সম্পাদকীয়
মহান আল্লাহর প্রিয় বন্ধু, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান গত ২৮ ডিসেম্বর, সোমবার ভোর ৬টা ৪৮ মিনিটে তাঁর কোটি কোটি ভক্ত ও মুরিদ সন্তানকে শোক সাগরে ভাসিয়ে, ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে, ৭১ বছর বয়সে ওফাত লাভ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
প্রাণপ্রিয় মোর্শেদ এবং আত্মার পিতার এই আকস্মিক তিরোধানের খবর পেয়ে দেশ ও বিদেশের আশেকে রাসুল জাকেরবৃন্দ গভীর শোকাহত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিশ্বের বর্তমান করোনা মহামারির মধ্যেও সারাদেশের লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল মুরিদ সন্তান রাজধানী ঢাকার বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে এসে উপস্থিত হন। তারা প্রাণপ্রিয় মোর্শেদ কেবলাজানকে শেষ বারের মতো এক নজর দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকেন।
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের দেহ মোবারকের কফিন মোবারক বিকাল ৪টার দিকে বাবে রহমতের নীচ তলায় মসজিদে ভক্তবৃন্দের দেখার উদ্দেশ্যে রাখা হয়। এ সময় সারিবদ্ধভাবে আশেকে রাসুল জাকেরবৃন্দ মহান মোর্শেদ দয়াল বাবাজানকে দেখে উচ্চস্বরে বিলাপ করতে থাকেন। বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অগণিত মানুষ এই মহামানবকে শেষবারের মতো দেখে তাদের তাপিত হৃদয়কে কিছুটা শীতল করার সুযোগ পান। পূর্বেই দরবার শরীফ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের জানাজার নামাজ পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে এবং মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বপার্শ্বে অবস্থিত বাবে মদীনা, দেওয়ানবাগ শরীফে তাঁর সহধর্মিণী হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-এর রওজার পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে। সেই মোতাবেক তাঁর রওজা শরীফ প্রস্তুতের কাজও শুরু হয়। মঙ্গলবার ফজরের নামাজের পর থেকে পুনরায় লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল দয়াল বাবা কেবলাজানকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। সকালে সূফী সম্রাটের কফিন মোবারক বাবে রহমতের নীচ তলায় মসজিদে রাখা হয়। তখন থেকে জোহরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল প্রাণপ্রিয় মোর্শেদকে শেষ বারের মতো দেখার সুযোগ পান।
বাদ জোহর তাঁর জানাজার নামাজে অংশগ্রহণের জন্য আরামবাগ, ফকিরাপুল ও কমলাপুর-সহ গোটা মতিঝিল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। জোহরের নামাজ শেষ হওয়ার পরে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন সূফী সম্রাটের জ্যেষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ এফ এম নূর-এ-খোদা আল আজহারী (মা. আ.) হুজুর। তাঁর জানাজার নামাজে দেশের সরকারি ও বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বহু আলেম ওলামা-সহ লক্ষ লক্ষ মানুষ এই জানাজা নামাজে অংশগ্রহণ করেন। জানাজার নামাজের পূর্বে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের একটি অছিয়তনামা পাঠ করে শোনান কনিষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ এফ এম মঞ্জুর-এ-খোদা (মা. আ.) হুজুর।
উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান তাঁর ওফাতের পূর্বে তাঁর ৪ সাহেবজাদাকে ডেকে কিছু অছিয়ত করে যান। সেই অছিয়ত নামার আলোকে সূফী সম্রাটের ৪ সাহেবজাদা লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে তাদের কাছে মোর্শেদের করে যাওয়া শেষ অছিয়তের বর্ণনা দেন। এতে সকল আশেকে রাসুল মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাটের নির্দেশনা জানতে পেরে আশ্বস্ত হন এবং ৪ সাহেবজাদার সাথে সম্মিলিতভাবে দয়াল মোর্শেদ কেবলাজানের রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলাম ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জানাজা শেষে একজন দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সূফী সম্রাটের জানাজার নামাজ এবং গার্ড অব অনার অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে দেশ বিদেশের আশেকে রাসুল ভক্ত মুরিদানকে লাইভ প্রোগ্রামে দেখানো হয়। সূফী সম্রাটের জানাজা ও গার্ড অব অনার শেষে বাবে মদীনা দরবার শরীফে তাঁর সহধর্মিণী হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-এর পাশে সমাহিত করা হয়।
উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সব সময়ই বলতেন, আমার দরবারে কোনো পির হবে না। আমার ৪ সাহেবজাদাই হবে ইমাম। কেননা, আমি কোনো তরিকা প্রচার করি না। আমি মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার করি। মোহাম্মদী ইসলামে কোনো পির হওয়ার সুযোগ নেই। সূফী সম্রাটের ওফাতের পরে তাঁর অছিয়তনামায় তাঁর ৪ সাহেবজাদাকে তিনি ইমাম হিসেবে যার যার দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দেন এবং মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরকে নেতৃত্বে থাকার নির্দেশনাও দিয়ে যান। তাঁর জানাজার নামাজ শেষে গত ১ জানুয়ারি, শুক্রবার, ২০২১খ্রি. বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ফাতেহাখানি উপলক্ষ্যে আশেকে রাসুল (সা.) মাহ্ফিল অনুষ্ঠান হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের কনিষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ এফ এম মঞ্জুর-এ-খোদা (মা. আ.), সেজো সাহবেজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ এফ এম ফজল-এ-খোদা (মা. আ.), জ্যেষ্ঠ সাহেবজাদা ইমাম ড. সৈয়দ এ এফ এম নূর-এ-খোদা আল আজহারী (মা. আ.) এবং মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর বক্তব্য রেখে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের শতাধিক দেশের লক্ষ লক্ষ মোর্শেদ প্রেমিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই ফাতেহাখানি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের ওফাত লাভে শোকাহত হয়ে দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শোক বার্তা প্রেরণ করা হয়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এবং দেশের সর্বস্তরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন।