মি‘রাজের বর্ণনা
ইমাম শরফুদ্দীন ইবনে সাঈদ আল-বূছীরী (রহ.)
ওগো সেরাজন, আঙ্গিনায় যার দূরান্ত হতে প্রত্যাশীগণে
ছুটিয়া আসিত পদব্রজে আর দ্রুতগামী যত উষ্ট্রীবাহনে;
সেই জন যিনি বিরাট প্রমাণ বিবেচক আর ভাবুকের তরে;
সেই জন যিনি বড়ো নেয়ামত. ভাগ্যবশত পাইতে যে পারে!
হারাম হইতে আরেক হারামে করেছিলে তুমি নৈশভ্রমণ,
রাতের আঁধার ছিন্ন করিয়া পূর্ণিমা শশি বেড়ায় যেমন।
ঊর্ধ্বলোকেতে উঠিতে উঠিতে পৌঁছিলে তুমি এতই নিকটে,
পারেনি যা কেহ, আশাও করেনি দুই ধনুকের দূরত্বে মোটে।
সম্মুখে দিল তোমাকে সেথায় আর সব নবি ও রাসুলগণ,
সেবকেরা সবে সম্মুখে দেয় সদাই তাদের গুরুকে যেমন।
তাঁহাদেরে নিয়ে শোভাযাত্রায় ভেদ করেছিলে সাত আসমান,
সে মহা মিছিলে তুমি নেতা ছিলে হস্তে তোমার ছিল যে নিশান।
যেতে যেতে তুমি বাদ রাখিলে না কোনো লক্ষ্যই অগ্রগামীর
আল্লাহ্র কাছে পৌঁছিতে, আর ধাপ কোনোটাই ঊর্ধ্বারোহীর।
নিচু করে দিলে মর্যাদা সব তুলনায় তব অন্য সবার,
ডাক পেলে তুমি ঊর্ধ্বগমনে একাকীই যেন শ্রেষ্ঠ অপার।
হও যাতে তুমি সফল তোমার প্রভুর সঙ্গে গোপন মিলনে
চোখের আড়ালে, জানিতেও পার মহারহস্য অতীব গোপনে!
লভেছিলে তুমি গৌরব সব শরিক তাহাতে ছিল না কেহই,
পার হয়েছিলে প্রতিটি মোকাম কোনো রকমের ভিড় ব্যতীতই।
যেই মর্যাদা পেয়েছিলে তুমি বিরাট ছিল যে পরিমাপ তার,
নেয়ামতরাজি লভেছিলে যত লাভ করে তাহা সাধ্য কাহার!
মুসলিম মোরা আমাদের লাগি শুভ সংবাদ কত বড়ো আহা!
আছে আমাদের আশ্রয়-খুঁটি ধ্বংস কখনও হইবে না যাহা!
বলিলেন যবে আল্লাহ্ মোদের দাওয়াত দাতাকে শ্রেষ্ঠ রাসুল,
হইলাম মোরা উম্মত সেরা করিয়া তাঁহার দাওয়াত কবুল।
অনুবাদ: অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান
[ইমাম শরফুদ্দীন আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ আল-বূছীরী (রহ.) ‘ক্বাছীদাতুল বুরদাহ’-এর রচয়িতা। তিনি ১২১২ সালে মিশরের ‘দালাছ’ নামক জনপদে তাঁর মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ইমাম বূছীরী জীবনের অধিকাংশ সময় তাঁর পিতার জনপদ বূছীরে অতিবাহিত করেন বলেই ‘আল-বূছীরী’ নামে খ্যাত হন। রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রশংসায় রচিত ‘আল বুরদাহ’ নামক ক্বাছীদাই ইমাম বূছীরীর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ রচনা। ক্বাছিদাতুল বুরদায়ে রয়েছে ১০টি পরিচ্ছদ এবং ১৬৫ লাইনের একটি সুদীর্ঘ কবিতা। তিনি ছিলেন তৎকালীন মিশরের একজন বিখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ, কবি, মুহাদ্দিছ ও দক্ষ লিপিকার। ইমাম বূছীরী ১২৯৬ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন। এখানে ‘ক্বাছীদাতুল বুরদাহ’ থেকে পবিত্র মি‘রাজ সম্পর্কিত কবিতাটি চয়ন করা হয়েছে ]