহর মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়; মহান আল্লাহ্ দয়া করে আমাকে তাও দেখিয়েছেন। একথা শুনে আমি সত্যিই অবাক হয়ে যাই। কারণ, ইতিপূর্বে এমন কথা আর কারো কাছে শুনিনি। আর শুনবোই বা কী করে! এই রহস্যপূর্ণ তথ্য জানার মতো অলী-আল্লাহ্ জগতে ক’জনই বা আছেন? অতঃপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বললেন- লক্ষ লক্ষ মানুষ হজ করতে যায় বটে, কিন্তু সবার হজ কবুল হয় না। যারা খালেছ নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করেন, কেবল তাদের হজই আল্লাহ্ কবুল করে থাকেন। সূফী সম্রাট হুজুরকেবলাজান আরো বললেন- এবছর এমন কয়েকজন লোকের হজ আল্লাহ্ কবুল করেছেন, যারা মানব সেবায় নিয়োজিত। আর মানব সেবাই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়। মহান আল্লাহ্ তাদের মানব সেবামূলক কর্মের জন্য খুশি হয়ে তাদের হজ কবুল করেছেন। এভাবে পবিত্র হজ সম্পর্কে আধ্যাত্মিক জগতের আরো কিছু তথ্য সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বর্ণনা করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর সৃষ্টি জগতের কোথায় কী ঘটে চলেছে, মহান আল্লাহ্ তাঁর অলী বন্ধুগণকে তা অবহিত করে থাকেন। সূফী সম্রাটের দেখা ঘটনাটি তারই বাস্তব প্রমাণ। (চলবে)
[লেখক : ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, মগবাজার, ঢাকা]
4 Comments
আল্লাহ্র মহান বন্ধু, যুগের ইমাম, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের জীবনে অসংখ্য অলৌকিক কারামত সংঘটিত হয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ্
আলহামদুলিল্লাহ্
খুবই ভাল লাগল। ধন্যবাদ