Cancel Preloader

সম্পাদকীয়

মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “তাঁর প্রতি শান্তি, যেদিন সে জন্মগ্রহণ করে, যেদিন সে ওফাত লাভ করে এবং যেদিন সে পুনরুত্থিত হবে।” (সূরা মারাইয়াম ১৯: আয়াত ১৫) এই আয়াতের মাধ্যমে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ্ প্রেরিত মহামানবগণের শুভ জন্ম, তিরোধান ও পুররুত্থান দিবস মানবজাতির জন্য অবারিত শান্তি ও কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে। মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় ১৯৪৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান এই ধুলির ধরায় আগমন করেন।
জগৎশ্রেষ্ঠ এই মহামানব ইসলাম ধর্মের শতাধিক সংস্কার করেছেন।

আবহমানকাল থেকে মানুষ বিশ্বাস করত আল্লাহ্ নিরাকার, তাঁকে দেখা যায় না। প্রচলিত এই ভ্রান্ত ধারণার অবসানকল্পে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ৩৩ বছর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক প্রায় ১১ হাজার পৃষ্ঠা সংবলিত ৮ খণ্ড তাফসীর শরীফ প্রণয়ন করেছেন। এই ৮ খণ্ড তাফসীরে তিনি পবিত্র কুরআন ও মারফু হাদিসের আলোকে প্রমাণ করেছেন- ‘আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁর নুরের রূপ আছে।’ এই অভূতপূর্ব অবদানের পুরস্কার হিসেবে মহান আল্লাহ্ পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের চেহারা মোবারকের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ ইমাম। তাঁর সান্নিধ্যে এসে মোহাম্মদী ইসলামের সুমহান শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষ আত্মশুদ্ধি লাভ করছে এবং আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হচ্ছে।

সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান একদিকে যেমন মহান আল্লাহর প্রকৃত স্বরূপ উপস্থাপন করেছেন, অন্যদিকে হযরত রাসুল (সা.)-এর সুউচ্চ মর্যাদা ও প্রকৃত পরিচয় জগদ্বাসীর নিকট তুলে ধরেছেন। তিনি পবিত্র কুরআন, মারফু হাদিস ও ইতিহাসের আলোকে অকাট্য যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন- ‘হযরত রাসুল (সা.) শুধু ধনীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন দোজাহানের বাদশাহ’। তাঁর এই সংস্কারের ফলে হযরত রাসুল (সা.) গরিব ছিলেন এরূপ ভ্রান্ত ও অমূলক ধারণার অবসান ঘটেছে। হযরত রাসুল (সা.) ১২ রবিউল আউয়াল নয়, ১ রবিউল আউয়াল ওফাৎ লাভ করেছিলেন, ইতিহাসের আলোকে এর সত্যতা সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান প্রমাণ করেন এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ হিসেবে উদ্যাপন রীতি প্রচলন ও বাস্তবায়ন করেন।

এছাড়া সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের আরো উল্লেখযোগ্য সংস্কার হলো- তিনি পবিত্র কুরআন গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন এতে ৬,২৩৬টি আয়াত আছে। পরবর্তীতে এই প্রমাণের যথার্থতা উপলব্ধি করে বাংলাদেশ সরকার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত পবিত্র কুরআন শরীফে সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৬,২৩৬টি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের দেশে নিজের নামে, মায়ের নামে, পিতার নামে কোরবানি দেওয়ার রেওয়াজ চালু ছিল। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বান্দার নামে কোরবানি করার ভ্রান্ত রীতির অবসান ঘটিয়ে বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি করার বিধান প্রবর্তন করেন। তিনি রবিবারের পরিবর্তে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন নির্ধারণ করেন, যা ১৯৮২ সালে সরকারিভাবে বাস্তবায়িত হয়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান খুৎবার রহস্য উদ্ঘাটন ও মাতৃভাষায় খুৎবা প্রদানের রীতি প্রচলন করেন। তিনি দলিল লিখনে ভ্রান্তরীতির অবসান ঘটিয়ে ইসলাম সম্মত পদ্ধতি প্রবর্তন করেন, যা বাংলাদেশ সরকার ১৯৯১ সালের ১১ আগস্ট থেকে তাঁর প্রস্তাবিত ইসলামি বিধান মোতাবেক বাংলাদেশের সর্বত্র দলিল লিখনের নির্দেশ জারি করেছেন। কাবা ও রওজা শরীফের ছবি সংবলিত জায়নামাজে নামাজ পড়া বেয়াদবি এবং ছবি সংযোজনের চক্রান্ত উদ্ঘাটন ও তা পরিত্যাগ করার বিধান প্রবর্তন করেন। আমাদের সমাজের এক শ্রেণির লোক মাজার ও রওজা শরীফ জিয়ারত করাকে বিদআত বলে থাকে। অথচ হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘‘আমার ওফাতের পর যে ব্যক্তি হজ সম্পাদন করবে, অতঃপর আমার রওজা জিয়ারত করবে, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করল।’’ (বায়হাকী শরীফ ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৩) সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মাজার ও রওজা শরীফ সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে হাদিসের প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, মাজার ও রওজা শরীফ জিয়ারতের মাধ্যমে মানুষ অবারিত রহমত ও বরতক লাভ করতে পারে। উল্লিখিত সংস্কারগুলো ছাড়াও সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আরও বহু সংস্কার করেছেন, যার কারণে মুসলিম জাতি শান্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলামের হারনো গৌরব ফিরে পেয়েছে। এই জন্য তাঁর কদম মোবারকে জানাই লাখো শুকরিয়া।

এই ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ৭১তম শুভ জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি যথাযথ মর্যাদায় উদজাপনের জন্য দেশ ও বিদেশের কোটি কোটি মোর্শেদ প্রেমিক বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। তারা এই দিনটিতে পশু জবাই, বাড়িতে বাড়িতে আলোকসজ্জা ও নতুন জামা-কাপড় পরিধান-সহ উন্নত মানের খাবার রান্না করে থাকেন। এছাড়া দেওয়ানবাগ শরীফের পক্ষ থেকে ‘সূফী সম্রাট’ নামক স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।

পরিশেষে, জগৎশ্রেষ্ঠ মহামানব সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শুভ জন্মদিনে তাঁর নুরানিময় কদম মোবারকে শতকোটি সালাম ও কদমবুসি জানাই। তিনি যেন দয়া করে আমাদের সকলকে তাঁর নালায়েক মুরিদ সন্তান হিসেবে কবুল করে নেন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট