সূফী সম্রাটের অনুসরণে আল্লাহর রহমত লাভ হয়
আশেকে রাসুল এস এ সুলতান
সৃষ্টিকুল মহান আল্লাহর রহমত লাভে সদা ব্যাকুল থাকে। সৃষ্টিজগত রহমত লাভে ব্যর্থ হলে জগতময় গজবে গ্রাস করে নেয়। আল্লাহর করুণা ও দয়া প্রকাশের মাধ্যম হলো রহমত। রহমত আসলে গজব দূর হয়ে যায়। রহমতের মাধ্যমে সৃষ্টিজগত আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে থাকে। যেমনিভাবে বিরান ভূমি আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির পানিতে সজীব হয়ে উঠে এবং বৃক্ষরাজি ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে যায়।
তেমনিভাবে প্রাণীকুলের মাঝেও আল্লাহর রহমতে প্রাণের স্পন্দন বয়ে আনে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “তিনিই (আল্লাহ্) বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন বৃষ্টির পূর্বে। এমনকি যখন তা ঘন মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে এক নির্জীব জনপদের দিকে চালনা করি, তারপর তা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি। তা দিয়ে সর্বপ্রকারের ফলমূল উত্তোলন করি, এরূপেই আমি মৃতদের জীবিত করে উঠাব, যাকে তোমরা অনুধাবন করো।” (সূরা আল আরাফ ৭: আয়াত ৫৭)
আমরা যে চোখ দিয়ে দেখি, কান দ্বারা শুনি, মুখ দ্বারা কথা বলি, পা দ্বারা চলাফেরা করি, মুখে খাবার খাই ও পান করি, সুস্থ থাকি, জীবিকা নির্বাহ করি, বিপদাপদ বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাই, তা সবই মহান করুণাময় আল্লাহর রহমতের কারণে হয়ে থাকে। আমরা যদি এক মুহূর্ত রহমত হতে বঞ্চিত হই, তবে আমাদের জীবনে বিপদের ঘন কালো মেঘ নেমে আসে। মানব ইতিহাসে বর্তমান এই ঘোর অমানিশাকালে সারা পৃথিবী যখন করোনা ভাইরাস নামক ভয়াল থাবায় পর্যুদস্ত, তখন মানুষ আল্লাহর দরবারে রহমত লাভের আশায় সর্বদা ফরিয়াদ জানায়।
মূলে অধিকাংশ মানুষ জানে না কীভাবে রহমত লাভ করতে হয়? মানুষ মনে করে ভালো মতো খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারলেই রহমত লাভ হয়ে যায়। কিন্তু রহমতের ব্যাপকতা আরও অনেক গভীরে। বিপদ যেমন ইহকালে আছে, তা পরকালেও থাকতে পারে, তাই যদি আমরা আমাদের ভালো চাই, তবে আমাদের শুধু ইহকাল নিয়ে চিন্তা করলে চলবে না পরকালের কথাও অতীব গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করতে হবে। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন, “আমি স্বল্পকালের জন্য তাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দেবো, তারপর তাদেরকে বাধ্য করব কঠিন শাস্তি ভোগ করতে।” (সূরা লোকমান ৩১: আয়াত ২৪)
তাই ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ লাভের জন্য আমাদের রহমত কি বুঝতে হবে এবং তা লাভের পদ্ধতি অন্বেষণ করতে হবে। শুধুমাত্র মস্তিষ্ক নির্ভর চিন্তা ভাবনার উপর আস্থাশীল হলে তা হবে আমাদের চরম বোকামি। আমাদের মাঝে অনেক মানুষ আছে যারা প্রচুর ধন সম্পদের অধিকারী কিন্তু তাদের মনে শান্তি নাই। সবসময় তাদের মনে পেরেশানি, অনিরাপত্তা বিরাজ করে। এই করোনা মহামারির মাঝে অধিকাংশ মানুষের মনে ভয় অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ সবই রহমতের অভাবে হয়ে থাকে। প্রকৃতভাবে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পেতে হলে মানুষকে সবসময় কাজে-কর্মে, আচার-ব্যবহার, কথাবার্তা, চালচলন, চিন্তা-ভাবনা, মন ও হৃদয়ে আল্লাহ্র রহমত লাভ করার মাধ্যমে পরম শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করতে হবে। সুতরাং আল্লাহ্র রহমতকে চিনা ও বুঝা এবং তা লাভের মাধ্যম অন্বেষণ করা মানুষের একান্ত কর্তব্য।
অতি প্রাচীনকাল হতে মানুষ রহমত ও গজবের সাথে পরিচিত। মানুষ যখনই বিপদাপদ, বালা-মুসিবত ও গজবে পতিত হতো তখনই তারা রহমতের আশায়, রহমত লাভের উপায় জানেন, এমন মহামানবের শরণাপন্ন হতো এবং রহমত লাভ করে গজব হতে পরিত্রাণ পেত। এ সকল মহামানব হলেন নবুয়তের যুগে নবি-রাসুল এবং বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্গণ। পৃথিবীর সকল ধর্মের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, যখনই মানুষ বিপদগ্রস্ত হতো তখনই তারা সমকালীন যুগের মহামানবের নিকট বিপদমুক্তির উপায় জানতে গমন করত। হযরত নূহ (আ.)-এর উম্মতগণ তাঁর অনুসরণে আল্লাহর রহমত লাভ করে মহাপ্লাবন নামক গজব হতে মুক্তি লাভ করেছেন। একই প্রকারে হযরত মুসা (আ.), হযরত ঈসা (আ.), হযরত লুত (আ.)-এর অনুসারীগণ আল্লাহর রহমত লাভ করে বিভিন্ন প্রকার গজব হতে নিষ্কৃতি পেয়েছেন। রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় তাঁর সাহাবিগণ হযরত রাসুল (সা.)-এর সহবত লাভ করে এবং নির্দেশ পালন করে বিভিন্ন প্রকার বালা-মুসিবত হতে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর রহমত লাভ করতেন। কারণ হযরত মোহাম্মদ (সা.) হলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন, “হে রাসুল! আমি তো আপনাকে জগতসমূহের প্রতি কেবল রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়া ২১: আয়াত ১০৭) অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন, “হে রাসুল! আপনি বলে দিন: যদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহ্কে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেবেন। আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩১)
উপরের আয়াত দুটো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাহ্মাতুল্লিল আলামিনের বরকতে গোনাহ মাফ হয় এবং বিপদাপদ, বালা-মুসিবত ও গজব দূরীভূত হয়। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- মানুষের কর্মের কারণে জলে ও স্থলে গজব নেমে আসে। আর এই গজব হতে বাঁচতে হলে মানুষকে রহমত লাভ করতে হয় আর রহমতের উৎস বা আধার হলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)। তাছাড়া মৃত্যুর সময়ও রহমত লাভ করা প্রয়োজন এবং তা সম্ভব হয় রাহমাতুল্লিল আলামিনের আশেক হওয়ার মাধ্যমে। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে যা বেড়িয়ে আসে, তা হলো মানুষকে বিপদাপদ গজব হতে বাঁচতে হলে রাহমাতুল্লিল আলামিনের নিকটবর্তী হতে হয়। রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর সময়ে যারা সাহাবি ছিলেন, তারা রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভ করতে পেরেছিলেন কিন্তু রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পরে যারা পৃথিবীতে আসবেন, তারা কীভাবে রাহমাতুল্লিল আলামিনের সান্নিধ্য লাভ করে রহমত প্রাপ্ত হবেন? তাছাড়া যারা রাসুল (সা.)-এর আগমনের পূর্বে পৃথিবীতে এসেছিলেন তাদের রহমত পাওয়ার উপায় কী ছিল? উত্তর খুঁজতে গিয়ে পবিত্র কুরআন পর্যালোচনা করলে দেখব আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন কুরআনে রাসুল (সা.)-কে অনেক জায়গায় জিজ্ঞেস করেছেন- আপনি কী দেখেন নি (আলামতারা)? যেমন আল্লাহ্ বলেছেন, “হে রাসুল! আপনি কি দেখেননি, আপনার রব হাতিওয়ালাদের সাথে কী ব্যবহার করেছেন?” (সূরা ফীল ১০৫ : আয়াত ১)
মহান আল্লাহ্ কেন বলেছেন আপনি কি দেখেননি, এর মানে রাহমাতুল্লিল আলামিন সব জায়গায় উপস্থিত থেকে সমস্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। আল্লাহ্ হলেন রাব্বুল আলামিন অর্থাৎ আল্লাহ্ জগতসমূহের প্রভু আর হযরত রাসুল (সা.) হলেন রাহমাতুল্লিল আলামিন অর্থাৎ জগতসমুহের রহমত। হাদিস শরীফে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান, আল্লাহ্ সর্বপ্রথম আমার নুরকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আল্লাহর নুর হতে, আর সকল বস্তু আমার নুর হতে সৃষ্টি। (সিররুল আসরার )
মূলে হযরত রাসুল (সা.) স্বনামে মোহাম্মদ (সা.) রূপে মানুষ হিসেবে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম লাভ করেছিলেন যা তাঁর স্থূল জগতে জাহেরি প্রকাশ কিন্তু সূক্ষাতিসূক্ষ্ম জগতে তিনি সর্বসময়, ছিলেন আছেন ও থাকবেন। এজন্যই তিনি হায়াতুন্নবি। পবিত্র কুরআনে হযরত রাসুল (সা.)-কে উল্লেখ করা হয়েছে সিরাজুম মুনিরা বা প্রজ্বলিত প্রদীপ হিসেবে। সিরাজুম মুনিরা হলো হযরত রাসুল (সা.)-এর নুর মোবারক নুরে মোহাম্মদী, যা সর্বযুগে যুগের ইমামের সিনা মুবারকে বিরাজ করে এবং জগতে রহমত বিতরণ করে। হযরত আদম (আ.), হযরত ইব্রাহীম (আ.), হযরত মুসা (আ.), হযরত নুহ (আ.), হযরত ঈসা (আ.)-সহ সকল যুগের ইমামদের সিনা মুবারকে এই নুর বিরাজমান থেকে মানুষকে হেদায়েত দান করেছে। এই নুর স্বনামে হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর সিনা মুবারাকে ছিল। হযরত রাসুল (সা.)-এর পর সকল যুগের ইমাম ও আউলিয়ায়ে কেরামের সিনা মুবারকে এই নুর বিরাজমান থেকে সমকালীন জামানার মানুষকে হেদায়েতের মাধ্যমে রহমত বরকতের পথে পরিচালিত করেছেন। সমস্ত যুগে যুগের ইমামগণ নুরে মোহাম্মদীর নুর ধারণ করে জগতময় রহমত স্বরূপ বিরাজ করেন। সে যুগের মানুষ তাঁদের কাছে গেলে তাঁদের অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ্র পরিপূর্ণ রহমত লাভে সক্ষম হন।
এই যুগের ইমাম হচ্ছেন আমাদের মহান মোর্শেদ মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান, যিনি রাসুল (সা.)-এর নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক, যার সংস্পর্শে এসে তাঁর সুমহান শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষ প্রতিনিয়ত বিপদাপদ, বালা-মুসিবত গজব হতে রক্ষা পেয়ে আল্লাহর রহমত লাভ করতে সক্ষম হচ্ছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান শিক্ষা দেন কিভাবে একজন মানুষ রাহমাতুল্লিল আলামিনের পরশ লাভের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করত বিপদাপদ, বালা-মুসিবত গজব হতে রক্ষা পেয়ে প্রকৃত শান্তি লাভ তথা ইসলামের বাস্তবতা ব্যক্তি জীবনে উপলদ্ধি করে মুক্তি লাভ করবে।
একজন মানুষ যখন তাঁর কাছে আসে, তখন তিনি তাকে তওবাহ পড়িয়ে তার ক্বালবে আল্লাহ্ আল্লাহ্ জিকির জারি করে দিয়ে ইমানের বীজ বপন করে দেন। ঐ ব্যক্তি যখন এই জ্বিকির হৃদয়ে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে তার প্রভাব ক্বালবের ভিতরে ও বাইরে অর্থাৎ নফসের দিকে প্রসারিত ও প্রকাশিত হতে থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, “আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আল্লাহ কিরূপে কালেমা তাইয়্যেবার উপমা বর্ণনা করেন, যেমন একটি পবিত্র গাছ যার শিকড় সুপ্রতিষ্ঠিত ও যার শাখাসমূহ গগনস্পর্শী? স্বীয় প্রতিপালকের আদেশে যা সবসময় ফল দান করে থাকে। আল্লাহ্ মানবমন্ডলীর জন্য উপমা বর্ণনা করেন, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা আম্বিয়া ২১: আয়াত ২৩-২৪)
গাছের বীজ নিজেকে মাটির সংস্পর্শে রেখে তা থেকে জলীয় উপাদান গ্রহণ করে অংকুরিত হয়। এ অংকুরিত বীজ শিকড় হয়ে মাটিতে বিস্তার লাভ করে। যেমন- বৃক্ষকে সুদৃঢ় করে তেমনি বৃক্ষের শাখাসমূহ উর্ধ্বমুখী হয়ে সূর্যের আলো ও বাতাসের উপাদান গ্রহণ করে গাছকে পরিপুষ্ট ও ফলবান করে তোলে। তদ্রুপ একজন পাপী মানুষ সুফী সম্রাটের সান্নিধ্যে এসে ইমানের নুর অন্তরে ধারণ করে তাঁর নির্দেশিত ওয়াজিফা আমলের মাধ্যমে ফায়েজ অর্জন করতে থাকলে যেমন একদিকে তার নফসের কুরিপু দুর্বল হয়ে পড়ে, অন্যদিকে তেমনি হৃদয়ে আল্লাহর সুপ্ত নুর জাগ্রত হয়ে ঐ ব্যক্তির পক্ষে উর্ধ্বলোকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, ‘আল্লাহ্ ইসলামের জন্য যার ক্বালবের সুদূর মোকাম খুলে দিয়েছেন এবং সে তার প্রতিপালকের নুরের মাঝে কায়েম আছে, সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়?” (সূরা আঝ ঝুমার ৩৯ : আয়াত ২২)
উর্ধ্বলোকের সাথে যোগাযোগ লাভকারী এরূপ পরিশুদ্ধ হৃদয় নুরে মোহাম্মদীর পরিচয় লাভ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং তাঁর হৃদয়ে সর্বদা আল্লাহর রহমত, প্রেম ও করুণা লাভ করে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘‘হে প্রশান্ত নফস, তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে আস। এমতাবস্থায় যে, তুমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনিও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট, আমার দাসদের মধ্যে শামিল হও আর আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।” (সূরা আল ফজর ৮৯ : আয়াত ২৭-৩০)
সুতরাং এটা স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, একজন পাপিষ্ঠ মানুষ আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের কাছে এসে তাঁর সুমহান শিক্ষা গ্রহণ করে, তা সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে ইমানের পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং রাব্বুল আলামিন ও রাহমাতুল্লিল আলামিনের নৈকট্য লাভ করে ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর অফুরন্ত রহমত ও বরকত লাভ করতে পারে।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর ওয়াজিফা শরীফে মোট ৭২২ বার দরূদ শরীফ পড়ার বিধান দিয়েছেন, যা তাঁর মুরিদের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর। যারা প্রতিনিয়ত দরূদ পড়ে তাদের শানে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “তিনি তোমাদের প্রতি রহমত প্রেরণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারাও তোমাদের প্রতি রহমত প্রার্থনা করেন, যেন আল্লাহ্ তোমাদের অন্ধকার হতে আলোতে বের করে আনেন। তিনি মুমিনদের প্রতি দয়াময়।” (সূরা আল আহযাব ৩৩ : আয়াত ৫৩)
হযরত রাসুল (সা.) ফরমান, যে ব্যাক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ্ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করা হয় এবং তার মর্যাদার দশটি স্তর বৃদ্ধি করা হয়। (নাসায়ী শরীফের সূত্রে তাফসীরে মাজহারী) সুতরাং দেখা যায়, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শিক্ষা অনুযায়ী নিয়মিত দরূদ শরীফ পাঠ করে তাঁর মুরিদ সন্তানেরা আল্লাহর রহমত হাসিল করতে সক্ষম হন।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক এবং যুগের ইমাম, তাই তিনি রূহে আযম। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর জাত-পাক হতে ফায়েজ মহান আল্লাহ জগতময় কায়েম রেখেছেন। মহান আল্লাহ্ সূক্ষাতিসূক্ষ্ম জগতের তাই স্থূল জগতে যুগের ইমাম ও রূহে আযমের মাধ্যমে আল্লাহ্ সৃষ্টিজগত ফায়েজ দ্বারা কায়েম রাখেন। যুগের ইমাম আল্লাহর প্রতিনিধিরূপে সৃষ্টিজগত পরিচালনা করেন। ফায়েজ সৃষ্টির চালিকা শক্তি ও ধর্মের মূল উপাদান। পবিত্র কুরআনে ফায়েজকে সকিনাহ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সূফী সম্রাটের মুরিদ সন্তানেরা প্রতিনিয়ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ও শেষরাতে রহমতের সময় ফায়েজ লাভ করেন, ফলে তাদের হৃদয় থাকে শান্তিতে পরিপূর্ণ। ফজর ও এশার ওয়াক্তে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানের অনুসারীরা কুয়াতে এলাহিয়ার ও গাইরিয়াতের ফায়েজ, যোহরের সময় রাসুল (সা.)-এর মহব্বতের ফায়েজ, আসর ও মাগরিবের সময় তাওবাহ ও তাওবাহ কবুলিয়াতের ফায়েজ এবং শেষরাতে রহমতের ফায়েজ লাভ করে, রিপু সংশোধন, আত্মশুদ্ধি ও আত্মা শক্তিশালী করেন। এভাবে হযরত রাসুল (সা.)-এর মহব্বত লাভ করেন, গুনাহ মুক্ত হয়ে হৃদয় পূতপবিত্র করেন এবং আল্লাহর রহমত লাভ করে তাঁর আশ্রয়ে থেকে বিপদাপদ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর সাহায্য লাভ করে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হন, ফলে তাদের হৃদয় থাকে প্রশান্ত। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, “তিনি আল্লাহ্, যিনি মুমিনদের ক্বালবে প্রশান্তি (ফায়েজ) নাজিল করেন, যেন তারা ইমানের সাথে আরও ইমান বৃদ্ধি করে নেয়।” (সূরা আল ফাতহ ৪৮ : আয়াত ৪)
সূফী সম্রাটের মুরিদ সন্তানেরা বিপদাপদে মোরাকাবা করে মোর্শেদের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য ও রহমত লাভ করেন এবং মানত করে বিপদ মুক্ত হন। আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর মুরিদ সন্তানদের ওয়াজিফায় মিলাদের বিধান চালু রেখেছেন। নিয়মিত মিলাদ পাঠ করে তাঁর অনুসারীদের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়। সূফী সম্রাট প্রণীত ‘বিশ্বনবীর স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাটঃ রাসূল (সঃ) সত্যিই কি গরীব ছিলেন?’ কিতাবে মিলাদের গুরুত্ব আলোচনা করা হয়েছে। কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে জগতে এমন কোনো কর্ম নাই, যা আল্লাহ্ সর্বদা করেন অথচ তিনি স্বয়ং ফেরেশতাদের নিয়ে তাঁর প্রিয় হাবিবের উপর দরূদ পড়েন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ স্বয়ং ও তাঁর ফেরেশতারা নবির উপর দরূদ পাঠ করেন, হে বিশ্বাসীগণ তোমরাও তাঁর উপর দরূদ পড় ও শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ কর।“ ( সুরা আহযাব ৩৩ : আয়াত ৫৬)
মিলাদের মাধ্যমে হযরত রাসুল (সা.)-এর উপর একই সাথে দরূদ পাঠ করা হয় এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করা হয়।
মহান রাব্বুল আলামিন সৃষ্টির শুরুতে নুরে মোহাম্মদী পৃথক করে তাঁর প্রতি আশেক হয়ে ফেরেশতাদের নিয়ে দরূদ পড়েন এবং বিশ্বাসীদের মিলাদ পড়তে বলেছেন। তাই মিলাদ অনুষ্ঠান সৃষ্টির শুরু হতে বিদ্যমান বিধায় ইসলামে মিলাদের গুরুত্ব অপরিসীম। মিলাদের দ্বারা বান্দা আল্লাহর রহমত লাভ করে কারণ মিলাদের মাধ্যমে উম্মতের হৃদয়ে রাসুল (সা.)-এর প্রতি গভীর প্রেম জাগ্রত হয়, ফলে সে আশেকে রাসুলে পরিণত হয়ে রাসুল (সা.)-এর সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, যারা রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা অর্জনের জন্য নিয়মিত শ্রদ্ধার সাথে মিলাদ পড়েন, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেন ফলে তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ৫টি পুরস্কার দেওয়া হয়।
১। মিলাদ পাঠকারীর সংসারের অভাব অনটন দূর হবে, ২। বালা-মুসিবত দূর হবে, ৩। সংসারে অশান্তি দূর হবে, ৪। আয় রোজগারে বরকত হবে এবং ৫। হযরত রাসুল (সা.)-এর সাফায়াত লাভ হবে।
সূফী সম্রাটের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এর কারণ হলো মিলাদ হযরত রাসুল (সা.)-এর উপর পড়া হয় আর হযরত রাসুল (সা.)-এর হাতে মহান আল্লাহ্ সমস্ত ধন ভাণ্ডারের চাবি দিয়েছেন, হযরত রাসুল (সা.) শান্তির দূত, তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন এবং তিনি মানবমন্ডলীর শাফায়াতকারী।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান নুরে মোহাম্মদীর ধারক বাহক বিধায় হযরত রাসুল (সা.)-তাঁর মাঝে মিশে আছেন, ফলে তাই হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভ করে আল্লাহর পরিপূর্ণ রহমত লাভ করতে হলে সূফী সম্রাটের অনুসরণ করতে হবে। আর তাই মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফের কাছিদায় পাঠ করা হয়,
“দেওয়ানবাগীর আশেক হইতে যে পারে
রাসুল দয়া করে দেখা দেন তারে
কবুল করিবেন তিনি উম্মত বলিয়া।”
মহান রাব্বুল আলামিন সবাইকে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের পরিচয় লাভ করে তাঁর শিক্ষা অনুসরণ করে হযরত রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা অর্জন করে আশেকে রাসুলে পরিণত হয়ে মহান আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ করে দিন। আমিন।
তথ্যসুত্র :
১। সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী অবদান: আল্লাহ্ কোন্ পথে?
২। তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (১ম খণ্ড থেকে ৮ম খণ্ড)
৩। বিশ্বনবীর স্বরূপ উদঘাটনে সূফী সম্রাটঃ রাসূল (সঃ) সত্যিই কি গরীব ছিলেন?
৪। সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার ১ম খণ্ড
৫। সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধর্মীয় সংস্কার ২য় খণ্ড
৬। শান্তি কোন পথে?
৭। মুক্তি কোন পথে?
[লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক]