Cancel Preloader

সম্পাদকীয়

আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান ওফাতের একদিন পূর্বে ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২০ইং, রবিবার আমার ভাই-বোনসহ পরিবারবর্গের সামনে অছিয়তের মাধ্যমে দয়া করে আমাকে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব অর্পণ করেন। বাবা দেওয়ানবাগীর ওফাতের পর এই সুমহান দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, গোলামি ও সাধনালব্ধ জ্ঞানের আলোকে আমি আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। দেশ ও বিশ্বের শতাধিক দেশে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের কোটি কোটি মুরিদ সন্তান রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক বিশ্বের সকল দেশের মোর্শেদ প্রেমিকদের একই সুতোয় গেঁথে রাখার জন্য আমি অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছি। এই লক্ষ্যে প্রতি শুক্রবার বাদ জুমা জুমের মাধ্যমে আমি বাবা দেওয়ানবাগী প্রচারিত হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ সংবলিত মোহাম্মদী ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আমার আলোচনার পূর্বে দেওয়ানবাগীর দল ওলামা মিশনের সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম এবং খ্যতিমান ইসলামি গবেষক ও চিন্তাবিদগণ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শিক্ষা, সংস্কার, অলৌকিক কারামত, মানবতাবাদী ও ধর্মীয় দর্শন উপস্থাপন করে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করে থাকেন। আমার কাছে অনেকেই জানতে চান যে, আমি কেন সম্মেলনসহ দরবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে করে থাকি। ২০২০ সালে বিশ্বময় করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ফলে বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালের ২৬শে মার্চ থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষনা করে। সেই সময় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের দরবার শরীফেও আশেকে রাসুলদের না আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান দয়া করে আমার কাছে জানতে চান যে, করোনা পরিস্থিতিতে দরবারের অনুষ্ঠান কীভাবে করা যায়? কেননা মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর ধর্ম তো থেমে থাকতে পারে না। আমি দয়াল বাবাজানকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বিষয়টি বললাম। বাবাজান এতে সম্মতি জ্ঞাপন করলেন। তাই দেশ ও বিদেশের আশেকে রাসুলদের ধর্মচর্চা অব্যাহত রাখার জন্য জুম প্ল্যাটফর্মকে বেছে নেওয়া হয়। এই উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আশেকে রাসুলেরা পূর্বাপেক্ষা বেশি উপকৃত হন। কেননা ইতঃপূর্বে বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে প্রতি শুক্রবার বাদ জুমা দয়াল বাবাজানের বাণী মোবারক শুধুমাত্র উপস্থিত আশেকে রাসুলগণ শুনতে পারতেন। এছাড়া বিভিন্ন মাহ্ফিলে ও সম্মেলনে সকল আশেকে রাসুলের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতো না। বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনসহ অন্যান্য সম্মেলনগুলোতে শুধুমাত্র পুরুষ আশেকে রাসুলেরা অংশগ্রহণ করতে পারতেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আশেকে রাসুল জাকের ভাই ও জাকের বোনদের পক্ষেও বাংলাদেশে এসে দরবার শরীফের সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় না। কিন্তু অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠান করা হলে দেশ ও বিদেশের নারী ও পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণের সুযোগ হয়ে থাকে।


বাবাজানের ওফাত লাভের পূর্বে ৯ মাস যাবৎ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠান করা হয়েছে, ফলে দয়াল বাবাজানের প্রদত্ত বাণী মোবারক দেশ ও বিদেশের সকল আশেকে রাসুল ভাই ও বোনের শোনার ও বাবাজানকে দেখার সুযোগ হয়। বিশেষ করে ২০২০ সালে সুফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ৭১তম শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক দরবারের আশেকে রাসুলগণ এবং বিশ্বের ২৬টি দেশের আশেকে রাসুলগণ কীভাবে মহান মোর্শেদের শুভ জন্মদিন উদযাপন করছেন, তা জুমের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সূফী সম্রাট হুুজুর কেবলাজান বাবে রহমত থেকে তা সরাসরি দেখেন। অতঃপর তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আজকে আমি আপনাদের অনুষ্ঠান দেখে মনে শান্তি পেয়েছি।” তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে দয়াল বাবাজানের ওফাতের পরও জুমের মাধ্যমে আমি দয়াল বাবাজানের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ বিশ্বময় প্রচার করে যাচ্ছি। এছাড়া দেওয়ানবাগীর দল ওলামা মিশনের সদস্যদের মাধ্যমে ঘরে ঘরে ঘরোয়া মিলাদ মাহ্ফিলের আয়োজন করে গত দেড় বছরে বাংলাদেশে ২৬ হাজার মানুষকে মোহাম্মদী ইসলামের ছবক প্রদান করার মাধ্যমে মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী করা হয়। শুধু তাই নয়, আমি অনলাইনের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের বহু মানুষকে মোহাম্মদী ইসলামের ছবক দিয়ে যাচ্ছি। মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ গোটা বিশ্বে প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বর্তমানে আমি দেশে থাকার পাশাপাশি বিদেশে অবস্থান করে থাকি। এর ফলে ইউরোপে মোহাম্মদী ইসলামের এক নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে এবং সেখানে আশেকে রাসুলের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার পরিকল্পনা আগামী ২০২৩ সালে ইউরোপিয় ইউনিয়নের দেশগুলোর আশেকে রাসুলদের নিয়ে ‘Ashek-e-Rasul Conference’-এর আয়োজন করা। আমি আড়াই মাস বিদেশে অবস্থান করে গত ২১ জুলাই, ২০২২ইং তারিখে বাংলাদেশে আসি। দেশে আসার পর আশেকে রাসুলদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়ে যাই। বাবে রহমতে প্রত্যেক দিন শত শত আশেকে রাসুল আমার সাথে সাক্ষাতের জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসেন। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থিত বাবে মোর্শেদ দেওয়ানবাগ শরীফের এলাকার আশেকে রাসুলদের সাথে সাক্ষাৎ এবং ঐ জোনের জেলা সমন্বয়কদের সাথে মিটিং-এর জন্য ২৭শে জুলাই বুধবার নির্ধারণ করি। আমি স্বল্প পরিসরে কার্যক্রমটি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাবে মোর্শেদে হাজার হাজার আশেকে রাসুল উপস্থিত হন। তাদের উপস্থিতিতে বাবে মোর্শেদ আশেকে রাসুলদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। অনুষ্ঠানটি বৃহৎ সম্মেলনে রূপ নেয়। এর পূর্বে ২৬শে জুলাই, মঙ্গলবার বাবে মোর্শেদের আশপাশের এলাকা থেকে এবং ঢাকা থেকে শত শত আশেকা রাসুল বোনেরা বাবে মোর্শেদে উপস্থিত হন। আমার সহধর্মিণী নাদিয়া-এ-খোদা তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদেরকে মোহাম্মদী ইসলামের তালিম দেন।


এরপর ২৯শে জুলাই, শুক্রবার ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আশেকে রাসুলেরা বাবে বরকতে আসা শুরু করে। অনুষ্ঠানের দিন আশেকে রাসুল সেবকেরা আমাকে জানায় বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, মাইক্রাবাস ও প্রাইভেট কার নিয়ে হাজার হাজার আশেকে রাসুল এসেছেন। তাদের সংখ্যা বাবে মোর্শেদের অনুষ্ঠানে আসা আশেকে রাসুলদের চেয়েও বেশি। অপ্রত্যাশিতভাবে বহুসংখ্যক আশেকে রাসুলের উপস্থিতির জন্য তাবারুক বহুগুণ পরিমাণ বেশি রান্না করতে হয়। বাবা দেওয়ানবাগীর অপার দয়ায় সম্মেলনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এদিকে ৩০শে জুলাই, শনিবার এবং ৩১শে জুলাই, রবিবার ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশেকা রাসুল বোনেরা বাবে বরকত দরবার শরীফে আসেন। তাদের উদ্দেশে নাদিয়া-এ-খোদা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। একদিনের ব্যবধানে বাবে মোর্শেদ ও বাবে বরকত দরবার শরীফে বড়ো দুটি অনুষ্ঠান সফলভাবে আয়োজন এবং হাজার হাজার আশেকে রাসুলের যোগদান মোহাম্মদী ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারে বহিঃপ্রকাশ। অনুষ্ঠান দুটি জুমের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ফলে বিদেশের আশেকে রাসুল ভাই-বোনরাও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণের সুযোগ পান।


মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে লাখো শুকরিয়া তাঁর অপার দয়ায় বাবে মোর্শেদ ও বাবে বরকত দরবার শরীফের দুটি অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট