আল্লাহ্ প্রাপ্তির সাধনায় ক্বালবের গুরুত্ব
এ. আর. এম. মুহিউদ্দীন খান ফারুকী
পর্ব-৩
ক্বালব প্রসঙ্গে ৩য় আয়াত :
মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন-
(আরবি)
অর্থাৎ- “এরপরও তোমাদের ক্বালব বা অন্তর কঠিন হয়ে গেল, তা পাথরের মতো অথবা তার চেয়েও কঠিন। আর কতক পাথর তো এমনও আছে যে, তা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয় এবং কতক এমন আছে যে, তা বিদীর্ণ হয় ও পরে তা থেকে পানি নির্গত হয়, আবার কতক এরূপ আছে, যা আল্লাহ্র ভয়ে খসে পড়ে। তোমরা যা করো সেই সম্পর্কে আল্লাহ্ অনবহিত নন।” (সূরা আল বাকারাহ ২ : আয়াত ৭৪)
আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.)-এর উম্মত বনি ইসরাঈল জাতির পাষাণ হৃদয়ের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। তাদের ক্বালব বা হৃদয় এত কঠিন হয়েছিল যে, তা পাথরের চেয়েও শক্ত ও কঠিন হয়ে পড়েছিল। যে কারণে তারা হযরত মুসা (আ.)-এর মাধ্যমে সংঘটিত দ্বিপ্রহরের সূর্যের মতো সুস্পষ্ট মুজিজা প্রত্যক্ষ করার পরেও তাদের ক্বালব কোমল না হয়ে কঠোরতর হলো। একইভাবে তাদের ক্বালব সত্যের জন্য উন্মুখ না হয়ে সত্য বিমুখ হলো। তারা আল্লাহ্র অনুগত হওয়ার বদলে অবাধ্য হলো। আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহ্ বনি ইসরাইল জাতির উক্ত অবাধ্যতা, ঔদ্ধত্য ও হৃদয়হীনতার দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। অর্থাৎ হে বনি ইসরাঈল! মহান আল্লাহ্র নিদর্শনাবলি, যা মুসা (আ.)-এর মাধ্যমে অলৌকিক মুজিজারূপে সংঘটিত হয়েছে, তা প্রত্যক্ষ করা সত্ত্বেও তোমরা পাথরের মতো, এমনকি এটি হতেও কঠিন ও অনুভূতিহীন হয়ে গেলে। এ প্রসঙ্গে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৭৮ ও ১৭৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে- “বর্ণিত আছে, বনি ইসরাঈলের মধ্যে আমীল নামক জনৈক ধনাঢ্য বক্তি ছিল। একমাত্র চাচাত ভাই ছাড়া তার কোনো ওয়ারিশ ছিল না। তবে চাচাত ভাইটি ছিল দরিদ্র। সে যখন লক্ষ্য করল যে, সে ছাড়া আমীলের অঢেল সম্পদের উত্তরাধিকারী আর কেউ নেই, সে অপেক্ষা করতে লাগল যে, কখন আমীলের মৃত্যু হবে, আর সে উত্তরাধিকারী সূত্রে আমীলের অঢেল সম্পদের মালিকানা লাভ করবে। এদিকে আমীলের মৃত্যু বিলম্বিত হওয়ায় সে অধৈর্য হয়ে আমীলকে হত্যা করে ফেলে। অতঃপর রাতের আঁধারে লোক চক্ষুর অন্তরালে সুযোগ বুঝে সে লাশটি অন্য এক গ্রামে ফেলে দেয় এবং পরদিন নিজেই আমীলের সন্ধানে বের হয়। কয়েক ব্যক্তির উপর সে খুনের অভিযোগও দায়ের করে। এদিকে হযরত মুসা (আ.) তাদের ডেকে জিজ্ঞেস করলে, তারা খুনের অভিযোগ অস্বীকার করল। এর ফলে বিষয়টি হযরত মুসা (আ.)-এর কাছে জটিল মনে হলো। একের পর এক বিষয়টি বনি ইসরাঈলের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। তারা প্রকৃত খুনীর সন্ধান লাভের জন্য হযরত মুসা (আ.)-এর শরণাপন্ন হয় এবং আরজ করে- হে মুসা (আ.)! আপনি আপনার প্রতিপালক আল্লাহ্কে বলুন, তিনি যেন আমাদের প্রকৃত খুনীর সন্ধান দেন। অতঃপর মৃতকে জীবিতকারী মহান আল্লাহ্ হযরত মুসা (আ.)-কে জানিয়ে দিলেন, আপনি তাদের বলুন, তারা যেন আল্লাহ্র নামে একটি গাভী যবেহ করে, অতঃপর যবেহকৃত গাভীর যে কোনো একটি অংশ দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে আঘাত করে। তবে মৃত ব্যক্তি জীবিত হবে এবং কে তাকে হত্যা করেছে, তা বলে দেবে। হযরত মুসা (আ.) বিষয়টি স্বীয় সম্প্রদায়কে জানিয়ে দিলেন। এদিকে বনি ইসরাঈল মুসা (আ.)-এর নির্শেদ মতো যে কোনো একটি গাভী যবেহ করলেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে পারত, কিন্তু তারা আল্লাহ্র নবিকে বারবার বিরক্ত করেছিল এবং একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছিল যে, গাভীটি কোন বয়সের হবে? সেটির রং কি হবে, শারীরিক গঠন কি হবে, ইত্যাদি। বিষয়টি মহান আল্লাহ্ তাঁর পবিত্র জবানেই সুস্পষ্ট করেছেন। এরশাদ হচ্ছে- “হে রাসুল (সা.)! স্মরণ করুন, যখন মুসা (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, আল্লাহ্ তোমাদের একটি গাভী যবেহ করতে আদেশ দিয়েছেন। তখন তারা বলেছিল, আপনি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছেন? মুসা (আ.) বললেন- আমি আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করছি, মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে। তারা বললো, আপনিও প্রার্থনা করুন আমাদের জন্য আপনার পালনকর্তার কাছে, তিনি যেন সেটি কি, তা স্পষ্টভাবে আমাদের জানিয়ে দেন। মুসা (আ.) বললেন- আল্লাহ্ বলেছেন, সেটি হবে এমন গাভী, যা বৃদ্ধও নয়, আর অল্প বয়স্কও নয়, এ দু’য়ের মধ্যবয়সী। সুতরাং যা আদিষ্ট হয়েছে, তা করো। তারপরও তারা বললো-আপনি প্রার্থনা করুন আমাদের জন্য আপনার পালনকর্তার কাছে, তিনি যেন আমাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, সেটির রং কিরূপ হবে? মুসা (আ.) বললেন, আল্লাহ্ বলেছেন- সেটি হবে হলুদ বর্ণের গাভী, যা দর্শকদের মুগ্ধ করবে। তারা আবার বললো, আপনি প্রার্থনা করুন আমাদের জন্য আপনার পালনকর্তার কাছে, তিনি যেন আমাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, সেটি কি? কেননা গাভীটি সম্পর্কে আমরা সন্দেহে পতিত হয়েছি। আর আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে, নিশ্চয় আমরা পথপ্রাপ্ত হবো। মুসা (আ.) বললেন, আল্লাহ্ বলেছেন- এটি এমন গাভী, যা জমি চাষে এবং ক্ষেতে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়নি, এটি সুস্থ ও নিখুঁত। তারা বললো, এবার আপনি সঠিক তথ্য এনেছেন। তারপর তারা সেটি যবেহ করলো, যদিও তারা যবেহ করবে বলে মনে হচ্ছিল না। স্মরণ করো, যখন তোমরা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে এবং পরে সে বিষয়ে একে অপরকে দোষারোপ করেছিলে; যা তোমরা গোপন করছিলে, তা প্রকাশ করে দেওয়া ছিল আল্লাহ্র ইচ্ছা। তারপর আমি বললাম- মৃতকে আঘাত করো গাভীর কোনো একটি খণ্ড দিয়ে। এভাবে আল্লাহ্ মৃতকে জীবিত করেন এবং তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের দেখিয়ে থাকেন, যেন তোমরা বুঝতে পারো।” (সূরা আল বাকারাহ ২ : আয়াত ৬৭ থেকে ৭৩)
এ প্রসঙ্গে হযরত আবুল আলিয়া (রহ.) বলেন-
(আরবি)
অর্থাৎ- “হযরত মুসা (আ.) গাভীটির একখানা হাড় নিয়ে তাদেরকে মৃত ব্যক্তির দেহে আঘাত করতে লাগলেন, তারা তাই করল। সঙ্গে সঙ্গে মৃত ব্যক্তির দেহে তার রূহ প্রবেশ করে (এবং সে জীবিত হয়ে উঠে বসে পড়ে)। অতঃপর সে তাদের নিকট তার হত্যাকারীর নাম বলে দিয়ে পুনরায় শুয়ে মৃত্যুবরণ করে।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬৫)
মহান আল্লাহ্ বলেন-
(আরবি)
অর্থাৎ- “এভাবে আল্লাহ্ মৃতকে জীবিত করেন এবং তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদের দেখিয়ে থাকেন, যেন তোমরা বুঝতে পারো।” (সূরা বাকারাহ ২: আয়াত ৭৩)
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে আওফী স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে বর্ণনা করেন- “জবাই করা গাভীর একটি অংশ নিয়ে লাশে আঘাত করা মাত্র লোকটি অতীত জীবনের চেয়েও অধিকতর প্রাণ চাঞ্চল্য হয়ে পুনর্জীবিত হলো। তাকে প্রশ্ন করা হলো- কে তোমাকে হত্যা করেছে? সে জবাবে বলল- আমার ভাতিজারা আমাকে হত্যা করেছে। অতঃপর সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। (এরূপ সুস্পষ্ট মুজিজা প্রত্যক্ষ করেও) তার ভাতিজারা বলল- আল্লাহ্র কসম! আমরা তাকে হত্যা করিনি। এভাবেই তারা সত্যকে প্রত্যক্ষ করেও এটি অস্বীকার করল। আলোচ্য আয়াতে তাদের উক্ত ঔদ্ধত্য ও সত্য বিমুখতার কথা বলা হয়েছে।” (তাফসীরে ইবনে কাছির ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৬৬)
অর্থাৎ- হে বনী ইসরাঈল! তোমাদের ক্বালব বা হৃদয় এতই কঠোর সত্য বিমুখ ও অনুভূতিশূন্য যে, এমন অনেক পাথর রয়েছে, যা তোমাদের ক্বালব বা হৃদয় অপেক্ষা অধিকতর নম্র ও অনুভূতিশীল। কিছু পাথর এমন আছে যে, এটি থেকে সুকোমল ঝরনাধারা উৎসারিত হয়। কিন্তু তাদের ক্বালব বা অন্তর থেকে কোনোরূপ কোমলতাই প্রকাশ পায় না যে, তাদের চক্ষুসমূহ অশ্রুবিগলিত হবে। এমনিভাবে আল্লাহ্র ভয় তাদের ক্বালব বা হৃদয়কে আদ্র করে সত্য গ্রহণের উপযোগী করতে সমর্থ হয় না। আবার এমন অনেক পাথর আছে, যেটি বিদীর্ণ হলে তা থেকে সুকোমল পানি নির্গত হয়। কিন্তু তাদের ক্বালব বা হৃদয় বিদীর্ণ করেও এটাতে আল্লাহ্র প্রেমের কোনো প্রেমাজল পাওয়া যাবে না, যাতে সত্য শিকড় ছড়াতে পারে। এমনিভাবে কিছু পাথর এমন আছে, যা আল্লাহ্র ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে পাহাড়ের শৃঙ্গ থেকে স্খলিত হয়ে নিম্নে পতিত হয়। কিন্তু ঐ সকল বনি ইসরাঈলের পাষাণ হৃদয় আল্লাহ্র ভয়ে বিন্দুমাত্র প্রকম্পিত হয় না। ফলে এ ক্বালব বা হৃদয় পাথর থেকেও কঠিন।
এজন্য মহান রাব্বুল আলামিন মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী উম্মতে মোহাম্মদিকে এ মর্মে সতর্ক করেছেন যে, তারা যেন বনি ইসরাঈলের মতো কঠিন ক্বালব বা হৃদয়ের অধিকারী না হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন- “যারা ইমান এনেছে, তাদের জন্য কি আল্লাহ্র স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে, এর কারণে ক্বালব বা হৃদয় ভক্তি-বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? আর তারা যেন পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তাদের মতো না হয়। তাদের উপর দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে পড়েছিল। আর তাদের অধিকাংশই ছিল পাপাচারী।” (সূরা আল হাদীদ ৫৭ : আয়াত ১৬)
এজন্য আমাদের মহান মোর্শেদ, মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান ধর্ম ও কর্ম সম্পাদনে ক্বালবের প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি মুক্তিকামী মানুষের ক্বালবে ‘আল্লাহ্’ শব্দের নুর বপন করে দিয়ে আত্মশুদ্ধি ও দিলজিন্দা করার শিক্ষা দেন। হঠাৎ নদীতে জোয়ার আসলে উক্ত জোয়ারের প্রভাবে খাল-বিল, পুকুর, ডোবা-নালা যেভাবে ভরপুর হয়ে যায়, তেমনি ক্বালবে বা হৃদয়ে আল্লাহ্র প্রেমের জোয়ার সৃষ্টি হলে গোটা মানবদেহে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। মূলে ক্বালব বা হৃদয়ে যেমন ইমান থাকে, তেমনি এটিই ইমানের কেন্দ্রবিন্দু।
ক্বালব প্রসঙ্গে ৪র্থ আয়াত
মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন-
(আরবি)
অর্থাৎ “তারা বলেছিল- আমাদের ক্বালব বা হৃদয় আচ্ছাদিত; বরং সত্য প্রত্যাখানের দরূন আল্লাহ্ তাদের অভিসম্পাত করেছেন। ফলে তাদের খুব কম সংখ্যাই ইমান আনে।” (সূরা আল বাকারাহ : ২ আয়াত ৮৮)
আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহ্ ইহুদি জাতির সত্য বিমুখতার মানসিকতা উল্লেখ করেছেন। ইহুদি জাতি তাদের নবি হযরত মুসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ তাওরাত কিতাবের কল্যাণে পূর্বেই অবগত হয়েছিল যে, কুল-কায়েনাতের রহমত হযরত মোহাম্মদ (সা.) হবেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল এবং তাঁর ক্বালবে অবতীর্ণ আল কুরআন হবে সর্বশ্রেষ্ঠ ওহির কিতাব। এমনিভাবে উম্মতে মোহাম্মদী হবে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। এ বিষয়গুলো অবগত হয়ে আহলে কিতাবের ইহুদি জাতি পূর্ব থেকেই মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ঈর্ষা পোষণ করে আসছিল। এজন্য রাসুল (সা.)-এর আত্মপ্রকাশ হলে- দাম্ভিক ও অবাধ্য ইহুদি সম্প্রদায় নবির আহ্বানের জবাবে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে বলতো- আমরা এসব বুঝি না। সুতরাং এটা গ্রহণ করতে পারব না। জবাবে মহান আল্লাহ্ বলেন- আমার শ্রেষ্ঠ রাসুলের বক্তব্য তাদের জন্য দুর্বোধ্য নয়। বরং তারা সত্যকে প্রত্যাখান করেছে, মোহাম্মদ (সা.)-এর সত্যতা জানা সত্ত্বেও তারা তা গোপন করেছে। মূলে এদের অবাধ্যতার দরূন মহান আল্লাহ্ তাদের অভিসম্পাত করেছেন। আসলে স্বেচ্ছাচারিতা ও সত্যকে ঢাকা দেওয়ার নিকৃষ্ট মানসিকতার কারণেই অধিকাংশ ইহুদি প্রকৃত সত্যকে ক্বালব বা হৃদয় দ্বারা উপলব্ধি করতে পারছে না। ফলে তারা খুব কমই বিশ্বাস করে। প্রকৃত সত্য এই যে, নফস বা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণের ফলে আত্মপূজার প্রবল চেতনা তাদের চিন্তাধারা ও হদয়কে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। এমনিভাবে তারা সত্য ও বাস্তবতাকে পার্থিব বা বৈষয়িক দৃষ্টি দিয়ে দেখলে শুধু বাহ্যিক দিকই দেখতে পায়। আর এজন্যই তাদের ক্বালব বা হৃদয় ঐশী জ্ঞান গ্রহণ করার পরিবর্তে অগ্রাহ্য করছে।
সুতরাং ওহির বাণী আল কুরআনের সূরা আল বাকারাহ্র ৮৮নং আয়াতের বিষয়বস্তুতে ক্বালবের গুরুত্ব অপরিসীম, সত্য গ্রহণ করার দরজা এ ক্বালব। কারো কুকর্মের কারণে আল্লাহ্ যদি অসন্তুষ্টি হয়ে ক্বালব বা হৃদয়কে তালাবদ্ধ করে দেন, মোহরাঙ্কিত বা আচ্ছাদিত করে দেন, তবে কারো পক্ষেই ইমানদার হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহ্র নবি (সা.) এরশাদ করেন-
(আরবি)
অর্থাৎ- “ইসলাম হলো ধর্মের প্রকাশ্য বিষয়, আর ইমানের অবস্থান ক্বালবের ভেতর। অতঃপর আল্লাহ্র নবি (সা.) স্বীয় হস্ত মোবারকের দ্বারা আপন ক্বালবের দিকে পরপর তিনবার ইশারা করলেন এবং বললেন- তাকওয়া (খোদাভীতি) এখানে, তাকওয়া এখানে।” (মুসনাদে আহমদের উদ্বৃত্তিতে তাফসিরে দুররে মানছুর- ২৬তম খণ্ড,পৃষ্ঠা ৫৮৩) হাদিস শরীফের এ বাণীতে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, এরূপ মানুষকে ইমানদার হতে হলে একইভাবে আল্লাহ্ প্রাপ্তির পথের এরূপ একজন সাধকের যাবতীয় আধ্যাত্মিক উন্নতির সোপান তার ক্বালব কেন্দ্র করেই আবর্তিত।
এজন্য আমাদের মহান মুর্শেদ, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান মুক্তিকামী মানুষের ক্বালবে ইমানের নুর প্রবিষ্ট করে দেন এবং অন্ধকার হৃদয়কে আলোকিত করার পথনির্দেশনা দিয়ে আদর্শ মু’মিন হওয়ার শিক্ষা দেন। সকল কালের সকল যুগের মানুষের উপর অপরিহার্য কর্তব্য- এ সুমহান শিক্ষা লাভ করে নিজেকে আদর্শ মুমিনরূপে গড়ে তোলা। আমিন।
(চলবে)
[লেখক: সদস্য আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্র, বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফ, ঢাকা।]
2 Comments
ক্বালব নিয়ে কুরআন-হাদিস থেকে খুবই সুন্দর আলোচনা৷ করেছেন।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা