Cancel Preloader

মু‘জিঝাতুল আম্বিয়া (পর্ব-০৬)

হযরত আদম (আ.) সর্বপ্রথম যেভাবে অছিয়ত করার নিয়ম চালু করেন
হযরত এমরান হোসাইন মাজহারী


জগতের বুকে যত ধর্ম রয়েছে এ সমস্ত ধর্ম দয়াময় আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তাঁর মনোনীত মহামানবগণের মাধ্যমে প্রবর্তন করেছেন। মহামানবগণ অনেক সাধনা রিয়াজত করে এবং বহু ত্যাগ, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন ও নানা বাধা উপেক্ষা করে আল্লাহ্র ইচ্ছা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সমাজে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। মহান আল্লাহ্ বলেন- “এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবির শত্রæ করেছি মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানকে। তারা একে অপরকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে মন ভুলানো বাক্যে কুমন্ত্রণা দেয়।” (সূরা আল আন‘আম ৬ : আয়াত ১১২)


আল্লাহ্র প্রেরিত মহামানবগণ তাদের সমকালীন মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানদের পরাজিত করে আল্লাহ্র ধর্ম সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁরা তাঁদের নির্ধারিত হায়াত কাল অতিবাহিত করার শেষ লগ্নে এসে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে জানতে ও বুঝতে পারেন যে, দয়াময় আল্লাহ্ তাঁর পরবর্তীতে কোন মহামানবকে ধর্ম পরিচালনার জন্য মনোনীত করেছেন। যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের ধর্ম শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করবেন। তাই পূর্ববর্তী মহামানব তাঁর অনুসারীদের নিকট পরবর্তী মহামানবের পরিচয় প্রদানসহ তাঁর নির্দেশমতো ধর্ম পালন করে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অছিয়ত করেন।
জগতে সর্বপ্রথম আল্লাহ্র মনোনীত নবি ও রাসুল হলেন আদি পিতা হযরত আদম (আ.)। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ্ ইসলাম ধর্ম শুরু করেন। যা আদমি ইসলাম নামে আখ্যায়িত হয়েছে। হযরত আদম (আ.) আদমি শরিয়ত ও মারেফতের তালিম তাঁর হাজার হাজার পরিবারবর্গকে দীর্ঘ এক হাজার বছর হায়াতকাল ব্যাপী শিক্ষা দিয়েছেন।


উল্লেখ্য যে, কোনো কোনো বর্ণনা থেকে জানা যায় হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)-এর সন্তান ছিল ২৩৯ জন। এ সমস্ত সন্তানের মধ্যে দয়াময় আল্লাহ্ কোন সন্তানকে আদমি শরিয়ত ও মারেফতের তালিম পরিচালনার জন্য আল্লাহ্র মনোনীত মহামানব হিসেবে কবুল করেছেন, মহান আল্লাহ্ তাঁর নবি ও রাসুল হযরত আদম (আ.)-কে অবগত করলেন। আর তিনি হলেন হযরত শিশ (আ.)।


হযরত আদম (আ.) তাঁর জীবনের শেষ সময়ে এসে তার সুযোগ্য উত্তরসূরি হযরত শিশ (আ.)-কে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে খেলাফত প্রদান করেন। অতঃপর পরিবারবর্গকে হযরত শিশ (আ.)-কে মেনে চলার অছিয়ত করেন।
হযরত আদম (আ.)-এর অছিয়ত

এই বিষয়টি হযরত মাওলানা তাহের সুরাটি (ভারত) প্রণীত কুরআন ও হাদিসের আলোকে ‘কাসাসুল আম্বিয়া’ নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
“হযরত আদম (আ.)-এর শরীর ক্রমশই দুর্বল হয়ে আসছিল এবং তিনি তাঁর জীবন অবসান খুবই আসন্ন বলে মনে করছিলেন। অতএব তিনি একদিন পুত্র শিশ (আ.)-কে নিকটে বসিয়ে বললেন: হে প্রিয় পুত্র! মনে হয় আমার দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণের সময় নিকটবর্তী; সুতরাং আমার আওলাদগণের যে যেখানে আছে, তাদেরকে সংবাদ জানিয়ে আমার নিকট উপস্থিত করো। আমি সকলকে আমার শেষ অছিয়ত করে যেতে চাই। এ সময় হযরত আদম (আ.)-এর সর্বমোট চল্লিশ হাজার বংশধর ছিল। শিশ (আ.)-এর আহ্বাবানে তারা সকলেই এসে হযরত আদম (আ.)-এর অন্তিম শয্যার নিকটে সমবেত হলো।

হযরত আদম (আ.) সকলকেই লক্ষ্য করে বললেন, আমি যথাসম্ভব খুব শীঘ্রই তোমাদের নিকট হতে চিরবিদায় গ্রহণ করব। অতএব, তোমাদের সকলের প্রতি আমার শেষ অছিয়ত হলো এই যে, তোমরা সকলে পরস্পরে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলিও। একে অপরের সাথে বিবাদ-বিষন্বাদ করো না। তোমাদের সামনে গুরুতর সমস্যা দেখা দিলে সকলে পরামর্শ করে একযোগে তার সমাধান করো। আর সর্বক্ষেত্রে তোমরা শিশের পরামর্শ, আদেশ ও মীমাংসার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করো এবং তাঁকে মেনে চলিও। কারণ সে আল্লাহ্র অতি প্রিয়জন।


‘তোমরা জেনে রেখো, আমি শিশকেই আমার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মনোনীত করে যাচ্ছি। যেহেতু সেই তোমাদের মধ্যে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানে-গুণে আচরণদিতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও যোগ্যতম। হযরত আদম (আ.)-এর আওলাদগণ সকলেই তাঁর কথা স্বীকার করলেন এবং তা মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন।

হযরত আদম (আ.) পুত্র শিশকে সম্বোধন করে বললেন “প্রিয় বৎস! এ দুনিয়া একটি বেশি বিপদসংকুল স্থান! এখানে প্রতি মুহূর্তে পদস্খলনের ভয়। বিশেষত শয়তান প্রতিনিয়ত তোমাদেরকে বিপথে চালাতে চেষ্টা করবে, তাকে এতটুকুমাত্র প্রশ্রয় দিবে না। তোমার বংশাবলি প্রত্যেককে সুপথে বহাল রাখতে মনে প্রাণে চেষ্টা করবে। আমি আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে তোমাদের জন্য দোয়া করছি। তিনি তোমাদেরকে সুপথে বহাল রাখুন। এ কথা বলে হযরত আদম (আ.) পুত্র শিশ (আ.)-কে নিজের খেলাফত প্রদান করলেন।”
অছিয়ত মান্য করে চলা এবং অছিয়ত শোনার পর এটিতে রদ বদল করা মহাপাপ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন- “যদি অছিয়ত শোনার পর কেউ তাতে কোনো রকম পরিবর্তন করে, তবে যারা পরিবর্তন করবে তাদের উপর এর পাপ বর্তাবে, নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞানী।” (সূরা আল বাকারাহ ২ : আয়াত ১৮১)

পরিশেষে মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা, হে আল্লাহ্! আপনি দয়া করে আমাকে আপনার ইচ্ছায় পরিচালিত করুন, আর আপনার সন্তুষ্টি অনুযায়ী বাকী জীবন অতিবাহিত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।


[লেখক : গবেষক, আল কোরআন গবেষণা কেন্দ্র, খতিব, বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফ, ইসলামি আলোচক, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং সমন্বয়ক, দেওয়ানবাগীর দল ওলামা মিশন বাংলাদেশ]

সম্পর্কিত পোস্ট