ইসলামের দৃষ্টিতে সিজদা ও কদমবুসি
মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান
[সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান রচিত ‘শান্তি কোন পথে?’ থেকে প্রবন্ধটি সংকলন করা হয়েছে।-সম্পাদক]
সিজদা আরবি শব্দ। এর অর্থ মস্তক অবনতকরণ, মাথানত করা, মাটিতে কপাল স্পর্শ করা, আনুগত্য স্বীকার করা, হুকুম পালন করা, ইত্যাদি। সিজদা প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন- “আর আমি যখন আদম (আ.)-কে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদের বললাম- তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে আদেশ অমান্য করল এবং অহংকার করল। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলো।” (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ৩৪)
অন্যদিকে কদমবুসি শব্দটি আরবি ‘কদম’ ও ফারসি শব্দ বুসির সমন্বয়ে গঠিত, এটির অর্থ পদচুম্বন বা পায়ে চুম্বন করা। হযরত ঝারে‘ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেন, “আমরা যখন মদীনায় আগমন করলাম, তখন দ্রুত নিজেদের সওয়ারি হতে অবতরণ করলাম। অতঃপর আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর হাত মোবারক ও কদম মোবারকে চুম্বন করলাম।” (আবু দাউদ শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৪০২)
কদমবুসি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভক্তি প্রদর্শনের জন্য করা হয়। পক্ষান্তরে সিজদার উদ্দেশ্য ইবাদত করা। সিজদার জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। যথা-
১। নিয়ত করা,
২। ওজু করা,
৩। কেবলামুখী হওয়া ও
৪। অষ্টঅঙ্গ মাটিতে স্পর্শ করে সিজদা করা, অর্থাৎ দু’পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলী, দু’হাঁটু, দু’হাত এবং নাক ও কপাল- এই অষ্টঅঙ্গ জমিনে স্পর্শ করে সিজদা করা।
এই চারটি শর্ত পালন করা ব্যতীত সিজদা হবে না। আর সিজদার উদ্দেশ্য উপাসনা করা, অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদত করা। মহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেন- “তারা কি লক্ষ্য করেনি আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যার ছায়া ডান ও বাম দিকে ঢলে পড়ে আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সিজদাবনত হয়? আর আল্লাহকেই সিজদা করে, যা কিছু আছে আসমানে এবং যে সকল জীবজন্তু আছে জমিনে এবং ফেরেশতারাও, তারা অহংকার করে না।” (সূরা আন নাহল ১৬: আয়াত ৪৮ ও ৪৯)
প্রকৃতপক্ষে সিজদা নামাজের অন্যতম রুকন, সিজদার মাধ্যমে বান্দা সুমহান আল্লাহর অতীব নিকটবর্তী হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “সিজদা অবস্থায় বান্দা তার প্রতিপালকের সর্বাধিক সান্নিধ্যে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা সিজদায় গিয়ে অধিক পরিমাণে প্রার্থনা করো।” (তাফসীরে মাজহারী ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮৫)
অতএব সিজদা করা হয় কেবলামাত্র মহান আল্লাহকে। অন্যদিকে কদমবুসি করা হয় আল্লাহর বান্দাকে, এর জন্য কোনো শর্ত নেই। অর্থাৎ ইতঃপূর্বে উল্লিখিত সিজদার যে চারটি শর্ত রয়েছে, কদমবুসির ক্ষেত্রে এরূপ কোনো শর্ত নেই। যে কোনো সময়ে পিতামাতা, শিক্ষক কিংবা পির-মোর্শেদকে কদমবুসি করা উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ। এটির উদ্দেশ্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভক্তি প্রদর্শন করা।
অথচ আমাদের সমাজে এরূপ ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, কদমবুসি করতে গেলে মাথা নিচু করতে হয়, আর আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো সামনে মাথা নত করাই শিরক। আসলে এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে আমাদেরকে বিভিন্ন প্রয়োজনে মাথা নিচু করতে হয়, যা কখনোই শিরক নয়। যেমন কৃষক যখন ফসল রোপণ করে, তখন তাকে মাথা নিচু করতে হয়। জুতা পড়ার সময় জুতার ফিতা বাঁধতে গিয়ে মাথা নিচু করতে হয়। হাত থেকে কলম বা অন্য কিছু মাটিতে পড়ে গেলে, সেটি উত্তোলন করতেও মাথা নিচু করতে হয়। এমনকি চা পান করতে কিংবা খাদ্য গ্রহণ করতেও মাথা নিচু করতে হয়। অথচ এগুলোকে শিরক বলা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
কদমবুসি বা পদচুম্বন শরিয়তসম্মত কিনা?
কদম শব্দটি আরবি, এর অর্থ পা, চরণযুগল। আর বুসি শব্দটি বূসাহ থেকে এসেছে, এটি ফারসি শব্দ, এর অর্থ হচ্ছে চুম্বন। সুতরাং কদমবুসি শব্দটির অর্থ পদচুম্বন।
কুল-কায়েনাতের রহমত বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর হাতে ও পায়ে সাহাবায়ে কেরাম চুম্বন করতেন। হযরত ঝারে‘ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, আর তিনি ছিলেন আবদুল কায়েস গোত্রীয় প্রতিনিধিদের দলভুক্ত। তিনি বলেন- “আমরা যখন মদীনায় আগমন করলাম, তখন তাড়াহুড়া করে নিজেদের সওয়ারি হতে অবতরণ করলাম। অতঃপর আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর হাত মোবারক ও কদম মোবারকে চুম্বন করলাম।” (আবু দাউদ শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৪০২)
অনরূপভাবে আমিরুল মু’মিনিন, শেরে খোদা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- “আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামের একটি দলকে কোনো এক অভিযানে প্রেরণ করলেন। আর এ দলটির সেনাপতি নির্ধারণ করেন হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রা.)-কে। অতঃপর এ অভিযানে মুসলমানগণ বিজয় লাভ করেন এবং তারা মদীনার উদ্দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য মদীনা শরীফের বাইরে আসেন। হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু বলেন- হযরত যায়েদ (রা.) যখন আল্লাহর রাসুল (সা)-কে দেখতে পেলেন, তৎক্ষণাৎ তিনি উট থেকে নেমে আসেন এবং আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর নিকট আগমন করেন। তারপর হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা (রা.) আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর হাত মোবারক ও কদম মোবারক চুম্বন করেন। তারপর আল্লাহর রাসুল (সা.) হযরত যায়েদ (রা.)-কে ধরে কাছে টেনে নেন এবং তার মাথায় চুম্বন করেন। তারপর হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহা (রা.)-ও উট থেকে নেমে আসেন এবং তিনিও আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর হস্ত মোবারক ও কদম মোবারকে চুম্বন করেন। আর আল্লাহর রাসুল (সা.)-ও আবদুল্লাহ্ ইবনে রাওয়াহাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আলিঙ্গন করেন।” (মুসনাদে ইমাম আলী ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৫)
নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে যুগের ইমাম, মোজাদ্দেদ, আওলিয়ায়ে কেরাম, নেককার সালেহিন এবং সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের হাত-পা চুম্বন করা শুধু আদব বা শিষ্টাচারই নয়, বরং বরকত লাভের উত্তম মাধ্যম এবং হাদিসের আলোকে এটি সুন্নতও বটে । কেউ কেউ এটিকে ব্যক্তিসত্তার অবমাননা ও ঘৃণ্য কাজ বলে মনে করলেও এ কাজটি সাহাবায়ে কেরাম, পরবর্তীতে আওলিয়ায়ে কেরাম ও বুজুর্গানে দ্বিন এবং বর্তমানেও নেককার ব্যক্তি তথা অলী-আল্লাহ্গণ তাঁদের মোর্শেদের হাত-পা চুম্বনের স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের দ্বারা বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন ওহির বাণী আল কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “হযরত ইউসুফ (আ.) তাঁর পিতামাতাকে সিংহাসনে বসালেন। অতঃপর তাঁরা [অর্থাৎ পিতা হযরত ইয়াকুব (আ.), মাতা ও তাঁর এগারো ভাই] সকলে ইউসুফ (আ.)-এর সম্মানে (তাঁর কদম মোবারকে) সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন।” (সূরা ইউসুফ ১২: আয়াত ১০০)
মুসলিম জাতির আদি পিতা হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ (আ.) যে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে পবিত্র কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন, সেই পাথরখানা হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কদম মোবারকের স্পর্শে ধন্য হয়েছিল, যা বর্তমানে মাকামে ইব্রাহিমে অবস্থিত। মহান আল্লাহ্ মুসলিম উম্মাহ তথা উম্মতে মোহাম্মদীকে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কদম মোবারকের রহমত ও বরকত হাসিলের জন্য ঐ মাকামে ইব্রাহিমকে নামাজের স্থানরূপে গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি মহিমান্বিত আল্লাহ্ পবিত্র জবানেই বলে দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে-“তোমরা মাকামে ইব্রাহিমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো।” (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ১২৫)
হযরত ওয়াঝি’ ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- “একদা আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হলাম। অতঃপর আমাদেরকে ইশারা করে বলা হলো- ইনিই হচ্ছেন আল্লাহর রাসুল (সা.)। আমরা তখন একে একে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর হস্তদ্বয় এবং কদম মোবারক ধরে চুমু খেলাম।” [ইমাম আবু আবদুল্লাহ্ মোহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারী (রহ.) কর্তৃক প্রণীত, ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃষ্ঠা ৪৩৯, হাদিস নং ৯৮৭]
ইমাম বোখারী (রহ.) হযরত মদীনাতুল আবদী হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন- “আশবা (রা.) নামক একজন সাহাবি চলমান অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় চুম্বন করলেন, অতঃপর রাসুল (সা.) তাকে বললেন- তোমার দু’টি স্বভাব আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.) পছন্দ করেছেন।” (আল আদাবুল মুফরাদ)
আমিরুল মু’নিনিন, শেরে খোদা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু স্বীয় চাচাজান হযরত আব্বাস (রা.)-এর হাত-পা চুম্বন করতেন। এ প্রসঙ্গে হযরত সুহাইব (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন- “আমি শেরে খোদা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুকে এ অবস্থায় দেখেছি, তিনি (তাঁর চাচাজান) হযরত আব্বাস (রা.)-এর হস্ত ও পদদ্বয়ে চুম্বন করছিলেন।” (ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃষ্ঠা ৪৪০, হাদিস নং ৯৮৮)
এমনিভাবে হাদিস শরীফে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর দু’কদম মোবারক চুম্বন করার বর্ণনা যেমন এসেছে, তেমনি তাঁর হস্ত মোবারক ও কপাল মোবারকেও লোকেরা যে চুমু খেয়েছেন, সেই বর্ণনাও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইবনে ইসহাক (রহ.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন- “হযরত রাসুল (সা.)-এর তায়েফ সফরে আঙ্গুর বাগানের মালিক উৎবা ও শাইবা যখন একটি পাত্রে করে কিছু আঙ্গুর তাদের গোলাম আদ্দাসকে দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর খেদমতে পেশ করল, তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) পাত্রে হাত রেখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আঙ্গুর খেতে আরম্ভ করলেন। আদ্দাস আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল- আল্লাহর কসম! এ কথা তো এ দেশে কেউ বলে না। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন- হে আদ্দাস! তুমি কোন দেশের লোক, আর তোমার ধর্মই বা কী? আদ্দাস উত্তর দিলো- আমি একজন খ্রিষ্টান, আমি নিনুওয়াইয়ের অধিবাসী। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন- তবে তো তুমি আল্লাহর এক নেক বান্দা হযরত ইউনুস ইবনে মাত্তা (আ.)-এর এলাকার লোক। আদ্দাস বলল- আপনি ইউনুস ইবনে মাত্তাকে কীভাবে চেনেন? আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন- তিনি তো আমার ভাই, তিনি ছিলেন আল্লাহর নবি। আর আমিও আল্লাহর নবি। এ কথা শুনেই আদ্দাস উপুড় হয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কপালে, তাঁর হাতে এবং রাসুল (সা.)-এর পরশময় দু’কদম মোবারকে চুমু খেলো।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৩৪)
হযরত সাফওয়ান ইবনে আসসাল (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি বলেন- “ইহুদি সম্প্রদায়ের দু’ব্যক্তি একে অপরকে বলল চলো, আমরা নবি মোহাম্মদ (সা.)-এর নিকট যাই, আমরা তাঁকে কিছু প্রশ্ন করব। অতঃপর দু’জনই রাসুল (সা.)-এর নিকট আগমন করে তাঁকে আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে প্রশ্ন করল- ‘আমি মুসা (আ.)-কে নয়টি সুস্পষ্ট মু’জিযা দান করেছি।’ আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদেরকে বললেন- তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না, যেনা-ব্যভিচার করো না, যাকে হত্যা করতে আল্লাহ্ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না। চুরি করো না, জাদু-টোনা করো না, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে বাদশাহ’র কাছে নিয়ে যেও না, তাকে হত্যা করার জন্য। সুদ খেও না। কোনো সতী নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দিও না। যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যেও না। হে ইহুদিরা! বিশেষ করে তোমরা শনিবার দিন সীমালঙ্ঘন করো না। এ সকল কথা শুনে তারা হযরত রাসুল (সা.)-এর দু’হাত ও দু’পায়ে চুমু খেল এবং বলল- আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর নবি।” (ইমাম আহমদ, তিরমিজি, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, তাবারানী ও হাকেমের সূত্রে তাফসীরে দুররে মানছুর ১৫নং খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪৪)
সুতরাং ওহির বাণী আল কুরআন এবং হাদিসসমূহের এ সুদীর্ঘ বর্ণনা থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, হস্ত-পদ চুম্বন সম্পূর্ণ শরিয়ত সম্মত ও সুন্নতে তাকরেরি [অর্থাৎ হযরত রাসুল (সা.)-এর অনুমোদনকৃত রীতি-নীতি]।
আমাদের দেশের প্রথানুযায়ী আমরা পিতামাতা ও শিক্ষকগণকে শ্রদ্ধাভরে যে কদমবুসি করে থাকি, এটিও ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তম শিষ্টাচারের অন্তর্ভূক্ত। এরই ধারাবাহিকতায় কামেল মোর্শেদের মুরিদগণ অন্তরের শ্রদ্ধা, প্রেম এবং আনুগত্য প্রকাশের নিদর্শনস্বরূপ পরম ভক্তিভরে আপন মোর্শেদের পদচুম্বন করে থাকেন। আর নায়েবে রাসুল আওলিয়ায়ে কেরামের পদচুম্বন করা উত্তম এ কারণে যে, তাঁদের মাধ্যমেই আল্লাহর গুণাবালি ও চরিত্র বিকশিত ও প্রকাশিত হয়। প্রকৃতপক্ষে অলী-আল্লাহ্ অর্থ আল্লাহর বন্ধু। সুতরাং মহান রাব্বুল আলামিনের কারণেই তাঁদেরকে ভালোবাসা হয় এবং তাঁদের প্রতি ভক্তি, সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন- “আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারা আমার এত নিকটবর্তী হয়ে যায়, আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি; আর যখন আমি তাকে ভালোবাসতে থাকি, তখন আমি তার কর্ণ হয়ে যাই, যে কর্ণ দ্বারা শোনে; চক্ষু হয়ে যাই, যে চক্ষু দ্বারা সে দেখে; হাত হয়ে যাই, যে হাত দ্বারা সে ধরে; পা হয়ে যাই; যে পা দ্বারা সে হাটে; এবং কোনো বিষয়ে আশ্রয় চাওয়া মাত্র, আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি।” (বোখারী শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯৬৩; মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ১৯৭; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ১০নং খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৮ এবং তাফসীরে মাজহারী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৮)
সুতরাং কদমবুসি বা পদচুম্বন যেমন শরিয়ত সম্মত একটি রীতি-নীতি, তেমনি এটি ইসলাম ধর্মের একটি উত্তম শিষ্টাচার।
[লেখক: দেওয়ানবাগ শরীফের প্রতিষ্ঠাতা]