সরওয়ার-ই-কাওনাইন (সা.)
আরজু
ধরাপৃষ্ঠে ছিল অন্ধকারের রাজত্ব,
জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত সর্বত্র ছিল অন্ধকারের ছড়াছড়ি।
সভ্যতা গড়ে উঠেছিল অসভ্যতা ও অজ্ঞতার ছাঁচে,
কুফরি কীর্তিকলাপ ছিল সেই সভ্যতার শোভা।
সঠিক জীবন বিধান থেকে মানবজীবন ছিল অনেক দূরে,
জামানায় ছিল অন্ধকারের বিভীষিকা।
বিত্তহীন ও অসহায়দের দুনিয়ায় ছিল জুলুম ও অন্যায়ের প্রসারিত হাত,
দেশ শাসনের যত নিয়ম কানুন ছিল সবই ছিল ভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ।
উৎপীড়ন ও নিপীড়ন ছিল সর্বত্র বিস্তারিত, আর ছিল
ক্রীতদাসদের উপর পুঁজিপতিদের একচ্ছত্র অধিকার।
পৃথিবী ছিল অশ্লীলতা ও পাপাচারে নিমজ্জিত,
মূর্তি পূজার কুরুচিতে পূর্ণ ছিল শয়তানি প্রাসাদ।
সর্বত্র মানুষরূপী পশুদের প্রাধান্য ছিল,
শয়তানি প্রতাপ ও রাজনীতির বাতাসে ছিল বিশ্ব পাগলপারা।
খুদির গর্বে নিমজ্জিত হয়ে এ পৃথিবী খোদাকে ভুলে গিয়েছিল
বিশ্বকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল কুফর ও গোমরাহির ঘোর অমানিশা।
অবশেষে পৃথিবীতে সৃষ্টি হলো রহমতের পরিবেশ,
আরব ভূখণ্ডে একজন মহামনীষী মর্দে খোদার আবির্ভাব ঘটলো।
তিনি এসেই জামানার পরিবেশ পাল্টে দিলেন,
ক্ষুদ্রকে করলেন চন্দ্র ও সূর্যের মতো দীপ্তিমান।
সেই উম্মি নবি যিনি বিশ্ববাসীকে দিয়েছেন প্রেম ও পুণ্যের সবক,
প্রেমের জ্যোতিপথ আবিষ্কার করেছেন নতুন নিয়মে,
সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যে গড়েছেন অদৃশ্য সেতু বন্ধন।
মানবমণ্ডলীর মধ্যে সৃষ্টি করেছেন সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের অনড় বন্ধন।
হে কাবার সৌন্দর্য, প্রতিমার বিনাশকারী, আপনার প্রতি অজস্র দরূদ ও সালাম।
বিশ্ববাসীর প্রতি আপনার দয়া ও স্নেহের
অবিরত বর্ষণ ধারা এখনও প্রবাহমান।
আপনার বীরত্ব ও বদান্যতার কথা জগত এখনও স্মরণ করে বিগলিত চিত্তে।
আপনার প্রজ¦লিত আলো কোনো প্রলয়ই নেভাতে পারবে না।
আপনি তো কাবার প্রভাত আর প্রতিমা প্রাসাদের সন্ধ্যা।
আপনার পবিত্র অঙ্গন হলো লা-মাকানের সুশোভিত অন্তরঙ্গতা,
স্বয়ং আল্লাহ্ যাঁর প্রতি গভীর আসক্ত।
আপনার পবিত্র মুখনিঃসৃত প্রতিটি শব্দ থেকে বর্ষিত হয় আল্লাহর বাণী,
আপনার প্রতিটি বাণী থেকে বিচ্ছুরিত হয় তাওহিদের স্বচ্ছ সমুজ্জল পয়গাম।
আপনার পদচিহ্ন অনুসরণ করে যদি বিশ্ব অগ্রসর হয়
তবে বিশ্ব কেবল দর্পণই হবে না, হবে দর্পণ তৈরির কারখানা।
দরূদ ও সালাম সেই নবির ওপর-
যিনি উভয় জাহানের নেতা।
দরূদ ও সালাম সেই নবির ওপর-
যাঁর অধিকার ও আধিপত্য সকল সৃষ্টির উপর।
দরূদ ও সালাম সেই নবির ওপর-
যিনি যাত্রীকে দিয়েছেন পথের দিশা।
দরূদ ও সালাম সেই নবির ওপর-
যিনি প্রতিটি মঞ্জিলের পথ প্রদর্শক।
তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম-
যিনি আল্লাহর গুণাবলি ও সৌন্দর্য দু’হাতে বিলিয়েছেন।
তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম-
যিনি প্রেমের তথ্য উদ্ঘাটন করে শিখিয়েছেন প্রেম।
সেই নবির প্রতি দরূদ ও সালাম-
যিনি তরণীকে তুফান থেকে রক্ষা করবেন।
সেই নবির প্রতি দরূদ ও সালাম-
যিনি অন্যের দুঃখ কষ্ট অকাতরে সহ্য করেছেন।
দরূদ ও সালাম সেই নবির ওপর-
যাঁর উপাধি রাহমাতুল্লিল আলামিন,
যাঁর পদচিহ্ন শোভা আরশ-ই-মুয়াল্লার-
বিশ্বময় পরিব্যপ্ত আজো যাঁর দ্বিন।
[কবি আরজু ভারতীয় উপমহাদেশের একজন খ্যাতনামা কবি। ভারতের লাখনৌতে তিনি বসবাস করতেন। তিনি একজন শক্তিমান এবং ঐতিহ্য সচেতন কবি ছিলেন। এই দীর্ঘ কবিতাটিতে কবির রাসুল প্রেমের স্বরূপ প্রকাশ পেয়েছে।]