মহানবির মহানুভবতার ধর্ম মোহাম্মদী ইসলাম
ড. পিয়ার মোহাম্মদ
মোহাম্মদী ইসলামের প্রবর্তক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, কুল কায়েনাতের রহমত হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি যখন আরব দেশে জন্মগ্রহণ করেন তখন মানুষ পারষ্পরিক হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ, খুন, রাহাজানি এবং সীমাহীন পাপাচার ও অনাচারে নিপতিত ছিল। সেই অশান্তির আরব ভূমি শান্তির দূত হযরত রাসুল (সা.)-এর মহানুভবতার পরশে স্বর্গীয় শান্তির জনপদে পরিণত হয়েছিল। তিনি সব সময়ই সত্য ও সুন্দরের প্রতীক হিসেবে মানুষকে মহানুভবতার পথে আহ্বান করে গেছেন। বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.) ফরমান ‘আল মুসলিমু মান সালিমাল মুসলিমুনা মিল্লিসানিহি ওয়া ইয়াদিহি।” অর্থাৎ- প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ দ্বারা অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। হযরত রাসুল (সা.)-এর এমন অসংখ্য হৃদয়স্পর্শী বাণী ও আদর্শ মোহাম্মদী ইসলামকে করেছে মহানুভবতায় মহিমান্বিত।
মোহাম্মদী ইসলাম সব মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এই ধর্ম বিশ্বে মানুষে মানুষে শান্তি, সম্প্রীতি, মৈত্রী, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। মানবতার জন্য ইসলাম। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের জন্য ইসলাম। ইসলামে রয়েছে ক্ষমা, ধৈর্য, সহনশীলতা, সহযোগিতা ও সহানুভুতির আদর্শ। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘চরিত্রের বিচারে যে লোকটি উত্তম, মুমিনদের মধ্যে সেই পূর্ণ ইমানের অধিকারী।’ (তিরমিজি শরীফ) তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই লোকটিই আমার নিকট অধিক প্রিয়, যার নৈতিক চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।’ (বুখারি শরীফ) হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে তোমার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে, তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ো; যে তোমার প্রতি অবিচার করে, তাকে ক্ষমা করো।’ (মুসলিম শরীফ) কোনো মুসলমানের সঙ্গে তিন দিনের অধিক রাগ করে থাকা মোহাম্মদী ইসলামে বৈধ নয়। যদি কারো সঙ্গে কোনো দেনাপাওনা থাকে, তা শরিয়তসম্মতভাবে ও আইনী উপায়ে আদায়ের চেষ্টা করা ইসলামের বিধান। এমন আদর্শ যে ধর্মে রয়েছে, তা যে মহানুভবতার ধর্ম তা আর বলার প্রয়োজন পড়ে না।
মোহাম্মদী ইসলাম ভৌগোলিক, আঞ্চলিক, নৃতাত্ত্বিক, জাতিগত ও ধর্মীয় প্রভেদে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সমর্থন করে না। এ ধর্মে কোনো প্রকার শ্রেণী বৈষম্য বা কোনো অস্পৃশ্যতা নেই। মোহাম্মদী ইসলাম মানুষকে জাতি ও বর্ণ দিয়ে বিচার করে না বরং তার বিশ্বাস ও কর্মের মূল্যায়ন করে। কারো বিশ্বাস নিয়ে বিদ্রুপ, কটূক্তি বা কটাক্ষ করা মোহাম্মদী ইসলামে নেই। কাউকে গালমন্দ করাও মোহাম্মদী ইসলামে নিষেধ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘তারা আল্লাহ্ ছাড়া যে সবকে ডাকে তোমরা তাদের গালি দিয়ো না; ফলে তারা আল্লাহ্কে গালি দেবে শত্রুতাবশত অজ্ঞতার সঙ্গে।’ (সূরা আল আনআম: আয়াত ১০৮) সেকারণে মোহাম্মদী ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণকারীগণ কখনো কারো সাথে বিবাদে জড়াতে চান না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন- ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোক থেকে এবং তোমাদেরকে পরিণত করেছি বিভিন্ন জাতিতে ও বিভিন্ন গোত্রে, যেন তোমরা পরষ্পরকে চিনতে পারো।’ (সূরা আল হুজুরাত: আয়াত ১৩) মহান রাব্বুল আলামিনের এ বাণী মোবারকে সুষ্পষ্ট যে, মানুষ একে অন্যের কল্যাণ সাধন ও উপকার করবে। এভাবে তারা একটি শান্তির সমাজ বিনির্মাণ করবে। প্রকৃতপক্ষে এমনই মহানুভবতার বিধান মোহাম্মদী ইসলাম।
মোহাম্মদী ইসলাম সহজ, সাবলীল ও যৌক্তিক ধর্ম। সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ, পরস্পরের সহাবস্থান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এ ধর্মের সৌন্দর্য। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সত্য কথা বলা ও প্রয়োজনে কাউকে সদুপদেশ দেওয়া অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা মোহাম্মদী ইসলামের বিধান। সত্যের পক্ষে কথা বলা একজন মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। প্রয়োজনে একাকীত্বে ডেকে কারো সংশোধনের উদ্দেশ্যে সাবলীল ভাষায় সমালোচনাও করা যেতে পারে। উপদেশ প্রদান বা সমালোচনার ক্ষেত্রে শিষ্টাচার বজায় রাখা মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ। একজন মুসলমান নিজের জন্য যা ভালোবাসে, অন্যের জন্যও তা ভালোবাসবে আর নিজের জন্য যা অপছন্দের, অন্যের জন্যও তা পরিহার করবে, এটাই মোহাম্মদী ইসলামের নির্দেশনা। সবার প্রতি দয়াশীল হওয়া, ছোটোদের স্নেহ এবং বড়োদের শ্রদ্ধা করা, তাদের দুঃখে দুঃখী হওয়া এবং তাদের খুশিতে খুশি হওয়া মোহাম্মদী ইসলামে অপরিহার্য। কারো প্রতি যথাযথভাবে না জেনে ধারণাবশত ভুল ধারণা পোষণ করা বা কারো দোষ ত্রুটি অন্বেষণ করা মোহাম্মদী ইসলামের বিধান পরিপন্থী। এসব সৌন্দর্যই মোহাম্মদী ইসলামকে মহানুভবতার ধর্মে পরিণত করেছে। মোহাম্মদী ইসলাম সমগ্র মানবজাতিকে একই পরিবারভুক্ত বলে গণ্য করে। সব মানুষই এক আল্লাহ্ তাআলার সৃষ্টি এবং তিনি সমগ্র বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। তিনি প্রত্যেক মানুষকেই মানবীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টির সেরা করেছেন। ব্যক্তি মানুষের সম্মানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সংরক্ষণ করে মোহাম্মদী ইসলাম। আল্লাহ্ তাআলা বলেন- ‘অবশ্যই আমি মানুষকে সর্বোত্তম অবয়বে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আত ত্বিন: আয়াত ৫) সব মানুষ ভাই ভাই, কারণ সবাই একই পিতামাতার সন্তান। আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন ‘হে মানব মন্ডলী! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর এতদুভয় থেকে বহু নর ও নারী সম্প্রসারণ করেছেন।’ (সূরা আন নিসা: আয়াত ১) পবিত্র কুরআনের এ বাণী যাদের হৃদয়ে বহমান তারা অন্যের সাথে শত্রুতা করে কীভাবে? মোহাম্মদী ইসলাম চর্চা করলে তার ভিতরে মহানুভবতার বীজ গজাবে মনের অজান্তেই।
জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সামাজিক ন্যায় বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই মোহাম্মদী ইসলামের মূল লক্ষ্য। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘সব বিশ্বাসী মানুষ এক দেহসম। দেহের যে কোনো জায়গায় ব্যথা পেলে চোখে পানি আসে, সারা শরীরে জ্বর আসে।’ (বুখারি শরীফ ও মুসলিম শরীফ) এমন দর্শন যে ধর্মে রয়েছে, তা মহানুভবতার না হয়ে পারে না। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা যেহেতু পরষ্পর ভাই ভাই সেহেতু এক মুসলমান অন্য মুসলমানের আপনজন।’ সুতরাং এক ভাই তার অন্য ভাইকে নির্যাতন করতে পারে না, হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে না এবং অপমানিত অপদস্থও করতে পারে না। (মুসলিম শরীফ) প্রকৃতপক্ষে মুসলমান ঐ ব্যক্তি যে নিজে শান্তিতে বসবাস করে এবং অপরকে শান্তিতে বসবাস করতে দেয়। প্রকৃত মুসলমান কখনো কারো জন্য কষ্টের কারণ হয় না। মোহাম্মদী ইসলাম এমনই একটি মহানুভবতার সর্বজনীন ধর্ম। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ‘তাদের জন্য সুসংবাদ যাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে আমরাতো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।’ (সূরা আল বাকারাহ ২ : আয়াত ১৫৫-১৫৭) মানুষ যদি অপারগতার কারণে বা অসামর্থ্য বা অসহায় হয়ে প্রতিকারের চেষ্টা বা প্রতিরোধ না করে, আবার শক্তি সামর্থ্য থাকা সত্বেও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করে প্রতিশোধ গ্রহণ না করে তাহলে উভয় ক্ষেত্রেই মহান আল্লাহ্ সন্তষ্ট হয়ে থাকেন। ধৈর্যের ব্যাপারে হযরত আইয়ুব (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, ‘আমিতো তাকে পেলাম ধৈর্য্যশীল। সে কত উত্তম বান্দা! সে ছিল আমার অভিমুখী।’ (সূরা হুদ: আয়াত ৪৪) আবার সহিষ্ণুতা সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন, ’আল্লাহ্তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল।’ (সূরা হজ : আয়াত ৫৯)। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং সুসম্পর্ক স্থাপনে আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে অবিচল থাক, আল্লাহ্কে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ (সূরা আলে ইমরান ৩ : আয়াত ২০০) ক্রোধ ও প্রতিশোধপরায়ন হওয়া শয়তানির বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ্ ধৈর্য ধারণকারীর সংগে থাকেন। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন যার সঙ্গে থাকেন তার সফলতা অবধারিত ও সুনিশ্চিত। সে কারণে মোহাম্মদী ইসলাম চরম মহানুভবতার পরাকাষ্ঠে পরীক্ষিত ধর্ম হিসেবে পরিগণিত।
মোহাম্মদী ইসলামে দান ও সদকার বিধান রয়েছে। এ দান করার সময় আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। প্রকাশ্যে ও গোপনে দান করার নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ্ পাক বলেন, ‘যদি তোমরা দান প্রকাশ্যে করো তবে তা উত্তম; আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদের দাও, তবে তা তোমাদের জন্য শ্রেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তোমাদের মন্দগুলো মোচন করে দেবেন। তোমরা যা করো আল্লাহ্ তা অবগত আছেন।’ (সূরা আল বাকারাহ ২ : আয়াত ২৭১)। দান সদকা, খয়রাত সসম্মানে পবিত্র মনে প্রাপকের হাতে পৌঁছে দেওয়া এ ধর্মের বিধান। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে দান করে খোঁটা দেওয়া যাবে না। এতে দানের ফজিলত নষ্ট হয়ে যায়। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘সদ্ব্যবহার, সুন্দর কথা ঐ দান অপেক্ষা উত্তম, যার পেছনে আসে যন্ত্রণা। আল্লাহ্ ঐশ্বর্যশালী ও পরম সহিষ্ণু। হে মুমিনগণ! তোমরা খোঁটা দিও না ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বাতিল করো না। তাদের মতো যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য এবং তারা পরকাল বিশ্বাস করে না।’ (সূরা আল বাকারাহ ২ : আয়াত ২৬৩-২৬৪) দান ছাড়াও যখন আপনজনেরা দয়া গ্রহণে কুন্ঠাবোধ করে, তখন হাদিয়া বা উপহার হিসেবেও দেওয়া যেতে পারে। এটাই দানের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। হাদিয়া বা উপহার সাগ্রহে গ্রহণ করার নির্দেশনাও রয়েছে। উপহার যত সামান্যই হোক তা আনন্দের সাথে গ্রহণ করতে হয় এবং উপহারদাতাকে উপহার দিতে হয়। মোহাম্মদী ইসলামের এমন সব বিধান এ ধর্মকে করেছে মহানুভবতায় পরিপূর্ণ।
মোহাম্মদী ইসলামে রয়েছে যাকাতের বিধান। যাকাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা ও প্রবৃদ্ধি। পবিত্র কুরআনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮২ বার যাকাতের নির্দেশনা এসেছে। যাকাত দারিদ্র্য বিমোচন করে এবং সম্পদের প্রবাহ সৃষ্টি করে। পরিকল্পিতভাবে যাকাত প্রদান করে সমাজ, দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র এবং বিশ্বকে দারিদ্র্যমুক্ত করাই মোহাম্মদী ইসলামের লক্ষ্য। ধনী গরিবের বিভেদ দূর, পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করতেই যাকাতের বিধান এসেছে। সে কারণে যাকাত দেওয়া মোহাম্মদী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ কিছু সম্পদ পেয়ে থাকে। যাকাত শুধু অর্থ নয় বরং ফসল, ক্ষেতখামার সব ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট পরিমাণ যাকাত ধার্য করে নিজের দায়িত্বে বন্টন করতে হয়। যাকাত গরিবের হক বিধায় তাদের পাওনা হিসাবে বিবেচিত। সে কারণে এটি দিয়ে ধনীরা ধার শোধ করার সুযোগ পায়। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের যাবতীয় বিধান মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। সমাজের দুস্থ, অসহায় ও হতদরিদ্ররাও যেন ঈদের আনন্দ করতে পারে সেজন্য চালু আছে সাদকাতুল ফিতর যা একটি সমাজকল্যাণমূলক ইবাদত হিসেবে বিবেচিত। তদ্রুপ পবিত্র ঈদুল আজহার সময় কোরবানি করে গরিব দুঃখী ও আত্মীয়স্বজনের মাঝে মাংস বিতরণ ইসলামের আরেকটি মহৎ কার্যক্রম যা মহানুভবতারই পরিচায়ক। মোহাম্মদী ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা এবং অধিকার সম্পর্কে বহু নির্দেশনা রয়েছে। শ্রমের প্রতি উৎসাহ দিয়ে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ‘অতঃপর যখন নামাজ পূর্ণ করা হবে, তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আর আল্লাহ্কে অধিক মাত্রায় স্মরণ করো, আশা করা যায় তোমরা সফল হবে।’ (সূরা জুমা : আয়াত ১০) হাদিস শরীফে এসেছে ‘ফরজ ইবাদতগুলোর পরেই হালাল উপার্জন ফরজ দায়িত্ব।’ (তিরমিজি শরীফ) হালাল খাদ্য ও হালাল উপার্জন রোজা, নামাজসহ যাবতীয় ইবাদত কবুলের প্রধান শর্ত। হালাল উপার্জনগুলোর মধ্যে তা সর্বোত্তম, যা কায়িক শ্রম দ্বারা অর্জন করা হয়। (মুসলিম শরীফ) শ্রমিকের অধিকার ও শ্রম গ্রহীতার কর্তব্য সম্পর্কে হাদিস শরীফে আছে, শ্রমিকেরা তোমাদেরই ভাই, আল্লাহ্ তাদেরকে তোমাদের দায়িত্বে অর্পণ করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা যার ভাইকে তার অভিভাবকের দায়িত্বে রেখেছেন, সে যা খাবে তাকেও তা খাওয়াবে, সে যা পরিধান করবে তাকেও তা পরিধান করাবে, তাকে এমন কষ্টের কাজ দেবেনা যা তার সাধ্যের বাইরে, কোনো কাজ কঠিন হলে সে কাজে তাকে সাহায্য করবে। (মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ) এর চেয়ে মহানুভবতার উদাহরণ আর কোথায় আছে? মোহাম্মদী ইসলামের প্রতিটি বিধি বিধান এমনই মহানুভবতায় পরিপূর্ণ।
মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বলেন- মোহাম্মদী ইসলাম শান্তি ও মহানুভবতার ধর্ম। অথচ সে ধর্মে নানান অশান্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শান্তির পথ হারিয়ে মুসলমানরা হয়ে পড়েছে অসহায় ও সাহায্য নির্ভর জাতিতে। যা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের দর্শন পরিপন্থী। ইসলামের নামে আজকাল নানান ধরনের অশান্তির খবর প্রচারিত হয়ে থাকে। মোহাম্মদী ইসলামে এ ধরনের অশান্তির অস্তিত্ব থাকতে পারে না। একজন প্রকৃত মুসলমান কখনো অন্যের অসুবিধার কারণ হতে পারে না। ইসলামের প্রকৃত শান্তি বাস্তবে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে পেতে হলে হযরত রাসুল (সা.)-এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার বিকল্প নেই। সৃষ্টির প্রতি বিশ্বনবির ভালোবাসার যে আহ্বান তা মেনে চলতে পারলেই আমাদের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি নেমে আসবে। অন্যান্য ধর্মের মানুষের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এবং চলাচলের দর্শনও তিনি প্রচার করেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান এভাবে মানুষের মাঝে হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর প্রচারিত ধর্মের প্রকৃত বিষয়গুলো অনুশীলনের পন্থা শিক্ষা দিয়ে সামাজিক শান্তি, ব্যক্তির শান্তি এবং সামাজিক সমৃদ্ধি অর্জনে ব্রত রয়েছেন।
তিনি বলেন- যে কাজের মধ্যে শান্তি আছে সেটাই ইসলাম। পক্ষান্তরে যে কাজ করলে শান্তি পাওয়া যায়না সে কাজ ইসলামের অনুসঙ্গ হতে পারে না। তাঁর মতে মোহাম্মদী ইসলাম বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার দর্শনে পরিপূর্ণ। মোহাম্মদী ইসলামই মানবজাতির মহানুভবতার শ্রেষ্ঠ ক্ষেত্র যেখানে মানুষ পেতে পারে শান্তি। মহান আল্লাহ্ আমাদের সে মোহাম্মদী ইসলাম অনুসরণ করে তামাম জিন্দেগি মহানুভবতার পাশে আবদ্ধ থাকার সুযোগ করে দিন। আমিন।
[ লেখক : অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার]