Cancel Preloader

সম্পাদকীয়

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৩ইং আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের ৭৪তম শুভ জন্মদিন। জগৎশ্রেষ্ঠ এই মহামানব ১৯৪৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দের ২৭শে অগ্রহায়ণ, বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামের সরকার বাড়িতে শুভ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হযরত আবদুর রশিদ সরকার (রহ.), যিনি হযরত রাসুল (সা.)-এর ২২তম বংশধর। তাঁর মহীয়সী মাতার নাম হযরত জোবেদা খাতুন (রহ.)। তাঁর শুভ জন্মের আগের রাতে হযরত জোবেদা খাতুন (রহ.) স্বপ্নে দেখেন আকাশে ঈদের চাঁদ উদিত হয়েছে। তিনি যখন প্রাণভরে চাঁদ দেখছিলেন তখন ঈদের চাঁদটি তাঁর কোলে নেমে আসে এবং পরদিন সকাল ১০টায় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান শুভ জন্মগ্রহণ করেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জন্মের ৭ম দিনে তাঁর দাদাজান হযরত আবদুর রফিক সরকার (রহ.) আকিকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ফখরে বাংলা হযরত তাজুল ইসলাম তাঁর নাম রাখেন মাহ্বুব-এ-খোদা অর্থাৎ খোদার প্রিয়। তিনি মাত্র ৩ বছর বয়সে বাড়ির মক্তবে পবিত্র কুরআন শিক্ষা চর্চা শুরু করেন। অতঃপর কৃতিত্বের সাথে প্রাইমারি শিক্ষা সমাপ্ত করে নায়েবে রাসুল হওয়ার বাসনায় তৎকালীন বিখ্যাত তালশহর করিমিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তিনি বৃত্তি সহকারে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতিটি স্তর কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি ছাত্র সংসদের ভিপি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।


সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল, রবিবার মাত্র ২২ বছর বয়সে ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধের প্রথম কয়েক মাস প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে ৩নং সেক্টরে মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহর তত্ত¡াবধানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। তিনি যুদ্ধ চলাকালীন পবিত্র ঈদুল ফিতরের খুৎবায় স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করেন। এই ঘোষণার মাত্র ২৭ দিন পর ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ করে। সূফী সম্রাট হজুর কেবলাজান স্বাধীন বাংলাদেশের তদানীন্তন রেইসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহার নামাজের জামাতে ইমামতি করেন। অতঃপর তিনি ১৯৭২ সালে ২৩ বছর বয়সে নবগঠিত ১৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের ধর্মীয় শিক্ষক পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে ২৫ বছর বয়সে ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর পরিচয় লাভ করেন এবং তাঁর নিকট তরিকা গ্রহণ করেন। চন্দ্রপাড়া দরবারে বাৎসরিক ওরসে তিনি গমন করলে ইমাম হুজুর প্রথম দর্শনে বুঝতে পারেন যে, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানই তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি, যার প্রতীক্ষায় তিনি দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিলেন। ইমাম হুজুুর নিজে উদ্যোগী হয়ে ১৯৭৪ সালের ১৬ই মার্চ তাঁর ৪র্থ কন্যা কুতুবুল আকতাব হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-এর সাথে সূফী সম্রাটকে বিয়ে দেন। ১৯৭৫ সালে ২৬ বছর বয়সে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মোর্শেদের নির্দেশে সেনাবাহিনীর ধর্মীয় শিক্ষক পদ থেকে চাকরি ইস্তফা দেন এবং সেই বছর ইমাম হুজুরের দরবার শরীফ পরিচালনার জন্য প্রধান খলিফা হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।


সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ১৯৮৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৩৪ বছর বয়সে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে জামানার মোজাদ্দেদ বা ধর্ম সংস্কারকের দায়িত্ব লাভ করেন। ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) ওফাতের ১ বছর পর তিনি ১৯৮৫ সালের ২৮শে মার্চ ৩৬ বছর বয়সে চন্দ্রপাড়া থেকে ঢাকায় চলে আসেন। অতঃপর তিনি ১৯৮৫ সালের ১০ই মহররম নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ গ্রামে দেওয়ানবাগ শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লেখ্য যে, এই দেওয়ানবাগে দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করায় বিশ্বব্যাপী তিনি ‘দেওয়ানবাগী হুজুর’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।


সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ১৯৮৮ সালে ১০ই মহররম ৩৯ বছর বয়সে যুগের ইমামের দায়িত্ব লাভ করেন; ১৯৮৯ সালের ৫ই এপ্রিল ৪০ বছর বয়সে হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর কাছ থেকে মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারীর দায়িত্ব লাভ করেন; ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর ৪৭ বছর বয়সে হযরত ইব্রাহীম (আ.) কর্তৃক জামে আম্বিয়ার বেলায়েতপ্রাপ্ত হন। তিনি মহান আল্লাহর স্বরূপ তুলে ধরে পবিত্র কুরআনের ৮ খণ্ড তাফসীর শরীফ লিখে প্রমাণ করেন ‘মহান আল্লাহর নুরের রূপ বা আকার আছে, তিনি নিরাকার নন।’ ফলে মহান আল্লাহ্ পুরস্কারস্বরূপ ২০০৮ সালের ১০ই অক্টোবর আরবি শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক দেখান এবং অদ্যাবধি দেখা যাচ্ছে।


সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ২০২০ সালের ২৭শে ডিসেম্বর, রবিবার মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে (ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা) দায়িত্ব প্রদান করেন। দায়িত্ব প্রদানের পর দিন ২৮শে ডিসেম্বর, সোমবার সকাল ৬.৪৮ মিনিটে ৭১ বছর বয়সে তিনি আমাদের সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ওফাত লাভ করেন এবং ২৯শে ডিসেম্বর ঢাকার মতিঝিলের কমলাপুরস্থ বাবে মদীনা দেওয়ানবাগ শরীফে তাঁকে রওজাস্থ করা হয়।


পরিশেষে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের ৭৪তম শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাঁর পরশময় কদম মোবারকে জানাই শতকোটি কদমবুসি। মহান রাব্বুল আলামিন যেন তাঁর প্রিয় বন্ধুর শুভ জন্মদিনের উসিলায় আমাদেরকে আশেকে রাসুল হিসেবে কবুল করে নেন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট