যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন (পর্ব-১১)
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
মোর্শেদের দরবার থেকে সূফী সম্রাটের ঢাকা আগমন
মহান আল্লাহর প্রিয় বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান স্বীয় মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর প্রথম ওরছ মোবারক পালন করার জন্য অনেক বড়ো আয়োজন করেন। এজন্য ২ শতাধিক মণ চাউল ক্রয় করেন এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রীসহ এবং বেশ কয়েকটি গরু ক্রয় করলেন। এজন্য তাঁকে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ করতে হয়েছে। চন্দ্রপাড়ায় ওরছের নিয়ম ছিল জাকেরগণ ওরছের জন্য দরবার শরীফে টাকা ঋণ দিতেন। ওরছ মোবারকের পরে সেই ঋণ পরিশোধ করা হতো। দেখতে দেখতে ওরছের দিন ঘনিয়ে আসলো।
২৮ মার্চ, ১৯৮৫ সাল। আমি ঢাকা থেকে আগেই চন্দ্রপাড়ায় এসে পৌঁছি। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আরো অনেক মানুষ ইতঃপূর্বে দরবার শরীফে এসে পৌঁছেন। এদিকে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের বিরোধীতাকারী একটি দল, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন আর্মির জনৈক অফিসার, তারাও চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে এলো। তারা ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.)-কে ‘সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম’ স্বীকার করতে রাজী ছিল না। সেই কারণে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির এক পর্যায়ে সূফী সম্রাট হুজুরের অনুগত ব্যক্তিদের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে অনেককে আহত করে ফেলে। তাদের মধ্যে ছিলেন সূফী সম্রাটের সহোদর ভাই জনাব মজিবুর রহমান সরকার এবং দরবার শরীফের ম্যানেজার জনাব বদরুজ্জামান সাহেব।
এদিকে আমরা বেশ কিছু লোক চন্দ্রপাড়া মসজিদে সমবেত হয়ে মসজিদের মাইকে ইমাম হুজুরকে সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম বলে স্লোগান দিচ্ছিলাম। এসময়ে বিদ্রোহী গ্রুপের লোকজন আমাদের উপরে হামলা চালায় এবং প্রচণ্ড মারধর করে। এ থেকে আমিও রক্ষা পাইনি। ঢাকার শাহজাহানপুরের আবদুল জব্বার ভাই আহত হলেন। ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করতে থাকে। এমতাবস্থায় ঢাকার বহু জাকের লঞ্চঘাটে চলে আসেন। লোকজন লঞ্চঘাটে যাওয়ার পরে বিরোধী গ্রুপের লোকেরা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দিলো যে, ঢাকা থেকে আগত লোকেরা চন্দ্রপাড়ার লোকদেরকে মারধর করছে। এই মিথ্যা খবর চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো। অবস্থা বেগতিক দেখে দেওয়ানবাগী হুজুর তাঁর লোকদের রক্ষা করার জন্য ইমাম হুজুরের জামাতাসহ কয়েক জনকে নিয়ে লঞ্চ ঘাটে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখেন যে, তাঁর অনুসারীদের উপর অত্যাচার করার জন্য একটা কৌশল হিসেবে এই অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এ অবস্থা দেখে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর মনে অত্যন্ত কষ্ট পেলেন। তিনি ঢাকার জাকেরদেরকে লঞ্চে ওঠার নির্দেশ দিলেন। সূফী সম্রাট হুজুর তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, ঢাকার আরামবাগ থেকে যাওয়া রিজার্ভ লঞ্চে তিনি ঢাকায় চলে আসবেন। এ খবর শুনে ইমাম হুজুরের পরিবারবর্গ লঞ্চঘাটে ছুটে আসেন।
উল্লেখ্য যে, যাঁরা সব সময় পর্দায় থাকতেন, তাঁরা সূফী সম্রাট ঢাকায় চলে যাচ্ছেন শুনে পাগলের মত নদীর পাড়ে ছুটে এসে কান্নাকাটি শুরু করেন। তাঁরা কোনোভাবেই সূফী সম্রাট হুজুরকে চন্দ্রপাড়া ছেড়ে ঢাকা যেতে দিবেন না। এ সময় লঞ্চঘাটে এলাকার চেয়ারম্যান ও মাতবর সর্দারসহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। তখন উপস্থিত লোকদের উদ্দেশে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান এক আবেগপূর্ণ ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণ শুনে ইমাম হুজুরের পরিবারের মহিলাগণ বিলাপ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় চেয়ারম্যান সূফী সম্রাটকে বললেন- হুজুর! এই চকের সব জমিই আমার। আপনার যেখান থেকে যতটুকু প্রয়োজন, তা নিয়ে আপনি দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করুন। কিন্তু সূফী সম্রাট হুজুর সবার অনুরোধ উপেক্ষা করে লঞ্চযোগে ঢাকায় চলে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। লঞ্চ ছাড়ার পূর্বে তিনি ইমাম পরিবারের মহিলাগণকে সান্তনা দিয়ে পুনরায় বক্তব্য রাখেন।
পরিশেষে, তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করেন। সূফী সম্রাটের অনুসারীরা ওরছ করতে না পারায় এবং সূফী সম্রাটকে এমন পরিস্থিতিতে তাদের সাথে ঢাকায় চলে যাওয়ার কারণে লঞ্চে সবাই কান্নাকাটি শুরু করে। তখন সূফী সম্রাট হুজুর তাদেরকে সান্তনা দিয়ে বলেন, আপনারা কাঁদছেন কেন? আজতো আপনাদের আনন্দ করার দিন। আপনারা আনন্দ করুন। কাঁদবে তো তারা। যারা সব হারিয়েছে। আপনারা সব পেয়েছেন, আপনারা আনন্দ করুন। আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলা
একদম খালি হাতে কোনো কিছুই সাথে না নিয়ে এক কাপড়ে চন্দ্রপাড়া থেকে ঢাকায় চলে আসেন। এ সময় তাঁর সহধর্মিণী ও সাহেবজাদা-সাহেবজাদিগণ চন্দ্রপাড়া দরবারে থেকে যান। অনেক দিন পরে দয়াল বাবাজানের কনিষ্ঠ ভায়েরা ইঞ্জিনিয়ার মো. হাসিবুর রহমান সাহেব তাঁদেরকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
উল্লেখ্য যে, চন্দ্রপাড়া এলাকার সকল মাতবরদের সর্দার ছিলেন মেছের মাতবর। সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান যখন চন্দ্রপাড়া ছেড়ে ঢাকায় চলে আসলেন, তখন ঐ মাতবর সাহেব তাঁর বিরহ জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ‘বাবা চলে গেলেন, বাবা চলে গেলেন’ বলতে বলতে এক পর্যায়ে হার্টফেল করে মারা যান।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সেই যে ১৯৮৫ সালের ২৮ মার্চ ঢাকায় চলে এসেছেন, আর কোনোদিন চন্দ্রপাড়ায় যাননি। কেন যাননি? এর জবাব কোনো সাধারণ মানুষ দিতে পারবে না। কারণ অলী-আল্লাহ্গণ হলেন আল্লাহর বন্ধু। তাঁরা আল্লাহর নির্দেশ এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর রূহানি পরামর্শে কাজ করে থাকেন। সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান বলেছেন- ইমাম হুজুর (রহ.)-এর ওফাতের পরে কতিপয় আত্মীয়-স্বজন ও স্বার্থান্বেষী লোক যখন তাঁর বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে, এতে মর্মাহত হয়ে একদা তিনি নীরবে একাকী চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। এমন সময় ঘোড়ার খুরের টপ টপ আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি দেখলেন ৫ জন মহামানব যুদ্ধের পোষাকে চকচকে ধারালো খোলা তলোয়ার হাতে নিয়ে আরবীয় ঘোড়ার পিঠে চড়ে চন্দ্রপাড়ায় এসেছেন। এই ৫ জন মহামানব হলেন, পাক পাঞ্জাতনের সদস্য। প্রথমে হযরত রাসুল (সা.), তাঁর পিছনে শেরে খোদা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু, তাঁর পিছনে খাতুনে জান্নাত হযরত মা ফাতেমা (রা.) এবং তাঁর পিছনে হযরত ইমাম হাসান (রা.) ও হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)। হযরত রাসুল (সা.) তাঁর ডান হাত মোবারক দিয়ে সূফী সম্রাটের হাত ধরে একটানে তাঁর ঘোড়ার পিঠে তুললেন এবং পিছনে বসিয়ে চন্দ্রপাড়া থেকে তাঁকে সোজা ঢাকায় নিয়ে এলেন। এটা দেখার পর সূফী সম্রাট হুজুর বুঝতে পারলেন যে, চন্দ্রপাড়া দরবারে তাঁর আর থাকা হবে না। তাঁকে রাজধানী ঢাকায় চলে আসতে হবে এবং এখান থেকেই রাসুল (সা.)-এর মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার করতে হবে। আর ঠিক বাস্তবেও তাই হলো। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ঢাকার দেওয়ানবাগ শরীফ থেকেই আজ বিশ্বব্যাপী মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার করে যাচ্ছেন।
ঢাকার আরামবাগে সূফী সম্রাটের ওরছ পালন
সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) ১৯৮৫ সালের ২৮ মার্চ, স্বীয় মোর্শেদ ইমাম হুজুরের দরবার শরীফ থেকে রিজার্ভ লঞ্চে ঢাকার আরামবাগে চলে আসেন। লোকসংখ্যা তেমন একটা বেশী নয়। তিনি আপন মোর্শেদের ওরছ চন্দ্রপাড়ায় পালন করতে পারেননি। তাই ঢাকায় আসার পরে ওরছ পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন। আর সেই মোতাবেক একটা গরু দিয়ে তাবারুক রান্না করে ওরছ মোবারক পালনের কাজ শুরু করলেন। ঢাকার ৯৮ আরামবাগস্থ রতন মেটাল ভবন-এর ৩য় তলায় এই ওরছের আয়োজন করা হয়। রতন মেটালের স্বত্বাধিকারী ছিলেন আশেকে রাসুল মরহুম মো. শফিউদ্দীন সাহেব। মাত্র ২ শতাধিক লোক নিয়ে আরামবাগে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ওরছ পালন করেছিলেন। আজ সেই ওরছ বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে রূপ নিয়েছে। ঢাকায় আরামবাগের ‘বাবে রহমত’ চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সেদিনের ২ শতাধিক লোকের জায়গায় আজ লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হয়ে থাকে। যে সম্মেলনে শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বহু দেশের প্রতিনিধিরা যোগদান করে থাকেন। আর প্রথম ওরছের সেই ছোটো একটি গরুর স্থলে আজ ঢাকার বাজারের সবচেয়ে বড়ো অনেকগুলো গরু জবেহ করে তাবারুকের ব্যবস্থা করা হয়।
১৯৮৫ সালের ২৯ মার্চ আরামবাগে যে ওরছ শরীফ আশেকে রাসুল মো. শফিউদ্দীন সাহেবের বিল্ডিংয়ের ৩ তলায় ছাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, আমিও উক্ত ওরছে উপস্থিত ছিলাম। বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বের শতাধিক দেশের আশেকে রাসুলগণ যোগদান করে থাকেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা সত্যিই বিরল ঘটনা।
কিন্তু সেদিন মনের ভুলেও ভাবতে পারিনি যে, চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে স্বীয় মোর্শেদের ওরছ করতে গিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ করে শেষ পর্যন্ত এক কাপড়ে যাঁকে ঢাকায় চলে আসতে হয়েছে, আজ সেই মহামানব সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান সেই ঋণ পরিশোধ করেও তাঁর নিজ নামে ৯ তলা বিশিষ্ট ‘বাবে রহমত’ ভবন ছাড়াও আরামবাগে আরো কয়েকটি বহুতল বিশিষ্ট বিল্ডিংয়ের ত্বাধিকারী হয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সর্বমোট ১১টি দরবার শরীফ এবং দেশ ও বিদেশে মোট কয়েকশত খানকাহ শরীফ রয়েছে। সেই সাথে আল্লাহর অপার দয়ায় মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের ৭ জন যোগ্য সন্তান রয়েছেন, যারা বিশ্বের সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং তাঁর ৪ সাহেবজাদা মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর।
উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর এই কোটি কোটি টাকার বিশাল সম্পদ মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের জন্য ট্রাস্ট করে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করেছেন। এত বড়ো আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
মহান আল্লাহর প্রিয় বন্ধু এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরি, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানই কেবল জানতেন মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। আর তারই বাস্তব প্রতিফলন বিশ্বব্যাপী মোহাম্মদী ইসলামের ব্যাপক জাগরণ।
দেওয়ানবাগে দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা
মহান আল্লাহর বন্ধু অলী-আল্লাহ্গণ সাধারণ পথ ভোলা মানুষদেরকে আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে পাওয়ার বিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে শিক্ষালায় প্রতিষ্ঠা করেন, তাকেই দরবার শরীফ বলা হয়ে থাকে। খাঁটি অলী আল্লাহ্গণ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করে আগত মানুষকে সেখানে তরিকতের বিধি বিধান শিক্ষা দিয়ে থাকেন। আল্লাহর মহান বন্ধু, যুগের ইমাম, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান ১৯৮৫ সালের ২৮ মার্চ আপন মোর্শেদের চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফ থেকে ঢাকাস্থ আরামবাগে চলে আসেন। এর কিছুদিন পরে তিনি একটি দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করার মনস্থ করেন। আর সেই লক্ষ্যেই তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় দরবার শরীফের জন্য জায়গা দেখতে থাকেন।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় জায়গা দেখা হয়েছিল। ঢাকার সাভার এলাকায় জায়গা দেখা হয়েছিল, কিন্তু তা পছন্দ হয়নি। ঢাকার ডেমরা এলাকায় দরবার শরীফের জন্যও জায়গা দেখা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত মানুষের কোনো কিছুই করার নেই। তাই শেষ পর্যন্ত সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান দেওয়ানবাগেই দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ৯ আশ্বিন, ১৩৯২ বঙ্গাব্দ, ১৪০৭ হিজরির ১০ মহররম, রোজ বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন, মদনপুর ইউনিয়নের দেওয়ানবাগ গ্রামে সূফী সম্রাটের দরবার প্রতিষ্ঠা হয়। মাত্র ১০ কাঠা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত সেই ছোটো দেওয়ানবাগ দরবার শরীফটি আজ প্রায় শতাধিক বিঘা জমির সমন্বয়ে এক বৃহৎ দরবারে রূপান্তরিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেওয়ানবাগ দরবার শরীফটি আজ শুধু বাংলাদেশে অন্যতম বৃহৎ দরবার শরীফই নয়, বিশ্বের ১৩২টি রাষ্ট্রে এই দরবারের সুনাম সুখ্যাতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সূফী সম্রাটের ভক্তের সংখ্যা বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩ কোটি অতিμম করেছে। দিন দিন তা শুধু বেড়েই চলেছে। আর এই দেওয়ানবাগ দরবার শরীফই আজ বিশ্বের মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র স্থানরূপে বিবেচিত।
উল্লেখ্য যে, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান ১৯৮৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার যখন দেওয়ানবাগে প্রথম দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন, তখন একবার আমার কাছে জানতে চান যে, বাংলাদেশে যতগুলো দরবার আছে, দেওয়ানবাগ তার মধ্যে ৫ নম্বরে পড়ে কিনা? সেদিন এর সঠিক জবাব দিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল। কিন্তু আজ আর দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ নিয়ে সেই প্রশ্নের অবকাশ নেই। কেননা সূফী সম্রাটের প্রতিষ্ঠিত দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ এখন মোহাম্মদী ইসলামের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে সমাদৃত। আর এ দরবার শুধু বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দরবার শরীফ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। দেওয়ানবাগে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করার পর কিছু সংখ্যক কুচক্রীরা তা মেনে নিতে পারেনি।
ফলে তারা নানাভাবে দরবার শরীফের অনিষ্ট সাধন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আল্লাহর এই মহান বন্ধুর দুশমনেরা যখন কোনোরকম সুবিধা করতে পারলো না, তখন তারা সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের বিরুদ্ধে আল্লাহ্কে দেখার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করল। দেওয়ানবাগেরই জনৈক জিয়াউল হক খন্দকার বাদী হয়ে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান ও তাঁর সহধর্মিণী কুতুবুল আকতাব সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-সহ মোট ১৮ জনকে আসামী করে নারায়ণগঞ্জ জজকোর্টে ৩৯৫ (ক) ধারায় মামলা দায়ের করে।
তাতে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আল্লাহ্কে দেখেছেন এই অভিযোগ এনে তাঁর বিচার দাবী করা হয়েছিল। আমি ড. আবদুল মান্নান মিয়া (লেখক) এই মামলার একজন আসামী ছিলাম। আল্লাহর অপার দয়ায় আমি আসামী হওয়া সত্ত্বেও একজন আইনজীবী হিসেবে উক্ত মামলা পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছি। নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট কাজী আহম্মদ আলী সাহেব, সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে এবং আমি তার সহযোগী অ্যাডভোকেট হিসেবে মামলা পরিচালনা করেছি। উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট আল্লাহ্কে দেখেছেন, এই অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং সাথে ধর্মীয় আরো কিছু বিষয়সহ অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাই আইনের বিষয়ের চেয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে মামলা লড়তে হয়েছে বিধায় অ্যাডভোকেট কাজী আহম্মদ আলী সাহেব কোর্টে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তার আহ্বানে প্রতিপক্ষের আর্জির সকল জবাব আমাকেই দিতে হয়েছে। আমি উক্ত মামলার একজন আসামী হওয়া সত্ত্বেও অ্যাডভোকেট হিসেবে মামলাটি পরিচালনার সুযোগ পেয়েছি। আর দীর্ঘ দেড়ঘণ্টা যাবৎ সূফী সম্রাটের পক্ষের সকল যুক্তি ও দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়ে সত্যিই আমি ধন্য। সেজন্য মহান আল্লাহর দরবারে লাখ শুকরিয়া জানাচ্ছি। উক্ত মামলায় সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের পক্ষে বিজ্ঞ আদালত রায় দেন এবং তাঁকে একজন শ্রেষ্ঠ‘সুফি সাধক’ বলে রায়ে উল্লেখ করেন। ফলে কুচক্রীদের মুখে চুনকালি পড়ে।
প্রসঙ্গত একটি কথা বলতে হয় যে, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান আল্লাহ্কে দেখেছেন, তা সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। কেননা আল্লাহ্কে দেখা উচ্চ পর্যায়ের কোনো অলী-আল্লাহর পক্ষেই
কেবল সম্ভব। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আল্লাহ্কে দেখেছেন এমন ঘটনা শোনার পরে গোটা দেশবাসীর উচিৎ ছিল, সূফী
সম্রাটের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা। এমন একটি মহামূল্যবান ঘটনা আল্লাহ্ যে মহামানবের দ্বারা ঘটালেন, তিনি
জাতির কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই অভাগা জাতি তা না করে বরং কিছু সংখ্যক ধর্মান্ধ ব্যক্তির
চক্রান্তে পড়ে সূফী সম্রাটের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। আল্লাহ্ তাঁর বন্ধুর সহায় ছিলেন বলেই সারাদেশের তথাকথিত আলেমদের
চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়ে মামলায় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে বিজয় দান করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ জনাব বাহারুল
ইসলাম সাহেব সূফী সম্রাটের পক্ষে রায় ঘোষণা করার পর থেকে আল্লাহর এই মহান বন্ধুর নাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
ফলে আজ আর মানুষ আল্লাহ্ নিরাকার এবং তাঁকে দেখা যায় না, একথা বলে না। বরং এখন অনেক আলেমকেই বলতে
শোনা যায়, আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁকে দেখা যায়। এই মামলায় জয়লাভের পর থেকে সূফী সম্রাটের ভক্ত মুরিদের সংখ্যা
দিন দিন শুধু বেড়েই চলেছে। ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সুবিধার জন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান দেশের
বিভিন্ন এলাকা ও শহরে আরো কয়েকটি শাখা দরবার প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার ফলে মোট দরবার শরীফের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে
১১টিতে। দরবার শরীফগুলো হলো- ঢাকার মতিঝিল আরামবাগে ‘বাবে রহমত’, দেওয়ানবাগ শরীফ, নারায়ণঞ্জের ‘বাবে
জান্নাত’ দেওয়ানবাগ শরীফ, কমলাপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পিছনে ‘বাবে মদীনা’ দেওয়ানবাগ শরীফ, মগবাজারে ‘বাবে
ফেরদৌস’, দেওয়ানবাগ শরীফ, রংপুরের পীরগাছায় ‘বাবে নাজাত’ দেওয়ানবাগ শরীফ, চুয়াডাঙ্গায় ‘বাবে নেয়ামত’
দেওয়ানবাগ শরীফ, রাজশাহীতে ‘বাবে নূর’ দেওয়ানবাগ শরীফ, গাজীপুরে ‘বাবে জান্নাতুল মাওয়া’ দেওয়ানবাগ শরীফ,
চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে ‘বাবে মাগফিরাত’ দেওয়ানবাগ শরীফ, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ‘বাবে বরকত’ দেওয়ানবাগ শরীফ
এবং ব্রাহ্মবাড়ীয়ার আশুগঞ্জে সূফী সম্রাটের জন্মস্থান ‘বাবে মোর্শেদ’ দেওয়ানবাগ শরীফ নামে মোট ১১টি দরবার শরীফ
রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় রয়েছে বহু সংখ্যক খানকাহ শরীফ ও আশেকে রাসুল মজলিস রয়েছে।
এতদ্ব্যতীত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহুসংখ্যক খানকাহ শরীফ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সেখান থেকেও সূফী সম্রাটের প্রচারিত মোহাম্মদী ইসলাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
[লেখক: সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা]