Cancel Preloader

মহররম

কাজী নজরুল ইসলাম
নীলসিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া,-
‘আম্মা ! লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া।’
কাঁদে কোন্ ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে,
সে কাঁদনে আঁসু আনে সীমারেরও ছোরাতে।
রুদ্র মাতম্ ওঠে দুনিয়া-দামেশকে-
“জয়নালে পরালো এ খুনিয়ার বেশ কে।”
‘হায় হায় হোসেন’, ওঠে রোল ঝঞ্ঝায়,
তল্ওয়ার কেঁপে ওঠে এজিদেরো পাঞ্জায়!
উন্মাদ ‘দুলদুল্’ ছুটে ফেরে মদিনায়,
আলি-জাদা হোসেনের দেখা হেথা যদি পায়!
মা ফাতিমা আস্মানে কাঁদে খুলি কেশপাশ,
বেটাদের লাশ নিয়ে বধূদের শ্বেতবাস!
রণে যায় কাসিম ঐ দু’ঘড়ির নওশা,
মেহেদির রঙটুকু মুছে গেল সহসা!
‘হায় হায়’ কাঁদে বায় পূরবী ও দখিনা
‘কঙ্কণ পঁইচি খুলে ফেলো সকিনা!’
কাঁদে কে রে কোলে করে কাসিমের কাটা-শির?
খান্ খান্ খুন হয়ে ক্ষরে বুক-ফাটা নীর!
কেঁদে গেছে থামি হেথা মৃত্যু ও রুদ্র,
বিশ্বের ব্যথা যেন বালিকা এ ক্ষুদ্র!
গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমা,
‘আম্মা গো পানি দাও ফেটে গেল ছাতি মা!’
নিয়ে তৃষা সাহারার, দুনিয়ার হাহাকার,
কারবালা-প্রান্তরে কাঁদে বাছা আহা কার!
দুই হাত কাটা তবু শের-নয় আব্বাস
পানি আনে মুখে, হাঁকে দুশ্মনও ‘সাব্বাস’!
দ্রিম্ দ্রিম্ বাজে ঘন দুন্দুভি দামামা,
হাঁকে বীর ‘শির দেগা, নেহি দেগা আমামা!’
কলিজা কাবাব-সম ভুলে মরু-রোদ্দুর,
খাঁ খাঁ করে কারবালা, নাই পানি খর্জুর।
মা’র স্তনে দুধ নাই, বাচ্চারা তড়পায়!
জিভ চুষে কচি জান থাকে কিরে ধড়টায়?
দাউদাউ জ্বলে শিরে কারবালা-ভাস্কর,
কাঁদে বানু- ‘পানি দাও, মরে জাদু আস্গর!’
পেল না তো পানি শিশু পিয়ে গেল কাঁচা খুন,
ডাকে মাতা- ‘পানি দেবো ফিরে আয় বাছা শুন।
পুত্রহীনার আর বিধবার কাঁদনে
ছিঁড়ে আনে মর্মের বত্রিশ বাঁধনে!
তাম্বুতে শয্যায় কাঁদে একা জয়নাল,
‘দাদা! তেরি ঘর কিয়া বরবাদ্ পয়মাল!’
হাইদরি হাঁক হাঁকি দুল্দুল্-আস্ওয়ার
শম্শের চম্কায় দুশমনে ত্রাস্বার!
খসে পড়ে হাত হতে শত্রুর তরবার,
ভাসে চোখে কিয়ামতে আল্লাহ্র দরবার।
নিঃশেষ দুশ্মন্; ও কে রণ-শ্রান্ত
ফোরাতের নীরে নেমে মুছে আঁখি-প্রান্ত?
কোথা বাবা আসগর! শোকে বুক-ঝাঁঝরা,
পানি দেখে হোসেনের ফেটে যায় পাঁজরা!
ধুঁকে ম’লো আহা, তবু পানি এক কাৎরা
দেয়নি রে বাছাদের মুখে কম জাত্রা!
অঞ্জলি হতে পানি পড়ে গেল ঝরঝর
লুটে ভূমে মহাবাহু খঞ্জর-জর্জর!
হল্কুমে হানে তেগ ও কে বসে ছাতিতে?
আফ্তাব ছেয়ে নিল আধিয়ারা রাতিতে!
আস্মান ভরে গেল গোধূলিতে দুপুরে,
লাল নীল খুন ঝরে কুফরের উপরে!
বেটাদের লোহু-রাঙা পিরাহান-হাতে, আহ্
‘আরশের পায়া ধরে কাঁদে মাতা ফাতেমা,
‘এয়্ খোদা বদ্লাতে বেটাদের রক্তের
মার্জনা করো গোনা পাপী কম্বখ্তের।’
কত মোহররম্ এলো গেলো চলে বহু কাল
ভুলিনি গো আজো সেই শহীদের লোহু লাল।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *