আমার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো – ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা
কিশোর বয়স থেকে আমার হৃদয় মাঝে একটি স্বপ্ন বারবার দোলা দিতো। স্বপ্নটি ছিল- আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেশ ও বিদেশের মোর্শেদ প্রেমিকদের সাথে নিয়ে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ অনুষ্ঠান করা। এই স্বপ্নের বীজ আমার মহান মোর্শেদ বাবা দেওয়ানবাগীই আমার হৃদয় মাঝে বপন করে দিয়েছিলেন। কেননা দয়াল রাসুল (সা.) ও দয়াময় আল্লাহ্কে লাভ করার জন্য মুরিদকে জগতের সবকিছুর চেয়ে বেশি স্বীয় মোর্শেদকে ভালোবাসতে হয়, এই সুমহান শিক্ষাটি আমি বাবা দেওয়ানবাগীর নিকট থেকেই পেয়েছি।
শৈশব থেকেই দেখেছি দয়াল বাবাজান তাঁর মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-কে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। মোর্শেদের প্রতি অকৃত্রিম গভীর ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে দয়াল বাবাজান বলেন, “আমি সবসময় মোর্শেদের চিন্তা, মোর্শেদের খেয়ালে চলতাম। সর্বাবস্থায় চেষ্টা করতাম মোর্শেদের সান্নিধ্যে থাকতে। আমি ঢাকা থাকলেও মোর্শেদ ফরিদপুরে কী করছেন, আমি তা বলতে পারতাম। মোর্শেদের কোনো অসুখ হওয়ার আগেই আমার সেই অসুখটা দেখা দিত। তখন আমি বুঝতে পারতাম আমার মোর্শেদের ঐ অসুখটা হয়েছে। মোর্শেদের সাথে আমার রুহানি যোগাযোগ ছিল সর্বক্ষণের। মোর্শেদ আমাকে না দেখলে থাকতে পারতেন না, আমিও মোর্শেদকে না দেখলে অস্থির হয়ে যেতাম। আমি একটু বাহিরে গেলেই মোর্শেদ অস্থির হয়ে যেতেন এবং বলতেন- মাহ্বুব মিয়া কোথায়? এই যে স্বর্গীয় প্রেম।”
স্বীয় মোর্শেদ ইমাম হুজুর (রহ.)-কে নিয়ে দয়াল বাবাজানের উল্লিখিত স্মৃতিচারণের মাঝে মোর্শেদ প্রেমের অত্যুজ্জ্বল নিদর্শন প্রকাশ পায়। ইমাম হুজুরের প্রতি দয়াল বাবাজানের অনুপম প্রেম আমাকে এতটাই মুগ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করে যে, ঐ রকম প্রেম শিখা আমার হৃদয় মাঝে প্রজ্বলিত হয়ে আমিও আমার মহান মোর্শেদ বাবা দেওয়ানবাগীর প্রেমাকর্ষণে তাঁর কদম মোবারকে নিজেকে সঁপে দেই। আর বিশ্বময় দয়াল বাবাজানের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ প্রচারে ব্রতী হই। মাত্র ৯ বছর বয়সে মোহাম্মদী ইসলামের স্বর্ণালি অগ্রযাত্রায় আমার পথ চলা শুরু হয়। এই পথচলা কণ্টকমুক্ত ছিল না, নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আমাকে দেশ ও বিদেশে দয়াল বাবাজানের আদর্শ প্রচারে এগিয়ে যেতে হয়েছে। স্বার্থান্বেষী একটি মহল বারবার চেষ্টা করেছে আমার অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য। বাবা দেওয়ানবাগীর জীবদ্দশায়ই আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও বহির্বিশ্বে মোহাম্মদী ইসলামের নব জাগরণে আমি যখন নানা পরিকল্পনা ও ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তখন থেকেই আমাকে নিয়ে দেশ ও বিদেশে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বাবা দেওয়ানবাগীর আদর্শ প্রচারের জন্য যখন সৌদি আরবে গমন করি, তখন আমাকে সৌদি পুলিশ আটক করে। তারা আমাকে অমানবিক নির্যাতন করে। সেখানে আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়। দয়াল বাবাজানের অপার দয়ার বরকতে রাব্বুল আলামিন আমাকে নিশ্চিত মৃত্যু হতে রক্ষা করেন। শত বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি এবং এখনও হচ্ছি। এরপরেও আমি আমার কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছি। কেননা আমার মোর্শেদ বাবা দেওয়ানবাগীর প্রতি আমার রয়েছে অগাধ বিশ্বাস, ভক্তি ও ভালোবাসা। তিনি আমার চেতনা ও মনোবলের উৎস। তাঁকে হৃদয়ে ধারণ করেই বিশ্বময় আমি মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার ও প্রসার করে যাচ্ছি।
আমার আজও মনে পড়ে সেদিনের কথা, যেদিন দয়াল বাবাজান আমাকে বলেছেন মোহাম্মদী ইসলাম ও তাঁর মুরিদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। আমি তাঁর কদম মোবারক জড়িয়ে ধরে আদব ও বিনয়ের সাথে আবেগে আপ্লুত হয়ে আমার অক্ষমতার কথা বলেছি। কিন্তু তিনি বারবার আমাকে বলেছেন- “তোমাকেই দায়িত্ব নিতে হবে।” আমি বাবাজানকে বললাম, “এই দায়িত্ব গ্রহণ করলে আত্মীয়স্বজন, পরিজন আমার বিপক্ষে চলে যাবে।” তখন তিনি বললেন, “আমি যদি তোমার সাথে থাকি, তাহলে।” তখন আমি দুই চোখের পানি ফেলে দিয়ে দয়াল বাবাজানকে বললাম, “আমার স্ত্রী, সন্তান এবং আমার জীবন আপনার জন্য কোরবান, আমি আমার জীবন দিয়ে আপনার অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাব।” আমার এই কথা শুনে দয়াল বাবাজান অত্যন্ত খুশি ও সন্তুষ্ট হলেন।
লেখার শুরুতে আমি আমার হৃদয়ে লালিত এক স্বপ্নের কথা বলেছি। আমার সেই অনাকাক্ষিত স্বপ্নটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একদিন দয়াল বাবাজানকে অত্যন্ত আদবের সাথে বললাম, “বাবাজান! আপনি আপনার মোর্শেদ ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.) হুজুরের শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ করে থাকেন, আপনিতো আমাদের মহান মোর্শেদ, আমরা আপনার শুভ জন্মদিনে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল সম্মেলন’ করতে চাই।” আমার কথা শুনে দয়াল বাবাজান মৃদু হেসে বললেন, “তোমার সময় তুমি বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন করিও।”
আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) ২০২০ সালের ২৮শে ডিসেম্বর, সোমবার ওফাত লাভ করেন। ওফাতের পূর্বে তিনি ২৭শে ডিসেম্বর, রবিবার, দেওয়ানবাগ শরীফ ও মোহাম্মদী ইসলাম কীভাবে পরিচালিত হবে, সেই বিষয়ে অছিয়ত করে যান। সেই অছিয়তে তিনি দয়া করে আমাকে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার জন্য নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন। বাবা দেওয়ানবাগী কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব আমি আমার সাধনালব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে যথাযথভাবে পালনে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশ ও বিদেশের মোর্শেদ প্রেমিকদের একটা সুতোয় গেঁথে রাখার জন্য এবং সেই সাথে তারা যেন দয়াল বাবাজানের শিক্ষা ও আদর্শের উপর কায়েম থাকতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমি আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
উল্লেখ্য, আমার হৃদয় নিংড়ানো আবেদনের প্রেক্ষিতে দয়াল বাবাজান আমাকে দয়া করে বলেছেন যে, আমার সময় তাঁর শুভ জন্মদিনে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ করার জন্য। ২০২১ সালে করোনা মহামারির জন্য দয়াল বাবাজানের ৭২তম শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন করতে পারিনি। তাই ২০২২ সালে দয়াল বাবাজানের ৭৩তম শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে ২৩শে ডিসেম্বর, শুক্রবার ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত বাবে বরকত, দেওয়ানবাগ শরীফে ‘বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ অনুষ্ঠানটি করি। এই অনুষ্ঠানটি ছিল বাবা দেওয়ানবাগীর শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে ‘প্রথম বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’। ইতঃপূর্বে ১৯৯৭ সাল থেকে দেওয়ানবাগীর শরীফে যে ২২টি বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন হয়েছিল, এর প্রত্যেকটি দয়াল বাবাজানের মহান মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়। যেহেতু দয়াল বাবাজানের শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে ১ম বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন, তাই মোর্শেদ প্রেমিকদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল অফুরন্ত।
৩ মাস পূর্ব থেকেই সম্মেলনটি সফল করার জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সম্মেলন স্থলে কল সেন্টার ও ইন্টারনেটের ব্যবস্থা, চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ডাক্তার, ঔষধ, অপারেশন থিয়েটার ও অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা, যে কোনো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য উদ্ধারকর্মী নিয়োগ। এছাড়া রন্ধনশালা, খাবার মাঠ, টিকিট কাউন্টার, ওজু-এস্তেঞ্জার সুব্যবস্থা। সম্মেলনে মিডিয়া সেল ছিল, যেন সাংবাদিকরা সম্মেলনস্থল থেকে সংবাদ এবং ছবি সংগ্রহ করতে পারে। বুক স্টলের ব্যবস্থা করা হয়, ফলে দেওয়ানবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত কিতাবাদি, সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ, মাসিক আত্মার বাণী ও স্মরণিকা পাঠকেরা সহজে সংগ্রহ করতে। দেওয়ানবাগ শরীফের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা সম্মেলনের ৩ মাস পূর্ব থেকে সম্মেলন স্থলে গোলামিতে নিয়োজিত ছিলেন। সম্মেলন স্থলে অপূর্ব নান্দনিকতা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হয় সুবিশাল মঞ্চ এবং বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয় বাবে বরকত, দেওয়ানবাগ শরীফকে।
সম্মেলনের ৩ দিন পূর্বে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের বর্ণাঢ্য ও গৌরবদীপ্ত জীবনের উপর ছবি প্রদর্শনী ‘ঐশী দর্পণ’ এবং প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সম্মেলনে আগত মেহমানদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কয়েক একর জায়গার সুব্যবস্থা করা হয়। সম্মেলনের ১ সপ্তাহ পূর্ব থেকে বাবে বরকত, দেওয়ানবাগ শরীফে মোর্শেদ প্রেমিকেরা আসা শুরু করে। বিশ্বের ৩০টি দেশের প্রতিনিধিগণ এই মহতী সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনের আগের রাতেই লক্ষাধিক মোর্শেদ প্রেমিকের উপস্থিতির ফলে সম্মেলন চত্বরে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। শুধু তাই নয়, আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় লোকারণ্য হয়ে উঠে। গোটা দরবার শরীফে যেন রহমতের চাদর দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল যে, সম্মেলন শুরুর ৭ দিন আগ থেকে শীতের প্রকোপ ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। ফলে আগত মোর্শেদ প্রেমিকদের শীতজনিত কষ্ট পোহাতে হয়নি। মহান আল্লাহর অপার দয়ায় বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনের সময় প্রকৃতির মাঝেও অপরূপ নৈসর্গিক ও স্বর্গীয় অবস্থা বিরাজ করছিল।
বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন-২০২২ অনুষ্ঠানের দিনের আদ্যোপান্ত
সকাল ৭.৪০ এ পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন শুরু হয়। তেলাওয়াত করেন হযরত তরিকুল ইসলাম তারিফ; বাংলায় তরজমা করেন ড. মো. আরিফ হোসেন ও ইংরেজি তরজমা করেন শামসুল আলম। এরপর আমি (প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা) বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও মোহাম্মদী ইসলামের পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করি।
এরপর অ্যাডভোকেট শাহ শিবলি নোমানের উপস্থাপনায় বক্তব্য পর্ব-১ শুরু হয়। এই পর্বে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শুভ জন্ম, শৈশব, শিক্ষাজীবন, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান, মোর্শেদের দরবারে তাঁর সাধনা, দেওয়ানবাগ শরীফ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সুমহান শিক্ষা, সংস্কার ও অলৌকিক কারামত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন যথাক্রমে ড. মুহাম্মদ নাছিরউদ্দীন সোহেল, বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান মিয়া ও হযরত মাহবুবুর রহমান আজাদী। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা পর্ব-১ শুরু হয়। এই পর্বটি উপস্থাপনা করেন জারিফ উদ্দিন।
এই পর্বে উপস্থাপকের সাথে কথোপকথন করেন সৌদি আরবের প্রতিনিধি শাহজালাল ব্যপারী, সুইডেনের প্রতিনিধি মাহবুব জুবেরী সুজা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ফরহাদ আহমেদ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি প্রকৌশলী পারভেজ খান, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি জুলকিফল বিন হারুন ও জেফরি বিন জাফর। এই পর্বে দোভাষী (Interpreter) হিসেবে ছিলেন মিজানুর রহমান।
পর্বটি শেষ হওয়ার পর ড. মুহাম্মদ নাছিরউদ্দীন সোহেলের উপস্থাপনায় আলোচনা পর্ব-২-এ অংশগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম, হযরত হাফেজ রমিজউদ্দিন ও হযরত ইউসুফ হোসেন আনসারী। আলোচকবৃন্দ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের গৌরবদীপ্ত জীবনে সংঘটিত অলৌকিক কারামত নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. পিয়ার মোহাম্মদ তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বক্তব্য প্রদান করেন।
এরপর বক্তব্য পর্ব-২ শুরু হয়। এই পর্বটি উপস্থাপনা করেন অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান মিয়া এবং বক্তব্য প্রদান করেন যথাক্রমে হযরত রুহুল আমিন কুদ্দুসী, ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান, হযরত সাব্বির আহমেদ ওসমানী এবং সাবেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। তাঁরা সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের প্রাপ্ত লকবসমূহ এবং সমাজে তাঁর সুমহান শিক্ষার বাস্তব প্রতিফলন নিয়ে বক্তব্য দেন।
এই পর্বটি শেষ হওয়ার পর তাকী মোহাম্মদ জোবায়েরের উপস্থাপনায় আলোচনা পর্ব-০৩ শুরু হয়। এই পর্বের নাম ছিল ‘মহান মোর্শেদকে যেমন দেখেছি’। যে সকল মোর্শেদ প্রেমিক ৩০/৩৫ বছর যাবৎ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সহবতে থেকে তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ লাভ করেছেন, তারা মোর্শেদের প্রতি তাদের প্রেম ও কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা উপস্থাপকের সাথে আলাপচারিতা মাধ্যমে তুলে ধরেন। এই পর্বে আলোচনায় ছিলেন দেওয়ানবাগ শরীফের সাবেক ম্যানেজার ফজলুল হক তালুকদার (চঞ্চল), দয়াল বাবাজানের খাদেম আমিনুর রহমান ভুইয়া (জাহাঙ্গীর), দেওয়ানবাগ শরীফের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী দীপু, দেওয়ানবাগ শরীফের লিয়াজো অফিসার আমিনুল ইসলাম শামীম ও দীর্ঘ ৩৭ বছর যাবৎ দেওয়ানবাগ শরীফের সাথে সংশ্লিষ্ট আনিসুর রহমান চৌধুরী।
বক্তব্য ও আলোচনা পর্বের ফাঁকে ফাঁকে রাফিদ মিনহাজ শরিফ ও কামরুজ্জামান বাবুর উপস্থাপনায় দেওয়ানবাগীর দল শিল্পীগোষ্ঠী ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন। শিল্পগোষ্ঠীর সদস্যরা হলেন মাসুদ রানা, ওয়ালী উল্লাহ্ (অলি), ফেরদৌস আলম আদনান, শেখ আব্দুল মতিন, সৈয়দ তাইফুর রহমান গালিব, আফজাল , ড. আরিফ হোসেন, নেবিল, আবদুস সালাম ও মাহ্বুব।
জুমার নামাজের আজানের পর মোহাম্মদী ইসলামের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয় এবং মোহাম্মদী ইসলামের দৈনন্দিন আমলের ‘এপ’ সকলের জন্য অবমুক্তকরণ করা হয়। এরপর দয়াল বাবাজানের ৭৩তম শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ‘সূফী সম্রাট’ স্মরণিকার মোড়ক সম্মাদনা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে উম্মোচন করে শুভ জন্মদিনের বিশাল কেক কাটা হয়। অতঃপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান, কুতুবুল আকতাব হযরত দয়াল মা (রহ.) এবং হযরত বড়ো মা (রহ.)-এর রওজা শরীফ জিয়ারত করা হয়। জিয়ারত পর্বটি পরিচালনা করেন হযরত তরিকুল ইসলাম তারিফ। জিয়ারত শেষে মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফ পাঠ করেন যথাক্রমে হযরত গিয়াসউদ্দিন, হযরত নেছার আহমদ ও হযরত আব্দুল হাকিম। মিলাদের পর জুমার নামাজ আদায় করা হয়। জুমার নামাজে ইমামতি করেন হযরত এমরান হোসাইন মাজহারী। এরপর দয়াল বাবাজানের গৌরোবজ্জ্বল ৭১ বছরের জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত একটি ডুকমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
সর্বশেষে আমার আলোচনা, সম্মেলনে আগত নতুনদের মোহাম্মদী ইসলামের ছবক প্রদান এবং আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন-২০২২ এর পরিসমাপ্তি ঘটে।
এই মহতী সম্মেলনে দেশ ও বিদেশের লক্ষাধিক আশেকে রাসুল অংশগ্রহণ করেন এবং অনলাইন প্ল্যাট ফর্মের মাধ্যমে শতাধিক দেশের লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। দেওয়ানবাগ শরীফের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই সম্মেলন উদযাপনের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদী ইসলামের নবদিগন্ত উম্মোচিত হয়। বাবা দেওয়ানবাগীর শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত ১ম বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন মোর্শেদ প্রেমিকদের আত্মার খোরাক জুগিয়েছে। অবারিত রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ এই সম্মেলনে অফুরন্ত ফায়েজের ফল্গুধারা বয়ে গেছে মোর্শেদ প্রেমিকদের হৃদয় মাঝে। সেই ফায়েজ অবগাহন করে আশেকদের হৃদয় সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত হয়েছে। আত্মশুদ্ধি, ক্বালবে আল্লাহর জিকির জারি, নামাজে হুজুরি ও আশেকে রাসুল হওয়ার দীপ্ত প্রত্যয় জাগ্রত হয়েছে লক্ষ লক্ষ মোর্শেদ প্রেমিকদের মাঝে। বাবা দেওয়ানবাগীর সাজানো বাগানকে আরো সুশোভিত করার দৃঢ় অঙ্গীকার উপস্থিত আশেকে রাসুলদের মাঝে ছিল বিদ্যমান।
এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাবা দেওয়ানবাগীর আশেকেরা প্রমাণ করে দিয়েছেন স্বার্থান্বেষী মহলের শত বাধাবিপত্তি, মিথ্যা প্রচার, বিভ্রান্তি ও গুজব মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার ও প্রসারে তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। বাবা দেওয়ানবাগীর অছিয়তকে হৃদয়ে ধারণ করে মোহাম্মদী ইসলামের স্বর্ণালি অগ্রযাত্রায় মোর্শেদ প্রেমিকেরা নির্ভীকচিত্তে অগ্রসর হবে সম্মুখ পানে এবং কোটি কোটি আশেকে রাসুলের সম্মিলিত কণ্ঠে ঝংকৃত হবে- “মোহাম্মদী ইসলামের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো; সূফী সম্রাটের আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো।”
বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে বিভিন্ন বিভাগে যারা গোলামি করেছেন এবং সম্মেলনের প্রচার ও প্রসারে যারা রাত-দিন পরিশ্রম করেছেন ও যারা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের প্রত্যেককে আমার পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ।
পরিশেষে- বিশ্ব আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন-২০২২ সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় শোকরিয়া জানাই মহান রাব্বুল আলামিনের নুরের কদম মোবারকে, রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর কদম মোবারকে এবং আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের কদম মোবারকে। আমিন।
[লেখক: মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম; পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ; প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি]