Cancel Preloader

আশেকে রাসুল হওয়ার গুরুত্ব


ড. মো. শরীফ উদ্দিন আহমেদ

‘আশেকে রাসুল’ অর্থ রাসুল প্রেমিক। যারা হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসেন, তাদেরকেই আশেকে রাসুল বলা হয়। হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নাম ইমান। যিনি হযরত রাসুল (সা.)-কে যতটুকু ভালোবাসবেন, তিনি ততটুকু ইমানদার। মহান আল্লাহ যতটুকু রাজত্বের প্রভু, তদ্রুপ দয়াল রাসুল (সা.) ততটুকু রাজত্বের জন্য রহমত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালাকে ‘রাব্বুল আলামিন’ অর্থাৎ- ‘জগৎসমূহের প্রতিপালক’; আর হযরত রাসুল (সা.)-কে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ অর্থাৎ- ‘জগৎসমূহের রহমত’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। তিনি মহান আল্লাহ রহমত হিসেবে সৃষ্টির আদি থেকে আছেন এবং সৃষ্টির অন্ত পর্যন্ত থাকবেন। আর এ কারণেই তিনি হায়াতুন নবি।


মানুষকে বলা হয়, ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ অর্থাৎ সকল সৃষ্টির সেরা। মহান আল্লাহ মানুষকে সৃজন করেছেন একমাত্র ভালোবাসার জন্য। প্রেম ভালোবাসা মানুষের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তাইতো পৃথিবীর ইতিহাস গবেষণা করলে আমরা দেখতে পাই হযরত রাসুল (সা.)-কে প্রাণাধিক ভালোবেসেছিলেন সকল নবি-রাসুল ও আউলিয়ায়ে কেরাম। হযরত আদম (আ.) হতে শুরু করে সবাই দয়াল রাসুলের আশেক ছিলেন। হাবসি ক্রীতদাস হযরত বিল্লাল (রা.) ছিলেন রাসুলের আশেক এবং রাসুল প্রেমিকদের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। যিনি রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসবেন এবং তাঁর আপন হতে পারবেন দয়াল রাসুল (সা.)-ও তাঁর আপন হবেন। যিনি রাসুল (সা.)-কে পেয়েছেন, প্রকারন্তরে তিনি মহান আল্লাহ্কেই পেয়েছেন। প্রকৃত মু’মিন হতে হলে দয়াল রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা হৃদয়ে সৃষ্টি করতে হবে। মূলত হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেম যার হৃদয়ে নেই, সে হাজারও মু’মিন দাবী করলেও মু’মিন হতে পারবে না।
হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার তাগিদ দিয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন- “হে হাবিব (সা.) আপনি বলুন! তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাস, তবে আমাকে অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন, অবশ্যই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩১)


হাদিসে কুদসিতে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘‘হে রাসুল (সা.)! আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে বিশ্ব জাহানের কিছুই সৃজন করতাম না।’’ (তাফসীরে মাজহারী ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮০) আর সেজন্য আমাদের সবাইকে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেমিক হতে হবে। হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে- হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি নিজের পিতামাতা, সন্তানসন্ততি ও অন্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি ভালো না বাসবে, সে মুু’মিন হতে পারবে না।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭ এবং মুসলিম শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৯) সুতরাং হযরত রাসুল (সা.)-কে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে তথা রাসুলের প্রেমিক হতে হবে। রাসুলের প্রেমিক হওয়া ছাড়া মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গতা তথা মুক্তি লাভ সম্ভব নয়।


আশেক মাশুককে যতই স্মরণ করে থাকে ততই তার হৃদয়ে প্রেম জাগ্রত হয়। হযরত রাসুলে খোদা (সা.)-এর নাম মোবারক মু’মিন ব্যক্তি যতই স্মরণ করবে, তার অন্তরে ততই ইমানের নুর সৃষ্টি হবে ও হৃদয়ে প্রশান্তি লাভ করবে। কবি বলেন- “উনকা মুবারক নামভি হে চায়েন দেল কা চায়েন হে।” অর্থাৎ- “তাঁর পবিত্র নামই অশান্ত হৃদয়ে শান্তি দিতে পারে।” যিনি রাসুলকে পেয়েছেন, তিনি ইমান ও মাওলাকে পেয়েছেন। মাওলাকে পেতে হলে অন্তরে ইমান সৃষ্টি করে মু’মিন হতে হবে। আর মু’মিন হতে হলে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেম-ভালোবাসা হৃদয়ে সৃষ্টি করা শর্ত। হযরত রাসুল (সা.)-কে আল্লাহ পাক প্রথমে কৃতজ্ঞতাসূচক প্রশংসাকারী ‘আহমদ’ রূপে সৃষ্টি করেন, দ্বিতীয় ধাপে- কৃতজ্ঞতাভরে প্রশংসিত ‘মুহাম্মদ’ রূপে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তৃতীয় ধাপে আল্লাহর বার্তা বাহক প্রেরিত পুরুষ- ‘রাসুল’ হিসেবে, নিজের প্রতিনিধি করে মানবজাতির নিকট সৎপথ প্রদর্শনের জন্য প্রেরণ করেন। তাইতো পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “যে ব্যক্তি রাসুলের আনুগত্য করে, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ৮০)


সূরা মায়িদাহ এর ৯২নং আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন- “তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসুলের আনুগত্য করো।” দয়াল রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে সূরা আহযাবে আল্লাহ্ তায়ালা উল্লেখ করেন- “নবি মু’মিনদের নিকট তাদের জীবনের চেয়ে অধিক নিকটবর্তী।” সমগ্র সৃষ্টিকুলের চেয়েও হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তাঁর অনুসরণ অধিক প্রয়োজন। পিতা-মাতার ভালোবাসা ও নির্দেশের চাইতেও হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও তার নির্দেশ পালন অত্যাবশ্যক, এটা ইমানি দায়িত্ব।


হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেমিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত ওয়ায়েস কারনি (রহ.), যিনি জাগতিকভাবে হযরত রাসুল (সা.)-কে দেখেননি। উহুদের যুদ্ধে হযরত রাসুল (সা.)-এর দাঁত মোবারক শহিদ হয়েছে জেনে তিনি একে একে তাঁর সবগুলো দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিলেন।
মহান আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু দয়াল রাসুল (সা.)-এর রহমতের প্রশংসার বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। তিনি মহান আল্লাহর রহমত। তাই রাসুলের প্রেমিক হওয়া আমাদের সবারই প্রয়োজন।

শান্তির দূত সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহঃ) হুজুর প্রধানত- আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা, নামাজে হুজুরি এ তিনটি বিষয় শিক্ষা দিয়ে মানুষকে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী করে আশেকে রাসুল তথা হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেমিক বানিয়ে থাকেন। তাই আমরা যদি আশেকে রাসুল হয়ে রাসুলের প্রতি দরূদ, সালাম ও মিলাদ পড়ি তাহলে রাহমাতুল্লিল আলামিন, তাঁর রহমতের দ্বারা আমাদেরকে বেষ্টন করে রাখবেন। তাহলে আমাদের কোনো বিপদের সম্ভাবনা থাকবে না। কোনো কষ্টের কারণ থাকবে না।

সুতরাং বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত থেকে বাঁচতে হলে ‘আশেকে রাসুল’ হতে হবে। আমরা যদি হযরত রাসুল (সা.)-কে আঁকড়ে ধরি, জগতের রহমতকে আঁকড়ে ধরি, তাহলে আজাব-গজব আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারবে না। রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার জন্য আদর্শ চরিত্র অর্থাৎ চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জন আবশ্যক। এই চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনের শিক্ষা দিতেন মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান। এই শিক্ষা অর্জন ব্যতীত হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রকৃত প্রেমিক হওয়া সম্ভব নয়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, রাজামেহার ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহ্সান মুন্সী আদর্শ কলেজ, দেবিদ্বার, কুমিল্লা।

সম্পর্কিত পোস্ট